বেঁধে দেওয়া দামে মিলছে না পণ্য, পেঁয়াজ, আলু ও ডিমের দাম বেঁধে দেওয়ার ১৪ দিন পার হলেও এখন পর্যন্ত সরকারের নির্ধারিত দামে এসব পণ্য বিক্রি হচ্ছে না।
পেঁয়াজ, আলু ও ডিমের দাম বেঁধে দেওয়ার ১৪ দিন পার হলেও এখন পর্যন্ত সরকারের নির্ধারিত দামে এসব পণ্য বিক্রি হচ্ছে না। বাজারে স্বস্তি ফেরাতে রাজধানী ঢাকাসহ সারা দেশে নিয়মিত অভিযান পরিচালনা করছে জাতীয় ভোক্তা অধিকার সংরক্ষণ অধিদপ্তর। এর পরও বাজারে এর সুফল দেখা যাচ্ছে না।
বাণিজ্য, কৃষি ও প্রাণিসম্পদ মন্ত্রণালয় গত ১৪ সেপ্টেম্বর প্রথমবারের মতো আলু, ডিম ও দেশি পেঁয়াজের দাম ঠিক করে দেয়। প্রতি কেজি আলু ৩৫ থেকে ৩৬ টাকা, দেশি পেঁয়াজ ৬৪ থেকে ৬৫ টাকা এবং প্রতি হালি ডিম সর্বোচ্চ ৪৮ টাকা বা প্রতি পিস ডিমের দাম ১২ টাকা নির্ধারণ করে দেওয়া হয়। এর আগে সরকারের পক্ষ থেকে কয়েক দফা চিনির দামও নির্ধারণ করা হয়। সেটিও এখনো কার্যকর হয়নি। খোলা চিনির সরকার নির্ধারিত দাম কেজি ১৩০ টাকা, বিক্রি হচ্ছে ১৩৫ থেকে ১৪০ টাকায়।
সয়াবিন তেলের দাম লিটারে পাঁচ টাকা কমিয়ে ১৬৯ টাকা নির্ধারণ করে দেওয়া হয়, যা গত ১৭ সেপ্টেম্বর থেকে কার্যকর হয়। তবে গত ২৪ সেপ্টেম্বর থেকে বাজারে নতুন দরের বোতলজাত সয়াবিন তেল পাওয়া যাচ্ছে। অবশ্য বাজারে এখন সয়াবিন তেল সরকার নির্ধারিত দামে পাওয়া যাচ্ছে।
গতকাল বুধবার রাজধানীর তেজগাঁও বাজার, রামপুরা, বাড্ডা ও জোয়ারসাহারা বাজার ঘুরে এবং ব্যবসায়ীদের সঙ্গে কথা বলে দেখা গেছে, দেশি পেঁয়াজ কেজি ৮০ থেকে ৮৫ টাকা, আলু কেজি ৪৫ থেকে ৫০ টাকা এবং ফার্মের ডিম হালি ৫০ টাকায় বিক্রি হচ্ছে।
এদিকে সম্প্রতি ডিমের বাজারে স্থিতিশীলতা আনতে দুই দফায় ১০ কোটি ডিম আমদানির অনুমতি দেয় সরকার। আমদানির খবরে পাইকারি বাজারে ডিমের দাম কিছুটা কমলেও খুচরা বাজারে এখনো এর প্রভাব পড়েনি।
তেজগাঁও ডিম ব্যবসায়ী বহুমুখী সমবায় সমিতির সভাপতি হাজি মো. আমান উল্লাহ গতকাল কালের কণ্ঠকে বলেন, ‘গত দুই দিনের ব্যবধানে পাইকারিতে প্রতি ১০০ ডিমে ২০ টাকা কমেছে। আজ (গতকাল) পাইকারিতে প্রতি ১০০টি ডিম এক হাজার ৯০ টাকায় বিক্রি হয়েছে। আগের দুই দিন প্রতি ১০০ ডিম বিক্রি হয়েছিল এক হাজার ১১০ টাকায়।’
রাজধানীর রামপুরার ভ্যারাইটিজ স্টোরের ব্যবসায়ী জাহাঙ্গীর মিয়া বলেন, ‘সরকার খুচরায় যে দাম নির্ধারণ করে দিয়েছে, সেই দামে আমরা আলু ও দেশি পেঁয়াজ পাইকারি বাজার থেকে কিনতেই পারছি না, বিক্রি করব তো দূরের কথা। আলুর দাম নির্ধারণ করা হয়েছে কেজি ৩৫ থেকে ৩৬ টাকা, আমাদের সব মিলিয়ে আলু কিনতে খরচ হচ্ছে ৪০ থেকে ৪২ টাকা। দেশি পেঁয়াজের দাম নির্ধারণ করা হয়েছে কেজি ৬৪ থেকে ৬৫ টাকা, এর সরবরাহ কমার কারণে এখন পাইকারিতে কিনতেই প্রায় ৭০ টাকা খরচ পড়ছে।’
ট্রেডিং করপোরেশন অব বাংলাদেশের (টিসিবি) বাজারদরের তথ্যেও সরকার নির্ধারিত দামের চেয়ে বেশি দামে পণ্য বিক্রির প্রমাণ দেখা গেছে। টিসিবির গতকালের বাজারদরের তথ্যে দেখা গেছে, দেশি পেঁয়াজ কেজি ৮০ থেকে ৮৫ টাকায়, আমদানীকৃত পেঁয়াজ ৬৫ থেকে ৭০ টাকায়, আলু ৪২ থেকে ৪৫ টাকায় ও খোলা চিনি কেজি ১৩০ থেকে ১৩৫ টাকায় বিক্রি হচ্ছে।
রাজধানীর বাড্ডার কাঁচাবাজারে কথা হয় আব্দুল হেলিম নামের বিজিবির এক সাবেক কর্মকর্তার সঙ্গে। তিনি বলেন, ‘প্রায় দুই সপ্তাহ হয়ে গেল সরকার পেঁয়াজ, আলু ও ডিমের দাম নির্ধারণ করে দিয়েছে। এর পরও বাজারে আগের বাড়তি দামেই আমাদের কিনতে হচ্ছে। খুচরা ব্যবসায়ীরা নানা অজুহাত দেখিয়ে আগের দামেই বিক্রি করছেন। ব্যবসায়ীরা এখন সরকারের সিদ্ধান্ত ও ভোক্তার অভিযান—কাউকেই পাত্তা দিচ্ছেন না।’