বড় দুই বাজারে পোশাক রপ্তানি আরও বেড়েছে

বাংলাদেশের বড় দুই বাজার ইউরোপীয় ইউনিয়ন (ইইউ) ও যুক্তরাষ্ট্রের বাজারে পোশাক রপ্তানি আরও বেড়েছে। এর মধ্যে ইইউ’র বাজারে পোশাক রপ্তানিতে চমক দেখিয়েছে বাংলাদেশ। এই বাজারে গত দশ বছরে বাংলাদেশ পোশাক রপ্তানি করেছে ৫৮.৪৫ শতাংশ। অন্যদিকে যুক্তরাষ্ট্রের বাজারে চলতি বছরের প্রথম সাত মাসে বাংলাদেশের তৈরি পোশাক রপ্তানি বেড়েছে ২১.৬৬ শতাংশ, যা শীর্ষ পাঁচ রপ্তানিকারক দেশের মধ্যে সর্বোচ্চ।
একাধিক রপ্তানিকারক জানিয়েছেন, ব্যবসায়ীরা বলছেন, ইউরোপের বাজারে বাংলাদেশের জন্য সম্ভাবনা আরও বড়। চীনের ওপর শুল্ক আরোপের কারণে দেশটির হারানো অনেক ক্রয়াদেশ বাংলাদেশে চলে আসছে। গত ছয় থেকে আট মাস ধরে এই ধারা স্পষ্ট।
ইউরোপের পরিসংখ্যান সংস্থা ইউরোস্ট্যাটের সর্বশেষ তথ্য বলছে, ২০১৫ সালে যেখানে বাংলাদেশ থেকে ইইউতে ১১.৫৪ বিলিয়ন ইউরো মূল্যের পোশাক রপ্তানি হয়েছিল, ২০২৪ সালে তা দাঁড়িয়েছে ১৮.২৮ বিলিয়ন ইউরোতে। এ সময় ইউরোপের সামগ্রিক পোশাক আমদানি বেড়েছে মাত্র ২০.৪৭ শতাংশ। প্রতিবেদনের তথ্যানুযায়ী ইউরোপে বাংলাদেশের পণ্যের চাহিদা বেড়েছে এবং দেশটি ক্রমে গুরুত্বপূর্ণ সরবরাহকারী হয়ে উঠছে। ইউরোস্ট্যাটের তথ্য বলছে, ইউরোপের বাজারে পাকিস্তানের পোশাক রপ্তানির প্রবৃদ্ধি হয়েছে ৯৯.৬৪ শতাংশ। তুর্কির প্রবৃদ্ধি ১৯.৬০ শতাংশ, ভারতের ৭.১০ শতাংশ, ভিয়েতনামের ৭১.৭৯ শতাংশ, কম্বোডিয়ার ৭৩.৩০ শতাংশ এবং শ্রীলঙ্কার রপ্তানির প্রবৃদ্ধি হয়েছে ৪০.৫০ শতাংশ। তথ্য বলছে, ২০১৯ সালে বাংলাদেশ ইউরোপে রপ্তানি করে ১৪.৯৬ বিলিয়ন ইউরো মূল্যের পোশাক। তবে পরের বছর কোভিড ১৯-এর প্রভাবে তা কমে দাঁড়ায় ১২.৩২ বিলিয়ন ইউরোতে। হ্রাসের হার ছিল ১৭.৬৪ শতাংশ। অবশ্য সেখানে থেমে থাকেনি বাংলাদেশ। পরবর্তী চার বছরে ২০২০ থেকে ২০২৪ সাল পর্যন্ত দেশের রপ্তানি বেড়েছে ৪৮.৩৪ শতাংশ, যা ইউরোপের পোশাক আমদানি বৃদ্ধির চেয়ে দ্বিগুণ। অবশ্য ২০২০ সালে ইউরোপের মোট পোশাক আমদানি কমে গিয়েছিল ১৪.৩১ শতাংশ। পরে ২০২৪ সালে তা পুনরায় ঘুরে দাঁড়িয়ে পৌঁছে ৮৫.৫৬ বিলিয়ন ইউরোতে।
