যে কারণে ইতালি, জাপানে কর্মী যাওয়ার হার বেড়েছে

প্রতি বছর এক লাখ কর্মী পাঠানোর টার্গেট নিয়ে মন্ত্রণালয়ে ‘জাপান সেল’
তবে এই দেশ দুটোতে কর্মী যাওয়ার সংখ্যা বাড়ার পাশাপাশি অভিবাসন ব্যয়ও অনেক ক্ষেত্রে বাড়ছে বলে অভিযোগ উঠছে।
মধ্যেপ্রাচ্যের দেশগুলোতে কর্মী যাওয়ার হার কমলেও সাম্প্রতিক সময়ে ইউরোপের দেশ ইতালিতে যাওয়ার সংখ্যা বেড়েছে। শুধু ইতালি নয়, এশিয়ার অন্যতম দেশ জাপানেও দিন দিন বাড়ছে কর্মী যাওয়ার সংখ্যা। তবে এই দেশ দুটোতে কর্মী যাওয়ার সংখ্যা বাড়ার পাশাপাশি অভিবাসন ব্যয়ও অনেক ক্ষেত্রে বাড়ছে বলে অভিযোগ উঠছে।
এ দিকে তিন ক্যাটাগরিতে জাপানে প্রতি বছর এক লাখ শ্রমিক পাঠানোর টার্গেট নিয়ে কার্যক্রম শুরু করেছে প্রবাসী কল্যাণ ও বৈদেশিক কর্মসংস্থান মন্ত্রণালয়। ইতোমধ্যে মন্ত্রণালয় থেকে জাপানের শ্রমবাজারের জন্য আলাদা একটি সেলও গঠন করা হয়েছে। নাম দেয়া হয়েছে ‘জাপান সেল’।
জনশক্তি কর্মসংস্থান ও প্রশিক্ষণ ব্যুরোর পরিসংখ্যান থেকে দেখা যায়, চলতি বছরের আগস্ট মাস পার হয়ে গেলেও কর্মী যাওয়ার পরিসংখ্যানের ঘরে মে-২০২৫ পর্যন্ত উল্লেখ রয়েছে। মন্ত্রণালয়ের উপদেষ্টা ড. আসিফ নজরুলের পিএস সারওয়ার আলম (সাবেক) দায়িত্বে থাকার সময় বিদেশগামী কর্মীদের পরিসংখ্যান প্রতি মাসেরটা প্রতি মাসেই যেন আপডেট থাকে সে ব্যাপারে তিনি সংশ্লিষ্টদের নির্দেশনা দিয়েছিলেন। কিন্তু তার সেই নির্দেশনার কোনো আপডেট প্রতিবেদন জনশক্তি কর্মসংস্থান ব্যুরোর কর্মকর্তারা আদৌ আমলে নেননি। সম্প্রতি মন্ত্রণালয়ের দক্ষ এই কর্মকর্তাকে সিলেটের জেলা প্রশাসক হিসেবে নিয়োগ দেয়া হয় এবং তিনি সেখানে যোগদানও করেন।
জানুয়ারি থেকে মে-২০২৫ পর্যন্ত সময়ের মধ্যে বৈধভাবে জনশক্তি ব্যুরোর স্মার্ট কার্ড নিয়ে সৌদি আরব, দুবাইসহ বিভিন্ন দেশে পাড়ি জমিয়েছেন ৪ লাখ ২০ হাজার ৭২১ জন কর্মী। এর মধ্যে সর্বোচ্চ সংখ্যক কর্মী গিয়েছে মে মাসে- এক লাখ ৫ হাজার ৪০০ জন। এর মধ্যে মধ্যপ্রাচ্যের দেশগুলোতে তুলনামূলকভাবে কর্মী যাওয়ার সংখ্যা কমেছে। তবে সৌদি আরবে শ্রমিক যাওয়ার হার বেশি থাকলেও সেখানে কর্মীদের বেতন না পাওয়ার অভিযোগও বেশি। ইউরোপের দেশ ইতালিতে যেতে আগে দুবাই, লিবিয়া হয়ে সাগরপথে পাড়ি দেয়ার সংখ্যা বেশি হলেও এখন ওই দেশে বৈধভাবেই কর্মী যাচ্ছে বেশি। চলতি বছরের এপ্রিল মাসে গিয়েছে ২২০ জন। সেটি এক মাসের ব্যবধানে বেড়ে দাঁড়িয়েছে ৭৮৯ জনে। একইভাবে এপ্রিল মাসে জাপানে প্রশিক্ষণ নিয়ে পাড়ি দিয়েছিলেন মাত্র ৪৭ জন। সেটিও বেড়ে মে মাসে দাঁড়ায় ১৩৮ জনে। প্রবাসী কল্যাণ মন্ত্রণালয়ে খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, এই দু’টি দেশে শ্রমিক যাওয়ার হার বাড়ার অন্যতম কারণ হচ্ছে মন্ত্রণালয় থেকে এই দু’টি দেশের শ্রমবাজারে বেশি বেশি লোক পাঠানোর ওপর গুরুত্ব দেয়া হয়েছে। এর মধ্যে জাপানে প্রতি বছর যাতে এক লাখ কর্মী দক্ষ করে পাঠানো যায় সেই লক্ষ্য মন্ত্রণালয়ে ‘জাপান সেল’ নাম দিয়ে আলাদা সেল খোলা হয়েছে।
