Bangladesh

বেসামাল অর্থনৈতিক সঙ্কটে দেশ

৩৬ বছরের জীবনে এ ধরনের সঙ্কট কখনও দেখিনি : গভর্নর দেশের অর্থনৈতিক সূচকগুলো নিম্নমুখী প্রবণতায় : ড. রেহমান সোবহান অর্থনৈতিক অবস্থা নিয়ে উদ্বেগ বাস্তবতারও ধরাছোঁয়ার বাইরে : ড. জাহিদ হোসেন

দীর্ঘদিন থেকেই অর্থনীতিতে নানামুখী সঙ্কট বিরাজমান। নতুন কোন সু-খবর নেই। এমনকি চলতি অর্থবছরের শুরুটাও ভালো হয়নি। ডলার সঙ্কট এখনও বিদ্যমান। বরং এই সঙ্কট আরও বেড়েছে। এছাড়া ডলার সঙ্কটের এ প্রভাব পড়েছে অর্থনীতির সর্বত্র। মূল্যস্ফীতি, প্রবাসী আয়, বৈদেশিক মুদ্রার রিজার্ভ, খেলাপি ঋণ, রফতানি, রাজস্ব কোনো সূচকের অবস্থাই সন্তোষজনক নয়। অর্থনীতির প্রধান সূচকগুলোর চাপে পড়ার সঙ্গে যোগ হয়েছে বিনিয়োগ। অর্থনৈতিক অস্থিরতার মধ্যে বিনিয়োগ প্রবাহেও কোনো ভালো খবর নেই। কারণ বিনিয়োগকারীরা বর্তমানে নতুন ব্যবসা বা প্রকল্প শুরু কিংবা বিদ্যমান ব্যবসা সম্প্রসারণ করছেন না। আর তাই গত এক থেকে দেড় বছরে প্রায় প্রতিটি সূচকের শক্তিশালী অবস্থান দুর্বল থেকে দুর্বলতর হয়েছে। আর চলতি অর্থবছরের প্রথম প্রান্তিকেও (জুলাই-সেপ্টেম্বর) অর্থনীতির বেশির ভাগ সূচকের আরও অবনতি হয়েছে। সব মিলিয়ে সামষ্টিক অর্থনীতির স্থিতিশীলতা এখন হুমকির মুখে। আবার দেশে চলছে রাজনৈতিক অস্থিরতা ও জাতীয় নির্বাচনের চ্যালেঞ্জ। এই সময়ে এমনিতেই ব্যবসা-বাণিজ্যের গতি শ্লথ থাকে। দেখা দেয় নানা ধরনের অনিশ্চয়তা। সব মিলিয়ে অর্থনীতির বেসামাল অবস্থার দ্রুত উন্নতির আশা দেখছেন না অর্থনীতিবিদেরা। বিশ্বব্যাংকের ঢাকা অফিসের সাবেক প্রধান অর্থনীতিবিদ ড. জাহিদ হোসেন বর্তমান অর্থনৈতিক অবস্থা নিয়ে উদ্বেগ প্রকাশ করে বলেছেন, এটি ‘বাস্তবতারও ধরাছোঁয়ার বাইরে’ চলে গেছে বলে মনে হচ্ছে।

অর্থনীতিবিদ প্রফেসর ড. রেহমান সোবহান গত সোমবার পলিসি রিসার্চ ইনস্টিটিউটের এক আলোচনায় বলেছেন, দেশে অর্থনৈতিক বৈষম্য বাড়ছে। দেশে ক্রমাগত বৃদ্ধি পাওয়া অর্থনৈতিক বৈষম্য হ্রাসের উপায় খুঁজে বের করতে গবেষণা করতে হবে। তিনি বলেন, পলিসি রিসার্চ ইনস্টিটিউট (পিআরআই) ও সেন্টার ফর পলিসি ডায়ালগের (সিপিডি) মতো প্রতিষ্ঠানগুলোকে অর্থনৈতিক বৈষম্য হ্রাস নিয়ে গবেষণা করতে হবে। এ জন্য গ্রহণযোগ্য বৈজ্ঞানিক উপায় খুঁজে বের করতে হবে। বাংলাদেশ এবং পাকিস্তানের অর্থনৈতিক সূচকগুলো অন্যান্য অনেক দেশের চাইতে ভালো। তবে দুই দেশেরই সূচকগুলোর নিম্নমুখী প্রবণতা রয়েছে।


