Jannah Theme License is not validated, Go to the theme options page to validate the license, You need a single license for each domain name.
Hot

রাজনীতিতে বিশৃঙ্খলার শঙ্কা জাতীয় নির্বাচনের আগে ডাকসু নির্বাচন

ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়কে বলা হয় রাজনীতির আতুড়ঘর। দেশের প্রতিটি গণতান্ত্রিক আন্দোলনে এ শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের রয়েছে গৌরবময় ঐতিহ্য। এ বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীরা ’৫২ ভাষা আন্দোলন, ’৬৯ গণঅভ্যুত্থান, ’৯০ এরশাদবিরোধী আন্দোলনে স্ফূলিঙ্গের মতো ছড়িয়ে দিয়েছে। ২০২৪ ছাত্র-জনতার অভ্যুত্থান আন্দোলনের মূল নেতৃত্ব দেয় ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীরা। প্রাচ্যের অক্সফোর্ডখ্যাত ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্রসংসদ (ডাকসু) নির্বাচনের তফসিল ঘোষণা করা হয়েছে। নির্বাচনকে কেন্দ্র করে ছাত্র সংগঠন ও সাধারণ শিক্ষার্থীরা মাঠে নেমেছেন এবং বিতর্কে জড়িয়ে পড়েছেন। তবে সাধারণ শিক্ষার্থীরা বলছেন, ছাত্রলীগের লুঙ্গি পড়ে এতোদিন গুপ্ত রাজনীতি করা ছাত্রশিবির ডাকসু নির্বাচন নিয়ে যেভাবে মারমুখি হয়েছে তাতে করে এ নির্বাচন নিয়ে সংঘাত-সংঘর্ষের আশঙ্কা আছে। জাতীয় নির্বাচনের আগে এই ডাকসু নির্বাচন দেশের রাজনীতিতে বিশৃঙ্খলার সৃষ্টি করতে পারে।

ছাত্রলীগ নিয়ন্ত্রিত ডাকসুর সর্বশেষ নির্বাচনে সাধারণ শিক্ষার্থীরা স্বাভাবিকভাবে ভোট দিতে পারেনি। নিয়ন্ত্রণের মধ্যেও ডাকসু ভিপি ছাত্রলীগের হাতছাড়া হয়েছে। ওই সময় ছাত্রশিবির কমিউনিস্ট রাজনীতির মতো ছাত্রলীগে মিশে গিয়ে নিজেদের টিকিয়ে রেখেছিল। বাংলাদেশ গণতান্ত্রিক ছাত্র সংসদের (বাগছাস) ঢাবির আহ্বায়ক আব্দুল কাদের জামায়াতের অঙ্গ সংগঠন ছাত্র শিবির বিগত বছরগুলোতে ছদ্মবেশে ছাত্রলীগের জার্সি পড়ে ‘পোপ দা মোড় ক্যাথলিক’-এর মতো সন্ত্রাসের চিত্র তুলে ধরেছেন। যা বিশ্ববিদ্যালয় ক্যাম্পাসে তোলপাড় সৃষ্টি করে। শুধু তাই নয় বর্তমানের ভিসি জামায়াতের গুপ্ত নেতা ছিলেন এবং তার নিয়োগের নেপথ্যে ছাত্রশিবিরের হাত রয়েছে এমন বিশ্বাসযোগ্য তথ্য সোশাল মিডিয়ায় ভাইরাল হয়েছে। এ অবস্থায় ঢাকসু নির্বাচন আসন্ন ত্রয়োদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনের আগে বিশৃঙ্খল পরিস্থিতি সৃষ্টি করে কিনা তা নিয়ে সংশয়ের সৃষ্টি করছে। বিভিন্ন ছাত্র সংগঠনের নেতারা নির্বাচনের প্রস্তুতি নিলেও সাধারণ শিক্ষার্থীদের অনেকেই আশঙ্কা করছেন ছাত্রশিবির নির্বাচনের আগেই যে ভাবে ক্যাম্পাসের নিয়ন্ত্রণ নেয়ার চেষ্টা করছে; তাতে করে আগে ঢাবি নির্বাচন ফেব্রুয়ারি মাসে অনুষ্ঠিতব্য জাতীয় নির্বাচনকে অনিশ্চয়তায় ফেলতে পারে। নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক বেশ কয়েকজন শিক্ষার্থী জানান, চট্টগ্রাম, রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্ররাজনীতি শিবির দীর্ঘদিন নিয়ন্ত্রণ করেছে। ওই সংগঠনটি ঢাবিতে নিয়ন্ত্রণ প্রতিষ্ঠায় মরিয়া হয়ে উঠেছে। এরই মধ্যে টিএসসিতে মানবতাবিরোধী অপরাধে দ-িতে মতিউর রহমান নিযামী, আলী আহসান মুজাহিদদের ছবি টানিয়ে অস্থিরতা সৃষ্টির চেষ্টা করছে।

