ইসি রোডম্যাপ ঘোষণা করতে পারে আজ

একগুচ্ছ পরিকল্পনা হাতে নিয়ে প্রস্তুত হয়েছে নির্বাচনী রোডম্যাপ। যা ঘোষণা হতে পারে আজই। নির্বাচন কমিশন দিনের যেকোনো সময় সংবাদ সম্মেলনের মাধ্যমে আনুষ্ঠানিকভাবে এই রোডম্যাপের বিস্তারিত তুলে ধরতে পারেন। এর আগে ইসি সচিব সৈয়দ আখতার আহমেদ একাধিকবার বলেছেন চলতি সপ্তাহেই রোডম্যাপ ঘোষণা হবে। তবে আজকের ঘোষণা নিয়ে নির্বাচন কমিশনের কোনো কর্মকর্তা মুখ খোলেননি। সংস্থাটির জনসংযোগ বিভাগের কর্মকর্তা মো. আশাদুল হক মানবজমিনকে বলেন, রোডম্যাপ নিয়ে আমার কাছে কোনো তথ্য এ মুহূর্তে নেই। তবে সংশ্লিষ্ট সূত্রে জানা গেছে, ত্রয়োদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনের রোডম্যাপের যাবতীয় কার্যক্রম এরই মধ্যে চূড়ান্ত হয়ে গেছে। জানা যায়, ইসি’র এবারের নির্বাচনী রোডম্যাপেও থাকবে দুই ডজনের বেশি নির্বাচনী প্রস্তুতিমূলক কার্যক্রম। এসব কার্যক্রমের মধ্যে গুরুত্ব বিবেচনায় অগ্রাধিকার পাচ্ছে অন্তত ১০টি কার্যক্রম। সেগুলো হলো নির্বাচনী আইন (গণপ্রতিনিধিত্ব আদেশ) সংস্কার, সংসদীয় আসনের সীমানা পুনঃনির্ধারণ, নতুন দলের নিবন্ধন, দল ও অংশীজনের সঙ্গে সংলাপ, সম্পূরক ভোটার তালিকা প্রকাশ, ভোটকেন্দ্র প্রস্তুত, প্রবাসীদের ভোট, নির্বাচনী কর্মকর্তাদের প্রশিক্ষণ, দেশি-বিদেশি পর্যবেক্ষক সংস্থার নিবন্ধন ও আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর সঙ্গে সভা।
রোডম্যাপ ঘোষণার আগেই নির্বাচনী প্রস্তুতিমূলক অনেক কাজই এগিয়ে নিয়েছে নির্বাচন কমিশন। সমপ্রতি ইসি’র নির্বাচনী রোডম্যাপে থাকা কার্যক্রমগুলোর সম্ভাব্য সময়ও জানা গেছে। অক্টোবরের মধ্যে মূল প্রস্তুতির কাজ সীমানা নির্ধারণ, রাজনৈতিক দলগুলোর নিবন্ধন, পর্যবেক্ষক সংস্থার নিবন্ধন, গণপ্রতিনিধিত্ব আদেশ সংস্কার, আচরণবিধিমালা জারি, ভোটার তালিকাসহ সবকিছু চূড়ান্ত হয়ে যাবে। প্রবাসী বাংলাদেশিদের পোস্টাল ব্যালটে ভোট নিতে প্রয়োজনীয় অ্যাপসহ আনুষঙ্গিক কাজ এবং তরুণ ভোটারদের নিয়ে সম্পূরক ভোটার তালিকার কাজ নভেম্বরে শেষ করতে চায় ইসি।
ইসি সূত্র জানায়, গণপ্রতিনিধিত্ব আদেশের (আরপিও) ছোটখাটোসহ অন্তত ৪৪টি সংস্কার চূড়ান্ত পর্যায়ে রয়েছে, এটি আইন মন্ত্রণালয়ে পাঠানো হবে। সেপ্টেম্বর-অক্টোবর-নভেম্বরে দল, অংশীজনের সংলাপ, প্রশিক্ষণ, কর্মকর্তাদের ব্রিফিং, আন্তঃমন্ত্রণালয় সভা, পোস্টাল ব্যালট নিয়ে কার্যক্রম, ম্যানুয়াল ও চূড়ান্ত ভোটার তালিকা মুদ্রণ, ভোটকেন্দ্রের সম্ভাব্য তালিকা ও ভোটগ্রহণ কর্মকর্তাদের প্যানেল প্রস্তুত, নির্বাচনী সরঞ্জাম কেনাকাটা সরবরাহ, বিতরণের পরিকল্পনা রয়েছে।
