Bangladesh

ফাঁস প্রশ্নপত্রে ওরা ডাক্তার

‘কেউ হতে চায় ডাক্তার, কেউ বা ইঞ্জিনিয়ার; কেউ হতে চায় ব্যবসায়ী, কেউ বা ব্যারিস্টার’– নচিকেতার সেই সাড়াজাগানো গানের মতোই ভবিষ্যতের পেশা বাছাইয়ে ‘ডাক্তার’ হওয়ার অভিপ্রায় শিক্ষার্থীর হৃদয়ে আজও পুরোভাগে, এক নম্বরে। অনেকের মা-বাবা প্রিয় সন্তানকে চিকিৎসক বানানোর স্বপ্নে থাকেন বিভোর। যে কোনো উপায়ে স্বপ্ন মুঠোবন্দি করতে হাঁটেন অন্ধকার পথে। মেধার ভিত্তিতে মেডিকেল ভর্তি পরীক্ষার সিঁড়ি সন্তান ডিঙাতে পারবে না জেনেই অনেক অভিভাবক ভেড়েন জালিয়াত চক্রের ডেরায়।

২০০৫ থেকে ২০১৭ সাল পর্যন্ত মেডিকেল কলেজে ভর্তি পরীক্ষার ফাঁসের প্রশ্নে মেধাতালিকায় নাম লেখানো ৩০০ শিক্ষার্থীকে চিহ্নিত করেছে পুলিশের অপরাধ তদন্ত বিভাগ (সিআইডি)। তারা প্রায় সবাই এখন এমবিবিএস পাস করে দিয়ে যাচ্ছেন চিকিৎসাসেবা। কেউ কেউ দেশের বাইরে অবস্থান করছেন। আবার কেউ গ্রেপ্তার এড়াতে বিদেশে লুকিয়েছেন। প্রশ্ন ফাঁসের সঙ্গে জড়িত এমন কয়েকজনকে দেশে ফেরত আনতে আন্তর্জাতিক পুলিশ সংস্থা ইন্টারপোলের সহায়তা নিচ্ছে সিআইডি। জোচ্চুরি করে স্বাস্থ্যসেবায় নাম লেখানো চিকিৎসকদের ব্যাপারে অনুসন্ধান চালিয়েছে সমকাল। এতে উঠে এসেছে পিলে চমকানো সব তথ্য।

বড় বড় সরকারি কর্তার বাসা ছিল প্রশ্ন ফাঁসের ‘আস্তানা’। এ আস্তানাকে চক্রের সদস্যরা নাম দিয়েছেন ‘বুথ’। ভর্তি পরীক্ষার আগের রাতে নির্দিষ্ট কারও বাসায় ফাঁস করা প্রশ্ন পরীক্ষার্থীকে মুখস্থ করার যে বৈঠক– সেটাকেই বলা হতো ‘বুথ’। কয়েকজন সরকারি কর্মকর্তা তাদের ছেলেমেয়েকে ফাঁস হওয়া প্রশ্নে ভর্তি করিয়েছেন মেডিকেল কলেজে। তাদের মধ্যে রয়েছেন যুগ্ম কর কমিশনার, উপসচিব, চিকিৎসক ও পুলিশ কর্মকর্তা।

২০০৫ সাল থেকেই প্রশ্ন ফাঁসের ভুবনে ডা. জে এম সালেহীন শোভনের বিচরণ। ৩০ জুলাই থেকে ৯ আগস্ট পর্যন্ত ঢাকা, টাঙ্গাইল, কিশোরগঞ্জ, বরিশালে অভিযান চালিয়ে শোভনসহ চক্রের ১৮ চিকিৎসক আটকা পড়েন সিআইডির জালে। তাদের কয়েকজনের কাছে মেলে ব্যক্তিগত ডায়েরি, মোবাইল ফোনসেট ও ল্যাপটপ। নথিপত্র ও জিজ্ঞাসাবাদ-সংক্রান্ত তথ্য বিশ্লেষণ করে সমকাল জানতে পারে, এ চক্রের সদস্যরা সব মিলিয়ে প্রায় ৪০০ কোটি টাকার অর্থ-সম্পদের মালিক। শুধু ব্যাংকিং চ্যানেলে তারা লেনদেন করেছে ১২৫ কোটি টাকা।