ডাকসু নির্বাচনে সুবিধা করতে ব্যর্থ হলে অস্থিরতা সৃষ্টি করতে পারে। এমন পরিস্থিতি হলে আগামী জাতীয় নির্বাচন যথাসময়ে অনুষ্ঠান অনিশ্চিত হয়ে পড়তে পারে এমন আশঙ্কা উড়িয়ে দেয়া যায় না। কয়েকজন শিক্ষার্থী অবশ্য জাতীয় নির্বাচনের পর ডাকসু নির্বাচন হওয়া উচিত এমন মত দেন। ডাকসু নির্বাচন নিয়ে নেটিজেনদের সোশ্যাল মিডিয়ায় অনেকেই লিখেছেন, যে উদ্দেশে জাতীয় নির্বাচনের আগে জামায়াত স্থানীয় নির্বাচন দাবি করছে; আগে ডাকসু নির্বাচন হলে এবং শিবির সুবিধা করতে না পারলে সে উদ্দেশ্য ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় থেকেই হাসিল করার আশঙ্কা রয়েছে। কারণ প্রতিটি আন্দোলন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় থেকে সারাদেশে ছড়িয়ে পড়ে।

জানতে চাইলে বিপ্লবী ছাত্র মৈত্রীর সাধারণ সম্পাদক জাবির আহমেদ রুবেল বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রশাসনের রাজনৈতিক পক্ষপাতিত্ব রয়েছে বলে মন্তব্য করে বলেন, বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসনের রাজনৈতিক পক্ষপাতিত্ব থাকা সত্ত্বেও বিশ্ববিদ্যালয়ের রাজনৈতিক পরিবেশ ডাকসু নির্বাচনের জন্য এখন পর্যন্ত যথেষ্ট সুষ্ঠু রয়েছে। তবে হলে রাজনীতি বিষয়ে শিক্ষার্থীদের মধ্যে একটা ভীতি আছে। কিন্তু বিশ্ববিদ্যালয়ের রাজনৈতিক পরিবেশ নিয়ে ছাত্র সংগঠনসমূহ এবং বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসনের ঐকমত্য তৈরি করা প্রয়োজন। শিবিরের গুপ্ত রাজনীতি আদতে কোনো রাজনীতি না বরং এটাকে শিক্ষার্থীদের সাথে প্রতারণা। ফলে যারা রাজনীতিকে গোপন তৎপরতা, প্রতারণা এবং মিথ্যাচারের ঢাল হিসেবে ব্যবহার করে তারা রাজনৈতিক সহাবস্থানের জন্য ক্ষতিকর। তাদের এই রাজনৈতিক তৎপরতা সামগ্রিক রাজনৈতিক পরিবেশকেই ধ্বংস করছে।