জাপান সেল খোলার বিষয়ে মন্ত্রণালয় উল্লেখ করেছে, জাপানের চাহিদা অনুযায়ী বাংলাদেশ সরকার প্রতি বছর এক লাখ কর্মী পাঠানোর পরিকল্পনা গ্রহণ করেছে। জাপান সাধারণত তিন ক্যাটাগরিতে বিদেশী জনবল নিয়োগ দিয়ে থাকে। এ ছাড়া জাপানিজ ল্যাংগুয়েজ ইনস্টিটিউটএ স্টুডেন্ট ভিসাতেও উল্লেখযোগ্য সংখ্যক বিদেশী জাপানে আসার সুযোগ পায়। জাপানের সাথে বাংলাদেশের টেকনিক্যাল ইন্টার্ন এএসডব্লিও নিয়োগ সংক্রান্ত দু’টি সহযোগিতা স্মারক স্বাক্ষরিত হয়েছে। সম্প্রতি প্রধান উপদেষ্টা ড. মুহাম্মদ ইউনূসের জাপান সফরের ফলে অধিকতর কর্মসংস্থানের সুযোগ সৃষ্টি হয়েছে এবং এই সুযোগ কাজে লাগানোর জন্যই মন্ত্রণালয়ে আলাদা জাপান সেল গঠন করা হয়েছে। এই সেল জাপানে বাংলাদেশীদের কর্মসংস্থানের জন্য জাপানি ভাষা ও দক্ষতা প্রশিক্ষণ, এর সাথে সম্পৃক্ত বিভিন্ন পরীক্ষা ইত্যাদি বিষয়ে নেগোসিয়েশন, সমন্বয় এবং তথ্য প্রচার করবে। জাপানের ১৬টি শিল্প ক্ষেত্রে বিভিন্ন ধরনের প্রায় শতাধিক কাজের বিষয়ে বাংলা ভাষায় বিস্তারিত জানার জন্য জাপান সেলএর ওয়েবসাইট ভিজিটের জন্য সংশ্লিষ্টদের অনুরোধ করা হয়েছে।
গতকাল একজন রিক্রুটিং এজেন্সির মালিক নয়া দিগন্তকে বলেন, জাপানে কর্মী পাঠানো অনেকটা চ্যালেঞ্জের। কারণ একজন জাপানগামী শ্রমিককে ভাষা প্রশিক্ষণের জন্য কমপক্ষে সাত-আট মাস অপেক্ষা করতে হয়। অনেকে ভর্তি হওয়ার পর কিছু দিনের মধ্যে চলে যায়। যারা টিকে যায়, তাদের দেশটিতে যেতেও নানাভাবে সরকার নির্ধারিত অভিবাসন ব্যয়ের কয়েকগুণ বেশি খরচ করতে হয় বলে গুঞ্জন রয়েছে। এই দিকটায় মন্ত্রণালয়ের নজর দেয়া উচিত উল্লেখ করে তিনি বলেন, এ ক্ষেত্রে জাপানে বাংলাদেশ দূতাবাসের ওপর নজরদারি বাড়ানোর পরামর্শ দেন তিনি।
অপর দিকে ইউরোপের দেশ ইতালিতেও প্রতিদিন বৈধভাবে কর্মী যাওয়া বাড়ছে। চলতি বছরের জানুয়ারি থেকে মে পর্যন্ত ৪৫৪ জন কর্মী গিয়েছে। এর মধ্যে মে মাসে গিয়েছে ১৩৮ জন। ইতালিতে কর্মী পাঠাচ্ছে এমন একাধিক এজেন্সির মালিক গতকাল নয়া দিগন্তকে বলেন, ইতালি থেকে যারা ভিসা সংগ্রহ করে আনছে তাদের বহির্গমন ছাড়পত্র পেতে জনশক্তি ব্যুরোর ওয়ানস্টপ সার্ভিসে অনলাইনের মাধ্যমে আবেদন জমা পড়ছে। এসব বিদেশগামীদের জন্য আলাদা সাক্ষাৎকার নিয়ে তারপর তাদের বিদেশ যাওয়ার অনুমতি দেয়া হচ্ছে। এ ক্ষেত্রে ওয়ানস্টপ সার্ভিসে সাক্ষাৎকারের মাধ্যমে একটি সিন্ডিকেট বহির্গমন ক্লিয়ারেন্সের নামে অতিরিক্ত অর্থ হাতিয়ে নিচ্ছে বলে অভিযোগ। যদিও এখন বিদেশগামীদের আবেদন প্রক্রিয়া অনলাইনে জমা করার নিয়ম চালু হয়েছে। তারপরও ‘পুরনো সিন্ডিকেটের’ সদস্যরা এ ক্ষেত্রে কর্মকর্তা-কর্মচারীদের কাছ থেকে বাড়তি সুবিধা পাচ্ছে বলেও কাকরাইলের একাধিক প্রতিষ্ঠানের মালিক অভিযোগ করছেন।
গতকাল রাতে জনশক্তি কর্মসংস্থান ও প্রশিক্ষণ ব্যুরোর ঊর্ধ্বতন একজন কর্মকর্তা এই প্রসঙ্গে নয়া দিগন্তকে জোর দিয়ে বলেন, বিএমইটিতে যেসব এজেন্সি অনিয়মে জড়িত ছিল তাদের ওই সিন্ডিকেট আমরা ভেঙে দিয়েছি। এখন কোনো কর্মকর্তা-কর্মচারীর টেবিলে কোনো ফাইল আটকে রাখার সুযোগ নাই। কোন ফাইল কার কাছে আছে সেটি এজেন্সির আর-এল নম্বর টিপ দিলেই বের হয়ে যাচ্ছে। তিনি বলেন, আগে একজন পিয়ন দিনে ফাইল আটকিয়ে প্রতি ফাইল থেকেই টাকা নিতে পারত। আমরা শতভাগ অনলাইন যুগে প্রবেশ করায় এখন তাদের সেই অনিয়ম বন্ধ হয়েছে।