২৮ অক্টোবর সমাবেশ : বিরোধীদের গ্রেপ্তার ইস্যু মার্কিন পররাষ্ট্র দপ্তরের ব্রিফিংয়ে, খালেদা জিয়ার অবনতিশীল স্বাস্থ্যের বিষয়টি পর্যবেক্ষণ করছে যুক্তরাষ্ট্র
![](https://miprobashi.com/wp-content/uploads/2023/10/prothomalo-bangla_2023-10_73f78b53-0aaa-4b83-a796-1a4802ba0bd5_MATTHEW_MILLER.webp)
বিএনপির চেয়ারপারসন খালেদা জিয়ার অবনতিশীল স্বাস্থ্যের বিষয়টি যুক্তরাষ্ট্র পর্যবেক্ষণ করছে বলে মন্তব্য করেছেন মার্কিন পররাষ্ট্র দপ্তরের মুখপাত্র ম্যাথু মিলার। স্থানীয় সময় গতকাল বৃহস্পতিবার যুক্তরাষ্ট্রের পররাষ্ট্র দপ্তরের ব্রিফিংয়ে এক প্রশ্নের জবাবে তিনি এই মন্তব্য করেন।
ব্রিফিংয়ে প্রশ্ন করা হয়, মার্কিন পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ে বার্ষিক প্রতিবেদনে উল্লেখ করা হয়েছিল, বাংলাদেশের বিরোধী দলের নেতা খালেদা জিয়ার বিচারপ্রক্রিয়া যথাযথ স্বচ্ছ উপায়ে হয়নি। তাঁকে রাজনীতি থেকে সরাতে চক্রান্ত হয়েছে। এখন তিনি অসুস্থ। যুক্তরাষ্ট্রের জন হপকিনস হাসপাতালের তিনজন চিকিৎসক তাঁর শারীরিক পরীক্ষার জন্য ঢাকায় গিয়েছেন। ভয়েস অব আমেরিকার প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, বাংলাদেশের প্রথম নারী প্রধানমন্ত্রী খালেদা জিয়ার শারীরিক অবস্থা বেশ নাজুক। সরকারি বিধিনিষেধের মুখে তিনি মৃত্যুর ঝুঁকিতে রয়েছেন। এ পরিস্থিতিতে খালেদা জিয়াকে দেশের বাইরে নিয়ে যথাযথ চিকিৎসা নিতে অনুমতি দিতে বাংলাদেশ সরকারের প্রতি যুক্তরাষ্ট্র আহ্বান জানাবে কি না?
জবাবে মিলার বলেন, ‘আমি এটা বলতে পারি, সাবেক প্রধানমন্ত্রী খালেদা জিয়ার অবনতিশীল শারীরিক অবস্থার প্রতিবেদন পর্যবেক্ষণ করছে যুক্তরাষ্ট্র। তাঁর (খালেদা জিয়া) জন্য একটি ন্যায্য ও স্বচ্ছ আইনি প্রক্রিয়া নিশ্চিত করতে বাংলাদেশ সরকারকে উৎসাহিত করেছি আমরা। তবে এ বিষয়ে আমার বলার কিছু নেই। এটা দেশটির অভ্যন্তরীণ আইনের বিষয়।’
এরপর মিলারকে প্রশ্ন করা হয়, বাংলাদেশে ২৮ অক্টোবরের রাজনৈতিক কর্মসূচি সামনে রেখে সরকার দমনপীড়ন চালাচ্ছে। প্রতিদিনই বিরোধী পক্ষের নেতা–কর্মীদের গ্রেপ্তার করছে। সমাবেশে বড় ধরনের জমায়েত প্রতিহত করতে নিয়ন্ত্রণ আরোপ করছে। আপনি, রাষ্ট্রদূত পিটার হাস আগেও বহুবার মৌলিক অধিকার নিশ্চিত করতে এবং জনগণের ইচ্ছার প্রতিফলন ঘটানোর আহ্বান জানিয়েছেন। এ বিষয়ে আপনার মতামত কী?