ভর্তির প্রশ্ন কিনে যারা চিকিৎসক

দীর্ঘ তদন্তে এখন পর্যন্ত ফাঁস হওয়া প্রশ্ন পেয়ে ডাক্তার হয়েছেন এমন ৩০০ জনের নাম-ঠিকানা পেয়েছে সিআইডি। এর মধ্যে রয়েছেন ২০১৫-১৬ শিক্ষাবর্ষে সোহরাওয়ার্দী মেডিকেল কলেজে ইফফাত জাহান সারা, সানজিদা আঁচল; সলিমুল্লাহ মেডিকেল কলেজে ইসরাত কলি; ঢাকা মেডিকেল কলেজে ইকরা বিনতে বাশার, ফয়সাল হোসেন রাসেল, ইসরাত জাহান, সাদিদা ফার্সিয়া, মিরাজ আহমেদ ছাব্বি, সাবরিনা আক্তার সুমি, তানভীর রহমান সবুজ, আসলামুল নেহা, জেসিয়া জুঁই; দিনাজপুর মেডিকেল কলেজে কাজী সাদিয়া সিলভী। ২০১৩-১৪ শিক্ষাবর্ষে খুলনা মেডিকেল কলেজে ভর্তি হন আসিফুজ্জামান সানি। ২০১৫-১৬ শিক্ষাবর্ষে নূরে মার্জিয়া, ফারিয়া ইসলাম নিলয়, রেমি মণ্ডল, সোহানুর রহমান বিশ্বাস ও আরাফাত ইসলাম। ২০১৪-১৫ শিক্ষাবর্ষে রাজশাহী মেডিকেল কলেজে তুষার; নোয়াখালী মেডিকেল কলেজে শাওন। এ চক্করে আরও যারা চিকিৎসক হয়েছেন, তারা হলেন– হেলেনা আক্তার, আসমাউল হুসনা মোনালিসা, মৈত্রী সাহা, জাকারিয়া আশরাফ, রাওদিয়া চৈতি, সুমাইয়া প্রিয়া, সাবরিনা রেজা তুষি, নাজিয়া মেহজাবিন, ইয়াংকি চক্রবর্তী, সৌরভ জিয়া, ফাতেমা, হ্যাপি, রনভীর সাহা, আশিক, সুমাইয়া, আনিকা তাওসিফ জেসী ও মাহমুদা পারভীন রিতু। এর মধ্যে ৩৩তম বিসিএসের মাধ্যমে মেডিকেল অফিসার হিসেবে সরকারি চাকরিতে ঢুকেছেন ডা. হেলেনা আক্তার। অন্যরা কে, কোথায় চিকিৎসাসেবা দিচ্ছেন– সে তথ্য জানতে পারেনি।

যমজ বোনের বাজিমাত

২০১৫-১৬ শিক্ষাবর্ষে মেডিকেল ভর্তি পরীক্ষায় ষষ্ঠ স্থান অর্জন করেন মুর্শিদা মুস্তারিন। একই বছর তাঁর যমজ বোন মেহনাজ মুস্তারিন মেধাতালিকায় ২৪তম হয়েছিলেন। ওই শিক্ষাবর্ষে দু’জন ভর্তি হন ঢাকা মেডিকেল কলেজে। প্রশ্ন পেয়ে মেধার ‘বিস্ফোরণ’ ঘটানো দুই বোনের বাবা হলেন অবসরপ্রাপ্ত অতিরিক্ত পুলিশ সুপার সৈয়দ মোস্তফা কামাল। ডা. ইউনুচ উজ্জামান তারিমের মাধ্যমে দুই বোন ভর্তি হন। এ ছাড়া ফাঁস করা প্রশ্ন পেয়ে পরীক্ষায় অংশ নিয়ে ওই বছর মেধাতালিকায় ১২তম হয়েছিলেন শাহনাজ জেসমিন জিনিয়া। তিনিও ঢাকা মেডিকেল কলেজে ভর্তি হন। একই জালিয়াত চক্রের মাধ্যমে মেডিকেলে মেধাতালিকায় অষ্টম হয়েছিলেন ইয়াংকি চক্রবর্তী। আর মেধাতালিকায় ১১তম হন মুসতাহিন লামিয়া।

