জুলাই-সেপ্টেম্বরে দেশের বৈদেশিক ঋণের সুদ পরিশোধ বেড়েছে তিনগুণ
পরিসংখ্যান অনুযায়ী, আগের অর্থবছরের তুলনায় চলতি অর্থবছরের পরিশোধিত এই সুদ তিনগুণেরও বেশি।
সাম্প্রতিক দিনে স্থানীয় মুদ্রা বা টাকা অবমূল্যায়নের প্রভাব বাংলাদেশের বৈদেশিক ঋণ পরিশোধের ওপর স্পষ্ট হয়ে উঠেছে। চলতি অর্থবছরের জুলাই-সেপ্টেম্বর প্রান্তিকে কেবল বৈদেশিক ঋণের সুদ বাবদই ৪,১৪৭ কোটি টাকা বা ৩৭৮ মিলিয়ন ডলারের বেশি পরিশোধ করেছে সরকার।
পরিসংখ্যান অনুযায়ী, আগের অর্থবছরের তুলনায় চলতি অর্থবছরের পরিশোধিত এই সুদ তিনগুণেরও বেশি।
রোববার (২৯ অক্টোবর) অর্থনৈতিক সম্পর্ক বিভাগ (ইআরডি) প্রকাশিত তথ্য অনুযায়ী, সরকার আগের বছরের একই সময়ে সুদ বাবদ পরিশোধ করেছিল ১,২৯৭ কোটি টাকা বা প্রায় ১৩৭ মিলিয়ন ডলার।
তবে এরসঙ্গে রয়েছে ইতিবাচক খবরও। আলোচ্য ত্রৈমাসিকে বিদেশি ঋণের প্রতিশ্রুতি সাতগুণ বৃদ্ধি পেয়ে ২.৮৮ বিলিয়ন ডলার হয়েছে, যা আগের বছরের একই সময়ে ছিল মাত্র ৪০৫ মিলিয়ন ডলার।
ইআরডি কর্মকর্তারা জানান, কর্ণফুলী টানেলসহ কিছু বড় ঋণের গ্রেস পিরিয়ড শেষ যাওয়ায় আসল পরিশোধ শুরু হয়েছে। এছাড়া, সরকারের বাজার-ভিত্তিক ঋণের পরিমাণ বেড়েছে। এরমধ্যে বাজার-ভিত্তিক ঋণে ফ্লোটিং ইন্টারেস্ট রেটও বেড়েছে।
দুই বছর আগেও বাজার-ভিত্তিক ঋণে এসওএফআর (সিকিউরড ওভারনাইট ফিন্যান্সিং রেট) সুদহার ১ শতাংশের কম ছিল, তা এখন ৫ শতাংশের বেশি। গত অর্থবছরের প্রথম প্রান্তিকের চেয়ে চলতি বছরের প্রথম প্রান্তিকে কেবল সুদ পরিশোধ বেড়েছে ১৭৬ শতাংশ। এ কারণে বৈদেশিক ঋণ পরিশোধে চাপ বেড়েছে।
ইআরডির তথ্য অনুযায়ী, ডলার হিসাবে সুদ ও আসল মিলিয়ে বৈদেশিক ঋণ পরিশোধ ৬৫.৫ শতাংশ বেড়েছে।
কর্মকর্তারা জানান, অর্থনৈতিক পরিস্থিতি বিবেচনায় গেল অর্থবছরে বাজেট সহায়তার ওপর জোর দেওয়া হয়েছিল, সে কারণে উন্নয়ন প্রকল্পে ঋণ কম গেছে। কিন্তু এবার পরিকল্পনা অনুযায়ী প্রকল্প ঋণ নেওয়ার কৌলশ নিয়েছে সরকার। চলতি অর্থবছরে ৮.৯৭৭ বিলিয়ন ডলার ঋণের প্রতিশ্রুতি আদায়ের লক্ষ্য রয়েছে, যার এক-তৃতীয়াংশ প্রথম কোয়ার্টারে আদায় করা সম্ভব হয়েছে। এ কারণে অর্থবছরের জুলাই-সেপ্টেম্বর সময়ে প্রতিশ্রুতি বেড়েছে ৬১০.৫ শতাংশ।
ইআরডির কর্মকর্তারা জানান, প্রথম প্রান্তিকে বাংলাদেশ সবচেয়ে বেশি প্রতিশ্রুতি পেয়েছে জাপানের কাছ থেকে। এখান থেকে ১.৫ বিলিয়ন ডলারের প্রতিশ্রুতি পাওয়া গেছে। গত অর্থবছরের একই সময়ে জাপানের সঙ্গে কোনো ঋণ চুক্তি ছিল না। আগে জাপানের সঙ্গে মূলত ঋণচুক্তি হতো অর্থবছরের শেষের দিকে। কিন্ত এবার জাপানের সঙ্গে অর্থবছরের শুরুর দিকেই ঋণচুক্তি হয়েছে সরকারের।
জাপানের মতোই অবস্থা এশীয় উন্নয়ন ব্যাংকের (এডিবি)। গত অর্থবছরের প্রথম কোয়ার্টারে এডিবির সঙ্গে কোনো ঋণ চুক্তি ছিল না। কিন্ত চলতি অর্থবছরে সেপ্টেম্বরের মধ্যে এই সংস্থার সঙ্গে সরকার ৭৯০ মিলিয়ন ডলারের ঋণ চুক্তি করেছে।
জাপান ও এডিবি ছাড়াও সরকার চলতি অর্থবছরের প্রথম প্রান্তিকে বিশ্বব্যাংকের কাছ থেকে ৩০০ মিলিয়ন ডলারের প্রতিশ্রুতি পেয়েছে। এছাড়া, ইউরোপীয় দেশগুলো থেকে সরকার ২১২ মিলিয়ন প্রতিশ্রুতি পেয়েছে।
এদিকে, উন্নয়ন সহযোগীদের প্রতিশ্রুতি বাড়লেও উন্নয়ন প্রকল্প বাস্তবায়নে সক্ষমতার অভাবে অর্থছাড় বাড়ানি, বরং বৈদেশিক ঋণের অর্থছাড় কমেছে গত বছরের একই সময়ের তুলনায় ৫ শতাংশ। চলতি অর্থবছরের প্রথম প্রান্তিকে উন্নয়ন সহযোগীরা ছাড় করেছে ১.২৮ বিলিয়ন ডলার, যা গত অর্থবছরের একই সময়ে ছিল ১.৩৫ বিলিয়ন ডলার।
প্রথম প্রান্তিকে উন্নয়ন সহযোগীদের মধ্যে সবচেয়ে বেশি অর্থছাড় করেছে জাপান। সংস্থাটি প্রথম প্রান্তিকে ছাড় করেছে ৪২৭.৮ মিলিয়ন ডলার। এছাড়া, এডিবি ২২৫.৬ মিলিয়ন ডলার, বিশ্বব্যাংক ২১৮.৮৯ মিলিয়ন ডলার এবং রাশিয়া ছাড় করেছে ২১০.৯২ মিলিয়ন ডলার।