ডাকসু নির্বাচনে ২৮ পদের বিপরীতে ৫৬৫ ফরম বিক্রি উৎসবমুখর ঢাবি ক্যাম্পাস

আজ ফরম কেনা এবং কাল জমা দেওয়ার শেষদিন * হল সংসদে ফরম বিক্রি ১২২৬ * শিবিরসহ তিন প্যানেল চূড়ান্ত * ছাত্রদল, বাগছাস, বামসহ অধিকাংশের প্যানেল ঘোষণা আজ * উমামা ফাতেমার স্বতন্ত্র শিক্ষার্থী ঐক্যসহ বেশ কয়েকটি স্বতন্ত্র প্যানেলের ফরম সংগ্রহ
ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় কেন্দ্রীয় ছাত্র সংসদ (ডাকসু) নির্বাচনে অংশ নিতে ২৮টি পদের বিপরীতে ৫৬৫টি মনোনয়নপত্র বিক্রি করা হয়েছে। আগের ঘোষণা অনুযায়ী, সোমবার ছিল ফরম বিতরণের শেষদিন। কিন্তু এদিন রাতে ফরম বিক্রি ও জমা দেওয়ার সময় একদিন করে বাড়ানো হয়েছে। সেই অনুযায়ী, আজ মঙ্গলবার ফরম কেনা এবং কাল বুধবার জমা দেওয়ার শেষদিন নির্ধারিত হয়েছে।
সোমবার ইসলামী ছাত্রশিবিরসহ তিনটি ছাত্র সংগঠন তাদের পূর্ণাঙ্গ প্যানেল ঘোষণা করেছে। জাতীয়তাবাদী ছাত্রদল, বাংলাদেশ গণতান্ত্রিক ছাত্র সংসদ (বাগছাস), বাম ছাত্র সংগঠনসহ অধিকাংশের প্যানেল ঘোষণা হবে আজ। এর মধ্যে বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের অনেক নেতা বাগছাস-এর হয়ে নির্বাচন করছেন। এছাড়া বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের সাবেক সমন্বয়ক উমামা ফাতেমার নেতৃত্বে স্বতন্ত্র শিক্ষার্থী ঐক্যসহ বেশ কয়েকটি স্বতন্ত্র প্যানেল ফরম সংগ্রহ করেছে। মনোনয়নপত্র সংগ্রহ ও জমা দেওয়া কেন্দ্র করে বিশ্ববিদ্যালয়ের ক্যাম্পাসজুড়ে সৃষ্টি হয় উৎসবমুখর পরিবেশ। প্রার্থী ও সমর্থক শিক্ষার্থীদের পদচারণা ছিল চোখে পড়ার মতো।
পূর্বনির্ধারিত ঘোষণা অনুযায়ী, ফরম কেনার শেষদিন সোমবার থাকায় প্রায় অধিকাংশ প্রার্থী তাদের মনোনয়নপত্র সংগ্রহ করেন। ডাকসু নির্বাচনে প্রার্থীদের মোট মনোনয়নপত্র সংগ্রহ দাঁড়িয়েছে এখন পর্যন্ত ৫৬৫ জনে। অন্যদিকে হল সংসদে সলিমুল্লাহ মুসলিম হলে ৭১ জন, শহীদুল্লাহ হলে ৯৭, জগন্নাথ হলে ৬৬, ফজলুল হক মুসলিম ৭৮, জহুরুল হক হলে ৯৩, সূর্যসেন হলে ৯০, মুহসিন হলে ৭৪, শামছুন্নাহার হলে ৩৭, জসীমউদ্দীন হলে ৭৪, জিয়াউর রহমান হলে ৮৭, শেখ মুজিবুর রহমান হলে ৬৯, সুফিয়া কামাল হলে ৪০, রোকেয়া হলে ৪৬, কুয়েত মৈত্রী হলে ২৯, ফজিলাতুন্নেছা মুজিব হলে ৩০, অমর একুশে হলে ৮৪, বিজয় একাত্তর হলে ৮৮, এফ রহমান হলে ৭৩ জনসহ এক হাজার ২২৬ জন মনোনয়নপত্র সংগ্রহ করেছেন। সোমবার বিকালে নবাব নওয়াব আলী চৌধুরী সিনেট ভবনের তৃতীয় তলায় অবস্থিত চিফ রিটার্নিং অফিসারের অফিস কার্যালয়ে প্রেস ব্রিফিংয়ে এ তথ্য জানান প্রধান নির্বাচন কমিশনার অধ্যাপক ড. মোহাম্মদ জসীম উদ্দিন। তিনি বলেন, ‘ডাকসুতে বিশ্ববিদ্যালয়ের বৈধ শিক্ষার্থীরা মনোনয়নপত্র সংগ্রহ করেছে। এখানে কেউ কোনো দলীয় পরিচয়ে মনোনয়ন নেয়নি। ভোটগ্রহণের আগের দিন পর্যন্ত কোনো প্রার্থীর নাম অপরাধীর তালিকায় পাওয়া গেলে তাকে প্রার্থিতা থেকে বাদ দেওয়ার সুযোগ আছে।’ তবে কোন পদে কতটি বিক্রি হয়েছে, তা জানাতে পারেননি তিনি। মনোনয়ন ফরম ৩০০ টাকা নির্ধারণ করেছিল নির্বাচন কমিশন।
মনোনয়নপত্র বিতরণ ও গ্রহণের সময় বাড়ল এক দিন : মনোনয়নপত্র বিতরণ ও গ্রহণের সময় এক দিন করে বাড়িয়ে যথাক্রমে ১৯ আগস্ট বিকাল ৫টা এবং ২০ আগস্ট বিকাল ৫টা করা হয়েছে। সোমবার সন্ধ্যায় ডাকসুর চিফ রিটার্নিং অফিসার অধ্যাপক ড. মোহাম্মদ জসীম উদ্দিন এক সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে এ তথ্য জানান। বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়, ‘আমরা আনন্দের সঙ্গে লক্ষ করছি, ২০২৫ সালের ডাকসু নির্বাচন কেন্দ্র করে শিক্ষার্থীদের মধ্যে বিপুল উৎসাহ-উদ্দীপনা সৃষ্টি হয়েছে। আরও লক্ষ করেছি, বিপুলসংখ্যক শিক্ষার্থী মনোনয়নপত্র সংগ্রহের জন্য ভিড় করলে কোনো কোনো হল ও কেন্দ্রীয় দপ্তর থেকে নির্ধারিত সময়ের মধ্যে মনোনয়নপত্র সংগ্রহ করতে পারেননি। এ অবস্থায় গণতান্ত্রিক অধিকারচর্চার সুযোগ সবার জন্য সমান ও সমুন্নত রাখার তাগিদে মনোনয়নপত্র বিতরণ ও গ্রহণের সময় এক দিন করে বাড়িয়ে যথাক্রমে ১৯ আগস্ট বিকাল ৫টা এবং ২০ আগস্ট বিকাল ৫টা করা হলো।’
এর আগে বেলা ১২টায় ‘ঐক্যবদ্ধ শিক্ষার্থী জোট’-এর ব্যানারে মনোনয়নপত্র সংগ্রহ করে ইসলামী ছাত্রশিবিরের প্যানেল। এর ঠিক পরই গণঅধিকার পরিষদের ছাত্র সংগঠন ছাত্র অধিকার পরিষদ মনোনয়নপত্র সংগ্রহ করে। এদিন বাংলাদেশ গণতান্ত্রিক ছাত্র সংসদ (বাগছাস), বাম ছাত্র সংগঠনগুলোর জোট গণতান্ত্রিক ছাত্রজোটের প্যানেল, বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের সাবেক সমন্বয়ক উমামা ফাতেমার নেতৃত্বে স্বতন্ত্র শিক্ষার্থী ঐক্যসহ বেশ কয়েকটি স্বতন্ত্র প্যানেল ফরম সংগ্রহ করেছে। অন্যদিকে ছাত্রদল ব্যক্তিপর্যায়ে মনোনয়নপত্র সংগ্রহ করে। আর এসব প্যানেলের মধ্যে শুধু ইসলামী ছাত্রশিবির, ছাত্র অধিকার পরিষদ এবং ইসলামী ছাত্র আন্দোলন তাদের পূর্ণাঙ্গ প্যানেল ঘোষণা করে। বাকি ছাত্র সংগঠনগুলো আজ তাদের চূড়ান্ত পূর্ণাঙ্গ প্যানেল ঘোষণা করতে পারে।
শুধু মনোনয়নপত্র নিলেন ছাত্রদল নেতারা, প্যানেলে পদ ঠিক করবেন তারেক রহমান : সোমবার দুপুরের পর থেকে জাতীয়তাবাদী ছাত্রদলের একাধিক নেতাকে আলাদা আলাদাভাবে মনোনয়নপত্র সংগ্রহ করতে দেখা যায়।