যুগ্ম কর কর্তার বাসায় ‘বুথ’

যেসব কর্মকর্তার বাসায় ‘বুথ’ বসত বলে সিআইডি তথ্য পেয়েছে, তাদেরই একজন যুগ্ম কর কমিশনার মাছুমা খাতুন। ২০১৩-১৪ শিক্ষাবর্ষে আগের রাতে প্রশ্ন পেয়ে মাছুমার মেয়ে পিংকী ময়মনসিংহ মেডিকেল কলেজে ভর্তির সুযোগ পান। পরে তিনি এমবিবিএস পাস করে রাজধানীর একটি বেসরকারি হাসপাতালে কিছুদিন চাকরি করেন। যুগ্ম কর কমিশনার মাছুমা এখন তাঁর তিন সন্তানকে নিয়ে রাজধানীর বড় মগবাজারের ইস্টার্ন রোকেয়া টাওয়ারে বাস করেন। সম্প্রতি আলাদা এক ঘটনায় আলোচনায় আসেন মাছুমা। সাবেক স্বামী অবসরপ্রাপ্ত সরকারি কর্মকর্তা হারুন-অর রশিদের ভাড়াটে লোকজনের মাধ্যমে তাঁকে অপহরণ করানো হয়। মগবাজারে বাসায় গিয়ে মাছুমার সঙ্গে কথা বলতে চাইলে এ প্রতিবেদকের ফোন নম্বর রেখে দিয়ে পরে যোগাযোগ করার কথা জানান। এরপর একাধিকবার ফোন করা হলেও ধরেননি তিনি। তবে ওই বাড়ির নিরাপত্তারক্ষী আবদুল মান্নান বলেন, ‘ম্যাডামের দুই মেয়ে ও এক ছেলে। বড় মেয়ে ডাক্তার। পুরান ঢাকার একটি হাসপাতালে ছিলেন বলে শুনেছি। এর বেশি জানি না।’

একই বছর অর্থ মন্ত্রণালয়ের এক উপসচিবের বাসায়ও ‘বুথ’ বসে। ওই উপসচিবের মেয়ের নাম সুপ্তি। ফাঁস প্রশ্নপত্রে এই উপসচিবের মেয়েও চিকিৎসক হয়েছেন।

‘শোভন কেয়ার’ পুরোটাই ‘আনফেয়ার’