যদিও নানামুখী অর্থনৈতিক সঙ্কটের মধ্যেও সরকারের মন্ত্রী-এমপি’রা বলছেন, দেশে কোন ধরণের সঙ্কট নেই। উন্নয়নের জোয়ার বইছে। বাস্তবে ভিন্ন চিত্র। তবে অবশেষে অর্থনৈতিক সঙ্কট নিয়ে মুখ খুলেছেন বাংলাদেশ ব্যাংকের গভর্নর আব্দুর রউফ তালুকদার। বর্তমান অর্থনৈতিক সঙ্কট সম্পর্কে বাংলাদেশ ব্যাংকের গভর্নর বলেন, আমাদের অর্থনীতিতে এখন একটা সঙ্কট পার করছি। আমার সিভিল সার্ভিস এবং পাবলিক সার্ভিসের ৩৬ বছরের জীবনে এ ধরনের সঙ্কট আমি কখনও দেখিনি। তবে নির্বাচনের পর বাংলাদেশের উপর আস্থা বাড়লে বিদেশ থেকে বিনিয়োগ আসবে, বৈদেশিক ঋণের অর্থ ছাড় হবে এবং ইউএস ইন্টারেস্ট রেট কমলে বাংলাদেশের শর্ট টার্ম ক্রেডিট ও ট্রেড ক্রেডিট বাড়লেই অর্থনীতিতে বাউন্স ব্যাক শুরু হবে বলে আশা করেন কেন্দ্রীয় ব্যাংক গভর্নর আব্দুর রউফ তালুকদার। যদিও তিনি আশাবাদ ব্যক্ত করেছেন, আগামী জাতীয় সংসদ নির্বাচনের পর অর্থনীতিতে ইতিবাচক পরিবর্তন শুরু হবে এবং চলতি অর্থবছর শেষে অর্থনীতি পুনরুদ্ধার হবে। এদিকে আশানুরুপ রেমিট্যান্স না আসায় বৈদেশিক মুদ্রার রিজার্ভ থেকে সরকার স্থানীয় উন্নয়নে আর এক ডলারও বিনিয়োগ করবে না বলে জানান আব্দুর রউফ তালুকদার।
সম্প্রতি বিশ্বব্যাংক ২০২৩-২৪ অর্থবছরের জন্য বাংলাদেশের প্রবৃদ্ধির পূর্বাভাস সংশোধন করে ৫ দশমিক ৬ শতাংশে নামিয়ে এনেছে। কারণ, ক্রমবর্ধমান মূল্যস্ফীতি ও বহিস্থ চ্যালেঞ্জের মুখে বাংলাদেশের অর্থনীতি পুরো বছরজুড়ে চাপে থাকবে বলে মনে করা হচ্ছে। উদ্যোক্তারা বলেছেন, যেকোনো সাধারণ নির্বাচনের আগে বেসরকারি বিনিয়োগ প্রবাহ সাধারণত কম থাকে। কিন্তু, এ বছরের অর্থনৈতিক চ্যালেঞ্জ পরিস্থিতি আরও খারাপ করে তুলেছে।