ছাত্রদলের নেতারা জানান, সংগঠন থেকে আগ্রহী শিক্ষার্থীদের মনোনয়নপত্র সংগ্রহ করতে নির্দেশনা দেওয়া হয়েছে। এ কারণে তারা একক প্রার্থী হিসাবে মনোনয়নপত্র সংগ্রহ করেছেন। তবে কে কোন পদে প্রার্থী হবেন, সেটি এখনো ঠিক হয়নি। আজ রাতের মধ্যে প্যানেল চূড়ান্ত হতে পারে।
দুপুরের পর ভিপি পদে মনোনয়নপত্র নেন বিএম কাউসার, আবিদুল ইসলাম খান, মমিনুল ইসলাম জিসানসহ একাধিক নেতা। বিশ্ববিদ্যালয় ছাত্রদলের অন্য নেতাদের মধ্যে ওবায়দুল্লাহ রেদওয়ান সাহিত্য ও সংস্কৃতি সম্পাদক এবং জারিফ রহমান তথ্য ও গবেষণা সম্পাদক পদে মনোনয়নপত্র নিয়েছেন বলে জানা গেছে। বিকাল সাড়ে ৩টার দিকে জিএস পদে মনোনয়নপত্র নিতে আসেন তানভীর বারী হামিম। তার সঙ্গে আসা নেতাকর্মীরা স্লোগান দিতে দিতে সিনেট ভবনে প্রবেশ করেন। ছাত্রদলের জসীমউদদীন হল শাখার আহ্বায়ক তানভীর বারী হামিম বলেন, জাতীয়তাবাদী ছাত্রদলের প্যানেল এখনো চূড়ান্ত হয়নি। আজ রাতে আমাদের প্যানেল চূড়ান্ত হবে। তবে আজ যেহেতু মনোনয়নপত্র নেওয়ার শেষ দিন (আগের ঘোষণা), তাই শিক্ষার্থীদের সঙ্গে নিয়ে মনোনয়নপত্র সংগ্রহ করেছি। ১৭ বছরে ফ্যাসিবাদী আমলে শিক্ষার্থীদের পক্ষ থেকে যারা রাজপথে ছিল, তাদের নিয়েই প্যানেল চূড়ান্ত করা হবে। ‘টুগেদার উই উইল মেক আওয়ার ডিউ প্রাউড অ্যাগেইন’ স্লোগানে আমরা এবারের ডাকসুতে এগিয়ে যেতে চাই। আমরা বিশ্বাস করি, ছাত্রদল বিপুল ভোটে জয়লাভ করে ডাকসুতে নেতৃত্ব দেবে।
প্যানেল চূড়ান্তে দেরি হওয়ার বিষয়ে এক প্রশ্নের জবাবে তানভীর বারী হামিম বলেন, ছাত্রদল বৃহৎ একটি ছাত্র সংগঠন। দুই দশকে অনেক শিক্ষার্থী ত্যাগ স্বীকার করে আসছেন। ২৮টি পদের বিপরীতে ছাত্রদলের প্রায় ৪০০ প্রার্থী রয়েছেন। যোগ্যতায় কেউ কারও থেকে পিছিয়ে নেই। যে কারণে চূড়ান্ত হতে কিছুটা বিলম্ব হচ্ছে। মনোনয়নপত্র সংগ্রহ শেষে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় ছাত্রদলের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক আবিদুল ইসলাম খান সাংবাদিকদের বলেন, আমরা এখন শুধু মনোনয়নপত্র সংগ্রহ করছি। তবে কারা কোন পদে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করবেন, সেই চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমান দেবেন। কেন্দ্রীয় সিদ্ধান্তের ভিত্তিতেই ডাকসুতে ছাত্রদলের প্যানেল গঠিত হবে। ছাত্রদল সূত্রে জানা যায়, ইতোমধ্যে সংগঠনটির ভেতরে সম্ভাব্য প্রার্থী বাছাই নিয়ে আলোচনা হয়েছে। তবে শেষ সময়ে তারেক রহমানের সিদ্ধান্তই হবে চূড়ান্ত। আসন্ন ডাকসু নির্বাচনে আবিদুল ইসলাম খান আবিদ সহসভাপতি (ভিপি) ও শেখ তানভীর বারী হামিম সাধারণ সম্পাদক (জিএস) পদে ছাত্রদলের প্রার্থী হিসাবে মনোনয়ন পেতে পারেন।
