Bangladesh

দিনে ক্ষতি শতকোটি টাকা

রাজধানী ঢাকার সড়ক যানজটে গতিহীন অসহনীয় যানজটে প্রতিদিন ৩২ লাখ কর্মঘণ্টা নষ্ট হচ্ছে, মহানগরীর ৭৩টি মোড়ে আটকে যাচ্ছে যানবাহন, জ্বালানি পুড়ছে প্রায় ১১ হাজার কোটি টাকার :: ২০৩০ সালে সড়কে যানবাহনের গতি মানুষের হাঁটার গতির চেয়েও কমে আসতে পারে

স্পট শনিরআখড়া বাসস্ট্যান্ড। গতকাল শনিবার সরকারি ছুটির দিন। দুপুর ২.৩০ মিনিটে বাসে উঠি। সেখান থেকে কাজলা এক কিলোমিটার পৌঁছে ২.৫০ মিনিটে। অতঃপর বাস মেয়র মো. হানিফ ফ্লাইওভারে উঠে। উল্লেখ্য ফ্লাইওভারে চলাচল করা বাসে প্রতি যাত্রীদের ভাড়ার চেয়ে ৫ টাকা করে অতিরিক্ত দিতে হবে। কাজলা থেকে যাত্রাবাড়ি মোড় এক কিলোমিটার পৌঁছতে ৩.৩০ মিনিট বেজে যায়। অতঃপর বাসে ঘুম। যাত্রাবাড়ি থেকে সায়েদাবাদ হয়ে টিকাটুলির রাজধানী মার্কেটে যখন পৌঁছি ঘড়ির কাঁটায় তখন বিকেল ৫.১০ মিনিট। অতঃপর ফ্লাইওভারেই নেমে পায়ে হেটে অফিস। শনিরআখড়া থেকে টিকাটুলি তিন কিলোমিটার পথ পাড়ি দিতে সময় লেগেছে ২ ঘণ্টা ৪০ মিনিট। টিকাটুলি থেকে গুলিস্তান পৌঁছতে কত সময় লেগেছে তা অবশ্য জানি না এই হলো রাজধানী ঢাকার চিত্র। চোখ ধাঁধানো উন্নয়ন অথচ দিনে দিনে গতি হারাচ্ছে ঢাকা শহর। প্রতিদিনকার যানজট ও যানবাহনের ধীরগতি নিয়তি হয়ে গেছে। বিশ্বের সবচেয়ে ধীরগতির শহরের তালিকায় নাম উঠেছে এই ঢাকার। যানজটের কারণে সময় ও অর্থ নষ্ট হচ্ছে। কর্মস্থলে অবস্থানরত মুহূর্তকে কর্মঘণ্টা হিসেবে বলা হয়। বিশ্বব্যাংকের এক গবেষণায় দেখা গেছে, অসহনীয় যানজটের কারণে প্রতিদিন ৩২ লাখ কর্মঘণ্টা নষ্ট হচ্ছে। বাংলাদেশের রাজধানী ঢাকায় ৭৩টি মোড়ে আটকে যাচ্ছে যানবাহন। এতে করে প্রতিদিন আর্থিক ক্ষতির পরিমাণ দাঁড়ায় প্রায় শত কোটি (৯৮ হাজার কোটি) টাকা। আর জ্বালানি পুড়ছে প্রায় ১১ হাজার কোটি টাকার। একই সঙ্গে যানজটে বসে বসেই হাঁপানি, শ্বাসকষ্টসহ নানা স্বাস্থ্য সমস্যার মুখোমুখি হচ্ছেন। বহুদিন সীসাযুক্ত বাতাসে নিঃশ্বাস নিলে মস্তিষ্কের কর্মক্ষমতা কমে আসে, কিডনি, হৃদযন্ত্র, প্রজননতন্ত্রের কার্যক্রম ক্ষতিগ্রস্ত হয়, রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা কমে যায়। সীসা বিশেষ করে শিশু ও স্কুলগামী শিক্ষার্থীদের বেশি আক্রান্ত করে। যানজটে পড়ে ঘণ্টার পর ঘণ্টা আটকে থাকা শিক্ষার্থী দুর্ভোগের শিকার হচ্ছেন। রাজধানীর আরেকটি বড় সমস্যা ব্যক্তিগত গাড়ি ও রাস্তায় পার্কিং। এসব ব্যক্তিগত গাড়ি রাস্তায় প্রতিবন্ধকতা সৃষ্টি করছে বাড়াচ্ছে যানজট। বিশেষ করে অফিসপাড়া ও শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের সামনের সড়কে একই স্থানে দীর্ঘক্ষণ দাঁড় করিয়ে রাখা হয়। অথবা রাস্তার ওপরই পাকিং করা হয়। এতে বাড়ে যানজট, সৃষ্টি হচ্ছে রাস্তায় ধীরগতি। সম্প্রতি বাবাকে নিয়ে বারডেম হাসপাতালে আসেন হামিদ বিশ্বাস। মোহাম্মদপুর থেকে শাহাবাগের দূরত্ব ছয় কিলোমিটারের মতো। যাওয়ার সময় লেগেছিল দুই ঘণ্টা। আর ফিরতে প্রায় তিন ঘণ্টা। হামিদ বিশ্বাস বলেন, রাস্তায় আমার পাঁচ ঘণ্টা নষ্ট হলো। বাবা আরো অসুস্থ হয়ে যান। রাস্তায় নামলেই রীতিমতো কান্না পায়। মনে হয় যেন কোথাও যাচ্ছি না। শুধু বসেই আছি। সেদিন মনে হচ্ছিল সিএনজি থেকে নেমে দৌড় দেই। জ্যামের কারণে খুব জরুরি কাজ ছাড়া আমি কোথাও যাওয়াই বন্ধ করে দিয়েছি। সাদিয়া আফরোজ একটি বিমান কোম্পানিতে কাজ করেন। দিনকে দিন বাসা থেকে অফিস যাওয়ার জন্য তার সময় বাড়ছে। আগে যে সময় হাতে নিয়ে বের হতেন এখন তার চেয়ে আরো ৩০ মিনিট বেশি হাতে নিয়ে বের হন। শাওন হাওলাদার সিভিল ইঞ্জিনিয়ারিং পাস করেছেন। চাকরি খুঁজছেন। একটি অফিসে চাকরির জন্য ভাইভার সময় ছিল সকাল ১০টা। যাত্রাবাড়ীর বাসা থেকে মহাখালী দূরত্বে সকাল ৭ টায় বের হয়েও ১০ টায় পৌঁছাতে পারেনি মহাখালী। দেরিতে পৌঁছানোর কারণে তাই চাকরিটা আর হলো না।

