‘উত্তরা ইপিজেডে’ হঠাৎ শ্রমিক উত্তেজনার নেপথ্যে ভারতের কারসাজি ?

গত মঙ্গলবার উত্তর জনপদের একমাত্র অর্থনৈতিক প্রক্রিয়াকরন অঞ্চল উত্তরা ইপিজেডে শ্রমিক, পুলিশ ও সেনাবাহিনীর সাথে সংঘর্ষে ১ জন শ্রমিকের মৃত্যু ও ১০ জন আহত হওয়ার ঘটনা বেশিদূর এগোনোর আগেই স্থানীয়ভাবে ঘটনাটি মিটমাট হয়ে বৃহষ্পতিবার শ্রমিকরা কাজে যোগ দিয়েছে । পরিস্থিতি এখন শান্তিপূর্ণ। আইনশৃংখলাও পূর্ণ নিয়ন্ত্রণে বলে জেলা ও পুলিশ কর্তৃপক্ষ এবং ইপিজেড সূত্র জানিয়েছে । তবে হঠাৎ করে কেন পরিস্থিতি এত উত্তপ্ত হয়ে উঠলো গুলিতে একজন নিহত হওয়ার ঘটনা ঘটলো তা নিয়ে জনমনে নানা প্রশ্ন দেখা দিয়েছে ।
তারা জানতে চায় এই শ্রমিক অসন্তোষের নেপথ্যে কোন অদৃশ্য শক্তির খেলা আছে কি না এবং তারা কৃষি নির্ভর উত্তর জনপদে শিল্পের বিস্তার এবং বিদেশি বিনিয়োগ যাতে আকৃষ্ট না হয় বিশেষ করে চীনা বিনিয়োগকারী গন যেন বাংলাদেশ থেকে মুখ ফিরিয়ে নেয় সে ধরনের কোন তৎপরতার এর অংশ কি না ? মানুষ আরও জানতে চায় বর্তমানে বিদ্যমান সরকার এবং বৃহত্তম রাজনৈতিক বিএনপি এবং নতুন রাজনৈতিক শক্তি এনসিপির প্রতিনিধি দলের চীন সফরের মাধ্যমে ঢাকা বেইজিং এর মধ্যে অর্থনৈতিক মিত্রতা জোরদার হওয়ার বিষয়টিতে ইর্ষাকাতর হয়ে প্রতিবেশি ভারত ও তাদের এদেশীয় মিত্র শক্তির নাশকতার অংশ কি না ?
জানা গেছে, উত্তরা ইপিজেডের সবচেয়ে সফল শিল্প প্রতিষ্ঠান এভারগ্রীন প্রডাক্ট বিডি ’ প্রডাক্টের কয়েকজন শ্রমিক ছাঁটাইকে কেন্দ্র এই উত্তেজনা ও রক্তপাত এই ব্যাপারে বাংলাদেশ রপ্তানী প্রক্রিয়াকরন অঞ্চর বেপজার নিরাপত্তা বিষয়ক নির্বাহী পরিচালক লেঃ কর্নেল আরিফুর রহমানকে প্রধান করে চার সদস্যের একটি তদন্ত কমিটি গঠন করা হয়েছে এবং ঘটনার আদ্যপান্ত খুজে দেখা হচ্ছে।
নীলফামারীর জেলা ও পুলিশ প্রশাসন সুত্র জানিয়েছে , ঘটনার পরদিনই পরিস্হিতি যেন শান্তিপুর্ন থাকে এবং ইপিজেডের সমস্ত কারখানা যেন চালু থাকে এবং শ্রমিকরা যেন কাজে যোগ দিতে পারে সেবিষয়ে সর্বোচ্চ প্রায়োরিটি দেওয়া হয় । বুধবার শ্রমিকদের ২৩ দফা দাবি নিয়ে জেলা প্রশাসন , পুলিশ প্রশাসন ,সেনা কর্তৃপক্ষ, রাজনৈতিক নেতৃবৃন্দ এবং সুশিল সমাজের প্রতিনিধি এবং এভারগ্রীন প্রডাক্ট বিডি কর্তৃপক্ষকে নিয়ে যৌথ আলোচনা সভা অনুষ্ঠিত হয়। মালিক কর্তৃপক্ষ শ্রমিকদের ২৩ দফার মধ্যে যৌক্তিক সবগুলো দাবি মেনে নেওয়ার ঘোষনা দিলে সৃষ্ট অচলাবাস্থার অবসান হয়। বৃৃহষ্পতিবার এভারগ্রীন বাদে সবকটি কারখানার শ্রমিকরা কাজে যোগদেন এবং শনিবার এভার গ্রীনের কার্যক্রম শুরু হয়।