পলিসি এক্সচেঞ্জ বাংলাদেশের চেয়ারম্যান এম মাসরুর রিয়াজ বলেন, বৈদেশিক মুদ্রার বাজারে স্থিতিশীলতা, বিনিয়োগ সংক্রান্ত নীতিমালা ও শুল্ক ব্যবস্থার সংস্কার ছাড়া দেশি-বিদেশি বিনিয়োগের উন্নতি হবে না। দেশে চাহিদার তুলনায় দেশি-বিদেশি বিনিয়োগ খুবই কম। তিনি জানান, বর্তমান সামষ্টিক অর্থনৈতিক চ্যালেঞ্জগুলো বিনিয়োগের মন্দা পরিস্থিতির জন্যও দায়ী। এগুলোর সমাধান না হলে বিনিয়োগকারীরা নতুন বিনিয়োগ বা বিদ্যমান ব্যবসা সম্প্রসারণ করবে না।

এদিকে দেশের অর্থনৈতিক সঙ্কট নিয়ে দীর্ঘদিন থেকে আর্থিকখাতের বিশ্লেষকরা নানামুখী পথ দেখিয়েছেন। কিন্তু অর্থনীতি সামলাতে নীতিনির্ধারকেরা সে সব পথে হাটেননি। যার ফলসরুপ দেশ অর্থনৈতিক বিপর্যয়ে শ্রীলংকার পথে হাটছে বলেও অনেকে সতর্ক করছেন। আর অর্থনীতির নানামুখী দিক নিয়ে এবার বাস্তব সত্য স্বীকার করলেন বাংলাদেশ ব্যাংকের আব্দুর রউফ তালুকদার। গত সোমবার ইকোনমিক রিপোর্টার্স ফোরাম এর সঙ্গে ৩ ঘণ্টাব্যাপি এক মত বিনিময় সভায় বাংলাদেশ ব্যাংকের গভর্নর দেশের আর্থিক ও মুদ্রাখাতের সর্বশেষ পরিস্থিতি ও সরকারের বিভিন্ন পরিকল্পনার কথা উল্লেখ করেন।

ট্রিপল ডেফিসিট নিয়ে সঙ্কটে অর্থনীতি
২২ বছর অর্থ বিভাগে কর্মরত থাকার সময়কার অভিজ্ঞতা তুলে ধরে আব্দুর রউফ তালুকদার বলেন, আমরা সব সময় টুইন ডেফিসিট (কারেন্ট অ্যাকাউন্ট ডেফিসিট ও ফিসক্যাল ডেফিসিট) ম্যানেজম্যান্ট নিয়ে আলোচনা করেছি। গত অর্থবছর কারেন্ট অ্যাকাউন্ট ডেফিসিট হয়েছে, ফিন্যান্সিয়াল অ্যাকাউন্ট ডেফিসিট হয়েছে ১৪-১৫ বছর পর। গত অর্থবছরের আগে ফিন্যান্সিয়াল অ্যাকাউন্ট ১৫ বিলিয়ন ডলার পজেটিভ ছিল, গত অর্থবছর তা ২ বিলিয়ন ডলার নেগেটিভ হয়েছে। অর্থাৎ, এক বছরের মধ্যে ১৭ বিলিয়ন ডলার কমে গেছে, এমনটি কখনও হয়নি। আমরা এখন এই ট্রিপল ডেফিসিট নিয়ে খুবই সঙ্কটে আছি। গত অর্থবছরের ১২ জুলাই গভর্নর হওয়ার সময় কারেন্ট একাউন্টে ১৮ বিলিয়ন ডলার ডেফিসিট ছিল, যা জিডিপির ৪শতাংশ। এটা এখন পজেটিভ হয়েছে বলে উল্লেখ করেন তিনি। কিন্তু ফিন্যান্সিয়াল অ্যাকাউন্ট যে নেগেটিভ হতে পারে, তা কখনও আমাদের মাথায় আসেনি। গতবছরের শেষে যখন এটি নেগেটিভ হতে থাকলো, তখন আরেক সঙ্কটে পড়লাম, উল্লেখ করেন গভর্নর।