রাজধানী ঢাকার যানজট কোন মাত্রায় পৌঁছেছে তা এই শহরের বাসিন্দাদের দৈনন্দিন অভিজ্ঞতাই বলে দেয়। কারো কারো রাস্তায় বসে বসে কান্না পাচ্ছে, চুল ছিঁড়তে ইচ্ছে করছেÑ ঢাকাবাসীর অনেকেরই সম্ভবত এমনটা মনে হয়। কেননা ইদানীং মনে হয় এই শহর যেন নড়ছেই না এবং দিনকে দিন পরিস্থিতি আরো খারাপ হচ্ছে।

বেসরকারি উন্নয়ন সংস্থা সেন্টার ফর পলিসি ডায়ালগ (সিপিডি) এক জরিপের তথ্য মতে, রাজধানী ঢাকায় যানজট পরিস্থিতি দিন দিন ভয়াবহ আকার ধারণ করছে। যানজটের কারণে রাজধানীর বাসিন্দাদের ২ ঘণ্টার যাত্রাপথে গড়ে ৪৬ মিনিট নষ্ট হচ্ছে। আর বছরে তাদের গড়ে ২৭৬ ঘণ্টা নষ্ট হচ্ছে যানজটে। ফলে জ্বালানি পুড়ছে, সময় অপচয় হচ্ছে। একই সঙ্গে নষ্ট হচ্ছে উৎপাদনশীলতা। এতে বছরের প্রায় ১১ দিন যানজটের মধ্যেই কাটাতে হয় এই মেগা সিটির প্রত্যেক বাসিন্দার।

কয়েক বছর আগে বুয়েটের অ্যাকসিডেন্ট রিসার্চ ইন্সটিটিউটের করা গবেষণায় তারা হিসেব করে দেখেছেন, ঢাকায় যানজটের কারণে স্বাস্থ্যগত যে সমস্যা তৈরি হয় তার দৈনিক ক্ষতি গড়ে আট কোটি চুয়াত্তর লাখ টাকা। আর ঢাকা শহরের ট্রাফিক সিগনালে দুর্ঘটনার কারণে আর্থিক ক্ষতি দৈনিক এক কোটি পঞ্চান্ন লাখ টাকা।