এদিকে ফজিলাতুন্নেছা মুজিব হলে ডাকসু নির্বাচনের মনোনয়নপত্র সংগ্রহে মব সৃষ্টি করে বাধা দেওয়ার পরিপ্রেক্ষিতে সংবাদ সম্মেলন করেছে ছাত্রদল। এ সময় ঘটনার সঙ্গে জড়িত সবাইকে বিচারের আওতায় আনার দাবি জানান তারা।
‘বৈষম্যবিরোধী শিক্ষার্থী সংসদ’ প্যানেল : ডাকসু ও হল সংসদ নির্বাচনে ‘বৈষম্যবিরোধী শিক্ষার্থী সংসদ’ প্যানেল থেকে লড়বে গণতান্ত্রিক ছাত্র সংসদ। তবে এই প্যানেল থেকে কে কোন পদে নির্বাচন করবেন, সেটি ঘোষণা করা হয়নি। সূত্র জানায়, ভিপি পদে আব্দুল কাদের, জিএস পদে আবু বাকের মজুমদার এবং এজিএস পদে আশরেফা খাতুন নির্বাচন করতে পারেন। সোমবার বিকালে এই নির্বাচনের মনোনয়নপত্র সংগ্রহের সময় উপস্থিত ছিলেন সংগঠনটির কেন্দ্রীয় আহ্বায়ক আবু বাকের মজুমদার, কেন্দ্রীয় সদস্য সচিব জাহিদ আহসান ও ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় শাখার আহ্বায়ক আব্দুল কাদেরসহ সংগঠনের অন্য নেতারা উপস্থিত ছিলেন।
আবু বাকের মজুমদার বলেন, তফশিল ঘোষণার পর থেকে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীরা এ নির্বাচনকে স্বাগত জানিয়েছে। আমরাও এই নির্বাচনকে স্বাগত জানিয়েছি। আমরা আশা করছি, একটি শান্তিপূর্ণ পরিবেশে এবং সবার অংশগ্রহণের ডাকসু নির্বাচন পাব। এরই পরিপ্রেক্ষিতে আমরা এই নির্বাচনে অংশগ্রহণ করছি।
বিগত সময়ে আমরা ফ্যাসিবাদী সরকারের বিরুদ্ধে আন্দোলন করেছি। সর্বশেষ জুলাই গণ-অভ্যুত্থানে জীবনের সব সম্ভাবনা একপাশে রেখে আন্দোলন করেছি। ফলে আমরা আশাবাদী-বিশ্ববিদ্যালয়ের সাধারণ শিক্ষার্থীরা তাদের মূল্যবান ভোট দিয়ে আমাদের নির্বাচিত করবে।
শিবিরের অন্তর্ভুক্তিমূলক পূর্ণাঙ্গ প্যানেল ঘোষণা : ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় কেন্দ্রীয় ছাত্র সংসদ (ডাকসু) নির্বাচনে পূর্ণাঙ্গ প্যানেল ঘোষণা করেছে বাংলাদেশ ইসলামী ছাত্রশিবির। সংগঠনটি ভিপি হিসাবে কেন্দ্রীয় প্রকাশনা সম্পাদক ও ঢাবি শাখার সাবেক সাধারণ সম্পাদক আবু সাদিক কায়েম এবং জিএস পদে ঢাবি শাখার বর্তমান সভাপতি এসএম ফরহাদ মনোনয়ন পেয়েছেন। এজিএস পদে ঢাবি শাখার সেক্রেটারি মহিউদ্দিন খান নির্বাচন করবেন। শিবিরের প্যানেলে স্থান পেয়েছেন চার নারী শিক্ষার্থী, জুলাই আন্দোলনে আহত শিক্ষার্থী এবং একজন ক্ষুদ্র নৃ-গোষ্ঠীর শিক্ষার্থী।