গত শুক্র ও শনিবার বিভিন্নভাবে খোঁজ নিয়ে জানা গেছে , উত্তরে দেশের একমাত্র ইপিজেডে পরিস্থিতি যেন শাান্ত ও স্বাভাবিক থাকে শ্রমিক ও মালিক পক্ষের কেউ যেন বাড়াবাড়ি না করে সেজন্যে প্রধান উপদেষ্টার অফিসের তাগাদা ছিল। জানতে চাইলে উত্তরা ইপিজেডের নির্বাহী পরিচালক মোহাম্মদ আব্দুল জব্বার জানান , উত্তরা ইপিজেডের ২৬টি চালু শিল্প কারখানার উৎপাদিত পণ্য নিয়মিতভাবে বৃটেন , আমেরিকাসহ অন্যান্য দেশেও রপ্তানী হচ্ছে । প্রতিমাসেই বৈদেশিক মুদ্রা আসার হারা বাড়ছে । এই ইপিজেডের নিয়মিত ও অনিয়মিত মিলিয়ে ৪০ হাজার শ্রমিক পরিনত হয়েছে রেমিটেন্স যোদ্ধাই। বর্তমানে নিয়মিত শ্রমিকরা মাসে গড়ে ওভার টাইম ডিউটি কওে গড়ে ১৮ হাজার মত অর্থ আয় করছে। উত্তরের সীমান্তবর্তি একটি মফস্বল শহরের একজন কর্মজীবী শ্রমিক এই টাকায় স্বচ্ছলভাবে জীবন যাপনের জন্য যথেষ্ট বলে মনে করছেন।
তিনি জানান, উত্তরা ইপিজেডে বর্তমানে যে কারখানাগুলো রয়েছে তার বেশিরভাগই চায়না ও হংকং ভিত্তিক প্রতিবেশি ভারতের কোন কারখানা এখানে নেই । এভারগ্রীন প্রডাক্ট বিডি প্রসঙ্গে তিনি জানান , এটিই উত্তরা ইপিজেডের সবচেয়ে বৃহত্তম ও সফল কারখানা । এই একটি কারখানাতেই কাজ করে ৯০০০ হাজার শ্রমিক। তিনি গুলিতে একজন কারখানা শ্রমিকের মৃত্যুর পরও দ্রæত সংকটের সুরাহা হওয়ার বিষযটি খুবই সন্তোষজন এবং উত্তরের শিল্প বিকাশের জন্য ইতিবাচক বলে মনে করেন তিনি। হঠাৎ করে এই উত্তেজনার পেছনে কোন নাশকতা বা অদৃশ্য শক্তির কারসাজি ছিল বা থাকতে পারে বলে মনে রেন কি না এমন প্রশ্নে তিনি বলেন , গঠিত তদন্ত কমিটি এটা বলতে পারবে। নীলফামারীর পুলিশ সুপার বলেন , পরিস্থিতি বর্তমানে শান্ত আছে সব কারখানা খুলেছে শ্রমিকরাা কাজে যোগ দিয়েছে। নীলফামারীর অতিরিক্ত জেলা প্রশাসক জ্যেতি বিকাশ চন্দ্র জানান, উত্তরা ইপিজেড যাতে সচল থাকে শান্তিপুর্ণভাবে শ্রমিকরা কাজে যোগ দিতে পারে সেজন্যে জেলা প্রশাসন সজাগ আছে ।
এদিকে বিএনপি, এনসিপি সহ বিভিন্ন সুশিল সংগঠনের নেতেৃবৃন্দেও সাথে যোগাযোগ করে জানা যায় , তাদের অনেকেই মনে করছেন , উত্তর জনপদ চীরাচরিত মঙ্গা প্রপীড়িত অঞ্চল হিসেবে থাকলে এক শ্রেনীর এনজিও ও বিদেশ নির্ভর সংস্থার ডোনেশন আনতে সুবিধা হবে এমন চিন্তার ধারকরা শ্রমিক অসন্তোষ সৃষ্টির পেছনে থাকতে পারে। এছাড়া প্রতিবেশি ভারত কখনোই চাইবেনা স্বাধীন দেশ হিসেবে বাংলাদেশ শিল্পে ও বৈদেশিক বিনিয়োগে দিনদিন অগ্রসর হোক। উত্তরা ইপিজেডের হঠাৎ শ্রমিক অসন্তোষের পেছনে ভারতের ইন্ধনে স্থানীয় কিছু , বাম ঘরানার রাজনৈতিক শক্তি , কিছু সুশীল মানবাধিকার ও এনজিও গোষ্টির কারসাজি রয়েছে মনে করছেন অনেকেই।