ফডিআই অলমোস্ট জিরো হয়ে গেছে। যুক্তরাষ্ট্র পলিসি রেট বাড়ানোর কারণে সেখানে সবাই টাকা রাখছে। আরেকটি হলো- আমাদের নির্বাচন। কেউ এখন ইনভেস্টমেন্টে আসছে না। শর্ট টার্ম ক্রেডিট ও ট্রেড ক্রেডিটও নেগেটিভ। এমনকি আমাদের ওডিএ ডিসবার্সমেন্ট গত তিন বছরের মধ্যে এবছর সর্বনিম্ন। এই চারটির কোনটিই বাংলাদেশ ব্যাংকের নিয়ন্ত্রণের মধ্যে না। এগুলো সরকারের নিয়ন্ত্রণেরও বাইরে। আমরা যখন বুঝতে পারলাম সঙ্কট আসছে, তখনই আইএমএফ’র কাছে গেলাম আগে। সঙ্কটে পড়ার আগেই গিয়েছি। শ্রীলঙ্কা ও পাকিস্তান সঙ্কটে পড়ার পর আইএমএফ এর কাছে গিয়েছে। আইএমএফও বলেছে, আমাদের ফান্ডামেন্টাল সমস্যা নেই বলে উল্লেখ করেন তিনি।
নির্বাচনের পর বাউন্স ব্যাক
নির্বাচনের পর দেশের অর্থনীতি স্বাভাবিক হওয়ার কারণ সম্পর্কে জানতে চাইলে বাংলাদেশ ব্যাংকের গভনর্র বলেন, প্রধান কারণ হলো আস্থা। তিনি বলেন, বিদেশি পার্টের এফডিআই গতবারের তুলনায় নেগেটিভ হয়ে গেছে। কারণ, সবাই নির্বাচনের জন্য অপেক্ষা করছে। নির্বাচন পরিস্থিতি নিয়ে কী হয়, তা দেখে বিনিয়োগের সিদ্ধান্ত নেবে। এখন কেউই বিনিয়োগ করতে আসছে না। যেসব ডেভেলপমেন্ট পার্টনারদের সঙ্গে লোন সাইন হয়ে আছে, তাদের অর্থ ছাড় করার কথা। তারাও নির্বাচনের কারণে এখন অপেক্ষা করছে। আর এখন অবস্থা তো আরও খারাপ। হরতাল, অবরোধ চলছে। এই সময় বিদেশি কনসালটেন্টও আসবে না, টাকাও ছাড় করবে না, বলেন তিনি। তিনি বলেন, ইউএস ইন্টারেস্ট রেট এখন স্থিতিশীল আছে। এটা পরবর্তীতে ইন্টারেস্ট রেট কমানোর ইঙ্গিত দিচ্ছে। মারাকাসে অনুষ্ঠিত বিশ্বব্যাংক ও আইএমএফ এর বোর্ড সভায় যুক্তরাষ্ট্রের ট্রেজারি সেক্রেটারি ও ফেডারেল রিজার্ভ ব্যাংকের চেয়ারম্যান বলেছেন, এই বছর শেষে ইন্টারেস্ট রেট ২ দশমিক ৫ শতাংশ এ নামবে এবং আগামী মার্চের মধ্যে এটা ২ শতাংশ এ নেমে আসবে। তাদের এই বক্তব্য থেকে আমরা ধরে নিছি যে, মার্চের পর থেকে এসওএফআর রেট কমে আসবে। আর এসওএফআর রেট একবার কমা শুরু করলে আমেরিকান ডলার আমাদের এখানে আসা শুরু করবে। তখন আমাদের ট্রেড ক্রেডিটও বাড়তে থাকবে’- জানান গভর্নর। তাই নির্বাচনের পর এফডিআই আসবে বলে আমরা খুবই নিশ্চিত। নির্বাচনের পর আমাদের ওডিএ ডিজবার্সমেন্ট বাড়বে। ইউএস ইন্টারেস্ট রেট কমালে মার্চের পরে বাংলাদেশের শর্ট টার্ম ক্রেডিট ও ট্রেড ক্রেডিট বাড়তে থাকবে। তাই মার্চ থেকে আমাদের ফিন্যান্সিয়াল একাউন্ট পজেটিভ হতে শুরু করবে। আমরা খুবই আশাবাদী, এই অর্থবছরের শেষে আমাদের ফিন্যান্সিয়াল একাউন্ট পজেটিভ হয়ে যাবে বলে উল্লেখ করেন তিনি।

