ওয়াশিংটন ডিসিতে ন্যাশনাল গার্ড মোতায়েনের প্রতিবাদে ট্রাম্পবিরোধী বিক্ষোভ

যুক্তরাষ্ট্রের রাজধানী ওয়াশিংটন ডিসিতে ‘অপরাধ বৃদ্ধির কারণে জরুরি অবস্থা’ ঘোষণা করেছেন মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প। গতকাল সোমবার তিনি বিচার বিভাগকে রাজধানীর স্থানীয় আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর নিয়ন্ত্রণ নেওয়ার অনুমতি দেন এবং সেখানে ৮০০ ন্যাশনাল গার্ড মোতায়েন করতে পেন্টাগনকে নির্দেশ দেন।
ট্রাম্পের এই পদক্ষেপের প্রতিবাদে গতকাল হোয়াইট হাউসের কয়েক ব্লক দূরে বিক্ষোভকারীরা জড়ো হন। তাঁরা ‘বু’ ধ্বনি দিয়ে তাঁর পদক্ষেপের বিরোধিতা করেন।
ট্রাম্পের দাবি, ওয়াশিংটন ডিসিতে অপরাধ বেড়ে যাওয়ায় ফেডারেল কার্যক্রম হুমকির মুখে পড়েছে। তবে বিক্ষোভকারীরা বলছেন, এটি নিছক অজুহাত—রাজধানীর ওপর ক্ষমতা দখলের ন্যায্যতা প্রমাণের কৌশল।
ওয়াশিংটন ডিসির বাসিন্দাদের অধিকার আদায়ের লক্ষ্যে কাজ করা সংগঠন ফ্রি ডিসির নির্বাহী পরিচালক কেয়া চ্যাটার্জি বলেন, ট্রাম্পের এই পদক্ষেপ দীর্ঘদিন অবহেলিত ওয়াশিংটন ডিসির বাসিন্দাদের অধিকারের ওপর আঘাত। এটি বড় ধরনের উত্তেজনা উসকে দেবে।
যুক্তরাষ্ট্রের রাজধানী ওয়াশিংটন ডিসিতে ন্যাশনাল গার্ড মোতায়নের প্রতিবাদে স্থানীয়দের বিক্ষোভছবি: রয়টার্স
কেয়া চ্যাটার্জি বলেন, ট্রাম্পের এই পদক্ষেপকে নজিরবিহীন বা অস্বাভাবিক বলে আখ্যা দিলে কম হয়ে যাবে। এটা নিরেট কর্তৃত্ববাদ।
ওয়াশিংটন ডিসির লাখ লাখ বাসিন্দার রাজনৈতিক অধিকার নিয়ে বহু বছর ধরে বিতর্ক চলে আসছে। কারণ, এটি কখনো অঙ্গরাজ্যের মর্যাদা পায়নি এবং ফেডারেল সরকারের নিয়ন্ত্রণেই আছে। যদিও ১৯৭৩ সালের ‘হোম রুল আইন’ কিছু স্থানীয় স্বায়ত্তশাসনের সুযোগ দিয়েছে। কিন্তু স্থানীয় আইন ও বাজেট অনুমোদন করে কংগ্রেস।
কৃষ্ণাঙ্গ সংখ্যাগরিষ্ঠ শহর হওয়ায় সমান নাগরিক অধিকার নিয়েও জটিলতা রয়েছে। নাগরিক অধিকার নেতা রেভারেন্ড এল শার্পটন ট্রাম্পের পদক্ষেপকে ‘ন্যায়বিচার ও নাগরিক অধিকারের সর্বোচ্চ অবমাননা’ বলে অভিহিত করেছেন এবং বলছেন এটি রাজনৈতিক উদ্দেশ্য হাসিলের একটি কৌশল।