মনোনয়নপত্র সংগ্রহ শেষে চিফ রিটার্নিং কর্মকর্তার অফিসের সামনে এক সংবাদ সম্মেলনে প্যানেল ঘোষণা করেন ছাত্রশিবির কেন্দ্রীয় সেক্রেটারি জেনারেল নূরুল ইসলাম সাদ্দাম। প্যানেলে বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি সম্পাদক পদে রয়েছেন ইকবাল হায়দার, কমনরুম, রিডিংরুম ও ক্যাফেটেরিয়া সম্পাদক পদে উম্মে সালমা এবং আন্তর্জাতিকবিষয়ক সম্পাদক পদে খান জসীম, যিনি চলতি বছরের জুলাইয়ে চোখ হারান। সাহিত্য ও সাংস্কৃতিক সম্পাদক পদে রয়েছেন নুরুল ইসলাম সাব্বির, যিনি বর্তমানে ঢাবি শিবিরের অর্থ সম্পাদক হিসাবে দায়িত্ব পালন করছেন। ক্রীড়া সম্পাদক পদে আরমান হোসেন, ছাত্র পরিবহণ সম্পাদক পদে আসিফ আব্দুল্লাহ এবং সমাজসেবা সম্পাদক পদে প্রার্থী হয়েছেন শরিফুল ইসলাম মুয়াজ। এছাড়া গবেষণা ও প্রকাশনা সম্পাদক পদে ঢাবি শিবিরের দপ্তর সম্পাদক সাজ্জাদ হোসাইন খান, ক্যারিয়ার ডেভেলপমেন্ট সম্পাদক পদে মাজহারুল ইসলাম, স্বাস্থ্য ও পরিবেশ সম্পাদক পদে আব্দুল্লাহ আল মিনহাজ এবং মানবাধিকার ও আইনবিষয়ক সম্পাদক পদে সাখাওয়াত জাকারিয়া। ঘোষিত প্যানেলে আরও ১৩টি সদস্য পদ রাখা হয়েছে। সদস্য পদে রয়েছেন সর্বমিত্র চাকমা, ইমরান হোসাইন, বেলাল হোসেন অপু, জয়েন উদ্দিন সরকার তন্ময়, মিফতাহুল হোসাইন আল মারুফ, মাজহারুল ইসলাম মুজাহিদ, রাইসুল ইসলাম, সাবিকুন নাহার তামান্না, শাহিউর রহমান, আফসানা আক্তার, আবদুল্লাহ আল মাহমুদ, রায়হান উদ্দিন ও আনাস বিন মনির।
সাদিক বলেন, আমরা আশাবাদী, আমাদের প্যানেল এবং অন্যান্য ছাত্র সংগঠন ও স্বাধীন অ্যাক্টিভিস্টদের প্যানেল মিলিয়ে এ নির্বাচন একটি প্রাণবন্ত নির্বাচনে রূপ নেবে। জুলাই বিপ্লবের যে আকাঙ্ক্ষা ছিল, তার আলোকে আমরা শিগগিরই আমাদের ইশতেহার শিক্ষার্থীদের সামনে উপস্থাপন করব। তিনি আরও বলেন, আমাদের লক্ষ্য হলো, জুলাই শহীদদের সেই আকাঙ্ক্ষা বাস্তবায়ন করা। তাদের আকাঙ্ক্ষা ছিল একটি ইনসাফভিত্তিক বাংলাদেশ গঠন করা। ক্যাম্পাসে শিক্ষার্থীদের প্রত্যাশার আলোকে আমরা নতুনভাবে ক্যাম্পাসকে ঢেলে সাজাতে চাই। আমরা বিশ্বাস করি, এ কাজ আমরা ইনশাআল্লাহ করতে পারব। শিবিরের ঢাবি শাখার সভাপতি তার নাম ঘোষণা করে বলেন, আমাদের প্যানেলকে একটি ইনক্লুসিভ প্যানেল করার চিন্তা করেছি। সেই চিন্তা থেকেই এভাবে প্যানেল সাজানো হয়েছে। ইনশাআল্লাহ আমরা ভালো করব।
উমামা ফাতেমার নেতৃত্বে ‘স্বতন্ত্র ঐক্যজোট’: ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় (ঢাবি) কেন্দ্রীয় ছাত্র সংসদ (ডাকসু) নির্বাচনে স্বতন্ত্র প্যানেল ঘোষণা করেছেন বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের সাবেক মুখপাত্র (সমন্বয়ক) উমামা ফাতেমা। সোমবার মনোনয়নপত্র গ্রহণের শেষদিনে মনোনয়নপত্র সংগ্রহ করেন তিনি। জানা গেছে, প্যানেলে সহসভাপতি (ভিপি) পদে উমামা ফাতেমা, সাধারণ সম্পাদক (জিএস) পদে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় সাংবাদিক সমিতির সাবেক সভাপতি আল সাদী ভূইয়া, এজিএস পদে সাংবাদিক সমিতির বর্তমান সভাপতি মহিউদ্দিন মুজাহিদ মাহী থাকবেন।