ঋণখেলাপিদের পুরস্কার আটকে দেওয়া হচ্ছে
নতুন ব্যাংক কোম্পানি আইনের প্রয়োগ শুরু করেছে বাংলাদেশ ব্যাংক। এ আইন অনুযায়ী, কোনো ঋণ খেলাপি ব্যক্তি ও প্রতিষ্ঠান রাষ্ট্রীয় পদক পাওয়ার অযোগ্য বলে বিবেচিত হবে। এ বিধান প্রয়োগ করে শিল্প মন্ত্রণালয়ের উদ্যোগে দেওয়া প্রেসিডেন্ট শিল্প উন্নয়ন পুরস্কারের তালিকা যাচাই করে ঋণ খেলাপিদের নাম বাদ দেওয়া হচ্ছে।
খেলাপি হওয়ার কারণে অনেক বড় বড় ব্যবসায়ী এবছর ওই পুরস্কার পাবে না। ঋণ খেলাপিদের নামের দিকে আমি তাকাই না। যতো বড় নামই হোক, কেউই আমার কাছ থেকে কোন সুবিধা নিতে পারে না, বলে উল্লেখ করেন আব্দুর রউফ তালুকদার। খেলাপি ঋণ বাড়ার কথা স্বীকার করে গভর্নর বলেন, গভর্নর হওয়ার পর ঋণ পুননিরর্ধারণের সীমা বেঁধে দেওয়া হয়েছে। আগে কোন রকম ডাউন পেমেন্ট ছাড়াই ৫-৬ বার রিসিডিউল হতো। আমি চারবার লিমিট করে দিয়ে বলেছি, চারবারের বেশি কোন ঋণ রিসিডিউল করা যাবে না। এরপরে এটি খেলাপি হবেই এবং ব্যাংক মামলা করবে। তাই খেলাপি ঋণ বাড়ছে। এ ব্যাপারে আমরা খুবই কঠোর।

দুবাইয়ে বাংলাদেশিদের ১৩০০ কোম্পানি
বাংলাদেশ ব্যাংকের গভর্নর বলেন, অর্থ পাচার খুবই খারাপ আকার ধারণ করেছিল। বিশেষ করে ট্রেড বেজড মানি লন্ডারিং। হুন্ডির চেয়ে অন্ততপক্ষে ১০ গুণ টাকা পাচার হয়েছে ওভার ইনভয়েসিং এর মাধ্যমে। আমরা দেখেছি, ১০০ ডলারের পণ্য আমদানি করতে ৩০০ ডলারের এলসি করা হয়েছে। ২০ ডলারের পণ্য কিনতে ৪০ ডলারের এলসি খোলা হয়েছে। এভাবে দেশ থেকে টাকা পাচার করে নিয়ে গেছে।