ডাকসু নির্বাচনের দিন যতই ঘনিয়ে আসছে, ততই জমে উঠছে ভোটের হিসাব-নিকাশ। শেষ পর্যন্ত কারা হবেন বিজয়ী, তা জানতে অপেক্ষা করতে হবে ভোটের দিন পর্যন্ত। তবে হেভিওয়েট প্রার্থীদের উপস্থিতি ইতোমধ্যেই ক্যাম্পাস রাজনীতিকে নতুন করে চাঙ্গা করে তুলেছে। নির্বাচন ঘিরে ঢাবি ক্যাম্পাস সরগরম হলেও নির্বাচন নিয়ে অনিশ্চয়তাও রয়েছে। ডাকসুর খসড়া ভোটার তালিকায় দেখা গেছে নিষিদ্ধ সংগঠন ছাত্রলীগের শতাধিক নেতাকর্মীর নাম। তালিকা বিশ্লেষণ করে দেখা যায়, এতে নিষিদ্ধ ঘোষিত ছাত্রলীগের এমন ১১৭ জন নেতাকর্মীর নাম এসেছে যাদেরকে হলে অবাঞ্ছিত ঘোষণা করা হয়েছিল। এর মধ্যে অনেকেরই ১৫, ১৬ ও ১৭ জুলাই আন্দোলনরত শিক্ষার্থীদের ওপর হামলা করার ফুটেজ রয়েছে। এই তালিকায় বিশ্ববিদ্যালয় থেকে বহিষ্কৃত ৭ জন রয়েছেন এবং ২৭ জন বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের শাহবাগ থানায় দেয়া মামলায় আসামী। যার মধ্যে ছাত্রলীগের দুই হল সভাপতিও রয়েছেন যারা বর্তমানে কারাগারে আছেন। অভ্যুত্থান পরবর্তী শিক্ষার্থীদের ওপর হামলায় জড়িত থাকা এবং গণঅভ্যুত্থানের বিরোধিতাকারী ৩৬৯ ছাত্রলীগ নেতাকে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের হলগুলোতে সর্বসম্মতিক্রমে অবাঞ্ছিত ঘোষণা করে শিক্ষার্থীরা। তাদেরই ১১৭ জনের নাম পাওয়া যায় ডাকসুর খসড়া ভোটার তালিকায়। ফলে বিষয়টি নিয়ে উদ্বেগ প্রকাশ করেছে ছাত্র সংগঠনগুলো। রাজনীতি সচেতন শিক্ষার্থীরাও এর নিন্দা জানিয়েছে।

অন্যদিকে ডাকসু নির্বাচনের জন্য লেভেল প্লেয়িং ফিল্ড তৈরি হয়নি বলে অভিযোগ করেন ছাত্র সংগঠনগুলো। রাজনীতি সচেতন শিক্ষার্থীরা এ নিয়ে আশঙ্কা প্রকাশ করতে দেখা যায়। শিক্ষার্থীরা মনে করেন, ৫ আগস্টের পর থেকে একটি ছাত্র সংগঠন হলগুলোতে গুপ্ত রাজনীতি চর্চা করে স্বাভাবিক রাজনৈতিক পরিবেশকে ব্যাহত করছে। তারা সেবার নামে হলে হলে দেদারসে রাজনীতি করে যাচ্ছে। অন্যদিকে অন্য কোনো ছাত্র সংগঠনকে রাজনীতি করতে দিচ্ছে না। হলগুলোতে মবের রাজত্ব কায়েম করে সুষ্ঠু রাজনৈতিক পরিবেশকে বাধাগ্রস্ত করছে।

অন্যদিকে বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসনের গুরুত্বপূর্ণ দুই পদে বিশ্ববিদ্যালয় ভিসি ও প্রক্টর জামায়াতপন্থী বলে অভিযোগ করেন ছাত্র সংগঠনগুলো। তাদের দাবিÑ বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন নিরপেক্ষ আচরণ করছেন না। বরং একটি ছাত্র সংগঠনকে (ছাত্রশিবির) তারা প্রায়োরিটি দিয়ে যাচ্ছেন। ফলে ডাকসু নির্বাচনের জন্য যে লেভেল প্লেয়িং ফিল্ড দরকার সেটি তৈরি হয়নি। আবার বিশ্ববিদ্যালয়ের ভিসির বিরুদ্ধে ছাত্রলীগ পুনর্বাসনের অভিযোগও আনছেন অনেকে। আওয়ামী লীগের সাথে তাঁর সংশ্লিষ্টতা রয়েছে বলেও অভিযোগ করতে দেখা যায় অনেক ছাত্র নেতাকে। এমতাবস্থায় এই প্রশাসনের অধীনে সুষ্ঠু নির্বাচন নিয়ে সন্দেহ প্রকাশ করছেন ছাত্র সংগঠনগুলো।

বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের সাবেক মুখপাত্র উমামা ফাতেমা বলেন, ডাকসু নির্বাচনের জন্য প্রশাসন তফসিল ঘোষণা করেছে; প্রশাসন তো সার্বিক পরিস্থিতি বিবেচনায় নিয়েই তফসিলটা ঘোষণা করেছে। বর্তমানে ছাত্র রাজনীতির প্রশ্নটা সমাধান করাটা আমাদের সবার জন্য অত্যন্ত জরুরি। তবে শিবিরের গুপ্ত রাজনীতিই ক্যাম্পাসে এক ধরনের অস্থিতিশীল পরিস্থিতি তৈরি করছে এবং সব সংগঠনের মধ্যে এক ধরনের একটা অবিশ্বাসের পরিস্থিতি তৈরি করছে। শিবিরের অবশ্যই প্রকাশ্যে আশা উচিত। তারা বারবার মিথ্যার আশ্রয় নিয়ে রাজনৈতিক পরিবেশটা ঘোলাটে করছে। আমি মনে করি, এই একটা ইস্যু ছাড়া ক্যাম্পাসের বাকি পরিবেশ ডাকসু নির্বাচনের উপযোগী।

ক্যাম্পাসে সরেজমিন ঘুরে জানা গেছে, বিশ্ববিদ্যালয়ের বিভিন্ন অনুষদ ও হলভিত্তিক ছাত্র সংগঠন থেকে উঠে আসা অনেকেই এবার ডাকসুর গুরুত্বপূর্ণ পদে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করবেন। এ তালিকায় বাংলাদেশ জাতীয়তাবাদী ছাত্রদলের পক্ষে রয়েছে সংগঠনটির ঢাবি শাখার সভাপতি গণেশ চন্দ্র রায় সাহস, সাধারণ সম্পাদক নাহিদুজ্জামান শিপন, সহ-সভাপতি আনিসুর রহমান খন্দকার অনিক ও সাংগঠনিক সম্পাদক নূরে আলম ভূঁইয়া ইমন। সংগঠনটির তুলনামূলক সিনিয়রদের ছাড়াও জুনিয়রদের মধ্যে শিক্ষার্থীদের মাঝে ইতোমধ্যে জনপ্রিয় হয়ে উঠেছেন যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক আবিদুল ইসলাম খান ও সংগঠনটির কবি জসিমউদদীন শাখার নেতা শেখ তানভীর বারি হামীম। তবে সংগঠনটির নেতাদের সাথে কথা বলে জানা যায়Ñ ডাকসু নির্বাচনে কারা প্রতিদ্বন্দ্বিতা করবেন সে ব্যাপারে চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমানের ওপর নির্ভরশীল। এছাড়া প্যানেল নিয়েও এখনো কোনো সিদ্ধান্তে উপনীত হতে পারেনি সংগঠনটি।

এবারের নির্বাচনে প্রথমবারের মতো আলোচনায় রয়েছেন বাংলাদেশ ইসলামি ছাত্রশিবিরের নেতারা। শীর্ষ দুই পদে এখন পর্যন্ত সংগঠনটির কেন্দ্রীয় প্রচার ও প্রকাশনা সম্পাদক ও ঢাবি শাখার সাবেক সভাপতি আবু সাদিক কায়েম ও ঢাবি শাখার বর্তমান সভাপতি এসএম ফরহাদের নাম জানা যায়। প্যানেল নিয়ে কেন্দ্র ও হল পর্যায়ে সমন্বিত প্যানেল দেয়ার ব্যাপারে ভাবছেন বলে জানান সংগঠনটির নেতারা। তবে এখনো কোনো চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত নেয়নি সংগঠনটি।

বাংলাদেশ গণতান্ত্রিক ছাত্র সংসদের পক্ষ থেকে ইতোমধ্যে শীর্ষ দুই পদে কেন্দ্র ও ঢাবি শাখার দুই নেতার নাম অনেকটাই চূড়ান্ত করা হয়েছে। তারা হলেনÑ ভিপি পদে ঢাবি শাখার আহ্বায়ক ও বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের সাবেক সমন্বয়ক আব্দুল কাদের ও জিএস পদে কেন্দ্রীয় ছাত্র সংসদের আহ্বায়ক ও বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের সাবেক সমন্বয়ক আবু বাকের মজুমদার। তারা দু’জনেই গণঅভ্যুত্থানের ভূমিকার জন্য শিক্ষার্থীদের মাঝে বেশ জনপ্রিয়।