বিক্ষোভকারীরা মনে করেন, ট্রাম্পের এই সিদ্ধান্ত আবারও প্রমাণ করেছে যে স্থানীয় আইনশৃঙ্খলাসংক্রান্ত নীতির ওপর তাদের প্রভাব নেই বললেই চলে।
বিক্ষোভে অংশ নেওয়া ২০ বছর বয়সী কলেজছাত্র আমারি জ্যাক বলেন, তিনি এই পদক্ষেপকে পুরোপুরি শহরটির নিয়ন্ত্রণ নিয়ে নেওয়ার প্রথম ধাপ হিসেবে দেখছেন। তিনি বলেন, ট্রাম্প বহু বছর ধরে হোয়াইট হাউসের আশপাশের মহানগরীর ওপর পূর্ণ নিয়ন্ত্রণ নেওয়ার কথা বলছেন। তবে এমন একটি পদক্ষেপের জন্য কংগ্রেসকে ১৯৭৩ সালের হোম রুল আইন বাতিল করতে হবে।
জ্যাক আল–জাজিরাকে বলেন, ‘আমি আজ এখানে এসেছি। কারণ, ডিসি যতটুকু স্বায়ত্তশাসন পায়, সেটাও হারিয়ে যাবে বলে আমার আশঙ্কা হচ্ছে। আমরা ডিসির স্থানীয় বাসিন্দা হিসেবে নিজেরা নিজেদের প্রতিনিধিত্ব করতে চাই এবং আমাদের সম্প্রদায়কে এগিয়ে নিতে চাই। আমরা চাই না, কোনো প্রেসিডেন্ট এসে আমাদের শহর শাসন করুক।’
ট্রাম্প ‘অপরাধ বৃদ্ধির কারণে জরুরি অবস্থা’ ঘোষণা দিয়ে পুলিশ ও নিরাপত্তাব্যবস্থা ঠিকমতো পরিচালনা করতে না পারার জন্য স্থানীয় সরকারকে দায়ী করেছেন। তিনি বলেছেন, অপরাধের হার কেন্দ্রীয় সরকারের কাজকর্মের জন্য অগ্রহণযোগ্য ঝুঁকি তৈরি করছে। ট্রাম্প বড় ধরনের অভিযান চালিয়ে অপরাধী গোষ্ঠী, মাদক ব্যবসায়ী ও অপরাধীদের দমন করতে চান। তিনি শহরটিকে বস্তিমুক্ত এবং গৃহহীন মানুষমুক্ত করার কথাও বলেছেন। যদিও এ ব্যাপারে বিস্তারিত কিছুই জানাননি।
যুক্তরাষ্ট্রের রাজধানী ওয়াশিংটন ডিসিতে ন্যাশনাল গার্ড মোতায়নের প্রতিবাদে স্থানীয়দের বিক্ষোভছবি: রয়টার্স
তবে ওয়াশিংটন ডিসির অ্যাটর্নি জেনারেল ব্রায়ান শোয়ালব এই পদক্ষেপকে ‘নজিরবিহীন, অপ্রয়োজনীয় এবং অবৈধ’ বলে আখ্যায়িত করেছেন। তিনি বলেছেন, ওয়াশিংটন ডিসিতে কোনো ‘অপরাধ বৃদ্ধির কারণে জরুরি অবস্থা’ নেই। বাস্তবে ডিসিতে সহিংস অপরাধের হার সাম্প্রতিক বছরগুলোতে ব্যাপকভাবে কমেছে। ২০২৩ থেকে ২০২৪ সালে ৩৫ শতাংশ কমে গেছে এবং চলতি বছর আরও ২৬ শতাংশ কমেছে।
বিক্ষোভকারী রাধা ট্যানারসহ অনেকেই মনে করেন, ট্রাম্প অপরাধ দমনের অজুহাত দেখিয়ে রাজনৈতিক লক্ষ্য হাসিলের চেষ্টা করছেন। এর মধ্য দিয়ে তিনি ওয়াশিংটন ডিসিসহ ডেমোক্র্যাট নিয়ন্ত্রিত শহরগুলোকে ‘অরক্ষিত ও অপরাধপ্রবণ’ হিসেবে চিত্রিত করার চেষ্টা করছেন।