Bangladesh

এই সংবিধানের মধ্যেই নির্বাচনকালীন নিরপেক্ষ সরকার গঠন সম্ভব

এই সংবিধানের মধ্যেই নির্বাচনকালীন নিরপেক্ষ সরকারের অনেকগুলো পথ নিহিত আছে । রাজনৈতিক দলগুলো আন্তরিক থাকলে এবং তাদের মধ্যে রাজনৈতিক সমাঝোতা হলে এই পথ খুঁজে পাওয়া সম্ভব । প্রধানমন্ত্রী পদত্যাগের আগ্রহ প্রকাশ করলে বর্তমান সংসদের যে কোনো একজন এমপিকে আলংকারিক প্রধানমন্ত্রী নিয়োগ করে নির্বাচনকালীন সরকার গঠন করা যাবে । এতে সংবিধানের কোনো অনুচ্ছেদেরও লঙ্ঘন হবে না। এমন কি সাংঘর্ষিক হবে না ত্রয়োদশ সংশোধনী বাতিলের রায়ের সঙ্গেও। 

বর্তমানে সংবিধানে নির্বাচনকালীন সরকারের কোনো সুনির্দিষ্ট আইনি  ব্যবস্থা নেই। ২০১৪ সালের জাতীয় সংসদ নির্বাচনের আগে ১৪ দলীয় জোট এবং জাতীয় পার্টির সংসদ সদস্য নিয়ে একটি ছোট আকারে মন্ত্রিসভা গঠিত হয়েছিলো। কিন্তু ২০১৮ সালের নির্বাচনের সময় আগের সরকারই বহাল থাকে। এমনকি মন্ত্রিসভার আকার ছোট করারও কোনো ইচ্ছা দেখাননি প্রধানমন্ত্রী। প্রধানমন্ত্রীর ইচ্ছা এবং পরিকল্পনা অনুযায়ী বিগত দুটি নির্বাচনে সরকার গঠিত হয়েছিলো। বর্তমানে নির্বাচনকালীন সরকার ব্যবস্থা নিয়ে দুই প্রধান রাজনৈতিক দল পরস্পর বিপরীতমুখী অবস্থান নিয়েছে।

বিজ্ঞাপন তাদের মধ্যে কোনো প্রকার ছাড় দেয়ার মনোভাব এখনো দেখা যাচ্ছে না। বিএনপি এবং সমমনা দলগুলো বর্তমান সরকারের পদত্যাগ দাবি এবং নিরপেক্ষ সরকারের অধীনে নির্বাচনের দাবিতে আন্দোলন করছে। সরকারি দল বলছে, এই দাবি মানার কোনো সুযোগ নেই এবং বর্তমান সরকারের অধীনেই জাতীয় নির্বাচন আয়োজনে  আপসহীন অবস্থান নিয়ে আছে আওয়ামী লীগ। সম্প্রতি বাংলাদেশ ঘুরে যাওয়া মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের দুটি নির্বাচনী পর্যবেক্ষক সংস্থা বাংলাদেশের রাজনৈতিক দলগুলোর আপসহীন অবস্থানকে একটি সংকট হিসাবে চিহিৃত করেছে। সেই ১৯৯৪ সাল থেকে নির্বাচনকালীন সরকার নিয়ে দুটি প্রধান দলের মধ্যে সংঘাত লেগেই আছে এবং যা এখনো অব্যাহত আছে। রাজনীতির এই সংঘাতময় পরিস্থিতিতে রাজনৈতিক দলগুলোর মধ্যে একটি সমঝোতা প্রত্যাশা করছে দেশের মানুষ। নির্বাচনকালীন সরকারের আইনি ব্যবস্থা না থাকলেও  সংবিধান বিশেষজ্ঞরা মনে করেন, রাজনৈতিক সমঝোতা হলে এই সংবিধানের মধ্যেই মোটামুটি গ্রহণযোগ্য নির্বাচনকালীন সরকারের অনেকগুলো ব্যবস্থা আছে। 