ইনস্টিটিউট ফর প্ল্যানিং অ্যান্ড ডেভেলপমেন্ট (আইপিডি) তথ্য মতে, ঢাকার পরিবহণ ও যাতায়াত ব্যবস্থায় উদ্বেগজনক হারে ব্যক্তিগত গাড়ির সংখ্যা যেমন বাড়ছে, ঠিক তেমনি নগর এলাকায় পরিবহণ ও যাতায়াত ব্যবস্থায় গণপরিবহণ ব্যবহারকারী ও পথচারীদের যথাযথ গুরুত্ব দেয়া হচ্ছে না। টেকসই পরিবহণ ও যাতায়াত ব্যবস্থা নিশ্চিত করতে নগর এলাকায় ব্যক্তিগত গাড়ির নিয়ন্ত্রণ করা সারা বিশ্বজুড়ে বেগবান হলেও বাংলাদেশে চিন্তা নেই বললেই চলে।

বাংলাদেশ প্রকৌশল বিশ্ববিদ্যালয়ের (বুয়েট) প্রফেসর ও পরিবহণ বিশেষজ্ঞ ড. শামছুল হক বলেন, ঢাকায় দ্রুত চলাচলের সুবিধা নেই। দীর্ঘমেয়াদি ও টেকসই পরিকল্পনা বদলে স্বল্প মেয়াদে সমস্যার সমাধানের চেষ্টা এখানে করা হয়েছে। এখন বড় বড় প্রকল্প নেয়া হয়েছে। কিন্তু ব্যবস্থাপনা ছাড়া শুধু উন্নয়ন প্রকল্প দিয়ে সমস্যার সমাধান হবে না। ঢাকার ওপর চাপ কমাতে বিকেন্দ্রীকরণ দরকার। শহরে ছোট গাড়ি, রিকশা ও মোটরসাইকেল কমাতে হবে। তা না করে আমরা কাজ করছি উল্টো। এর ফলে বিপুল ব্যয়ে প্রকল্প হচ্ছে। কিন্তু সমস্যা যাচ্ছে না।

২০২০ সালে বুয়েটের এক গবেষণায় দেখা যায়, সড়কে ব্যস্ত সময়ে (পিক টাইমে) চলাচল করা যানবাহনের গড় গতি ছিল ঘণ্টায় সাড়ে ছয় কিলোমিটার। ২০২২ সালে এই গতি নেমে এসেছে প্রায় ৪ দশমিক ৮ কিলোমিটারে। উল্টো দিকে শারীরিকভাবে সুস্থ মানুষের হাঁটার গড় গতি প্রতি ঘণ্টায় এর চেয়েও বেশি।

এ দিকে গবেষণা প্রকাশনী সংস্থা প্লাস ওয়ান জার্নাল এক গবেষণায় বলছে, ২০ থেকে ২৯ বছর বয়সী মানুষের হাঁটার গতি ঘণ্টায় ৪ দশমিক ৯ কিলোমিটার। ৩০ থেকে ৫০ ঊর্ধ্ব বয়সী মানুষের হাঁটার গতি ঘণ্টায় ৫ দশমিক ১ কিলোমিটার। ষাটোর্ধ্বদের ক্ষেত্রে এই গতি ঘণ্টায় ৪ দশমিক ৮২ কিলোমিটার। আর সত্তরোর্ধ্ব মানুষ ঘণ্টায় হাঁটতে পারেন ৪ দশমিক ৫ কিলোমিটার। এভাবে বিভিন্ন বয়সী মানুষের গড় হাঁটার গতি ঘণ্টায় ৪ দশমিক ৮৩ কিলোমিটার, যা বর্তমানে পিক টাইমে ঢাকার সড়কে চলা গাড়ির গতির চেয়েও বেশি। ঢাকা শহরের পরিবহণ ও যোগাযোগ ব্যবস্থা দেখে রাজধানী উন্নয়ন কর্তৃপক্ষের (রাজউক) সংশোধিত কৌশলগত পরিবহণ পরিকল্পনায় (আরএসটিপি) আশঙ্কা করা হয়, ২০৩০ সালের দিকে সড়কে যানের গতি মানুষের হাঁটার গতির চেয়েও কমে আসতে পারে। পরিস্থিতি যে দিকে যাচ্ছে তাতে ভবিষ্যতে ঢাকার সড়কের পরিস্থিতি আরো খারাপ হতে পারে।