নথি বিশ্লেষণে উঠে এসেছে, ১৯৯৫-৯৬ শিক্ষাবর্ষে স্যার সলিমুল্লাহ মেডিকেল কলেজে ভর্তি হন জে এম সালেহীন শোভন। তিনি মেডিকেলে ভর্তি হওয়ার পরপরই শুভেচ্ছা কোচিং সেন্টারে পড়াতেন। পরে এমবিবিএস পাস করে ডা. শোভন ২০০২ সালে ডা. এ কে এম বশিরুল হক বশির ও ডা. বিপুকে নিয়ে খোলেন কোচিং সেন্টার ‘থ্রি ডক্টরস একাডেমি’। ২০০৫ সালে ব্যবসা নিয়ে দূরত্ব তৈরি হলে ‘থ্রি ডক্টরস’ থেকে বের হয়ে যান শোভন। এর পর ফার্মগেটে খোলেন নতুন কোচিং সেন্টার ‘শোভন কেয়ার’। জহির উদ্দিন বাপ্পী নামের একজনের অফিসের কয়েকটি কক্ষ সাবলেট নিয়ে সেন্টারটি চালানো হতো। পরে বাপ্পীর মাধ্যমে মোহাম্মদ আবদুস ছালাম নামের একজনের সঙ্গে পরিচয় হয় শোভনের। এই ছালাম দেশ-বাংলা ডেভেলপারের মালিক। ফাঁসের প্রশ্ন শোভনকে সরবরাহ করতেন ছালাম। প্রতি শিক্ষার্থীর কাছ থেকে পাঁচ লাখ টাকা করে নেওয়ার কথা জানান ছালাম। শোভনকে জনপ্রতি এক লাখ টাকা করে দেওয়ার টোপ দেওয়া হয়। প্রশ্ন ফাঁসের এ সিন্ডিকেটে যুক্ত হওয়ার ব্যাপারে সায় দেন শোভন। ওই বছর তাঁর ১৫ ভর্তিচ্ছু ছিল। আগেভাগে প্রশ্ন দেওয়ার ব্যাপারে অভিভাবকদের সঙ্গে গোপনে কথা বলেন শোভন। প্রশ্ন কিনে সন্তানকে ভর্তি করাতে রাজি হন তিন শিক্ষার্থীর অভিভাবক। আরও শিক্ষার্থী পাওয়ার লোভে শোভন সোহরাওয়ার্দী মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের জোবাইদুর রহমান জনিকে বিষয়টি জানান। আরও চার শিক্ষার্থী জোগাড় করে দেন জনি। ২০০৫ সালে প্রথমবারের মতো ওই সাত শিক্ষার্থী নিয়ে বেইলি রোডে ডা. চঞ্চল মাহমুদের বাসায় জড়ো হন শোভন। ওই বছর চঞ্চল মাহমুদের মেয়েও পরীক্ষার্থী ছিলেন। ছালামের সরবরাহ করা প্রশ্ন হুবহু মিলে যায়। ওই প্রশ্ন পেয়ে সাতজন মেডিকেল কলেজে ভর্তি হন।

মামা-ভাগনের আপদের বদলে বিপদ

২০০৭ সালে টাকা কামিয়ে পরের বছর একই প্রক্রিয়ায় প্রশ্ন ফাঁস করার প্রস্তুতি নেন ডা. শোভন ও তাঁর দলবল। তবে ওই বছর ছালাম অগ্রিম টাকা দাবি করে বসেন। তখন শোভনের ছাত্র আদিব প্রস্তাব দেন, প্রশ্ন বের করে আনবেন তিনি। আদিব ছালামের ভাগনে। তখন মামাকে বাদ দিয়ে ভাগনের ওপর ভর করে অপকর্ম চালিয়ে যান ডা. শোভন। সেবার আদিবের ইন্দিরা রোডের বাসায় ‘বুথ’ বসানো হয়। সেখানে শোভনের কবজায় ছিলেন ৩০ শিক্ষার্থী। ওই বছর প্রায় তিন কোটি টাকা এ চক্রের হাতে এসেছিল।

মাঝের পাঁচ বছর ‘খরা’

২০০৭ সালে জসীম উদ্দিন ভূঁইয়া মুন্নু নামের একজনের সঙ্গে পরিচয় হয় শোভনের। জসীম হলেন স্বাস্থ্য-শিক্ষা ব্যুরোর তৎকালীন মেশিনম্যান ফাঁসকারী চক্রের অন্যতম হোতা আবদুস সালাম খানের আপন খালাতো ভাই। ওই বছর জাতীয় অর্থোপেডিক হাসপাতাল অ্যান্ড পুনর্বাসন প্রতিষ্ঠানের (পঙ্গু হাসপাতাল) তৎকালীন পরিচালক ডা. শাহ আলমের বাসায় ‘বুথ’ বসে। ডা. শাহ আলমের ছেলেও ছিলেন পরীক্ষার্থী। তবে যে প্রশ্ন তারা ফাঁস করেছিলেন, তা মেলেনি। এ গড়বড়ের পর ২০১২ সাল পর্যন্ত ডা. শোভন প্রশ্ন ফাঁসে সুবিধা করতে পারেননি।

