Bangladesh

ধারদেনা করার অবস্থাও নেই ন্যাশনাল ব্যাংকের

আমানতকারীর স্বার্থে প্রতিটি ব্যাংকের মোট দায়ের ১৭ শতাংশ বিধিবদ্ধ তারল্য হিসেবে বাংলাদেশ ব্যাংকে রাখা নিয়ম। এর মধ্যে ট্রেজারি বিল ও বন্ডের বিপরীতে রাখা যায় ১৩ শতাংশ; বাকি ৪ শতাংশ রাখতে হয় নগদে (সিআরআর)। বেসরকারি ন্যাশনাল ব্যাংক লিমিটেডের (এনবিএল) অবস্থা এতটাই নাজুক, টানা ১৪ মাস বিধিবদ্ধ তারল্য সংরক্ষণ করতে পারছে না। এ পটভূমিতে কেন্দ্রীয় ব্যাংক ৩৩৭ কোটি টাকা জরিমানা করলেও তা পরিশোধের অবস্থায় নেই ব্যাংকটি। গ্রাহক চাহিদা মেটাতে এনবিএল তার সব বিল-বন্ড বন্ধক রেখে যতটুকু সম্ভব দেনা করে ফেলেছে। এখন আর ধার করার মতো পরিস্থিতি ব্যাংকটির নেই। তারল্যের মহাসংকটে পড়ে এনবিএল এখন সর্বোচ্চ ১৩ দশমিক ৪০ শতাংশ পর্যন্ত সুদে গ্রাহকের কাছ থেকে আমানত নিচ্ছে। আবার ব্যাংকটি টিকিয়ে রাখতে বিশেষ সুবিধা দেওয়ার কথাও ভাবছে কেন্দ্রীয় ব্যাংক।

আর্থিক দুরবস্থা তুলে ধরে খোদ ব্যাংকের ব্যবস্থাপনা কর্তৃপক্ষ সম্প্রতি পরিচালনা পর্ষদের কাছে একটি প্রতিবেদন দিয়েছে। সেখানে এ বছরের অক্টোবরভিত্তিক আর্থিক পরিস্থিতি তুলে ধরা হয়। এতে বলা হয়, এ বছরের জানুয়ারি থেকে অক্টোবর পর্যন্ত ব্যাংকের নিট আমানত ১ হাজার ৫০৮ কোটি টাকা কমেছে। এর মধ্যে করপোরেট আমানত তোলা হয়েছে ১ হাজার ৬৩ কোটি টাকা। এ অবস্থা সামলাতে ট্রেজারি বিল, বন্ডসহ বিভিন্ন সিকিউরিটিজে বিনিয়োগ করা ৬ হাজার ৩৫২ কোটি টাকা বন্ধক রেখে ধার নেওয়া হয়েছে। দৈনন্দিন চাহিদা মেটাতে কেন্দ্রীয় ব্যাংক থেকে ৬ হাজার ২২৬ কোটি এবং বিভিন্ন ব্যাংক থেকে ১ হাজার ৭৬ কোটি টাকা দেনা করা হয়েছে। ফলে আগামীতে তারল্য চাহিদা মেটানোর মতো কোনো সিকিউরিজ নেই। এটি উচ্চ তারল্য ঝুঁকির ইঙ্গিত করে। 

এনবিএলের অক্টোবরভিত্তিক আমানত দাঁড়িয়েছে ৪০ হাজার ৮২০ কোটি টাকা। অথচ ঋণের পরিমাণ ৪২ হাজার ৩০৪ কোটি টাকা। ঋণ-আমানত অনুপাত (এডিআর) দাঁড়িয়েছে ১০১ দশমিক ২৩ শতাংশে। নিয়ম অনুযায়ী কোনো ব্যাংক ১০০ টাকা আমানতের বিপরীতে সর্বোচ্চ ৮৭ টাকা ঋণ দিতে পারে। ২০২১ সালের জানুয়ারি থেকে টানা ৩৪ মাস ব্যাংকটির এডিআর নির্ধারিত সীমার ওপরে আছে।
বর্তমানে যেসব ব্যাংক অন্য ব্যাংকে স্বল্প সময়ের জন্য ধার দিচ্ছে, এর একটি ব্যাংকের ট্রেজারি বিভাগের কর্মকর্তা নাম প্রকাশ না করে সমকালকে বলেন, বিভিন্ন আর্থিক প্রতিষ্ঠানে টাকা আটকে যাওয়ার পর বেশির ভাগ ব্যাংক কলমানিতে ধার দেওয়ার ক্ষেত্রে অনেক সতর্ক। ন্যাশনাল ব্যাংক কলমানি থেকে এখন আর ধার পাচ্ছে না।