এদিকে যুক্তরাষ্ট্রের বাণিজ্য বিভাগের অধীনস্থ অফিস অব টেক্সটাইল অ্যান্ড অ্যাপারেলস-এর হালনাগাদ পরিসংখ্যান অনুযায়ী, এই সময়টিতে যুক্তরাষ্ট্র বিশ্বের বিভিন্ন দেশ থেকে মোট ৪ হাজার ৫৮০ কোটি ডলারের পোশাক আমদানি করেছে, যা গত বছরের একই সময়ের তুলনায় ৪.৯৬ শতাংশ বেশি। গত ৩১শে জুলাই যুক্তরাষ্ট্র প্রশাসন নতুন করে পাল্টা শুল্ক আরোপের ঘোষণা দেয়, যা ৭ই আগস্ট থেকে কার্যকর হয়। সংশোধিত এই শুল্কহার অনুযায়ী, বাংলাদেশ ও ভিয়েতনামের তৈরি পোশাকে ২০ শতাংশ পাল্টা শুল্ক বসেছে। ভারতের ক্ষেত্রে ৫০ শতাংশ।
চলতি বছরের প্রথম সাত মাসে যুক্তরাষ্ট্রে সবচেয়ে বেশি পোশাক রপ্তানি করেছে ভিয়েতনাম ৯৪৬ কোটি ডলার, যা গত বছরের তুলনায় ১৬.৯৪ শতাংশ বেশি। চীন রপ্তানি করেছে ৬৯২ কোটি ডলার, যেখানে প্রবৃদ্ধি ঋণাত্মক ২১ শতাংশ কম। শুধু জুলাই মাসেই চীনের রপ্তানি ৩৮ শতাংশ হ্রাস পেয়েছে। ভারত ৩৩১ কোটি ডলারের পোশাক রপ্তানি করেছে, প্রবৃদ্ধি ১৬ শতাংশ। ২০২৪ সালে যুক্তরাষ্ট্রে বাংলাদেশ থেকে মোট ৭৩৪ কোটি ডলারের তৈরি পোশাক রপ্তানি হয়েছিল, যা আগের বছরের তুলনায় ০.৭৫ শতাংশ বেশি। অথচ ২০২৩ সালে রাশিয়া-ইউক্রেন যুদ্ধের প্রভাবে রপ্তানি কমে দাঁড়িয়েছিল ৭২৯ কোটি ডলারে, অর্থাৎ ২৫ শতাংশ হ্রাস পেয়েছিল।
বাংলাদেশ তৈরি পোশাকশিল্প মালিকদের সংগঠন বিজিএমইএ’র সাবেক পরিচালক মহিউদ্দিন রুবেল বলেন, বাংলাদেশ এখন কম দামি পোশাকের পাশাপাশি অনেক দামি পোশাকও উৎপাদন করে। পরিবেশকে গুরুত্ব দিয়ে বাংলাদেশ পরিবেশবান্ধব কারখানা ও শ্রমিকদের অধিকার নিশ্চিতের ক্ষেত্রে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রেখেছে। যে কারণে ইউরোপের বাজারে রপ্তানির ধারা অব্যাহত রাখা গেছে।
বিজিএমইএ’র পক্ষ থেকে বলা হয়েছে, বাংলাদেশ এখন বিশ্বের শীর্ষ পরিবেশবান্ধব পোশাক কারখানার দেশ। বর্তমানে দেশে দুইশ’র বেশি গ্রিন ফ্যাক্টরি রয়েছে, যার অনেকগুলোই বিশ্বের সেরা গ্রিন বিল্ডিং সার্টিফিকেট অর্জন করেছে।
বিকেএমইএ’র সভাপতি মোহাম্মদ হাতেম বলেন, বিশ্বের সবচেয়ে উন্নত প্রযুক্তি ও উন্নত মেশিনারিজ বাংলাদেশের পোশাক কারখানায় রয়েছে। এ ছাড়াও বিশ্ববাজারে পরিবেশের গুরুত্ব বুঝে পরিবেশবান্ধব সবুজ কারখানা তৈরি করছেন উদ্যোক্তারা। এজন্য ক্রেতারা আকৃষ্ট হয়েছেন, আমাদের ছেড়ে যায়নি।