এক বছরে ১০০ কোটি

প্রশ্ন ফাঁসকারী চক্রের দেদার ব্যবসা হয় ২০১৫-১৬ শিক্ষাবর্ষে। ওই বছর জসীমকে ১০৯ শিক্ষার্থী এনে দেন ডা. শোভন। জসীম-শোভন সিন্ডিকেটের সব যখন চূড়ান্ত, তখন পরীক্ষার তিন দিন আগে র‍্যাবের হাতে গ্রেপ্তার হন তারা। তবে গ্রেপ্তারের আগে প্রশ্ন পেয়ে তাঁর ভায়রা সামিউল জামান লিটুর কাছে দেন। লিটুর মাধ্যমে প্রশ্নপত্র পেয়েছিলেন জসীমের স্ত্রী শারমিন আরা জেসমিন শিল্পী। তবে গ্রেপ্তারের পরও কাফরুল থানায় বসে তৎকালীন পরিদর্শক (তদন্ত) আজগরের মাধ্যমে লিটু ও শিল্পীর সঙ্গে যোগাযোগ চালিয়ে যান জসীম। জসীমকে থানার ভেতর থেকে বাইরে তাঁর সহযোগীদের সঙ্গে মোবাইল ফোনে কথা বলার সুযোগ করে দেওয়া হয়। ওই বছর সব মিলিয়ে প্রশ্ন বিক্রি করে ১০০ কোটি টাকা কামাই হয়। এর মধ্যে সাড়ে চার কোটি টাকা পান ডা. শোভন।

যেখানে ক্লু

সিআইডি জানায়, ২০১৮ সালে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ‘ক’ ইউনিটের প্রশ্ন ফাঁসের ঘটনা তদন্ত করতে গিয়ে এস এম সানোয়ার হোসেন নামের এক ব্যক্তির খোঁজ পায় তারা। দীর্ঘদিন তিনি গা-ঢাকা দিয়ে ছিলেন। পরে বিমানবন্দর এলাকা থেকে তাঁকে গ্রেপ্তার করা হয়। সানোয়ারের বড় ভাই হলেন মোহাম্মদ আবদুস ছালাম। সানোয়ারই প্রথম সিআইডিকে জানান, কয়েক বছর ধরে মেডিকেলের প্রশ্নপত্র ফাঁস হয়েছে। তাঁর দেওয়া তথ্যেই গ্রেপ্তার হন জসীম উদ্দিন ভূঁইয়া মুন্নু ও তাঁর খালাতো ভাই প্রেসের মেশিনম্যান আবদুস সালাম খান, পারভেজ খান, জাকির হোসেন দিপু, সামিউল জাফর সিটু, মো. আলমগীর হোসেন (জসীমের বোনজামাই), শাহজাদি আক্তার মীরা (জসীমের বোন), মোহাইমিনুল ইসলাম, রেদওয়ানুর রহমান শোভন, ইমন খান (সালামের ছেলে), মনিরুল ইসলাম মাহি (সালামের বোনের ছেলে), আলমাস হোসেন ও কাওছার আহমেদ। তারা সবাই বর্তমানে জামিনে রয়েছেন।