প্রথমবারের মতো এবারের ডাকসু নির্বাচনে পূর্ণাঙ্গ প্যানেল ঘোষণা করেছে ইসলামী ছাত্র আন্দোলন বাংলাদেশ (ইসা)। ডাকসু নির্বাচনে সংগঠনটির ভিপি হিসেবে লড়বেন ঢাবি শাখার সাবেক সভাপতি ইয়াসিন আরাফাত, জিএস হিসেবে লড়বেন খায়রুল আহসান মারজান। এজিএস হিসেবে সাইফ মোহাম্মদ আলাউদ্দিন। এর বাইরে জনপ্রিয়তার বিচারে শীর্ষস্থানীয় একজন হলেনÑ বাংলাদেশ ছাত্র অধিকার পরিষদের সভাপতি বিন ইয়ামিন মোল্লা। তিনি ডাকসু ভিপি পদে লড়বেন বলে সিদ্ধান্ত নিয়েছেন। বাম ছাত্র সংগঠনগুলোর ডাকসুত লড়তে পারেন ছাত্র ইউনিয়নের ঢাবি শাখার সভাপতি মেঘমল্লার বসু। লড়বেন বাংলাদেশ ছাত্র মৈত্রীর সাধারণ সম্পাদক জাবির আহমেদ জুবেল, ছাত্র ফেডারেশনের ঢাবি শাখার আহ্বায়ক আরমানুল হক প্রমুখ। ছাত্র সংগঠনগুলোর বাইরে স্বতন্ত্র থেকে শীর্ষ পদে লড়তে পারেন বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের সাবেক মুখপাত্র উমামা ফাতেমা, ছাত্রনেতা এবি জুবায়ের, মোসাদ্দেক আলী ইবনে মোহাম্মদ, শামীম হোসেন প্রমুখ। এর মধ্যে উমামা ফাতেমা ও শামীম হোসেন ইতোমধ্যে ডাকসু নির্বাচনে ভিপি প্রার্থী হওয়ার ঘোষণা দেন।

ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় ছাত্র ফেডারেশনের আহ্বায়ক আরমানুল হক বলেন, ছাত্রশিবির এতবছর ছাত্রলীগের সাথেই গুপ্ত অবস্থায় থেকে নিজেদের সাংগঠনিক কর্মকা- পরিচালনা করেছে। ’২৪-এর গণঅভ্যুত্থানের পর নতুন বাংলাদেশে এসেও তারা একই ধারার রাজনীতি করে যাচ্ছে। ফলে এ নিয়ে অন্যান্য ছাত্র সংগঠন ও শিক্ষার্থীদের মাঝে একটা সন্দেহ তৈরি হচ্ছে। এ বিষয়টা ছাত্র শিবিরের জন্যও কল্যাণকর মনে হয় না। তাদের উচিত তাদের কর্মী, সাথীসহ প্রত্যেকটা ইউনিটের নেতাকর্মীদের তালিকা প্রকাশ করা এবং বিগত ১৫ বছরের তাদের কমিটিগুলো প্রকাশ করা। ছাত্রলীগের সাথে মিলেমিশে রাজনীতি করার যে অভিযোগ তাদের বিরুদ্ধে এসেছে সেই দায়ভার থেকে মুক্তি পাওয়ার জন্যই তাদেরকে এটা করতে হবে।

ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় ছাত্রদলের সাধারণ সম্পাদক নাহিদুজ্জামান শিপন বলেন, ৫ আগস্ট পরবর্তী সময়ে আমরা বারবার বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসনকে আহ্বান করেছি যারাই বিগত সময়ে আমাদের রাজনৈতিক অধিকার ক্ষুণœ করেছে এবং যেসব শিক্ষক কর্মকর্তা এতে সহযোগিতা করেছে তাদের যেন সুষ্ঠু বিচার করা হয়। কিন্তু আমরা দেখেছি বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন নামমাত্র কিছু পদক্ষেপ নিলেও মূল অভিযুক্তদের বিরুদ্ধে কোনো ব্যবস্থা গ্রহণ করেনি। ডাকসুর খসড়া ভোটার তালিকায় ছাত্রলীগের চিহ্নিত প্রায় দেড় শতাধিক নেতাকর্মীর নাম। সুতরাং সার্বিক পরিস্থিতি বিবেচনায় ডাকসু নির্বাচনের সুষ্ঠু পরিবেশ তৈরি হয়েছে বলে আমরা মনে করি না। তিনি আরো বলেন, আমরা বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসনের পক্ষ থেকে জটিলতার সম্মুখীন হচ্ছি। ছাত্রশিবিরের গুপ্তধারার রাজনীতি ক্যাম্পাসে সহাবস্থানের যে সুস্থ ধারার রাজনীতি সেটিকে ব্যাপকভাবে বাধাগ্রস্ত করছে। এই গুপ্ত রাজনীতি প্রচ- রকম ক্ষতিকর এবং এটি বিশ্ববিদ্যালয় অভ্যন্তরে একটি উত্তপ্ত পরিস্থিতি তৈরি করছে।

ছাত্রদলের কেন্দ্রীয় সাধারণ সম্পাদক নাছির উদ্দীন নাছির বলেন, এখন পর্যন্ত ডাকসু নির্বাচনের পরিবেশ তৈরি হয়েছে বলে আমাদের মনে হয় না। কারণ গণহত্যাকারী ফ্যাসিস্ট আওয়ামী লীগের সন্ত্রাসী সংগঠন ছাত্রলীগের বিচার এখনো পর্যন্ত নিশ্চিত করা হয়নি। তিনি বলেন, ফ্যাসিস্টের দোসর যেসব শিক্ষকরা এই গণহত্যাসহ সমস্ত প্রকার অপকর্মের পরোক্ষ ও প্রত্যক্ষ সমর্থন দিয়েছে তাদের একজনকেও এখনো বিচার প্রক্রিয়ার আওতায় আনা যায়নি। আগস্টের তিন তারিখ পর্যন্ত যেসব কর্মচারী-কর্মকর্তারা ফ্যাসিবাদের পক্ষে মিছিল মিটিং করেছে, খুনি হাসিনার পক্ষে যাদের অবস্থান ছিলো তাদেরকে বিচারের বাইরে রেখে নির্বাচনের পরিবেশ তৈরি হয়েছে বলে আমার মনে হয় না।

গত ১৭ বছরে ছাত্রলীগের সন্ত্রাসী কর্মকা-ের ফলে শিক্ষার্থীরা সত্যিই ট্রমাটাইজড (আতঙ্কিত) কিন্তু আমাদের হল কমিটির সাথে ছাত্রলীগের রাজনীতিকে গুলিয়ে ফেলা কোনোভাবেই সমীচীন হবে না বলেই আমরা মনে করি। এভাবে যদি কোনো শিক্ষার্থীর মধ্যে সংক্ষুব্ধতা থাকে তাহলে আমরা তার সাথে ব্যক্তিগতভাবে আলাপ করতে চাই এবং বলতে চাই যে আমাদের হল কমিটিগুলো শুধুমাত্র শিক্ষার্থীদের অধিকার বা স্বার্থ সংশ্লিষ্ট কাজেই নিয়োজিত থাকবে এবং ৫ আগস্টের পরে কোনোভাবেই পূর্বের সেই হল দখল ও সিট বাণিজ্যের রাজনীতি ফিরে আসবে না। সুতরাং আমাদের হল কমিটি নিয়ে যেন কোনো শিক্ষার্থীর মধ্যে নেতিবাচক ধারণা না থাকে সেটার জন্য আমরা উদাত্ত আহ্বান জানাচ্ছি।

