২৫ কোটি টাকা আত্মসাৎ ও পাচারের অভিযোগে ড. ইউনূসকে দুদকের জিজ্ঞাসাবাদ
গত ৩০ মে গ্রামীণ টেলিকমের শ্রমিক কর্মচারীদের অর্থ আত্মসাৎ ও পাচারের অভিযোগে প্রতিষ্ঠানটির চেয়ারম্যান ও নোবেল বিজয়ী ড. মুহাম্মদ ইউনূসসহ ১৩ জনের বিরুদ্ধে মামলা করে দুদক।
কোম্পানির ওয়ার্কার্স প্রফিট পার্টিসিপেশন ফান্ড (ডব্লিউপিপিএফ) থেকে ২৫ কোটি টাকার বেশি আত্মসাৎ ও পাচারের মামলায় গ্রামীণ টেলিকমের চেয়ারম্যান ও নোবেল বিজয়ী ড. মুহাম্মদ ইউনূসকে জিজ্ঞাসাবাদ করেছে দুর্নীতি দমন কমিশন (দুদক)।
প্রায় এক ঘণ্টা পর শেষ হয় জিজ্ঞাসাবাদ।
গত ২৭ সেপ্টেম্বর তার নামে তলব নোটিশ জারি করার পর, আজ (৫ অক্টোবর) সকালে দুদকের প্রধান কার্যালয়ে হাজির হন ড. মুহাম্মদ ইউনূস।
ড. ইউনূসকে সকাল ৯টা ৩৭ মিনিটের দিকে তার আইনজীবী ব্যারিস্টার খাজা তানভীর আহমেদ এবং ব্যারিস্টার আবদুল্লাহ আল মামুনসহ আরো কয়েকজনের সঙ্গে দুদকের প্রাঙ্গণে দেখা যায়।
দ্য বিজনেস স্ট্যান্ডার্ডকে ড. ইউনূসের আইনজীবী ব্যারিস্টার আবদুল্লাহ আল মামুন বলেন, “উনি আইনের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। দুদক থেকে নোটিশ পাওয়ার পর জবাব দিতে তিনি আমেরিকা থেকে এসেছেন।”
এর আগে, কোম্পানির ওয়ার্কার্স প্রফিট পার্টিসিপেশন ফান্ড (ডব্লিউপিপিএফ) থেকে ২৫ কোটি টাকার বেশি আত্মসাৎ ও পাচারের মামলায় জিজ্ঞাসাবাদের জন্য ড. ইউনূসসহ সংশ্লিষ্ট ১৩ জনকে তলব করে একটি নোটিশ জারি করে দুদক।
১৩ জনের মধ্যে ড. ইউনূসসহ কয়েকজনকে ৫ অক্টোবর ডাকা হয়। বাকিদের ৪ অক্টোবর ডাকে দুদক।
গ্রামীণ টেলিকমের চেয়ারম্যান ড. মুহাম্মদ ইউনূস ছাড়া মামলার অন্য আসামিরা হলেন: ব্যবস্থাপনা পরিচালক মো. নাজমুল ইসলাম, পরিচালক ও সাবেক ব্যবস্থাপনা পরিচালক মো. আশরাফুল হাসান, পরিচালক পারভীন মাহমুদ, নাজনীন সুলতানা, মো. শাহজাহান, নূরজাহান বেগম ও পরিচালক এস. এম হাজ্জাতুল ইসলাম লতিফী।
আজ সকালে ব্যবস্থাপনা পরিচালক মো. নাজমুল ইসলাম, পরিচালক ও সাবেক ব্যবস্থাপনা পরিচালক মো. আশরাফুল হাসানও দুদকের কার্যালয়ে হাজির হয়েছেন।
এর আগে দুর্নীতি দমন কমিশনের (দুদক) চেয়ারম্যান মোহাম্মদ মঈনুদ্দিন আবদুল্লাহ গণমাধ্যমকে বলেন, ড. ইউনূসসহ অন্য আসামিদের তলব করা প্রয়োজন বলে মনে করেন তদন্তকারী কর্মকর্তা।
“ড. ইউনূস আসবেন কি আসবেন না সেটা তার ব্যাপার। কাউকে জিজ্ঞাসাবাদের বিষয়টি কমিশনের কাজ নয়,” বলেন তিনি।
মামলা করবে কি করবে না সে সিদ্ধান্ত নেয় কমিশন। এখন তদন্তকারী কর্মকর্তা যাকে প্রয়োজন মনে করবেন তাকে ডাকবেন।
গত ৩০ মে গ্রামীণ টেলিকমের শ্রমিক কর্মচারীদের অর্থ আত্মসাৎ ও পাচারের অভিযোগে প্রতিষ্ঠানটির চেয়ারম্যান ও নোবেল বিজয়ী ড. মুহাম্মদ ইউনূসসহ ১৩ জনের বিরুদ্ধে মামলা করে দুদক।
দুদক জানায়, আসামীদের বিরুদ্ধে প্রাথমিক অনুসন্ধানে ‘অর্থ আত্মসাৎ ও অর্থ পাচারের অভিযোগের সত্যতা’ পাওয়ায় এই মামলা দায়ের করা হয়।
আসামীদের বিরুদ্ধে শ্রমিকদের ২৫ কোটি ২২ লাখ টাকার বেশি ‘আত্মসাৎ ও অর্থ পাচার’ এর অভিযোগ আনা হয়েছে। মামলাটি দায়ের করা হয়েছে অর্থ পাচার প্রতিরোধ আইনে।
এর আগে ২০২২ সালের ২৩ জুলাই নোবেলজয়ী ড. মুহাম্মদ ইউনূসের বিরুদ্ধে শ্রমিকদের টাকা আত্মসাতের অভিযোগ তদন্তে দুদকে আনুষ্ঠানিক চিঠি দেয় কলকারখানা ও প্রতিষ্ঠান পরিদর্শন অধিদপ্তর।
অভিযোগে বলা হয়, ১৯৯৬ সাল থেকে গ্রামীণ টেলিকমের বেশিরভাগ লেনদেনই সন্দেহজনক। শুধু তাই নয়, আইএলওতে দেওয়া শ্রমিকদের অর্থপাচারের অভিযোগেরও তদন্ত চায় সংস্থাটি।
চিঠিতে আরও বলা হয়, গ্রামীণ টেলিকমের সহযোগী প্রতিষ্ঠানগুলোতে এখন পর্যন্ত প্রায় ২ হাজার ৯৭৭ কোটি টাকা সন্দেহজনক লেনদেন হয়েছে, পুরো বিষয়টির বিস্তারিত অনুসন্ধান প্রয়োজন।
কারণ শ্রমিকদের নির্দিষ্ট শেয়ার দেওয়ার কথা থাকলেও তাদেরকে তা থেকে বঞ্চিত করেছেন ড. ইউনূস।