দুবাইতে ১৩০০ বাংলাদেশি মালিকানাধীন কোম্পানি আছে। একেকটা কোম্পানি করতে কমপক্ষে ৫ কোটি টাকা লেগেছে। এই টাকা বাংলাদেশ থেকে পাচার হয়ে দুবাইতে গেছে। পর্তুগালে গত দুই বছরে ২৫০০ বাংলাদেশি নাগরিকত্ব নিয়েছে। তাদের প্রত্যেককে কমপক্ষে ৫ লাখ ইউরো ইনভেস্ট করতে হয়েছে। এই টাকাও এই দেশ থেকে পাচার হয়ে গেছে বলে উল্লেখ করেন গভর্নর।
এই ট্রেড বেজড মানি লন্ডারিং বন্ধ করতে আমরা জিরো টলারেন্স নিয়েছি। আমি এমন এমন লোকের এলসি আটকে দিয়েছি যারা নিজেরাও চিন্তা করতে পারেনি যে তাদের এলসি বাংলাদেশ ব্যাংক আটকে দিতে পারে। তারা সর্বোচ্চ পর্যায় (প্রধানমন্ত্রী) পর্যন্ত গেছে, আমি যেন তাদের এলসির অনুমোদন দেই। সেখানেও তারা বোঝাতে পারেনি, কারণ সর্বোচ্চ পর্যায়ে আমি বলেছি যে এভাবে টাকা পাচার হয়, বলে উল্লেখ করেন আব্দুর রউফ তালুকদার। তিনি বলেন, আমাদের আমদানি আগে ছিল মাসে গড়ে ৮ বিলিয়ন ডলার। এখন তা গড়ে ৫ দশমিক ৫ বিলিয়ন ডলারে নেমেছে। এরমধ্যে ১-১ দশমিক ৫ বিলিয়ন ডলার পাচার হতো। তাই প্রকৃতপক্ষে আমাদের আমদানি কমেছে ১ বিলিয়ন ডলারের। আমি ব্যাংকগুলোকে বলেছি, এলসি ওপেনিংয়ে বাংলাদেশ ব্যাংকের কোন রেস্ট্রিকশন নেই। তবে বাংলাদেশ ব্যাংক থেকে শুধু সরকারের আমদানি ব্যয় মেটাতে ডলার সাপোর্ট দেওয়া হবে। বেসরকারি খাতের আমদানি ব্যয় ব্যাংকগুলোর নিজস্ব ডলার ইনফ্লো থেকে মেটাতে হবে। এখন ব্যাংকগুলো সে কাজটা করছে। গতমাসে রেমিটেন্স বেশি আসায় এলসি খোলাও বেড়েছে।

রিজার্ভের সঙ্গে এক্সচেঞ্জ রেট সম্পর্কিত নয়
কতো ডলার রিজার্ভ আছে, তার ওপর এক্সচেঞ্জ রেট নির্ভর করে না বলে জানান গভর্নর। তিনি বলেন, জাপানের রিজার্ভ প্রায় ২ ট্রিলিয়ন ডলার। তারপরও তাদের কারেন্সি প্রতিদিন ডিভ্যালুয়েশন হচ্ছে। অর্থাৎ, এক্সপোর্টিং কান্ট্রি তাদের কম্পিটিশন ধরে রাখার জন্য ইচ্ছা করে ডিভ্যালুয়েশন করে। স্বল্প মেয়াদে বৈদেশিক মুদ্রার ইনফ্লো ও আউটফ্লোর ওপর এক্সচেঞ্জ রেট নির্ধারণ হয়। এই মুহূর্তে আমাদের নেট ইনফ্লো এর চেয়ে নেট আউট ফ্লো অনেক বেশি। এখন এক্সচেঞ্জ রেট মার্কেট বেজড করা হলে ডলারের দাম বাড়তেই থাকবে। এটা কোথায় গিয়ে থামবে, তা কেউই বলতে পারবে না বলে উল্লেখ করেন আব্দুর রউফ তালুকদার।

সার্বিক বিষয়ে বিশ্বব্যাংকের ঢাকা কার্যালয়ের সাবেক মুখ্য অর্থনীতিবিদ জাহিদ হোসেন বলেন, ঝড় দেখেও আমরা ভুল পথে চলেছি। গত দেড় বছরের অর্থনীতি সামলাতে নীতিনির্ধারকেরা যেসব নীতি নিয়েছেন, তা ফল দেয়নি; বরং উল্টো হয়েছে। তারা যা চেয়েছেন, তা হয়নি। রিজার্ভ কমেছে, প্রবাসী আয় কমেছে, মূল্যস্ফীতি বেড়েছে। আবার সামনে নির্বাচনকেন্দ্রিক রাজনৈতিক অনিশ্চয়তা আছে। এতে অর্থনীতির সমস্যাগুলো আরও গভীর হবে। তখন শুধু রাজনৈতিক অনিশ্চয়তাকে অজুহাত হিসেবে দেখিয়ে এর দায় চাপিয়ে দেয়া ঠিক হবে না। এখন থেকে সঠিক নীতি নিতে হবে।