ছাত্রশিবিরের গুপ্ত রাজনীতি নিয়ে তিনি বলেন, গুপ্ত ছাত্ররাজনীতি ক্যাম্পাসের বিভিন্ন ছাত্র সংগঠনের সাথে সহাবস্থান পারস্পরিক সৌহার্দ্যরে পথে নিঃসন্দেহে অন্তরায়, গতকাল ভিসি অফিসের আলোচনায় শুধুমাত্র ছাত্র অধিকার পরিষদ ছাড়া বাকি সবগুলো ছাত্র সংগঠন গুপ্ত রাজনীতির বিপক্ষে মত দিয়েছেন । যে রকম টিএসসি ভিত্তিক যতগুলো সামাজিক সাংস্কৃতিক সংগঠন রয়েছে সেগুলোতে কোন রাজনৈতিক পরিচয় যুক্ত ব্যক্তিরা কোন পদ বা দায়িত্বে থাকতে পারবে না, কিন্তু যারা গুপ্ত রাজনৈতিক চর্চা করে তারা তো গুপ্তভাবে এসব প্রতিষ্ঠানে বিভিন্ন পদ বা দায়িত্বে থাকতে পারে। তারা এগুলো নিয়ন্ত্রণ করে এমনকি হলেও একই অবস্থা।

বাংলাদেশ গণতান্ত্রিক ছাত্র সংসদের (বাগছাস) আহ্বায়ক আবু বাকের মজুমদার বলেন, জুলাই গণঅভ্যুত্থান পরবর্তী সময় থেকে এখন পর্যন্ত ক্যাম্পাসে সহাবস্থানের রাজনীতি আছে। ক্যাম্পাসে রাজনীতি যদি কোনোভাবে ঘোলাটে হয় তার অন্যতম কারণ হচ্ছে শিবিরের গুপ্ত রাজনীতি। কারণ গুপ্ত হলে যেমন পরিচয় গোপন করেও কথা বলা যায়, দায় না নিয়ে চেপে আসা যায়, নাম পরিচয় প্রকাশ না করে, আপনি সাধারণ শিক্ষার্থী সেজে আপনি আপনার মতো কাজ করতে পারেন। এই তিনটা কারণেই মূলত গুপ্ত রাজনীতির প্রতি অন্যান্য ছাত্র সংগঠনের অনাস্থা তৈরি হয়েছে। বিশেষ করে, গুপ্ত রাজনীতিকে তো শিক্ষার্থীরা এক্সেপ্ট করে না বা ছাত্র সংগঠনগুলো এটাকে সমর্থন করে না। সবকিছু মিলে শিবিরের এই গুপ্ত রাজনীতি শিক্ষার্থীদের জন্য ক্ষতিকর।

একই সুরে কথা বলেন, সংগঠনটির ঢাবি শাখার আহ্বায়ক আব্দুল কাদের। তিনি বলেন, শিক্ষার্থীরা হলে হলে ছাত্র রাজনীতি থাকার কুফল ভোগ করে আসছে সেই দীর্ঘদিন থেকে। সিটের জন্য ক্ষমতাসীন ছাত্র সংগঠনের কাছে জিম্মি থাকতে হয় শিক্ষার্থীদের। ছাত্রশিবিরের বর্তমান গুপ্ত রাজনীতি সাধারণ শিক্ষার্থীদের পরিচয়কে কলঙ্কিত করে বলেও মন্তব্য করে আব্দুল কাদের বলেন, ছদ্মবেশ ধারণ করে যখন আপনি রাজনীতি করবেন এবং কারো ওপর হামলা করবেন অতঃপর সাধারণ শিক্ষার্থী পরিচয়ে পার পেয়ে যাবেন সেই সুযোগ কিন্তু আপনার রয়েছে। ৫ আগস্টের পরে আমরা দেখেছি যারা ছাত্র রাজনীতির বিরুদ্ধে ক্যাম্পাস সেøাগান দিয়েছিল তারাই পরবর্তী সময় দেখেছি শিবিরের বড় বড় নেতা হিসেবে আবির্ভাব হয়েছে।