সংবিধান বিশেষজ্ঞ, সাবেক বিচারপতি এবং একাধিক সিনিয়র আইনজীবীর সঙ্গে আলোচনাক্রমে এধরনের একটি বিকল্প ব্যবস্থা এখানে উল্লেখ করা হলো-

সংবিধানের ৫৭(১) (ক) অনুচ্ছেদ অনুযায়ী প্রধানমন্ত্রী রাষ্ট্রপতির কাছে পদত্যাগ করবেন। একই সঙ্গে তিনি সংরক্ষিত নারী আসন হতে অথবা আওয়ামী লীগ দলীয় নয় এমন কোনো সদস্যকে প্রধানমন্ত্রী হিসাবে নিয়োগের জন্য রাষ্ট্রপতিকে প্রস্তাব করবেন। যতদূর সম্ভব তিনি এমন একজন ব্যক্তির নাম প্রস্তাব করবেন যিনি আসন্ন নির্বাচনে অংশগ্রহণ করবেন না। প্রধানমন্ত্রী যেহেতু আওয়ামী লীগের সংসদীয় দলের প্রধান এবং যেহেতু এই সংসদে আওয়ামী লীগের সংখ্যাগরিষ্ঠতা আছে সেহেতু রাষ্ট্রপতিকে ধরে নিতে হবে প্রধানমন্ত্রীর প্রস্তাবে সংখ্যাগরিষ্ঠ সদস্যদের সমর্থন আছে। সুতরাং প্রধানমন্ত্রীর প্রস্তাব অনুযায়ী রাষ্ট্রপতির এ নিয়োগ সংবিধানের কোনো অনুচ্ছেদের লঙ্ঘন হবে না ।

এছাড়া রাষ্ট্রপতি ১০ সদস্যের একটি মন্ত্রিসভা গঠন করবেন। দশ সদস্যর মন্ত্রিসভার এক তৃতীয়াংশ নিয়োগপ্রাপ্ত হবেন নারী সদস্যদের মধ্যে থেকে। যতদূর সম্ভব বর্তমান সংসদের যে সকল সদস্য আগামী জাতীয় সংসদ নির্বাচনে অংশ নেবেন না, তাদের মধ্য থেকে রাষ্ট্রপতি ৯ জনকে মন্ত্রিসভার সদস্য হিসাবে নিয়োগ দিবেন। একাদশ সংসদের শুরু থেকে যেসব রাজনৈতিক দলের প্রতিনিধি ছিলো তাদের প্রতিটি দল থেকে ১ জন করে তিনি নিয়োগ দিবেন। ৫৬ (২) অনুচ্ছেদ অনুযায়ী, জাতীয় সংসদের সদস্য নন-এমন একজনকে টেকনোক্র্যাট কোটায় রাষ্ট্রপতি নিয়োগ দিবেন। তিনি হবেন দল নিরপেক্ষ। রাজনৈতিক দলগুলো আলাপ-আলোচনা করে সমঝোতার ভিত্তিতে টেকনোক্র্যাট কোটায় নিয়োগপ্রাপ্ত ব্যক্তির নাম প্রস্তাব করবে। যিনি কোনো সরকারের আমলেই অতি সুবিধাভোগী বা অতি ক্ষতিগ্রস্ত ব্যক্তি ছিলেন না।

প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার ২০১৩ সালের প্রস্তাব অনুযায়ী স্বরাষ্ট্র, আইন, জনপ্রশাসন, প্রতিরক্ষা ও মন্ত্রিপরিষদ বিভাগ টেকনোক্র্যাট কোটায় নিয়োগপ্রাপ্ত ব্যক্তির অধীন থাকবে। (২০১৩ সালে প্রধানমন্ত্রী বিএনপিকে এসব মন্ত্রণালয় দেয়ার প্রস্তাব করেছিলেন) অন্যান্য মন্ত্রীদের দফতর নবনিযুক্ত প্রধানমন্ত্রীর পরামর্শে রাষ্ট্রপতি বন্টন করবেন। নিয়োগপ্রাপ্ত প্রধানমন্ত্রী যেহেতু কোনো একটি রাজনৈতিক দলের সদস্য হবেন সেহেতু তিনি আলংকারিক দায়িত্ব পালন করবেন। 

