মহাকাশ ভ্রমণে শরীরে বার্ধক্যের গতি বাড়ে না কমে

মহাকাশে ভ্রমণের ফলে মানুষের শরীরে কী ধরনের প্রভাব পড়ে, তা জানতে দীর্ঘদিন ধরে গবেষণা করেছেন বিজ্ঞানীরা। এবার যুক্তরাষ্ট্রের ইউনিভার্সিটি অব ক্যালিফোর্নিয়া, সান ডিয়েগোর এক গবেষণায় বলা হয়েছে, মহাকাশ ভ্রমণ মানবদেহের কোষে বার্ধক্যের প্রক্রিয়াকে ত্বরান্বিত করতে পারে। এতে ভবিষ্যতে যখন মানুষ দীর্ঘমেয়াদি মহাকাশ অভিযানে যাবেন, তখন বড় উদ্বেগ তৈরি হতে পারে। এ গবেষণার মূল লক্ষ্য ছিল, মহাকাশের মাইক্রোগ্রাভিটি বা প্রায়-ভারহীন পরিবেশ মানব কোষের ওপর কতটা প্রভাব ফেলে, তা জানা।
মহাকাশে থাকা আন্তর্জাতিক মহাকাশ স্টেশনে (আইএসএস) বিশেষ ধরনের বেশ কিছু মানব স্টেম সেল পাঠিয়েছিল ইউনিভার্সিটি অব ক্যালিফোর্নিয়া, সান ডিয়েগোর জৈব রসায়নবিদ জেসিকা ফামের নেতৃত্বে একদল গবেষক। কোষগুলো মূলত হেমোপয়েটিক স্টেম অ্যান্ড প্রোজেনিটর সেল, যা রক্ত উৎপাদন করে। বিভিন্ন কোষকে ৪৫ দিন পর্যন্ত মহাকাশে রাখা হয়। কোষগুলো যখন পৃথিবীতে ফিরিয়ে এনে পরীক্ষা করা হয়, তখন কোষগুলোতে বার্ধক্যের লক্ষণসহ বেশ কিছু পরিবর্তন দেখা যায়।
গবেষকদের তথ্যমতে, প্রতিটি ক্রোমোজোমের শেষ প্রান্তে ক্যাপের মতো একটি অংশ টেলোমের থাকে। বয়স বাড়ার সঙ্গে সঙ্গে টেলোমের ছোট হতে থাকে। গবেষণায় দেখা যায়, মহাকাশে থাকা কোষের টেলোমের উল্লেখযোগ্যভাবে ছোট হয়ে গেছে, যা কোষের দ্রুত বার্ধক্যের গতিকে নির্দেশ করে। এ ছাড়া মহাকাশের বিকিরণ ও অন্যান্য প্রতিকূল পরিবেশের কারণে কোষগুলোর ডিএনএ ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। কোষগুলোর মধ্যে প্রদাহ বা ইনফ্ল্যামেশন বৃদ্ধি পেয়েছে, যা রোগের ঝুঁকি বাড়ায়। মহাকাশে থাকা স্টেম সেলের নতুন কোষ তৈরির ক্ষমতাও কমে গেছে।
নতুন এ গবেষণা ভবিষ্যতে মঙ্গল গ্রহে যাওয়ার মতো দীর্ঘ অভিযানে নভোচারীদের শরীরের ওপর যে চাপ পড়বে, তা ভালোভাবে জানার সুযোগ করে দিয়েছে। এ বিষয়ে গবেষক দলের অন্যতম সদস্য ক্যাট্রিয়োনা জেমিসন বলেন, এই আবিষ্কার দীর্ঘমেয়াদি মহাকাশ অভিযানের জন্য গুরুত্বপূর্ণ।