ডাকসু নির্বাচনের পরিবেশ নিয়ে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় ছাত্রশিবিরের সভাপতি এসএম ফরহাদ বলেন, ১৯৭১-এর পর এখন পর্যন্ত এই একমাত্র সময় যখন কোন ছাত্র হলে থাকতে পারবে, কে থাকতে পারবে না, কে কোন সিটে থাকবে এই সিদ্ধান্ত হল প্রশাসন নিতে পারছে। যেকোনো অন্যায়ের বিরুদ্ধে শিক্ষার্থীরা নিজেদের মত প্রকাশ করতে পারছে। কাউকে জোর করে মিছিলে নেয়া হচ্ছে না, কাউকে তার মত প্রকাশে বাধা দেয়া হচ্ছে না, কোনো একক ছাত্র সংগঠনের আধিপত্য নেই। এমন পরিস্থিতিতেও যদি কেউ বলে যে ডাকসু নির্বাচনের সুষ্ঠু পরিবেশ তৈরি হয়নি তাহলে বুঝতে হবে তিনি শিক্ষার্থী বিচ্ছিন্ন। তিনি বলেন, আমাদেরকে গুপ্ত ট্যাগ দিয়ে শিক্ষার্থীদের মুখোমুখি দাঁড় করানোর একটা প্রচেষ্টা লক্ষণীয়। কিন্তু আমরা তাদের এই ট্র্যাপে পা দিব না। আমরা সবসময় শিক্ষার্থীদের মতামতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসনের প্রতি আমরা আহ্বান জানিয়েছিÑ যেন শিক্ষার্থীদের ইনস্টিটিউশনাল ইমেইলে মেইল করার মাধ্যমে হলে ছাত্র রাজনীতি থাকা না থাকা নিয়ে তাদের মতামত নেয়া হয়। অধিকাংশ শিক্ষার্থী যদি চায় হলে রাজনীতি থাকবে তবে আমরাও আমাদের কমিটি দিব।

উদ্ভিদবিজ্ঞান বিভাগের প্রফেসর মোহাম্মদ জসীম উদ্দিন বলেন, লেভেল প্লেয়িং ফিল্ড নিশ্চিত করার জন্য যা করা দরকার আমরা সবই করব। ছাত্র সংগঠনগুলোর সাথে আমরা কন্টিনিউয়াসলি বসছি, আরো বসব। ছাত্রলীগের যেসব নেতাকর্মীকে আমরা আইডেন্টিটিফাই করতে পারিনি যাদের অনেকের নাম খসড়া ভোটার তালিকায় এসেছে; আমরা শীঘ্রই তাদেরকে বের করে চূড়ান্ত তালিকা প্রকাশ করব। আমাদের দিক থেকে আমরা বলতে চাইÑ যথাসময়েই ডাকসু নির্বাচন অনুষ্ঠিত হবে।

Show More

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Related Articles

Back to top button
bacan4d toto
bacan4d toto
bacan4d
bacantoto4d
bacan4d
bacan4d
bacan4d toto
slot toto
bacan4d
bacan4d
togel online
Toto Slot
saraslot88
Bacan4d Login
bacantoto
Bacan4d Login
bacan4d
bacan4drtp
bacan4drtp
situs bacan4d
Bacan4d
slot dana
slot maxwin
slot bacan4d
slot maxwin
bacan4d togel
bacan4d login
bacan4d login
bacan4d login
bacantoto 4d
slot gacor
bacansport
slot toto
bacan4d
bacansport
bacansport
bacan4d
bacan4d
bacan4d
bacan4d
bacan4d
slot77 gacor
JAVHD
Bacan4d Login
Bacan4d toto
Bacan4d
Bacansports
Slot Dana
situs toto
bacansports
bacan4d
bacan4d
bacan4d
bacan4d
bacan4d
slot gacor
bacan4d
bacan4d
bacansport
bacansport
gacor slot
slot gacor777
slot gacor bacan4d
bacan4d
bacansport
toto gacor
bacan4d
bacansports login
slot maxwin
slot dana
slot gacor
slot dana
slot gacor
bacansports
bacansport
bacansport
bacansport
bawan4d
bacansports
bacansport
slot gacor
judi bola
slot maxwin
slot maxwin
bacansport
bacan4d
bacansport
slot gacor
slot demo
slot gacor
slot gacor
slot gacor
toto slot
slot gacor
demo slot gacor
slot maxwin
bacan4d
bacan4d
bacan4d
bacansport
slot gacor
slot toto