উমামা ফাতেমা বলেন, আমরা ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়কেই প্রাধান্য দিচ্ছি। ডাকসুকে জাতীয় নেতা বানানোর জন্য ব্যবহার করতে চাই না। প্রতি বছর ডাকসু নির্বাচনের ক্যালেন্ডার অনুযায়ী নির্বাচন অনুষ্ঠিত হতে হবে। যেসব শিক্ষার্থীর যথাযথ যোগ্যতা, অভিজ্ঞতা ও প্রয়োজনীয় দক্ষতা রয়েছে, কেবল তাদের নিয়েই সম্পাদক ও সদস্য পদে প্যানেল সাজানো হয়েছে। আজ বেলা ৩টায় তার নেতৃত্বাধীন প্যানেলের নাম ও নীতিমালা আনুষ্ঠানিকভাবে প্রকাশ করা হবে বলে তিনি জানান।
ছাত্র অধিকারের প্যানেল ঘোষণা-ভিপি বিন ইয়ামিন-জিএস সাবিনা : ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় কেন্দ্রীয় ছাত্র সংসদ (ডাকসু) নির্বাচনে প্যানেল ঘোষণা করেছে ছাত্র অধিকার পরিষদ। ভিপি পদে কেন্দ্রীয় সভাপতি বিন ইয়ামিন মোল্লা, জিএস পদে সাবিনা ইয়াসমিন মনোনয়ন পেয়েছেন। এজিএস পদে নাম ঘোষণা করা হয়েছে ঢাবি শাখার সদস্য সচিব রাকিবুল ইসলামের। সোমবার দুপুরে মনোনয়নপত্র সংগ্রহ শেষে চিফ রিটার্নিং কর্মকর্তার অফিসের সামনে এক সংবাদ সম্মেলনে প্যানেল ঘোষণা করেন সংগঠনটির কেন্দ্রীয় সভাপতি বিন ইয়ামিন মোল্লা। তাদের প্যানেলের নাম ‘ডাকসু ফর চেঞ্জ’ এবং স্লোগান হলো ‘ভোট ফর চেঞ্জ’। এছাড়া প্যানেলে বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি সম্পাদক পদে মো. শাকিল খান, সমাজসেবা পদে আরিফুর রহমান মজুমদার, ক্রীড়া সম্পাদক পদে মুক্তার হোসেন, মুক্তিযুদ্ধ ও গণতান্ত্রিক আন্দোলন পদে আশিক হৃদয় আহমেদ, স্বাস্থ্য ও পরিবেশ রাকিব হোসেন গাজী, মানবাধিকার ও আইনবিষয়ক সম্পাদক পদে ইশতিয়াক আহমেদ, গবেষণা ও প্রকাশনা সম্পাদক পদে সিয়াম ফেরদৌস ইমন স্থান পেয়েছেন। ঘোষিত প্যানেলে সদস্য হিসাবে আছেন-রাহাত, রেজোয়ান, মো. মুহিউদ্দীন আহমেদ, কৌফিক আবির, আব্দুল্লাহ আল নোমান, রাকিবুল আলম রুদ্র, মোফাচ্ছেল হক ও মাহতাপ ইসলাম।
ইসলামী ছাত্র আন্দোলনের প্যানেল : ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের কেন্দ্রীয় ছাত্র সংসদ (ডাকসু) নির্বাচনে প্রার্থী হিসাবে মনোনয়নপত্র সংগ্রহ করেছেন ইসলামী ছাত্র আন্দোলনের নেতাকর্মীরা। সোমবার বিকালে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের সিনেট ভবনে মনোনয়নপত্র সংগ্রহ করেন তারা। ফরম সংগ্রহ শেষে সাংবাদিকদের সঙ্গে কথা