নির্বাচনকালে পাস না হলে রাষ্ট্রের অপূরণীয় ক্ষতি হবে, সেইরূপ ফাইল ছাড়া প্রধানমন্ত্রীর কাছে কোনো ফাইল যাবে না।
নির্বাচনকালীন সরকারের উপর তিনি কোনো নির্দেশনা দিবেন না।প্রয়োজনে তিনি ছুটিতে যাবেন। সংসদ বিলুপ্ত এবং অতঃপর নির্বাচনকালীন সরকার দায়িত্ব গ্রহণের পর নবনিযুক্ত  প্রধানমন্ত্রী  নির্বাচন শেষ এবং নতুন সরকারের দায়িত্ব গ্রহণ না হওয়া পর্যন্ত  ছুটিতে থাকবেন অথবা দায়িত্বগ্রহণ থেকে বিরত থাকবেন।

টেকনোক্র্যাট কোটায় নিয়োগপ্রাপ্ত ব্যক্তিকে স্বাধীনভাবে কাজ করার সুযোগ দিতে হবে। প্রশাসনের যে কোনো পর্যায়ের রদবদল এমনকি জাতীয় নিরাপত্তা গোয়েন্দা সংস্থা এবং বিভিন্ন সংস্থার প্রধানগণের নিয়োগ বদলির ক্ষমতা টেকনোক্র্যাট কোটায় নিয়োগপ্রাপ্ত নিরপেক্ষ ব্যক্তির হাতে থাকবে। তিনি যেহেতু এসব মন্ত্রণালয়ের দায়িত্বপ্রাপ্ত মন্ত্রী সেহেতু রুলস অব বিজনিস অনুযায়ী তিনিই এ ক্ষমতার অধিকারী।

নির্বাচনকালীন ‘সহায়ক সরকার’ কোনো নীতি নির্ধারণী সিদ্ধান্ত গ্রহণ করবে না। সে কারণে ওই সময়ে মন্ত্রিসভার কোনো বৈঠক অনুষ্ঠিত হবে না। তবে রাষ্ট্র যদি বহিঃশত্রু দ্বারা আক্রান্ত হয় কিংবা দেশে যদি এমন পরিস্থিতির উদ্ভব হয় যে, মন্ত্রিসভার বৈঠক অনুষ্ঠান ছাড়া আর কোনো গত্যন্তর নেই কেবলমাত্র সেই কারণেই মন্ত্রিসভার বৈঠক অনুষ্ঠিত হবে। এ ধরনের পরিস্থিতিতে টেকনোক্র্যাট কোটায় নিয়োগপ্রাপ্ত ব্যক্তির লিখিত পরামর্শে এবং সকল রাজনৈতিক দলের সম্মতিতে প্রধানমন্ত্রী কেবল মন্ত্রিসভার বৈঠক আহ্বান করতে পারবেন। বৈঠক আয়োজনের পূর্বে এবং সিদ্ধান্ত গ্রহণের ক্ষেত্রে রাজনৈতিক ঐকমত্য প্রতিষ্ঠা করতে হবে।