যেভাবে প্রশ্ন বাইরে এসেছিল

প্রশ্ন ফাঁস চক্রের মূল হোতা জসীম উদ্দিন ভূঁইয়া মুন্নুর আপন খালাতো ভাই আবদুস সালাম খান। সালাম ছিলেন স্বাস্থ্য-শিক্ষা ব্যুরোর সাবেক মেশিনম্যান। সালামের কাছ থেকে প্রশ্ন সংগ্রহ করতেন জসীম। এ ছাড়া সালাম তাঁর খালাতো বোন ও জসীমের বোন মীরাকে প্রশ্ন দিতেন। এরপর সহযোগীদের মাধ্যমে জসীম দেশের বিভিন্ন এলাকায় তা ছড়িয়ে দিতেন। এ চক্রে জসীম-সালামের পরিবারের সদস্য ছাড়াও নামিদামি মেডিকেল কোচিং সেন্টারের মালিক ও ডাক্তাররা জড়িয়ে পড়েন। তবে ২০১৭ সালের পর প্রশ্ন ফাঁসের তথ্য পাওয়া যায়নি।

ডায়েরিতে অনেক তথ্য

সিআইডি যাদের গ্রেপ্তার করে, তাদের অনেকের কাছ থেকে ডায়েরি, মোবাইল ফোন, ল্যাপটপ জব্দ করা হয়। মূল হোতা জসীমের ডায়েরিতে ৪৪ জনের নাম রয়েছে। এদের একজন তারিকুল ইসলাম। তারিকুল বর্তমানে জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক। তদন্ত-সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তারা বলছেন, ‘গোপন সম্পর্ক’ ছাড়া জসীম ও ফাঁসকারী চক্রের ডায়েরিতে নাম ওঠানো কঠিন। ডা. ময়েজের ডায়েরিতেও অনেকের নাম আছে। তাদের মধ্যে আছেন– ডা. ইভানা সরকার, ডা. হেলেনা আক্তার ও ডা. বুশরা। হেলেনা এরই মধ্যে সরকারি চিকিৎসক হয়েছেন। জালিয়াতির মাধ্যমে মেডিকেল কলেজে ভর্তি হওয়া অনেক শিক্ষার্থী ধারাবাহিকভাবে ক্লাস পরীক্ষায় অকৃতকার্য হন। আবার অনেককে পাস করার ব্যবস্থা করতে চক্রের সদস্যরা অসাধু পথ ধরেন। ২০১৫-১৬ শিক্ষাবর্ষে জাতীয় মেধাতালিকায় ১১তম হয়েও মুহতাসিন হাসান লামিয়া চারটি ফাইনাল প্রফেশনাল পরীক্ষার সব বিষয়ে অকৃতকার্য হন। জাতীয় মেধায় ৬০তম হয়ে ধারাবাহিকভাবে পরীক্ষায় অকৃতকার্য হন জাকিয়া ফারইভাও।
 

কারা কী বলছেন

বাংলাদেশ মেডিকেল অ্যাসোসিয়েশনের (বিএমএ) সভাপতি ও আওয়ামী লীগের সভাপতিমণ্ডলীর সদস্য ডা. মোস্তফা জালাল মহিউদ্দিন সমকালকে বলেন, প্রশ্ন ফাঁস বড় ধরনের অপরাধ। ডাক্তাররা যদি এ ধরনের অপরাধে জড়ান বা কেউ প্রশ্নপত্র ফাঁস করে চিকিৎসক হন, এটা মেনে নেওয়া যায় না। এ ধরনের অপরাধে যিনি জড়াক, তিনি আমার ভাই হলেও সহ্য করব না। তদন্ত-সংশ্লিষ্ট দায়িত্বশীল পর্যায় থেকে এ ধরনের চিকিৎসকের ব্যাপারে তথ্য দিলে বিএমএ সনদ বাতিলের ব্যাপারে আমরা আলোচনা করব।
প্রশ্ন ফাঁসের মামলার তদন্ত কর্মকর্তা ও মানি লন্ডারিং মামলার তদারক কর্মকর্তা সিআইডির অতিরিক্ত পুলিশ সুপার জুয়েল চাকমা বলেন, ‘এখনও প্রশ্ন ফাঁস চক্রের ৩০ থেকে ৪০ জন পলাতক। যারা প্রশ্ন পেয়ে ডাক্তার হয়েছেন– এমন ৩০০ চিকিৎসক চিহ্নিত হয়েছেন। তদন্তে এ চক্রের অনেকের কোটি কোটি টাকার সম্পদ পাওয়া গেছে। কিছু সম্পদ বাজেয়াপ্ত করা হয়েছে। বাকি সম্পদ বাজেয়াপ্ত করার উদ্যোগ নেওয়া হচ্ছে।’

