Uncategorized

দ্বিতীয়বারের ভয়াবহতা ছিল প্রকট, পানির ওপরেও জ্বলছিল আগুন

বরিশাল: ঝালকাঠির সুগন্ধা নদীতে দ্বিতীয় দফায় তেলবাহী ট্যাংকার সাগর নন্দিনী-২ বিস্ফোরণের পর লাগা আগুন নিভেছে। এখন পুড়ে যাওয়া স্মৃতি নিয়ে সুগন্ধা নদীতে ভাসছে সাগর নন্দিনী-২ তেলের ট্যাংকারটি।

মঙ্গলবার (০৪ জুলাই) ভোর সাড়ে ৪টার দিকে সাগর নন্দিনী-২ নামের ট্যাংকারটির আগুন নিভে। রাতভর ফায়ার সার্ভিসের ১১টি ইউনিটের সদস্যরা আগুন নেভানোর কাজ চালিয়ে গেছেন। সেইসঙ্গে এ কাজে সহযোগিতা করছে বাংলাদেশ কোস্টগার্ড ও পুলিশের বিভিন্ন ইউনিটের একাধিক টিম।

বিভিন্ন বাহিনীর আভিযানিক টিমের সদস্যরা বলছেন, দ্বিতীয় দফার এ বিস্ফোরণ ও অগ্নিকাণ্ডের ঘটনায় শুরুর দিকের ভয়াবহতা ছিল প্রকট। ফলে ১০ ঘণ্টার বেশি সময় ধরে জ্বলার পর জাহাজটির আগুন নিভেছে।

স্থানীয়রা বলছেন, ঝালকাঠি পৌর শহরের ঠিক অপর প্রান্ত রাজাপুর গ্রাম সংলগ্ন নদী তীরেই ছিল দুর্ঘটনা কবলিত সাগর নন্দিনী-২ নামের তেলের ট্যাংকারটি। যার পাশেই নোঙ্গর করে ক্ষতিগ্রস্ত জাহাজ থেকে তেল লোড করছিল সাগর নন্দিনী-৪ নামের অপর একটি তেলের ট্যাংকার। তবে সোমবার (০৩ জুলাই) সন্ধ্যা সাড়ে ৬টার দিকে ঘটা অগ্নিকাণ্ডের ঘটনা ছিল ভয়াবহ।

স্থানীয় বাসিন্দা নাঈম বলেন, জাহাজ থেকে ১০-৫০ ফুটের মতো উচ্চতায় আগুনের লেলিহান শিখা উঠে যাচ্ছিল। আবার আশপাশে বিশাল জায়গা নিয়ে আগুন ও কালো ধোঁয়া ছড়িয়ে পড়ছিল। প্রথমদিকে, কখনও মনে হয়েছে আশপাশে থাকা সব জাহাজে আগুন ধরে গেছে। আবার কখনও মনে হয়েছে শুধু সাগর নন্দিনী-২ ট্যাংকারটিতে আগুন জ্বলছে। এছাড়া জাহাজগুলোর পাশে নদীর পানির ওপরে আগুন জ্বলতে দেখা গিয়েছিল।

তিনি বলেন, সম্ভবত নদীতে ভেসে আসা জাহাজের তেলের ওপর আগুনগুলো জ্বলছিল। এসব কারণে শুরুর দিকে তো ফায়ার সার্ভিসের নৌ-যান ও কর্মীরা কাছেই যেতে পারেনি। আবার মাঝে মাঝেই বিকট বিস্ফোরণের শব্দ পাওয়া যাচ্ছিল, তখন আগুন যেন জাহাজটি থেকে ফুলে ফুলে উঠছিল। সময়ের সঙ্গে সঙ্গে ছড়িয়ে পড়া আগুনের ব্যাপ্তি কমতে থাকলে ফায়ার সার্ভিসের কর্মীরাও কাছে যেতে থাকে।

কোস্টগার্ড দক্ষিণ জোনের অপারেশন কর্মকর্তা লেফটেন্যান্ট শাফায়েত জানান, গত শনিবার তেলবাহী ট্যাংকার সাগর নন্দিনী-২ তে অগ্নিকাণ্ডের ঘটনা ঘটে। আর সেই ঘটনার উদ্ধারকাজ শেষে বিকেলের দিকে আমরা ফেরত যাচ্ছিলাম। এর কিছু সময় পরেই পুনরায় সাগর নন্দিনী-২ তে ফের আগুনের খবর পাই। সঙ্গে সঙ্গেই আমরা পুনরায় ঘটনাস্থলে আসি। তবে দ্বিতীয় দফার শুরুতেই আগুনের ভয়াবহতা ছিল বেশি। আগুন চারপাশে ছড়িয়ে গিয়েছিল। তেলের ট্যাংকারের পাশাপাশি নদীর পানিতেও আগুন ছড়িয়ে পড়ে। জাহাজগুলোর আশপাশে ১০০ মিটার জায়গাজুড়ে আগুনের ব্যাপ্তি ঘটায় আমরা এবং ফায়ার সার্ভিসের কেউই জাহাজগুলোর কাছাকাছি যেতে পারছিলাম না।

এদিকে, দ্বিতীয় দফার এই অগ্নিকাণ্ডের ঘটনায় ১০ জন পুলিশ সদস্যসহ ১৪ জন গুরুত্বর আহত হয়েছেন। যারমধ্যে, এক পুলিশ সদস্যসহ দুজনকে গুরুতর অবস্থায় ঢাকায় শেখ হাসিনা বার্ন ইনস্টিটিউটে পাঠানো হয়েছে বলে জানিয়েছেন ঝালকাঠির অতিরিক্ত পুলিশ সুপার (সদর সার্কেল) মো. মহিতুল ইসলাম।

ধারণা করা হচ্ছে, এক জাহাজ থেকে অন্য জাহাজে তেল অপসারণ করার সময় ইলেকট্রিক স্ফুলিঙ্গ থেকে এ অগ্নিকাণ্ডের ঘটনা ঘটতে পারে। তবে কেউ কেউ বলছেন একনাগাড়ে তেল উত্তোলন করায় এ কাজে ব্যবহৃত পাম্পটি অতিরিক্ত গরম হয়ে যাওয়ায় এ বিপত্তি ঘটতে পারে।

উল্লেখ্য, গত ১ জুলাই দুপুর আড়াইটার দিকে ঝালকাঠির সুগন্ধা নদীতে সাগর নন্দিনী-২ নামের তেলের ট্যাংকারে বিস্ফোরণে অগ্নিকাণ্ডের ঘটনা ঘটে। সোমবার (০৪ জুলাই) উদ্ধার অভিযান শেষ করার ১ ঘণ্টার মাথায় সন্ধ্যায় সাড়ে ৬টার দিকে একই জাহাজে ফের বিস্ফোরণে অগ্নিকাণ্ডের ঘটনা ঘটে। আর এই পুরো ঘটনায় এখন পর্যন্ত চার জনের মৃত্যু হয়েছে এবং ১৯ জন গুরুত্বর আহত হয়ে হাসপাতালে চিকিৎসাধীন।

Show More

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Related Articles

Back to top button