জানা গেছে, এনবিএলের মোট ঋণের মধ্যে ২৪ হাজার ৭১৭ কোটি টাকা বা ৫৮ দশমিক ৭৭ শতাংশ রয়েছে শীর্ষ ৩০ গ্রাহকের কাছে। কমিশন নিয়ে কিংবা ভুয়া ঋণ দেওয়ার অনেক নজির। নানা উপায়ে অনিয়ম করে ঋণ দেওয়ার তথ্য কেন্দ্রীয় ব্যাংকের কাছেও রয়েছে। গত ২৮ ডিসেম্বর ‘ইনফ্রাটেক কনস্ট্রাকশন’ নামে একটি প্রতিষ্ঠানের ঋণ নবায়ন করে ওই দিন রাতেই নগদে টাকা তোলার সুযোগ করে দেওয়া হয়। এ ব্যাপারে সম্প্রতি কেন্দ্রীয় ব্যাংকের এক বিশেষ পরিদর্শনে পরিচালনা পর্ষদকে দায়ী করে ব্যবস্থা নেওয়ার সুপারিশ করা হয়েছে।

বেসরকারি খাতের প্রথম প্রজন্মের ব্যাংক এনবিএল। ২০০৯ সালের পর থেকে ব্যাংকটি পরিচালিত হচ্ছে সিকদার পরিবারের কর্তৃত্বে। ২০২১ সালে জয়নুল হক সিকদার মারা যাওয়ার পর এনবিএলের চেয়ারম্যান হন তাঁর স্ত্রী মনোয়ারা সিকদার। তাদের তিন সন্তান পারভীন হক সিকদার, রিক হক সিকদার ও রন হক সিকদার ব্যাংকের পরিচালক। আর ৯ সদস্যের পরিচালনা পর্ষদে সিকদার ইন্স্যুরেন্সের প্রতিনিধি হিসেবে আছেন লেফটেন্যান্ট জেনারেল (অব.) মো. সফিকুর রহমান।

নির্ভরযোগ্য সূত্রে জানা যায়, বর্তমান ব্যবস্থাপনা পরিচালক (এমডি) মেহমুদ হোসেন নানা অনিয়মের বিরুদ্ধে সোচ্চার হওয়ায় গত ১৬ জানুয়ারি তাঁকে বনানীর সিকদার হাউসে ডেকে নেওয়া হয়। এর দু’দিন পর তিনি পদত্যাগ করেন। অবশ্য কেন্দ্রীয় ব্যাংকের মধ্যস্থতায় মেহমুদ হোসেন আবার ব্যাংকে ফেরেন। এর আগে আরও ছয় এমডি মেয়াদ শেষ হওয়ার আগেই পদ ছাড়তে বাধ্য হন। এ নিয়ে সমালোচনার মধ্যে ২০১৪ সালে ব্যাংকের এমডি সুরক্ষায় একটি নীতিমালা করে কেন্দ্রীয় ব্যাংক।

সার্বিক বিষয়ে কথা বলতে ব্যাংকের এমডি মেহমুদ হোসেনকে টেলিফোন করা হয়। না পেয়ে খুদে বার্তা পাঠিয়েও তাঁর সঙ্গে কথা বলা যায়নি। তবে ব্যাংকের এক দায়িত্বশীল কর্মকর্তা নাম প্রকাশ না করে সমকালকে বলেন, পরিস্থিতি তুলে ধরে পরিচালনা পর্ষদে প্রতিবেদন দেওয়া হয়েছে। এ ছাড়া ব্যবস্থাপনা কর্তৃপক্ষ আমানত বাড়ানোর উদ্যোগ নিয়েছে। আপাতত নতুন ঋণ বন্ধ আছে। নির্ধারিত সীমার ওপরে থাকা ঋণ সমন্বয়ের মাধ্যমে তহবিল বাড়ানোর চেষ্টা করা হচ্ছে।

বাংলাদেশ ব্যাংকের মুখপাত্র ও নির্বাহী পরিচালক মেজবাউল হকসহ দায়িত্বশীল কেউ ন্যাশনাল ব্যাংকের বিষয়ে আনুষ্ঠানিক মন্তব্য করতে রাজি হননি। কেন্দ্রীয় ব্যাংকের এক কর্মকর্তা নাম প্রকাশ না করার শর্তে সমকালকে বলেন, ব্যাংকটির আর্থিক ভঙ্গুরতা অনেক পুরোনো, এখন তা প্রকট হয়েছে। সঠিকভাবে পরিচালনার জন্য ব্যাংকটিকে বিভিন্ন দিকনির্দেশনা দেওয়া হচ্ছে। ন্যাশনালসহ ১০ ব্যাংককে ‘দুর্বল’ হিসেবে চিহ্নিত করে আলাদা তদারকি করা হচ্ছে। কেন্দ্রীয় ব্যাংকের এক নির্বাহী পরিচালক এসব ব্যাংকে সমন্বয়কের দায়িত্ব পালন করছেন।