১৫২টি দেশের ১ হাজার ২০০টির বেশি শহরে যান চলাচলের গতি বিশ্লেষণে এই চিত্র উঠে এসেছে। যুক্তরাষ্ট্রের ন্যাশনাল ব্যুরো অব ইকোনমিক রিসার্চ প্রকাশিত একটি গবেষণা প্রতিবেদন থেকে এসব তথ্য জানা গেছে। তিন লাখের বেশি মানুষের বসবাস রয়েছে, এমন সব শহরে গাড়িতে বিভিন্ন গন্তব্যে যেতে কত সময় লেগেছে, সেই তথ্য গুগল ম্যাপ থেকে সংগ্রহ করে গবেষণায় বিশ্লেষণ করা হয়েছে। এ ক্ষেত্রে সপ্তাহের বিভিন্ন দিন এবং দিনের বিভিন্ন সময়ে যাতায়াতের তথ্য নেয়া হয়েছে।

গবেষণায় সবচেয়ে বেশি গতির শহর হিসেবে যুক্তরাষ্ট্রের মিশিগান অঙ্গরাজ্যের ফ্লিন্ট শহরের নাম এসেছে। বিশ্বের সবচেয়ে বেশি গতির ১০০ শহরের মধ্যে ৮৬ টিই যুক্তরাষ্ট্রের। প্রতিবেদনে সবচেয়ে দ্রুতগতির যে ২০টি শহরের নাম এসেছে, তার মধ্যে ১৯টি যুক্তরাষ্ট্রের। একটি কানাডার অন্টারিও অঙ্গরাজ্যের উইন্ডসর। সবচেয়ে ধীরগতির ২০টি শহরের তালিকায় ঢাকার পরে রয়েছে নাইজেরিয়ার দুই শহর লাগোস ও ইকোরোদু। এরপরে রয়েছে ফিলিপাইনের রাজধানী ম্যানিলা। ধীরগতির শহরের তালিকায় ঢাকা ছাড়াও বাংলাদেশের দুই শহর ময়মনসিংহ (৯ম) ও চট্টগ্রাম (১২তম) রয়েছে। ভারতের কলকাতা, মুম্বাইসহ আটটি শহর রয়েছে এই তালিকায়। গবেষণায় দেখা গেছে, ধনী দেশগুলোর শহরে গাড়িতে চলাচল দরিদ্র দেশগুলোর তুলনায় ৫০ শতাংশের মতো দ্রুত হয়। এটা সম্ভব হয় ধনী দেশের শহরগুলোতে বড় বড় রাস্তা এবং অনেক ফাকা জায়গা থাকার কারণে। এর ফলে রাস্তায় বেশি গাড়ি নেমেও যানজট ছাড়া চলতে পারে।

গবেষণাটির ওপর ভিত্তি করে যুক্তরাষ্ট্রভিত্তিক সাময়িকী টাইম একটি প্রতিবেদন প্রকাশ করে। এতে বিশ্বের সবচেয়ে ধীরগতি ও দ্রুতগতির দুই শহরে চলাচলে কেমন সময় লাগে, তার একটি উদাহরণ দেয়া হয়। বলা হয়, ঢাকার হজরত শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দর থেকে ৯ মাইল দূরের গুলশানের বিচারপতি সাহাবুদ্দীন আহমদ পার্কে গাড়িতে যেতে সময় লাগে গড়ে ৫৫ মিনিট। সেখানে যুক্তরাষ্ট্রের মিশিগান অঙ্গরাজ্যের ফ্লিন্ট শহরে একই দূরত্ব যেতে সময় লাগে মাত্র ৯ মিনিট। দুই কোটি মানুষের শহর ঢাকা আর চার লাখ মানুষের শহর ফ্লিন্টে যাতায়াতে সময়ের এই ব্যবধান শুধু গাড়ির চাপের কারণে নয়, এখানে অন্যান্য বিষয়ও রয়েছে। যার ফলে মধ্যরাতেও ঢাকায় ওই দূরত্বে চলাচল করতে আধা ঘণ্টা লাগে, যা বিশ্বের সবচেয়ে দ্রুতগতির শহরে প্রয়োজনীয় সময়ের তিন গুণ বেশি। গবেষণা প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, রাস্তায় চলাচলের গতি ১ দশমিক ৩ শতাংশ বাড়াতে পারলে দেশের মোট দেশজ উৎপাদন (জিডিপি) ১০ শতাংশ বাড়ে।