এই প্রশ্নের উত্তরে মিলার বলেন, ‘আমাদের (মার্কিন প্রশাসন) বিশ্বাস, বাংলাদেশের আগামী জাতীয় নির্বাচন অবাধ, সুষ্ঠু এবং শান্তিপূর্ণ হওয়া প্রয়োজন। এ ছাড়া আমার আর বলার কিছু নেই।’
মিলারকে জিজ্ঞাসা করা হয়, যুক্তরাষ্ট্রের দক্ষিণ ও মধ্য এশিয়াবিষয়ক উপসহকারী পররাষ্ট্রমন্ত্রী আফরিন আক্তারের ঢাকা সফরের সময় বিভিন্ন টক শোতে সরকারবিরোধী বক্তারা বলেছেন, ৩ নভেম্বরের মধ্যে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাকে পদত্যাগ করতে সময় বেঁধে দিয়েছে যুক্তরাষ্ট্র। তাঁদের দাবি, মার্কিন প্রশাসন বিরোধীপক্ষের পাশে রয়েছে। দাবির বিষয়টি আপনি নিশ্চিত করবেন, নাকি অস্বীকার করবেন?
জবাবে মিলার বলেন, ‘আমি শুধু বলব যে কোনো দেশের অভ্যন্তরীণ রাজনৈতিক বিষয়ে আমরা নির্দিষ্ট কোনো পক্ষ নিই না।’
হিন্দু সম্প্রদায়ের সবচেয়ে বড় উৎসব দুর্গাপূজার প্রসঙ্গ উল্লেখ করে প্রশ্ন করা হয়, উৎসবের শেষে ২৮ অক্টোবর ঢাকা অবরোধ করার কর্মসূচি দিয়েছে বিরোধী দল বিএনপি। তারা তাদের সহিংস সমর্থকদের ঢাকা অবরোধে যোগ দিতে বলেছে। রাজনৈতিক সহিংসতার রেকর্ড রয়েছে দলটির। দলটির নেতা তারেক রহমান অভিযুক্ত ও পলাতক। সাবেক মার্কিন রাষ্ট্রদূত তাঁকে বাংলাদেশে ‘সহিংসতার প্রতীক’ বলেছেন। এই পরিস্থিতিতে বিএনপির রাজনৈতিক কর্মসূচি নিয়ে আপনার মতামত কী?
এই প্রশ্নের কোনো স্পষ্ট উত্তর দেননি মিলার। তিনি শুধু বলেন, ‘এ বিষয়ে আমি পরে আপনাকে মন্তব্য জানাব।’
বিএনপিসহ বেশ কয়েকটি রাজনৈতিক দল আগামীকাল শনিবার (২৮ অক্টোবর) রাজধানী ঢাকায় সমাবেশ করবে। বর্তমান ক্ষমতাসীনরাও একই দিনে মাঠে থাকবে বলে জানা গেছে। যার কারণে দিনটিকে ঘিরে উত্তেজনা বিরাজ করছে দেশজুড়ে।
এর মধ্যেই বিএনপি নেতাদের অভিযোগ সমাবেশের আগেই তাদের নেতাকর্মীদের অবাধে গ্রেপ্তার করা হচ্ছে। সেই সঙ্গে ঢাকার প্রবেশমুখে তল্লাশিসহ অভিযান চালানো হচ্ছে। এবার বিষয়টি মার্কিন স্টেট ডিপার্টমেন্টের নজরে আনা হয়েছে।
মার্কিন স্টেট ডিপার্টমেন্টের নিয়মিত ব্রিফিংয়ে এ বিষয়ে প্রশ্ন করা হলে প্রধান মুখপাত্র ম্যাথিউ মিলার বলেন, আমরা বিশ্বাস করি আসন্ন নির্বাচন অবাধ, সুষ্ঠু এবং শান্তিপূর্ণ হওয়া দরকার। এ ছাড়া কোনো মন্তব্য নেই আমাদের।
সংবাদ সম্মেলনে যে বিষয়ে তুলে ধরা হয়, ২৮ অক্টোবরের মহাসমাবেশকে সামনে রেখে সরকার প্রতিদিনই বিরোধীদের ওপর আক্রমণ ও গ্রেপ্তার করছে। এ ছাড়াও মহাসমাবেশ বাধা দেওয়ার জন্য চেষ্টা করছে, বিষয়টি নিয়ে আপনি অনেকবার বলেছেন। রাষ্ট্রদূত পিটার হাসও অনেকবার আহ্বান জানিয়েছেন – মৌলিক অধিকার নিশ্চিত করতে এবং বাংলাদেশের জনগণের ইচ্ছার প্রতিফলন করতে।
আগামী ২৮ অক্টোবর রাজধানীতে ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগ ও প্রধান বিরোধীদল বিএনপি পাল্টাপাল্টি রাজনৈতিক সমাবেশ ডেকেছে। এ ছাড়াও মাঠে রয়েছে জামায়াতে ইসলামী। এ দলটি শাপলা চত্বরে সমাবেশের ঘোষণা দিয়েছে।