কেন্দ্রীয় ব্যাংকে টাকা রাখতে ব্যর্থ

বিদ্যমান নিয়মে একটি ব্যাংকের মোট তলবি ও মেয়াদি দায়ের (বেশির ভাগই আমানত) ৪ শতাংশ কেন্দ্রীয় ব্যাংকে বিধিবদ্ধ নগদ জমা (সিআরআর) রাখতে হয়। আর সহজে বিনিময়যোগ্য সম্পদ বা এসএলআর হিসেবে ট্রেজারি বিল ও বন্ডে বিনিয়োগ রাখতে হয় ১৩ শতাংশ। ব্যাংকগুলো এসএলআরের উদ্বৃত্ত সিকিউরিটিজ বন্ধক রেখে ধার নেয়। তবে ন্যাশনাল ব্যাংকের উদ্বৃত্ত সিকিউরিটিজ বেশ আগেই শেষ হয়েছে। পরে এসএলআর সংরক্ষণের সিকিউরিটিজ বন্ধক রেখেও ধার করা হয়েছে। ব্যাংকটি গত বছরের ৫ সেপ্টেম্বর থেকে ধারাবাহিকভাবে এসএলআর ঘাটতিতে রয়েছে। গত ৩১ অক্টোবর এসএলআর ঘাটতি ছিল ৪ হাজার ৮৪৭ কোটি টাকা। আর গত ২৬ অক্টোবর দ্বি-সাপ্তাহিক ভিত্তিতে সিআরআর ঘাটতি ছিল ১ হাজার ১০৫ কোটি টাকা। ওই দিনের ক্রমপুঞ্জীভূত ঘাটতির পরিমাণ ছিল ৩ হাজার ৮৩৫ কোটি টাকা।

নিয়ম অনুযায়ী, কোনো ব্যাংক সিআরআর রাখতে না পারলে অসংরক্ষিত অংশের ওপর ৯ শতাংশ হারে দণ্ডসুদ দিতে হয়। আর এসএলআর রাখতে ব্যর্থ হলে স্পেশাল রেপো তথা ৯ দশমিক ২৫ শতাংশ হারে জরিমানা দিতে হয়। গত বছরের ৫ সেপ্টেম্বর থেকে এসএলআর রাখতে ব্যর্থতার দায়ে ব্যাংকটিকে ৩৩৭ কোটি টাকা জরিমানা হয়েছে। এর মধ্যে গত ৩০ এপ্রিল পর্যন্ত আরোপিত জরিমানার ১৬৭ কোটি ৪৫ লাখ টাকা পরিশোধের জন্য চিঠি দেয় বাংলাদেশ ব্যাংক। জরিমানা পরিশোধের মতো টাকা না থাকায় ব্যাংকটি এর জন্য সময় চেয়েছে। গত মে থেকে অক্টোবর পর্যন্ত ১৭০ কোটি টাকা জরিমানা আরোপের তথ্য জানিয়ে শিগগিরই আরেকটি চিঠি দেওয়া হবে। এ ছাড়া সিআরআরের বিপরীতে দণ্ডসুদের পরিমাণ ব্যাংকটিকে জানানো হবে।

ঋণ নিয়মিত তবু আয় নেই

সাধারণত খেলাপি ঋণের বিপরীতে আয় দেখাতে পারে না ব্যাংক। তবে ন্যাশনাল ব্যাংকের খেলাপির বাইরেও বড় একটি অংশের বিপরীতে আদায় নেই। বাংলাদেশ ব্যাংকের এক প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, গত সেপ্টেম্বর পর্যন্ত ব্যাংকটির শ্রেণীকৃত খেলাপি ১৩ হাজার ৫১৫ কোটি টাকা এবং অবলোপন করা খেলাপি ১ হাজার ৬৭২ কোটি টাকা। এর বাইরে ৭ হাজার ৬৯৪ কোটি টাকা নিয়মিত দেখানো হলেও এর বিপরীতে কোনো আয় নেই। সব মিলিয়ে আয় আসছে না ২২ হাজার ৮৮১ কোটি টাকা বা ৫৩ দশমিক ৭৩ শতাংশ ঋণের বিপরীতে।

