বিদ্রোহী হলে নেয়া হবে শাস্তিমূলক ব্যবস্থা প্রতি আসনে একক প্রার্থী দেবে বিএনপি

বিজয়ী হওয়ার মতো সম্ভাবনা থাকা, এলাকায় জনপ্রিয়, ক্লিন ইমেজসম্পন্ন এবং আন্দোলন-সংগ্রামে মাঠে ছিলেন- মূলত এই ক্রাইটেরিয়ার ভিত্তিতে প্রার্থী চূড়ান্ত করবে দল।
ব্যাপক যাচাই-বাছাইয়ের মধ্য দিয়ে এবার প্রতি আসনে দলীয় একক প্রার্থী মনোনয়ন দেবে বিএনপি। এ ক্ষেত্রে দলটি কোনো ছাড় দেবে না। কোনো আসনে কেউ বিদ্রোহী হলে, তার বিরুদ্ধে নেয়া হবে শাস্তিমূলক ব্যবস্থা।
জানা গেছে, দলীয় প্রার্থী বাছাই করতে ইতোমধ্যে একাধিক জরিপও সম্পন্ন করেছে বিএনপি । তবে প্রার্থী বাছাই প্রক্রিয়া তথা দলীয় প্রার্থী এখনো চূড়ান্ত করা হয়নি। দলের দায়িত্বশীল একাধিক সূত্রে জানা গেছে, প্রতিটি আসনে একাধিক প্রার্থী থাকায় তফসিলের আগে সম্ভাব্য প্রার্থীদের একটি প্রাথমিক তালিকা এবং তফসিলের পর প্রার্থিতা চূড়ান্ত করবে বিএনপি। বিজয়ী হওয়ার মতো সম্ভাবনা থাকা, এলাকায় জনপ্রিয়, ক্লিন ইমেজসম্পন্ন এবং আন্দোলন-সংগ্রামে মাঠে ছিলেন- মূলত এই ক্রাইটেরিয়ার ভিত্তিতে প্রার্থী চূড়ান্ত করবে দল।
নির্বাচন কমিশন (ইসি) ঘোষিত রোডম্যাপ অনুযায়ী আগামী বছরের ফেব্রুয়ারির প্রথমার্ধে ত্রয়োদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচন অনুষ্ঠিত হবে। আর ডিসেম্বরের প্রথমার্ধে তপশিল দেবে ইসি। এমন অবস্থায় নির্বাচন সামনে রেখে দল থেকে এখন পর্যন্ত কারো মনোনয়ন চূড়ান্ত করা না হলেও বিএনপির সম্ভাব্য প্রার্থীরা কেউ বসে নেই। প্রতিটি নির্বাচনী আসনেই মনোনয়নপ্রত্যাশী একাধিক প্রার্থী গণসংযোগে ব্যস্ত রয়েছেন। তারা উঠান বৈঠক, ৩১ দফার লিফলেট বিতরণ, বৃক্ষরোপণ, পরিষ্কার-পরিচ্ছন্নতা কার্যক্রম, কর্মিসভাসহ সাংগঠনিক, ধর্মীয় ও সামাজিক নানা অনুষ্ঠানের মধ্য দিয়ে নির্বাচনী মাঠ চষে বেড়াচ্ছেন। জনসম্পৃক্ততামূলক নানা কর্মকাণ্ড চালিয়ে যাচ্ছেন। মসজিদ-মন্দিরে প্রয়োজনীয় সহায়তা দিচ্ছেন। মনোনয়ন চূড়ান্ত হওয়ার আগেই একেবারে ইউনিয়ন পর্যন্ত প্রতিটি জায়গায় তারা পৌঁছানোর চেষ্টা করছেন। অবশ্য ইতোমধ্যে যাদের অবস্থান অনেকটাই স্পষ্ট এবং যারা মনোনয়ন পেতে যাচ্ছেন, তারা আর পেছনে ফিরে না তাকিয়ে পুরোদমে নির্বাচনের মাঠে রয়েছেন। আর যাদের অবস্থান এখনো স্পষ্ট নয়, তারা দল থেকে যাতে চূড়ান্ত সিগন্যাল পেতে পারেন, সে জন্য কেন্দ্রেও দৌড়ঝাঁপ অব্যাহত রেখেছেন। কেউ কেউ দলের হাইকমান্ডেরও দৃষ্টি আকর্ষণের চ
বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য সালাহউদ্দিন আহমদ এ বিষয়ে বলেন, প্রতিটি আসনে বিএনপির অনেক প্রতিদ্বন্দ্বী প্রার্থী রয়েছে। সুতরাং প্রার্থী চূড়ান্ত করতে আমাদের একটা সিলেকশন ক্রাইটেরিয়া থাকবে। ব্যাপক পরিসরে যাচাই-বাছাইয়ের মধ্য দিয়ে প্রতি আসনে এবার একক প্রার্থী মনোনয়ন দেয়া হবে।
বিএনপি এখনো প্রার্থী বাছাইয়ের প্রক্রিয়া (স্ক্রুটিনি) শুরু করেনি জানিয়ে তিনি বলেন, প্রার্থী বাছাইয়ের ক্ষেত্রে এলাকায় তার জনপ্রিয়তা, যোগ্যতা-মেধা, মানুষের কাছে গ্রহণযোগ্যতা, ফ্যাসিবাদবিরোধী আন্দোলন-সংগ্রামে ভূমিকাকে গুরুত্ব দেয়া হবে। পাশাপাশি তারুণ্যের রাজনৈতিক ভাবনাকে ধারণ করতে বিভিন্ন জায়গায় তারুণ্যের প্রতিনিধিত্বও নিশ্চিত করা হবে। মেধাবীদের পাঠশালা হবে আগামীর জাতীয় সংসদ। সে ক্ষেত্রে বিদ্যমান প্রার্থীরা এবং বিভিন্ন এলাকায় আগের যারা রাজনীতিবিদ আছেন, তাদের বাইরেও কতটা যাওয়া যাবে, সেটাও প্র্যাকটিক্যালি দেখা হবে। এগুলো সব মিলিয়ে প্রার্থী চূড়ান্ত করা হবে।
দলীয় সূত্রে জানা গেছে, বিএনপি মাঠ জরিপের মাধ্যমে প্রার্থী বাছাই করছে। প্রাথমিক জরিপ কাজ সম্পন্ন হয়েছে। কোন কোন আসনে সম্ভাব্য প্রার্থী কারা এবং তাদের মধ্যে বিজয়ী হওয়ার সম্ভাবনা কার, কে সংশ্লিষ্ট এলাকায় জনপ্রিয়, ইমেজ কার ভালো এবং আন্দোলন-সংগ্রামে কে মাঠে ছিলÑ এসব ক্রাইটেরিয়ার ভিত্তিতে একাধিক জরিপ করা হয়েছে। বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমান তার নিজস্ব এবং দলীয় নেটওয়ার্কের মাধ্যমে নিজেই এই প্রক্রিয়া দেখভাল করছেন। পরিকল্পনা অনুযায়ী, নির্বাচনের শিডিউল ঘোষণার পরপরই ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমানের নেতৃত্বে স্থায়ী কমিটির সদস্যদের নিয়ে গঠিত বিএনপির পার্লামেন্টারি বোর্ডের সদস্যরা দলীয় প্রার্থী চূড়ান্ত করবেন।
বিএনপি আগামী নির্বাচনে ক্লিন ইমেজের প্রার্থিতা নিশ্চিত করতে চায়। একইসাথে বিতর্কিত কাউকে মনোনয়ন না দেয়ার নীতিগত সিদ্ধান্ত রয়েছে দলটির। সে ক্ষেত্রে একাধিকবার নির্বাচন করা অনেক পুরনো মুখ এবার প্রার্থিতা থেকে বাদ পড়ে যেতে পারেন। পাশাপাশি তারুণ্যের প্রতিনিধিত্ব নিশ্চিত করতে শতাধিক আসনে তরুণ প্রার্থীকে প্রাধান্য দেয়া হতে পারে।