হালনাগাদের পর খসড়া ভোটার তালিকা চূড়ান্ত হবে ৩১শে আগস্ট। আর সম্পূরক ভোটার তালিকা প্রকাশ করা হবে অক্টোবরে। ৩১শে অক্টোবর ভোটারযোগ্য তরুণসহ বাদ পড়াদেরও জাতীয় নির্বাচনে ভোটের সুযোগ দিতে সম্পূরক তালিকা হবে, যা নভেম্বরে চূড়ান্ত হবে। এ ছাড়া প্রবাসী ভোটারদের প্রথমবারের মতো ভোটাধিকার দিতে অনলাইন নিবন্ধন অ্যাপ ও পোস্টাল ব্যালটের বিষয়টি নভেম্বরের মধ্যে শেষ করার পরিকল্পনা রয়েছে।
আগামী ২৪শে আগস্ট থেকে সংসদীয় এসব আসনের খসড়া সীমানা নিয়ে আপত্তি আবেদনের শুনানি শুরু হবে। সংসদীয় আসনগুলোর মধ্যে এবার ৮৩টি আসন থেকে ১ হাজার ৭৬০টি দাবি আপত্তি আবেদন ইসিতে জমা পড়ে। এগুলো দ্রুত নিষ্পত্তি করে চূড়ান্ত সীমানা প্রকাশের উদ্যোগ নিয়েছে ইসি। চলবে ২৭শে আগস্ট পর্যন্ত। নতুন দলের নিবন্ধন বাছাই শেষে বাদ পড়েছে ১২১টি আবেদন। বাছাইয়ে টিকে থাকা ২২টি দলের ব্যাপারে মাঠপর্যায়ে তদন্ত চলছে। নির্বাচন পর্যবেক্ষণে এবার অন্তত ৩১৮টি দেশি পর্যবেক্ষক সংস্থার আবেদন বাছাই করছে ইসি’র কমিটি। আর নির্বাচনী সরঞ্জাম কেনাকাটা সেপ্টেম্বরের মধ্যে শেষ করার পরিকল্পনা রয়েছে নির্বাচন কমিশনের।
এবার ভোটের সময় নির্বাচনী কর্মকর্তাদের নিরপেক্ষতা নিশ্চিত করতেও পদক্ষেপ নিয়েছে ইসি। সেই লক্ষ্যে ২০১৪, ২০১৮ ও ২০২৪ সালের ভোটের অনিয়ম তদন্তে একটি কমিশনের কাজ চলছে। আলাদাভাবে তিন নির্বাচনে সম্পৃক্তদের বিষয়ে মামলাও হয়েছে। ইতিমধ্যে তিন নির্বাচনের ভোটগ্রহণ কর্মকর্তা, নির্বাহী হাকিমদের তালিকাও সংগ্রহ করছে পুলিশের একটি সংস্থা। নির্বাচন কমিশনও বলছে, অনিয়মে সম্পৃক্ত ছিলেন এমন কর্মকর্তাদের এবার দায়িত্বে রাখা হবে না। সরকারি বিভিন্ন বিভাগের কর্মকর্তা, শিক্ষক, ব্যাংক কর্মকর্তারা দায়িত্বে থাকেন ভোটগ্রহণ কর্মকর্তা হিসেবে। প্রিসাইডিং অফিসার, সহকারী প্রিসাইডিং অফিসার ও পোলিং অফিসার মিলিয়ে প্রায় সোয়া ৯ লাখের মতো লোকবল দরকার হতে পারে আগামী সংসদ নির্বাচনে।
উল্লেখ্য, চলতি মাসে প্রধান উপদেষ্টার ঘোষণার পরপরই শুরু হয়ে যায় নির্বাচনের প্রস্তুতি। তার ঘোষণা অনুযায়ী ২০২৬ সালের ফেব্রুয়ারির প্রথমার্ধে (রমজানের আগে) জাতীয় নির্বাচন অনুষ্ঠিত হবে। সে হিসেবে সংসদ নির্বাচনের জন্য বাকি আছে আর মাত্র পাঁচ মাস। ফলে আইন অনুযায়ী ভোটের ৫০-৬০ দিন আগে ডিসেম্বরের প্রথমার্ধে নির্বাচনের তফসিল ঘোষণার সম্ভাব্য সময় নির্ধারণ করে নির্বাচনের সব ধরনের প্রস্তুতি থাকবে ঘোষণা হতে যাওয়া রোডম্যাপে।