এ সংক্রান্ত বিষয়ে সকল রাজনৈতিক দলের মধ্যে একটি সমঝোতা চুক্তিও হতে পারে। এই চুক্তি জাতির সামনে উপস্থাপিত হবে । সাবেক প্রধানমন্ত্রীর সকল নিরাপত্তার দায়িত্ব  রাষ্ট্র পালন করবে। প্রয়োজনে রাষ্ট্র তার আবাসনের ব্যবস্থা করবে। নির্বাচনকালীন সহায়ক সরকার সকল দলের সমান সুযোগ ও মর্যাদা নিশ্চিত করবে। সাবেক রাষ্ট্রপতি বা সাবেক প্রধানমন্ত্রী নির্বাচনে অংশগ্রহণ করলে তারাও বিগত তত্ত্বাবধায়ক সরকারের সময় যে রূপ নিরাপত্তা পেতেন সেরূপ নিরাপত্তার অধিকারী হবেন। নির্বাচনে অংশগ্রহণকারী অন্যান্য দলের সভাপতি ও সাধারণ সম্পাদককে উপযুক্ত সম্মান ও মর্যদা দিতে হবে। নির্বাচনকালীন প্রশাসন হবে নিরপেক্ষ, যোগ্য ও প্রভাবমুক্ত। এক্ষেত্রে নির্বাচনে অংশগ্রহণকারী দলগুলোর অভিযোগ গুরুত্বের সাথে গ্রহণ করতে হবে। নির্বাচনের সহায়ক পরিবেশ নিশ্চিত করতে প্রশাসনে রদবদল করতে হবে। যোগ্য, নিরপেক্ষ ও দক্ষ কর্মকর্তাদের উপযুক্ত পদে পদায়ন করতে হবে। বিভিন্ন সময়ে যে সব রাজনৈতিক দল ক্ষমতায় ছিল সেই সরকারের অতি সুবিধাভোগী অথবা অতি ক্ষতিগ্রস্ত কোনো কর্মকর্তা নির্বাচন সংশ্লিষ্ট বা প্রশাসনে প্রভাব বিস্তারকারী কোনো দায়িত্বে থাকতে পারবেন না। ত্রয়োদশ সংশোধনীর যে রায় এবং পর্যবেক্ষণের দোহাই দিয়ে তত্ত্বাবধায়ক সরকার বাতিল করা হয়েছিল সেই রায়ে নির্বাচনের ৪২ দিন আগে সংসদ বিলুপ্তের নির্দেশনা ছিল। সুতরাং সংসদ বিলুপ্ত করা সংবিধান সম্মত। যা আপিল বিভাগের রায়ে স্বীকৃত। যেহেতু সংবিধানের ১২৩ (খ) অনুচ্ছেদ অনুযায়ী সংসদ বিলুপ্ত হওয়ার ৯০ দিনের মধ্যে জাতীয় নির্বাচন অনুষ্ঠানের নির্দেশনা রয়েছে। অতএব সংসদ ভেঙে দেয়ার ৯০ দিনের মধ্যে নির্বাচন আয়োজন সংবিধান সম্মত এবং ত্রয়োদশ সংশোধনী বাতিলের রায়েরও বরখেলাপ হবে না । সংসদ ভেঙে দেয়ার জন্য প্রধানমন্ত্রী রাষ্ট্রপতিকে অনুরোধ করবেন । সংসদ ভেঙে দেয়ার ৭ দিনের মধ্যে রাষ্ট্রপতি ‘নির্বাচনকালীন সহায়ক সরকার’ গঠন করবেন।

