ট্রাম্পের ওপর ক্ষুব্ধ মোদি, হাত বাড়াচ্ছেন চীনে: বাণিজ্য যুদ্ধ

রাশিয়ার তেল ও অস্ত্র কেনার কারণে মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প ভারতের ওপর অতিরিক্ত ২৫ শতাংশ শুল্ক আরোপের নির্বাহী আদেশ জারি করেন। আগের ২৫ শতাংশ শুল্ক মিলে দেশটির ওপর মোট শুল্ক দাঁড়িয়েছে ৫০ শতাংশ। গতকাল বুধবার থেকে এই শুল্ক কার্যকর হয়েছে।
এরই মধ্যে ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি ঝুঁকে গেছেন চীনের দিকে। এই সপ্তাহে তিনি চীনে এক বিরল সফর শুরু করবেন। এর মাধ্যমে ভারত-চীন সম্পর্কের বরফ গলতে শুরু করেছে বলে মনে করছেন বিশেষজ্ঞরা।
২০১৮ সালের পর প্রথমবারের মতো চীন সফর করছেন মোদি। তিনি চীনের প্রেসিডেন্ট শি জিনপিং আয়োজিত শীর্ষ সম্মেলনে যোগ দেবেন। এই অবস্থায় দুই নেতা ভূরাজনৈতিক সংকট সমাধানে সচেষ্ট হবেন বলে মনে করা হচ্ছে। কারণ, হিমালয় সীমান্তে ভারত-চীন সব সময় উত্তেজনা বিরাজ করে। কিন্তু ট্রাম্পের শুল্ক চাপে ভারত-চীন সম্পর্ক বদলে যাচ্ছে।
মোদি ছাড়াও ওই সম্মেলনে যোগ দেবেন রাশিয়া, পাকিস্তান, ইরান ও মধ্য এশিয়ার নেতারা। বেইজিং এই ব্যাপারে উচ্ছ্বাস প্রকাশ করে বলেছে, সম্মেলনটি হবে সাংহাই সহযোগিতা সংস্থার (এসসিও) সবচেয়ে বড় শীর্ষ সম্মেলন, যা মস্কো-বেইজিং প্রতিষ্ঠিত আঞ্চলিক নিরাপত্তা ক্লাব পুনর্গঠনের লক্ষ্যে কাজ করবে। এই অনুষ্ঠানে ভারতের উপস্থিতি দুই এশীয় শক্তির মধ্যে উষ্ণ সম্পর্কের সবচেয়ে বড় উদাহরণ সৃষ্টি করবে বলে মনে করা হচ্ছে।
বিশ্লেষকরা বলছেন, ট্রাম্পের ‘আমেরিকা ফার্স্ট’ নীতিই এখন দুই এশীয় নেতাকে ঐক্যবদ্ধ হতে বাধ্য করছে। ভারতের বেঙ্গালুরু শহরের তক্ষশীলা ইনস্টিটিউশন গবেষণা কেন্দ্রের ইন্দো-প্যাসিফিক স্টাডিজের প্রধান মনোজ কেউলরামানি বলেন, ট্রাম্পের শুল্ক আরোপের বিরুদ্ধে ভারত ও চীন উভয়ই তাদের নিজস্ব জাতীয় স্বার্থের কথা বিবেচনায় নিয়ে সম্পর্ক স্থিতিশীল করতে চাচ্ছে।
সিএনএন জানায়, ভারতের সঙ্গে সম্পর্কে চিড় ধরার ঘটনায় যুক্তরাষ্ট্র খারাপ পরিণতিতে পড়তে পারে। কারণ, হোয়াইট হাউস প্রশাসন প্রযুক্তি স্থানান্তর ও যৌথ সামরিক মহড়ার মাধ্যমে ভারতের সঙ্গে ধারাবাহিক কৌশলগত সম্পর্ক জোরদার করতে কাজ করে এসেছে। এমনকি ইন্দো-প্রশান্ত মহাসাগরীয় অঞ্চলে (ইন্দো-প্যাসিফিক) চীনের ক্রমবর্ধমান প্রভাব মোকাবিলায়ও ওয়াশিংটনের শক্ত হাত ভারত।
ওয়াশিংটনের স্টিমসন সেন্টার থিঙ্ক ট্যাঙ্কের চীন প্রোগ্রামের পরিচালক ইউন সুন সিএনএনকে বলেন, ‘বেইজিংয়ের দৃষ্টিভঙ্গি হলো, এই বিরোধিতা অবশ্যই শুরু করেছেন ট্রাম্প। ফলে ভারত আর জোর করে বলতে পারছে না ওয়াশিংটন এখনও তাদের শক্তিশালী সমর্থন দিচ্ছে।’
রয়টার্স জানায়, গতকাল থেকে ট্রাম্পের আরোপিত ৫০ শতাংশ শুল্ক ভারতের ওপর কার্যকর করা শুরু হয়েছে। এখন থেকে ভারত বিশ্বের সর্বোচ্চ শুল্ক আরোপের শিকার দেশগুলোর মধ্যে একটি। নতুন শুল্ক কার্যকর হওয়ায় বিশ্বের পঞ্চম বৃহত্তম অর্থনীতির দেশ ভারতের রপ্তানি ও প্রবৃদ্ধির ওপর আঘাত হানতে পারে।
ট্রাম্পের শুল্ক ভারতের পোশাক, রত্ন ও গহনা, জুতা, ক্রীড়াসামগ্রী, আসবাব ও রাসায়নিকের মতো পণ্যের ওপর ব্রাজিল ও চীনের ওপর আরোপিত শুল্কের সমতুল্য। নতুন শুল্ক হাজার হাজার ক্ষুদ্র রপ্তানিকারক ও চাকরি বাজারের জন্য হুমকিস্বরূপ। এমনকি ভারতের প্রবৃদ্ধির ওপর ব্যাপক প্রভাব ফেলবে। মঙ্গলবার ওয়াশিংটনের এক বিজ্ঞপ্তিতে অতিরিক্ত শুল্ক আরোপের বিষয়টি নিশ্চিত হওয়ার পর ইকুইটি বেঞ্চমার্ক তিন মাসের মধ্যে সবচেয়ে খারাপ অবস্থানে নেমে আসে। রুপির দর পতনের ধারা অব্যাহত রয়েছে, যা তিন সপ্তাহের মধ্যে মঙ্গলবার সর্বনিম্ন পর্যায়ে পৌঁছে।