Show More

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Related Articles

Back to top button
Situs Toto
toto togel
slot toto
Toto slot gacor
bacan4d
totoslotgacor
bacan4d
bacan4d slot gacor
bacan4d login
Bacan4d
bacan4d
bacan4d bonus
Toto gacor
Toto gacor
slot gacor hari ini
bacan4d toto
bacan4d toto
bacan4d
bacan4d
bacan4d
bacan4d
bacan4d link alternatif
slot gacor bett 200
situs toto
SITUS TOTO
toto 4d
Slot Toto
Slot Toto
Slot Toto
Situs toto
Slot toto
Slot Dana
Slot Dana
Judi Bola
Judi Bola
Slot Gacor
toto slot
bacan4d toto
bacan4d akun demo slot
bacantogel
bacan4d
bacan4d
slot gacor
bacantoto
bacan4d
Bacan4d Login
slot demo
Bacan4d Toto
toto gacor
Slot Gacor
Live Draw
Live Draw Hk
toto slot
Bacan4d slot gacor
toto macau
toto slot
Toto Gacor
slot dana
bacan4d
bacan4d
bacan4d
bacan4d
Slot Dp Pulsa
Bacan4d Login
toto slot
Bacansports/a>
xx1toto
xx1toto
xx1toto
xx1toto
xx1toto
xx1toto
xx1toto
xx1toto
xx1toto
xx1toto
xx1toto
xx1toto
xx1toto
xx1toto
xx1toto
xx1toto
xx1toto
xx1toto
xx1toto
xx1toto
xx1toto
xx1toto
xx1toto
xx1toto
xx1toto
xx1toto
toto slot
bacansport
bacansport
bacansport
bacansport
bacansport
bacansport
xx1toto
xx1toto
xx1toto
xx1toto
slot gacor
xx1toto
xx1toto
xx1toto
xx1toto
xx1toto
xx1toto
xx1toto
xx1toto
xx1toto
xx1toto
xx1toto
xx1toto
xx1toto
xx1toto
xx1toto
xx1toto
xx1toto
toto slot
slot demo
toto slot gacor
bacansports Slot toto toto slot Slot toto Slot dana Slot toto slot maxwin slot maxwin toto slot toto slot slot dana
Toto Bola
xx1toto
xx1toto
xx1toto
xx1toto
xx1toto
xx1toto
xx1toto
xx1toto
xx1toto
xx1toto
xx1toto
xx1toto
xx1toto
xx1toto
xx1toto
xx1toto
xx1toto
xx1toto
xx1toto
xx1toto
xx1toto
xx1toto
xx1toto
xx1toto
xx1toto
xx1toto
bacan4d
ts77casino
situs toto
slot pulsa
bacansports
situs toto
slot toto
situs toto
slot toto
situs toto
toto slot
bacansport
bacansport
bacansports
slot toto
xx1toto
xx1toto
xx1toto
xx1toto
xx1toto
situs toto
situs toto
xx1toto
toto slot
xx1toto
xx1toto
slot qriss
Slot Toto
slot dana
situs toto
slot toto
slot dana
Situs Toto Slot Gacor
xx1toto
xx1toto
bacan4d
xx1toto
xx1toto
toto slot
situs toto slot gacor
toto gacor
toto gacor
toto gacor
toto gacor
bacan4d
bacan4d
bacan4d
bacan4d
bacan4d
situs toto
Slot Toto
Toto Slot
Slot Gacor
Slot Gacor
Slot Gacor
slot toto
Toto Slot
slot gacor
situs togel
Toto Slot
xx1toto
bacansport
bacan4d
toto slot
situs toto