ট্রাম্পের নির্দেশে যুক্তরাষ্ট্রের কেন্দ্রীয় ব্যাংকের গভর্নর লিসা কুককে অপসারণ

মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প ফেডারেল রিজার্ভ বোর্ডের গভর্নর লিসা কুককে তাৎক্ষণিকভাবে অপসারণের ঘোষণা দিয়েছেন। যুক্তরাষ্ট্রের কেন্দ্রীয় ব্যাংককে ঘিরে তাঁর চলমান দ্বন্দ্বে এটি বড় ধরনের পদক্ষেপ হিসেবে দেখা হচ্ছে।
সোমবার (২৫ আগস্ট) রাতে ট্রাম্প নিজস্ব সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম ট্রুথ সোশ্যাল-এ একটি চিঠি প্রকাশ করেন। সেখানে তিনি কুককে বোর্ড অব গভর্নরস থেকে সরানোর সিদ্ধান্ত জানান। ট্রাম্প দাবি করেন, কুক মর্টগেজ চুক্তি সংক্রান্ত বিষয়ে মিথ্যা তথ্য দিয়েছেন এবং সংবিধান অনুযায়ী তাঁকে অপসারণের ক্ষমতা তাঁর রয়েছে।ফেড বা কুক—দু’পক্ষের কেউই এখনো এ ব্যাপারে আনুষ্ঠানিক মন্তব্য করেননি। তবে ১১১ বছরের ইতিহাসে ফেডারেল রিজার্ভ গভর্নরকে এভাবে প্রেসিডেন্ট কর্তৃক অপসারণের ঘটনা নজিরবিহীন বলে মনে করছেন বিশেষজ্ঞরা।
ট্রাম্পের চিঠিতে বলা হয়, কুক মিশিগানে একটি সম্পত্তি কিনে সেখানে অন্তত এক বছর থাকার অঙ্গীকার করেছিলেন। কিন্তু মাত্র দুই সপ্তাহ পর তিনি জর্জিয়ার আরেকটি সম্পত্তির জন্য একই ধরনের অঙ্গীকারনামায় সই করেন। ট্রাম্প লিখেছেন, “প্রথম প্রতিশ্রুতি সম্পর্কে অজ্ঞ থাকা কোনোভাবেই কল্পনীয় নয়।”
গত সপ্তাহেই এই অভিযোগে কুককে পদত্যাগের আহ্বান জানিয়েছিলেন ট্রাম্প। অভিযোগটি প্রথমে প্রকাশ করেন হাউজিং ফাইন্যান্স নিয়ন্ত্রক এবং ট্রাম্প ঘনিষ্ঠ বিল পুল্টে। তিনি এটিকে “অপরাধমূলক রেফারেল” হিসেবে বিচার বিভাগের কাছে পাঠানোর আহ্বান জানান। তবে তদন্ত শুরু হয়েছে কিনা, তা এখনো স্পষ্ট নয়।
কুক গত সপ্তাহে বিবিসিকে দেওয়া এক বিবৃতিতে বলেন, তিনি গণমাধ্যম থেকেই অভিযোগটি জানতে পারেন। চার বছর আগে, ফেডে যোগদানের আগেই, একটি ঋণ আবেদনের সঙ্গে বিষয়টি জড়িত। তিনি বলেন, “আমি কোনো টুইটের কারণে পদত্যাগের জন্য ভয় দেখানোতে রাজি নই। আমার আর্থিক ইতিহাস নিয়ে বৈধ প্রশ্ন উঠলে আমি যথাযথ তথ্য দিয়ে উত্তর দিতে প্রস্তুত।”
ট্রাম্প দীর্ঘদিন ধরে ফেড চেয়ারম্যান জেরোম পাওয়েলকে সুদের হার দ্রুত ও বড় আকারে কমানোর জন্য চাপ দিয়ে আসছেন। কিন্তু পাওয়েল সেই চাপ মানেননি বলে তাঁকে “একগুঁয়ে বোকা” আখ্যা দিয়েছেন ট্রাম্প। যদিও সম্প্রতি পাওয়েল ইঙ্গিত দিয়েছেন, সেপ্টেম্বরে সুদের হার কমানো হতে পারে।
বিশ্লেষকরা মনে করছেন, কুক বা ফেড যদি ট্রাম্পের এই সিদ্ধান্ত মানতে অস্বীকার করেন, তবে হোয়াইট হাউস ও ফেডারেল রিজার্ভের মধ্যে সাংবিধানিক দ্বন্দ্ব তৈরি হতে পারে। ১৯৫১ সালে ফেড মার্কিন সরকারের কাছ থেকে স্বাধীনতা অর্জন করে।
ঘটনার পর এশিয়ার বাজারে মার্কিন ডলার দুর্বল হয়েছে। বিনিয়োগকারীরা ধারণা করছেন, কুকের স্থলাভিষিক্ত কেউ এলে আরও সুদ কমানোর চাপ বাড়তে পারে।