বাংলাদেশের কেন্দ্রীয় ব্যাংকের এক মাসে রিজার্ভ কমছে ১০০ কোটি ডলার
নির্বাচন সামনে রেখে দমনপীড়ন তীব্র করেছে সরকার : আইসিজি
বাংলাদেশ পরিস্থিতি নিয়ে বেলজিয়ামের ব্রাসেলসভিত্তিক গবেষণা প্রতিষ্ঠান ইন্টারন্যাশনাল ক্রাইসিস গ্রুপ (আইসিজি) বলেছে, বাংলাদেশের চলমান পরিস্থিতির ওপর কড়া নজর রাখছে আন্তর্জাতিক মহল। গ্রেফতার ও সহিংস পরিস্থিতি নিয়ে মূল্যায়নও করছে। বিএনপি গত ২৮ অক্টোবর ঢাকায় বিশাল মহাসমাবেশ করেছে। তাকে কেন্দ্র করে সৃষ্ট সহিংসতায় একজন পুলিশ সদস্য ও কয়েকজন বেসামরিক ব্যক্তি নিহত হয়েছেন। আগামী জানুয়ারিতে নির্বাচনকে সামনে রেখে দমনপীড়ন তীব্র করেছে সরকার। এই দমনপীড়নকে উপেক্ষা করে বিএনপি বিশাল সমাবেশ করেছে। একই সঙ্গে দেশে প্রতি মাসে এক বিলিয়ন (১০০ কোটি ডলার) হিসেবে কমছে কেন্দ্রীয় ব্যাংকের রিজার্ভ।
ইন্টারন্যাশনাল ক্রাইসিস গ্রুপ একটি অলাভজনক বহুজাতিক ও বেসরকারি সংগঠন। ১৯৯৫ সালে প্রতিষ্ঠিত হয়। থিংকট্যাংক এই প্রতিষ্ঠানটি বৈশ্বিক সংকট নিয়ে গবেষণা ও বিশ্লেষণ করে। তাদের গবেষণা ব্যবহার করেন বিভিন্ন পলিসিমেকার ও শিক্ষাবিদ। নিজেদেরকে যুদ্ধবিরোধী কর্মকাণ্ডে এবং বিশ্বকে অধিক শান্তিপূর্ণ হিসেবে গড়ে তোলার ক্ষেত্রে নীতি প্রণয়নে তারা কাজ করে।
আইসিজি সর্বশেষ রিপোর্টে লিখেছে, ২০১৪ সালের জানুয়ারি মাসের নির্বাচনকে সামনে রেখে দলীয় সমর্থকদের মধ্যে গতি আনতে গত ২৮ অক্টোবর ঢাকায় মহাসমাবেশ করে বিএনপি। তা থেকে নির্বাচনের আগে নির্দলীয় তত্ত্বাবধায়ক সরকার প্রতিষ্ঠার দাবি জানানো হয়। সমাবেশে যোগ দেয়া বন্ধে চেষ্টা থাকা সত্ত্বেও তাতে যোগ দেন বিএনপির প্রায় দুই লাখ সমর্থক।
বিএনপির ২৮ অক্টোবরের মহাসমাবেশ ও তাকে কেন্দ্র করে সহিংসতার বিষয়ে সংস্থাটির প্রতিবেদনে লিখেছে, প্রধানত পুলিশ এবং বিএনপির সমর্থকদের মধ্যে ভয়াবহ সহিংসতা ছড়িয়ে পড়ে। এর ফলে ওই সমাবেশ ভণ্ডুল করে দেয় পুলিশ। তারা রাবার বুলেট ও কাঁদানে গ্যাস নিক্ষেপ করে। রাজপথের সেই লড়াই সঙ্গে সঙ্গে ঢাকা শহরে ছড়িয়ে পড়ে। এতে একজন পুলিশ সদস্য ও একজন বেসামরিক ব্যক্তি নিহত হন। আহত হন কয়েক শত মানুষ। বিভিন্ন বড় বড় শহরে সহিংসতার খবর পাওয়া গেছে। এতে বেশ কয়েকজন বেসামরিক ব্যক্তি নিহত ও আহত হয়েছেন। পুলিশ সদস্যকে হত্যার অভিযোগে ২৯ অক্টোবর বিএনপির মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর ও অন্য প্রায় ১০০ নেতাকর্মীকে গ্রেপ্তার করে আওয়ামী লীগ নেতৃত্বাধীন সরকার। বিএনপি দাবি করেছে ২১ থেকে ২৯ অক্টোবর পর্যন্ত তাদের প্রায় ৩০০০ দলীয় নেতাকর্মীকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে। বিএনপি ও অন্য বিরোধী দলগুলো দেশজুড়ে হরতাল আহ্বান করে। ২৯ অক্টোবর ঢাকার রাস্তাঘাট বন্ধ করে দেয় তারা। ৩১ অক্টোবর থেকে ২ নভেম্বর পর্যন্ত তিনদিনের অবরোধ ঘোষণা করে। এতে আরও সহিংসতা হওয়ার আশঙ্কা প্রকাশ করে আইসিজি।
বাংলাদেশের অর্থনৈতিক চিত্র তুলে ধরে আইসিজি আরো বলেছে, বাংলাদেশে অর্থনৈতিক টানাপড়েন অব্যাহত আছে। ১৮ অক্টোবর কেন্দ্রীয় ব্যাংকের রিপোর্টে বলা হয়েছে, নিট বৈদেশিক মুদ্রার রিজার্ভ ১৭ বিলিয়ন ডলারের নিচে নেমে গেছে। এই অর্থ দিয়ে তিন মাসের আমদানি খরচ মেটানো যেতে পারে। কিন্তু প্রতি মাসে এই রিজার্ভ এক বিলিয়ন ডলার করে কমছে। বাড়তি ৬৮ কোটি ১০ লাখ ডলার অর্থ বরাদ্দ পেতে আন্তর্জাতিক অর্থ তহবিল আইএমএফের সঙ্গে স্টাফ পর্যায়ে সরকার চুক্তি স্বাক্ষর করেছে ১৯ অক্টোবর। এ ছাড়া ওই রিপোর্টে কক্সবাজারে রোহিঙ্গা শরণার্থী ক্যাম্পের সহিংসতা অব্যাহত আছে বলা হয়েছে। ২ অক্টোবর আরাকান রোহিঙ্গা সালভেশন আর্মির (আরসা) প্রধানের অর্থনৈতিক সম্পর্ক ও ব্যক্তিগত সহকারীকে আটক করেছে র্যাব। আরসার সঙ্গে ৪ অক্টোবর বন্দুকযুদ্ধে সশস্ত্র এই গ্রুপের এক সদস্য নিহত হয়েছে।