বলেন সংগঠনের কেন্দ্রীয় সহকারী সেক্রেটারি জেনারেল খায়রুল আহসান মারজান। ইসলামী আন্দোলনের সম্ভাব্য প্রার্থীরা হলেন-ইয়াছিন আরাফাত (ভিপি), খায়রুল আহসান মারজান (জিএস), সাইফ মোহাম্মদ আলাউদ্দিন (জিএস), আবু বকর (শিক্ষা ও গবেষণা), মোহাম্মদ আলী (ইসলামিক স্টাডিজ), প্লাবন আহমেদ (ইইই), আ. রহমান মাহফুজ (ইসলামিক স্টাডিজ), ইলিয়াস তালুকদার (আইবি), জুরাইয়া আক্তার (মলিকুলার সায়েন্স), মুঈনুল ইসলাম (ইসলামের ইতিহাস), ইয়াসিন আরাফাত (সমাজবিজ্ঞান), ইমরান হোসাইন (ব্যাংকিং), ইসমাইল হোসাইন (ইসলামের ইতিহাস), সাব্বির আহমেদ (ইতিহাস), মানসুরুল হক শান্ত (ফিন্যান্স), মোসা. হাবিবা (ভাষাবিজ্ঞান), শাহরিয়ার জাবির (আইন), ওমর ফারুক (ইসলামিক স্টাডিজ), আফজাল হোসাইন সিয়াম (আরবি), নূরুল জান্নাত মান্না (আরবি), ইকরামুল কবির (ইসলামিক স্টাডিজ), আরিয়ান মাহমুদ রাসেল (ইসলামিক স্টাডিজ), মোহাম্মদ রিয়াদ (ওএসএল), রেজাউল করিম (আরবি), এরফান মোহাম্মদ (জার্নালিজম), জাকিয়া মুন (প্রিন্টিং অ্যান্ড পাবলিকেশন), আব্দুর রহিম (ইসলামিক স্টাডিজ) এবং আব্দুর রহমান মাহফুজ (ইসলামিক স্টাডিজ)।
গণতান্ত্রিক ছাত্রজোট : ডাকসু নির্বাচনে অংশ নিতে মনোনয়নপত্র সংগ্রহ করেছেন বামপন্থি ছাত্র সংগঠনগুলোর সমন্বিত জোট গণতান্ত্রিক ছাত্রজোটের নেতাকর্মীরা। তবে তারা প্যানেলের নাম ঘোষণা করেননি। জোটের পক্ষ থেকে ভিপি পদে মনোনয়ন নিয়েছেন শামছুন্নাহার হল ছাত্র সংসদের সাবেক ভিপি শেখ তাসনিম আফরোজ ইমি ও জিএস পদে ছাত্র ইউনিয়নের ঢাবি সভাপতি মেঘমল্লার বসু।
সোমবার বিকালে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের সিনেট ভবনে রিটার্নিং অফিসারের কার্যালয়ে এসে মনোনয়নপত্র নেন তারা। পরে সেখানে সংবাদ সম্মেলনে ছয় দফা দাবি উপস্থাপন করেন ছাত্র ইউনিয়নের ঢাবি শাখার সভাপতি মেঘমল্লার বসু। আজ জোটের পূর্ণাঙ্গ প্যানেল ঘোষণা করা হবে বলে জানান তিনি। জানা যায়, ভিপি পদে শেখ তাসনিম আফরোজ ইমি, জিএস পদে মেঘমল্লার বসু, এজিএস পদে জাবির আহমেদ জুবেল, মুক্তিযুদ্ধ ও গণ-আন্দোলন পদে মোজাম্মেল হক ফরম সংগ্রহ করেছেন। গণতান্ত্রিক ছাত্রজোটের দাবিগুলো হলো- ১. অনতিবিলম্বে আওয়ামী লীগ শাসনামলে শিক্ষার্থী নিপীড়নের সঙ্গে জড়িত সব ব্যক্তির তালিকা প্রকাশ করে তাদের বিশ্ববিদ্যালয় থেকে বহিষ্কার করতে হবে। সব নিপীড়কের প্রার্থিতা বাতিল করতে হবে। ২. জুলাই অভ্যুত্থান চলাকালে ছাত্র হত্যার পক্ষে সম্মতি উৎপাদনকারী নীল দলের শিক্ষকদের হলের প্রভোস্ট পদ থেকে অপসারণ করতে হবে। ৩. রূপরেখা প্রণয়ন কমিটিকে অবিলম্বে বিশ্ববিদ্যালয়ের