Show More

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Related Articles

Back to top button
Situs Toto
toto togel
slot toto
Toto slot gacor
bacan4d
totoslotgacor
bacan4d
bacan4d slot gacor
bacan4d login
Bacan4d
bacan4d
bacan4d bonus
Toto gacor
Toto gacor
slot gacor hari ini
bacan4d toto
bacan4d toto
bacan4d
bacan4d
bacan4d
bacan4d
bacan4d link alternatif
slot gacor bett 200
situs toto
SITUS TOTO
toto 4d
toto gacor
Slot Toto
Slot Toto
Slot Toto
Situs toto
Slot toto
Slot Dana
Slot Dana
Judi Bola
Judi Bola
Slot Gacor
toto slot
bacan4d toto
bacan4d akun demo slot
bacantogel
bacan4d
bacan4d
slot gacor
bacantoto
bacan4d
Bacan4d Login
slot demo
Bacan4d Toto
toto gacor
Slot Gacor
Live Draw
Live Draw Hk
toto slot
Bacan4d slot gacor
toto macau
toto slot
Toto Gacor
slot dana
bacan4d
bacan4d
bacan4d
bacan4d
Slot Dp Pulsa
Bacan4d Login
toto slot
Bacansports/a>
xx1toto
xx1toto
xx1toto
xx1toto
xx1toto
xx1toto
xx1toto
xx1toto
xx1toto
xx1toto
xx1toto
xx1toto
xx1toto
xx1toto
xx1toto
xx1toto
xx1toto
xx1toto
xx1toto
xx1toto
xx1toto
xx1toto
xx1toto
xx1toto
xx1toto
xx1toto
toto slot
bacansport
bacansport
bacansport
bacansport
bacansport
bacansport
xx1toto
xx1toto
xx1toto
xx1toto
slot gacor
xx1toto
xx1toto
xx1toto
xx1toto
xx1toto
xx1toto
xx1toto
xx1toto
xx1toto
xx1toto
xx1toto
xx1toto
xx1toto
xx1toto
xx1toto
xx1toto
xx1toto
toto slot
slot demo
toto slot gacor
bacansports Slot toto toto slot Slot toto Slot dana Slot toto slot maxwin slot maxwin toto slot toto slot slot dana
Toto Bola
xx1toto
xx1toto
xx1toto
xx1toto
xx1toto
xx1toto
xx1toto
xx1toto
xx1toto
xx1toto
xx1toto
xx1toto
xx1toto
xx1toto
xx1toto
xx1toto
xx1toto
xx1toto
xx1toto
xx1toto
xx1toto
xx1toto
xx1toto
xx1toto
xx1toto
xx1toto
bacan4d
ts77casino
situs toto
slot pulsa
bacansports
situs toto
slot toto
situs toto
slot toto
situs toto
toto slot
bacansport
bacansport
bacansports
slot toto
xx1toto
xx1toto
xx1toto
xx1toto
xx1toto
situs toto
situs toto
xx1toto
toto slot
xx1toto
xx1toto
slot qriss
Slot Toto
slot dana
situs toto
slot toto
slot dana
Situs Toto Slot Gacor
xx1toto
xx1toto
bacan4d
xx1toto
xx1toto
toto slot
situs toto slot gacor
toto gacor
toto gacor
toto gacor
toto gacor
bacan4d
bacan4d
bacan4d
bacan4d
bacan4d
situs toto
Slot Toto
Toto Slot
Slot Gacor
Slot Gacor
Slot Gacor
slot toto
Toto Slot
slot gacor
situs togel
Toto Slot
bacan4d
bacan4d