সুষ্ঠু এবং নিরপেক্ষ নির্বাচনের সহায়ক প্রশাসন গঠনের পর ৪২-৪৫ দিন আগে নির্বাচন কমিশন নির্বাচনের তফসিল ঘোষণা করবে। নির্বাচনকালীন সহায়ক সরকারের কোনো কাজে রাষ্ট্রপতি হস্তক্ষেপ করতে পারবেন না । টেকনোক্র্যাট কোটায় নিয়োগপ্রাপ্ত ব্যক্তির লিখিত পরামর্শে বা সুপারিশ অনুযায়ী রাষ্ট্রপতি কেবল আদেশ নির্দেশ জারি করতে পারবেন। টেকনোক্র্যাট কোটায় নিয়োগপ্রাপ্ত নিরপেক্ষ ব্যক্তি দায়িত্ব গ্রহণের পর সকল রাজনৈতিক দলের সঙ্গে আলোচনাক্রমে নির্বাচন কমিশন পুনর্গঠন করবেন । প্রশাসনিক কর্মকর্তাদেরকে রিটার্নিং অফিসারের দায়িত্ব দেয়ার বদলে নির্বাচন কমিশনের নিজস্ব কর্মকর্তাদের রিটার্নিং অফিসারের দায়িত্ব দিতে পারেন। নির্বাচনকালীন সময়ে বিরোধীদলীয় কর্মীদের বিরুদ্ধে দায়েরকৃত মামলার তদন্ত এবং বিচার কার্যক্রম বন্ধ থাকবে। কারাগারে আটক বিরোধীদলীয় নেতা কর্মীদের মুক্তি দিলে সুষ্ঠু নির্বাচনের সহায়ক পরিবেশ গড়ে উঠবে বলে সুশীল সমাজের প্রতিনিধিরা মনে করেন । তারা মনে করেন নির্বাচনের সময় ধর্ষণ, খুন, অ্যাসিড নিক্ষেপ, নারী নির্যাতন, চুরি, ডাকাতি ইত্যাদির মামলা এবং আদালতের পরোয়ানা ছাড়া কোনো ব্যক্তিকে গ্রেপ্তার করা  সঠিক হবে না। তাদের মতে ভোটার এবং ভোট কেন্দ্রের নিরাপত্তার জন্য প্রতিটি কেন্দ্রে সেনাবাহিনী, বিডিআর এবং পুলিশের সমন্বয়ে গঠিত টিমকে দায়িত্ব দেয়া; প্রতিদ্বন্দ্বী রাজনৈতিক দলগুলোর তালিকা অনুযায়ী ঝুকিপূর্ণ ভোট কেন্দ্রে সিসিটিভি স্থাপন; প্রত্যেক আসনে সহকারী রিটানিং অফিসারের কার্যালয়ে সিসিটিভির মনিটরিং কক্ষ এবং  ওই কক্ষে নির্বাচনী পর্যবেক্ষক, স্থানীয় প্রেস ক্লাবের প্রতিনিধি এবং প্রার্থীর একজন করে প্রতিনিধি নিয়োগ করে কোনো কেন্দ্রে অনিয়মের দৃশ্য চোখে পড়লে তাৎক্ষণিকভাবে প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ নেয়া;  অ্যাটর্নি জেনারেল, পিপিসহ আইন কর্মকর্তা পদে দলীয় নিয়োগ বাতিল করে ওই সব পদে নিরপেক্ষ এবং দক্ষ আইনজীবীকে নিয়োগ ইত্যাদি পদক্ষেপ গ্রহণ করা হলে নির্বাচন দেশে-বিদেশে গ্রহণযোগ্যতা পাবে।