হলগুলোয় রাজনৈতিক কর্মকাণ্ড পরিচালনার ও নির্বাচনি প্রচারণার নিয়মনীতি কী হবে, সেই বিষয়ে স্পষ্ট নির্দেশনা দিতে ও তা বলবৎ করতে হবে। ৪. ডাকসু নির্বাচনে শিক্ষার্থীদের সর্বোচ্চ অংশগ্রহণ নিশ্চিত করতে নির্বাচনের অন্তত ১৫ দিন আগে থেকে সব পরীক্ষা স্থগিত করতে হবে এবং নির্বাচনের দিন অনাবাসিক শিক্ষার্থীদের উপস্থিতি নিশ্চিত করতে বাড়তি পরিবহণের ব্যবস্থা করতে হবে। ভোটকেন্দ্রের অপর্যাপ্ততা দূর করতে হবে। ৫. অনলাইনভিত্তিক গুজব ও ডিজইনফরমেশনের বিরুদ্ধে বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসনকে শক্ত ব্যবস্থা নিতে হবে। বিশ্ববিদ্যালয়ের নাম ব্যবহার করে খোলা অথচ গুজব ও কুৎসা ব্যবহার করে একটি রাজনৈতিক গোষ্ঠীর এজেন্ডা বাস্তবায়নে রত সব গ্রুপ ও পেজের বিরুদ্ধে প্রশাসনকে আইনানুগ ব্যবস্থা নিতে হবে। ৬. ক্যাম্পাসে নানা ইস্যু কেন্দ্র করে মব পরিস্থিতি সৃষ্টি হলে বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন তা কীভাবে মোকাবিলা করবে, তার সুনির্দিষ্ট রূপরেখা প্রণয়ন করতে হবে।
‘ডিইউ ফার্স্ট’ প্যানেল : বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের সাবেক সমন্বয়ক ও এনসিপি নেতা মাহিন সরকারকে সঙ্গে নিয়ে ‘ডিইউ ফার্স্ট’ প্যানেল ঘোষণা করেছে স্বাধীন বাংলাদেশে ছাত্র সংসদের আহ্বায়ক জামালুদ্দীন মুহাম্মাদ খালিদ। সোমবার (১৮ আগস্ট) সন্ধ্যার দিকে বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন জামালুদ্দীন মুহাম্মাদ খালিদ নিজেই। এর আগে বিকালে মনোনয়ন ফরম সংগ্রহ করেন তারা। এ প্যানেল থেকে সহ-সভাপতি (ভিপি) পদে জামালুদ্দীন মুহাম্মাদ খালিদ, সাধারণ সম্পাদক (জিএস) পদে মো. মাহিন সরকার লড়বেন। এ ছাড়া, সহ-সাধারণ সম্পাদক (এজিএস) পদে লক্ষ্মীপুর জেলা ছাত্রছাত্রী কল্যাণ সমিতির সভাপতি ফাতেহা শারমিন এ্যানি প্রতিদ্বন্দ্বিতা করবেন।
জুবায়ের-মুসাদ্দেকের আংশিক স্বতন্ত্র প্যানেল : ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় কেন্দ্রীয় ছাত্র সংসদ (ডাকসু) নির্বাচনে নিজেদের স্বতন্ত্র প্যানেল ঘোষণা করেছেন বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের সাবেক মুখ্য সমন্বয়ক এবি জুবায়ের ও জুলাই ঐক্যের সংগঠক মুসাদ্দেক আলী ইবনে মুহাম্মদ। ১২-১৩ সদস্যবিশিষ্ট প্যানেলে আব্দুর রহমান আল ফাহাদ, আশিক খানসহ ক্যাম্পাসের পরিচিত মুখগুলো থাকবে বলে জানান তারা। সোমবার (১৮ আগস্ট) ডাকসু মনোনয়নপত্র সংগ্রহের শেষ দিনে বিশ্ববিদ্যালয়ের নবাব নওয়াব আলী চৌধুরী সিনেট ভবনের তৃতীয়তলায় অবস্থিত ডাকসু নির্বাচন অফিস থেকে বের হয়ে এ কথা জানায় তারা।