বুয়েটের অ্যাকসিডেন্ট রিসার্চ ইন্সটিটিউটের সাবেক পরিচালক গণপরিবহণ বিশেষজ্ঞ প্রফেসর মো. হাদিউজ্জামান বলছেন, ঢাকা শহরের হৃৎস্পন্দন ভয়াবহভাবে কমে গেছে। একজন সুস্থ মানুষের হাঁটার গতির চেয়েও কম। ঢাকায় এখন একজন সুস্থ মানুষ হেঁটে গাড়ির আগে যেতে পারবেন। ঢাকার যানযটে পাঁচ ধরনের আর্থিক ক্ষতির মুখোমুখি হতে হয়। এর মধ্যে দুই ধরনের আর্থিক ক্ষতি হচ্ছে যানজট থেকে সৃষ্ট ঢাকাবাসীদের স্বাস্থ্যগত জটিলতা এবং দুর্ঘটনার কারণে। স্বাস্থ্যগত সমস্যার রয়েছে আর্থিক ক্ষতি। যাত্রীরা যখন দীর্ঘসময় রাস্তায় বসে আছে, তাদের মধ্যে এক ধরনের মনস্তাত্ত্বিক অস্থিরতা কাজ করে। ট্রাফিক পুলিশ যখন যাওয়ার ইশারা দেয়া তখন যাওয়ার জন্য সবার মধ্যে যে প্রতিযোগিতা তৈরি হয় কে কার আগে যেতে পারে, সিগনাল বন্ধ হওয়ার আগেই টান দিয়ে চলে যাওয়ার চেষ্টা, এই মনস্তাত্ত্বিক অস্থিরতার কারণ দুর্ঘটনা হচ্ছে। এরও একটা আর্থিক ক্ষতি আছে।

বক্ষব্যাধি বিশেষজ্ঞ প্রফেসর ডা. আব্দুর রাজ্জাক বলেছেন, ঢাকার যানজট বেশ কিছু স্বাস্থ্য সমস্যার কারণ। যানযট থেকে সৃষ্ট দূষণ ফুসফুসের ক্ষতি করে। তিনি বলছেন, যানবাহন যখন এক যায়গায় অনেক সময় ধরে আটকে থাকে তখন দূষিত ধোঁয়া ওই জায়গাকেন্দ্রিক হয়ে ওঠে, কারণ আমরা যানজটে গাড়ির ইঞ্জিন চালু রাখি। গাড়ি চলমান অবস্থায় ধোঁয়া বাতাসে উড়ে যায়। এজন্য ট্রাফিক জ্যামে বসে থাকাকালীন একজন মানুষ দূষণে বেশি এক্সপোজড হচ্ছেন। দূষণের কারণে ফুসফুসের অসুখসহ নানা অসুখ হচ্ছে। সে সম্পর্কে ধারণা দিয়ে তিনি বলছেন, গাড়ির ধোঁয়ায় রয়েছে সীসা। এছাড়া গাড়ি এক যায়গায় আটকে থাকার কারণে যে ধোঁয়া নির্গত হয় এতে কার্বন মনোক্সাইড, ডাইঅক্সিন, নাইট্রিক অক্সাইড, সালফার অক্সাইড এরকম নানা গ্যাস বাতাসের সাথে মানুষের ফুসফুসে চলে যাচ্ছে। এতে করে সুস্থ ফুসফুসেও শ্বাসকষ্ট হয়। দীর্ঘদিন এই গ্যাস দ্বারা দূষিত বাতাসে নিশ্বাস নিতে থাকলে এসব গ্যাস রক্তে মিশে যায় তখন তা ফুসফুসের স্থায়ী ক্ষতি করে। ফুসফুসের রোগ যেমন হাঁপানি, ক্রনিক অবস্ট্রাক্টিভ পালমোনারি ডিজিজ, ইন্টারস্টিসিয়াল লাঙ ডিজিজের প্রবণতা বেড়ে যায়। এমনকি ফুসফুসে ক্যান্সারও হতে পারে।

Show More

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Related Articles

Back to top button