Show More

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Related Articles

Back to top button
Situs Toto
Toto Gacor
bacan4d
bacansport login
slot gacor
pasaran togel resmi
bacan4d
toto togel
slot toto
Toto slot gacor
bacan4d
slotgacor
bacan4d rtp
bacan4d
bacan4d toto
Slot Casino
bacan4d toto
slot gacor
bacan4d
bacan4d
Slot Toto
bacan4d
bacan4d login
totoslotgacor
slot gacor
TOTO GACOR
bacan4d
bacan4d slot gacor
bacan4d login
Bacan4d
bacan4d
bacan4d bonus
Toto gacor
Toto gacor
slot gacor hari ini
bacan4d toto
bacan4d toto
bacan4d
bacan4d
bacan4d
toto slot
bacan4d
bacan4d link alternatif
slot gacor bett 200
situs toto
SITUS TOTO
toto 4d
Slot Toto
Slot Toto
Slot Toto
Situs toto
Slot toto
Slot Dana
Slot Dana
Judi Bola
Judi Bola
Slot Gacor
toto slot
bacan4d toto
bacan4d akun demo slot
bacantogel
bacan4d
bacan4d
slot gacor
bacantoto
bacan4d
Bacan4d Login
slot demo
Bacan4d Toto
toto gacor
Slot Gacor
Live Draw
Live Draw Hk
Slot Gacor
toto slot
Bacan4d slot gacor
toto macau
toto slot
Toto Gacor
slot dana
bacan4d
bacan4d
bacan4d
bacan4d
Slot Dp Pulsa
Bacan4d Login
toto slot
Bacansports/a>
xx1toto
xx1toto
xx1toto
xx1toto
xx1toto
xx1toto
xx1toto
xx1toto
xx1toto
xx1toto
xx1toto
xx1toto
xx1toto
xx1toto
xx1toto
xx1toto
xx1toto
xx1toto
xx1toto
xx1toto
xx1toto
xx1toto
xx1toto
xx1toto
xx1toto
xx1toto
toto slot
bacansport
bacansport
bacansport
bacansport
bacansport
bacansport
xx1toto
xx1toto
xx1toto
xx1toto
slot gacor
xx1toto
xx1toto
xx1toto
xx1toto
xx1toto
xx1toto
xx1toto
xx1toto
xx1toto
xx1toto
xx1toto
xx1toto
xx1toto
xx1toto
xx1toto
xx1toto
xx1toto
toto slot
slot demo
toto slot gacor
bacansports Slot toto toto slot Slot toto Slot dana Slot toto slot maxwin slot maxwin toto slot toto slot slot dana
Toto Bola
xx1toto
xx1toto
xx1toto
xx1toto
xx1toto
xx1toto
xx1toto
xx1toto
xx1toto
xx1toto
xx1toto
xx1toto
xx1toto
xx1toto
xx1toto
xx1toto
xx1toto
xx1toto
xx1toto
xx1toto
xx1toto
xx1toto
xx1toto
xx1toto
xx1toto
xx1toto
bacan4d
ts77casino
situs toto
slot pulsa
bacansports
situs toto
slot toto
situs toto
slot toto
situs toto
toto slot
bacansport
bacansport
bacansports
slot toto
xx1toto
xx1toto
xx1toto
xx1toto
xx1toto
situs toto
situs toto
xx1toto
toto slot
xx1toto
xx1toto
slot qriss
Slot Toto
slot dana
situs toto
slot toto
slot dana
Situs Toto Slot Gacor
xx1toto
xx1toto
bacan4d
xx1toto
xx1toto
toto slot
situs toto slot gacor
toto gacor
toto gacor
toto gacor
toto gacor
bacan4d
bacan4d
bacan4d
bacan4d
bacan4d
situs toto
Slot Toto
Toto Slot
Slot Gacor
Slot Gacor
Slot Gacor
slot toto
Toto Slot
slot gacor
situs togel
Toto Slot
xx1toto
bacansport
bacan4d
toto slot
situs toto
slot gacor
Toto Slot
slot maxwin
slot demo
bacan4d toto slot
bacan4d toto slot
bacan4d slot
bacan4d slot
bacan4d slot
bacansports
bacansports
bacansports
bacan4d slot
bacan4d slot
bacan4d
slot gacor
pasaran togel resmi
situs toto
bacan4d login
pasaran togel
pasaran togel
situs toto
bacan4d
bacan4d gacor
bacan4d slot
bacan4d rtp
bacan4d rtp
bacan4d slot gacor
toto slot
situs toto
bacan4d
bacan4d
bacansport
bacansport
bacan4d
bacan4d
bacan4d
bacan4d
bacan4d
bandar togel
toto gacor Toto Gacor bacan4d slot toto casino slot slot gacor bacantoto totogacorslot Toto gacor bacan4d login slotgacor bacan4d bacan4d toto Slot Gacor toto 4d bacan4d toto slot bacan4d slot gacor