মুন্সীগঞ্জ-২ আসনে মনোনয়নপ্রত্যাশী বিএনপির যুগ্ম মহাসচিব অ্যাডভোকেট আবদুস সালাম আজাদ বলেন, দলের ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান যাকে যোগ্য মনে করবেন তাকেই তিনি আগামী নির্বাচনে মনোনয়ন দেবেন। দলের জন্য আমার সংগ্রাম, ত্যাগতিতিক্ষা নতুন করে প্রমাণের কিছু নেই। বিএনপিই আমার শেষ ঠিকানা। দল যখন যেখানে দায়িত্ব দেবে, সেখানেই সবটুকু উজাড় করে দেবো। নির্বাচনী এলাকার জনগণের পাশে সবসময় ছিলাম, এখনো তাদের পাশে আছি।
পটুয়াখালী-৩ আসনে মনোনয়নপ্রত্যাশী বিএনপির নির্বাহী কমিটির সদস্য ও সাবেক ছাত্রনেতা হাসান মামুন বলেন, জনসম্পৃক্ত নানা কর্মসূচি নিয়ে এলাকার মানুষের পাশে অতীতের মতোই নিবিড়ভাবে রয়েছি। জনগণের সীমাহীন ভালোবাসা পাচ্ছি। আগামীতে আমার এলাকার জনগণ ধানের শীষের যোগ্য প্রার্থীকে নির্বাচন করতে চায়। আমার দৃঢ় আত্মবিশ্বাস, দল যদি আমাকে মনোনয়ন দেয়, আমি বিজয় নিয়ে ঘরে ফিরতে পারব।
চট্টগ্রাম-১ আসনে মনোনয়নপ্রত্যাশী মিরসরাই উপজেলা বিএনপির সাবেক আহ্বায়ক শাহীদুল ইসলাম চৌধুরী বলেন, নেতাকর্মীদের সাথে নিয়ে যেভাবে জীবনবাজি রেখে স্বৈরাচারবিরোধী আন্দোলন-সংগ্রামে রাজপথে ছিলাম, এখন একইভাবে জনগণের সুখে-দুঃখে তাদের পাশে রয়েছি। কেবল দলীয় কর্মসূচি পালনই নয়, জনসম্পৃক্ততামূলক নানা কর্মকাণ্ড চালিয়ে যাচ্ছি। এক লাখ বৃক্ষরোপণের কর্মসূচি হাতে নিয়েছি। মসজিদ-মন্দিরে প্রয়োজনীয় সহায়তা দিচ্ছি। ঘর নির্মাণ করে দেয়াসহ গরিব-দুখীদের সাধ্যমতো সহায়তার চেষ্টা করছি। আশা করছি, দলের ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান যোগ্যপ্রার্থীকেই আগামীতে মনোনয়ন দেবেন। নরসিংদী-৪ আসনে মনোনয়নপ্রত্যাশী স্বেচ্ছাসেবক দলের সাবেক কেন্দ্রীয় সাধারণ সম্পাদক আবদুল কাদির ভূঁইয়া জুয়েল বলেন, জনগণের ভালোবাসাই একজন রাজনীতিবিদের মূল সম্পদ। নানা কর্মকাণ্ডের মধ্য দিয়ে আমি আমার নির্বাচনী এলাকার মানুষের কাছ থেকে ভালোবাসা এবং সমর্থন পাচ্ছি। দল যদি আমাকে যোগ্য মনে করে, তাহলে আগামী নির্বাচনে ইতিবাচক ফল উপহার দিতে পারব বলে আশা করছি।
নওগাঁ-৩ আসনে মনোনয়নপ্রত্যাশী বদলগাছী উপজেলা বিএনপির সভাপতি ও কেন্দ্রীয় কৃষক দলের যুগ্ম সম্পাদক ফজলে হুদা বাবুল বলেন, ফ্যাসিবাদবিরোধী দীর্ঘ আন্দোলন-সংগ্রামজুড়ে রাজপথে ছিলাম। সাংগঠনিক কর্মকাণ্ডের পাশাপাশি জনগণের সাথেও সম্পৃক্ত রয়েছি। সুখে-দুঃখে তাদের পাশে আছি। আশা করছি, আগামী নির্বাচনে দলের ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান যোগ্যপ্রার্থীকেই মনোনয়ন দেবেন।