চর্মরোগীদের জন্য আশার আলো: মুসলিম বিজ্ঞানীর নেতৃত্বে ল্যাবে তৈরি হলো বিশ্বের প্রথম মানব ত্বক

অস্ট্রেলিয়ার বিজ্ঞানীরা ল্যাবে তৈরি করলেন বিশ্বের প্রথম সম্পূর্ণ কার্যক্ষম মানব ত্বক, যার রয়েছে নিজস্ব রক্তনালী ব্যবস্থা। এই যুগান্তকারী আবিষ্কার ভবিষ্যতে চর্মরোগ, দগ্ধ হওয়া বা ত্বকের গ্রাফট চিকিৎসায় নতুন দিগন্ত খুলে দিতে পারে।
কুইন্সল্যান্ড বিশ্ববিদ্যালয়ের (University of Queensland) একদল গবেষক স্টেম সেল ব্যবহার করে মানব ত্বকের অনুকৃতি তৈরি করেন। এতে রক্তনালী, কৈশিক ধমনী, চুলের গোড়া, স্নায়ু, বিভিন্ন স্তরের টিস্যু এবং রোগপ্রতিরোধী কোষ বিদ্যমান।
বিশ্বখ্যাত জার্নাল Wiley Advanced Healthcare Materials–এ প্রকাশিত এই গবেষণাটি সম্পূর্ণ হতে সময় লেগেছে ছয় বছর।
গবেষণার নেতৃত্বদানকারী মুসলিম বিজ্ঞানী আব্বাস শাফি বলেন, ‘এটাই এখন পর্যন্ত বিশ্বের সবচেয়ে বাস্তবসম্মত ল্যাব-তৈরি ত্বক মডেল। এর মাধ্যমে রোগসমূহ আরও নির্ভুলভাবে অধ্যয়ন করা এবং চিকিৎসা পরীক্ষার সুযোগ তৈরি হলো।’
তিনি আরও জানান, এর আগে গবেষকরা ত্বকের রোগ ও চিকিৎসা নিয়ে সীমিত পর্যায়ে কাজ করতে পারতেন। কিন্তু এই মডেল বাস্তব মানব ত্বকের মতো হওয়ায় ভবিষ্যতে রোগ বোঝা ও চিকিৎসা উদ্ভাবনে ব্যাপক সহায়তা দেবে।
স্টেম সেল প্রযুক্তির সাম্প্রতিক অগ্রগতি এই গবেষণাকে সম্ভব করেছে। গবেষক দল মানব ত্বকের কোষকে স্টেম সেলে রূপান্তর করে, যা পরবর্তীতে দেহের যেকোনো ধরনের কোষে পরিণত হতে পারে। এসব স্টেম সেল পেট্রি ডিশে রেখে ছোট ছোট ত্বকের প্রতিরূপ তৈরি করা হয়, যেগুলোকে বলা হয় স্কিন অর্গানয়েডস।
পরে একই স্টেম সেল থেকে ক্ষুদ্র রক্তনালী তৈরি করে সেগুলো ওই বৃদ্ধি পাওয়া ত্বকের সঙ্গে যুক্ত করা হয়। ফলে ত্বকটি প্রাকৃতিক ত্বকের মতো স্তর, চুলের গোড়া, রঙ, স্নায়ু, এমনকি নিজস্ব রক্ত সরবরাহ ব্যবস্থাসহ বিকশিত হয়।
সহ-গবেষক অধ্যাপক কিয়ারাশ খসরোতেহরানি বলেন, ‘সোরিয়াসিস, অ্যাটোপিক ডার্মাটাইটিস কিংবা স্ক্লেরোডারমার মতো প্রদাহজনিত ও জেনেটিক চর্মরোগের চিকিৎসায় এই মডেল নতুন সম্ভাবনা তৈরি করবে। চর্মরোগ সাধারণত দীর্ঘস্থায়ী ও কঠিনভাবে নিরাময়যোগ্য। তাই রোগীদের জন্য এটি একটি বড় আশা।’