কেন্দ্রীয় ব্যাংকের বিভিন্ন পর্যায়ে কথা বলে জানা গেছে, নজিরবিহীনভাবে ঋণের একটি অংশে শূন্য সুদ রয়েছে। আবার কিছু ঋণে গ্রেস পিরিয়ড বা ঋণ পরিশোধ শুরুর সময় দেওয়া হয়েছে তিন থেকে চার বছর। ফলে খেলাপির বাইরে বিপুল অঙ্কের ঋণের বিপরীতে কোনো আয় হয় না। বাংলাদেশ ব্যাংকের গত ডিসেম্বরভিত্তিক পরিদর্শন প্রতিবেদনে এ তথ্য পাওয়া যায়। এর পর ব্যাংকটিকে বিভিন্ন নির্দেশনা দেওয়া হয়েছে। ঋণের ৫৪ শতাংশের বিপরীতে কোনো আয় না থাকা এবং ৫৮ শতাংশের বেশি ঋণ বড় গ্রাহকের কাছে কেন্দ্রীভূত হওয়াকে অন্যতম সমস্যা হিসেবে চিহ্নিত করে তা সমাধান করতে বলেছে কেন্দ্রীয় ব্যাংক।

মেয়াদের আগেই ঋণ ফেরতের সুপারিশ

পর্ষদের কাছে উপস্থাপন করা ব্যাংকের নিজস্ব প্রতিবেদনে বর্তমান সংকট কাটাতে শীর্ষ যেসব গ্রাহক ঋণ ফেরত দিচ্ছে না, তাদের কাছ থেকে আদায় জোরদার এবং মেয়াদ শেষের আগেই ঋণ ফেরত আনার ব্যবস্থা করতে সুপারিশ করা হয়েছে। প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, শীর্ষ ৩০ গ্রাহকের ঋণ রয়েছে ২৪ হাজার ৭১৭ কোটি টাকা বা ৫৮ দশমিক ৭৭ শতাংশ। এর মধ্যে ১১ গ্রাহকের কাছে পাওনা ৯ হাজার ৩৮৮ কোটি টাকা নিয়মিত আছে। বাকি ১৯ জনের কাছে আটকে আছে ১৫ হাজার ৩২৯ কোটি টাকা।

ব্যাংকের প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, আটকে থাকা ঋণের মধ্যে প্রয়াত এমপি আসলামুল হকের মায়িশা গ্রুপের কাছে ব্যাংক পাবে ২ হাজার ৭৫৪ কোটি টাকা। এ ছাড়া এফএমসি গ্রুপের কাছে ১ হাজার ৫৮৯ কোটি, সাইফ পোর্ট হোল্ডিংস ও সাইফ পাওয়ারটেকের কাছে ১ হাজার ৩৩২ কোটি, সাদ মূসা গ্রুপে ১ হাজার ১৭৭ কোটি এবং ওয়েস্টার্ন মেরিন শিপইয়ার্ডের কাছে ৯৩৯ কোটি টাকা আটকে আছে। ব্রডওয়ে ও প্রকৃতির কাছে ৭৭০ কোটি, রেডিয়াম কম্পোজিটে ৭৫৪ কোটি, মানহা প্রিকাস্ট টেকনোলজিতে ৬৪৭ কোটি, এহসান গ্রুপে ৬২৩ কোটি, মিলেনিয়াম গ্রুপে ৫৪৮ কোটি, শান্তনা এন্টারপ্রাইজে ৫৩৭ কোটি, ওপেক্স গ্রুপে ৫৩২ কোটি, ডেকিং স্মার্ট ব্যাটারিতে ৫৩১ কোটি, মারিয়াম কনস্ট্রাকশনে ৪৯২ কোটি, প্যাসিফিক বাংলাদেশ টেলিকমে (সিটিসেল) ৪৭৩ কোটি, এমএইচ গ্রুপে ৪৪২ কোটি, আরএসএ ক্যাপিটালে ৪৩১ কোটি, এসএ গ্রুপ ৩৮০ কোটি এবং কেয়া কসমেটিকসের কাছে আটকে আছে ৩৭৭ কোটি টাকা।

ন্যাশনাল ব্যাংকের এক ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তা বলেন, নানা উপায়ে আমানত বাড়ানোর চেষ্টা করেও কোনো কাজ হচ্ছে না। আবার তাদের ধার নেওয়ার মতো পরিস্থিতিও নেই। এখন শীর্ষ গ্রাহকদের কাছ থেকে টাকা আদায় ছাড়া সংকট কাটানোর পথ নেই।

সুদ বাবদ লোকসান হাজার কোটি টাকা

গত বছর থেকে ন্যাশনাল ব্যাংকের যে পরিমাণ সুদ আয় হচ্ছে, পরিশোধ হচ্ছে এর চেয়ে বেশি। মূলত পুরো আমানতের বিপরীতে নিয়মিত সুদ হিসাব হলেও অর্ধেকের বেশি ঋণের বিপরীতে কোনো আয় নেই। আবার ব্যাংক খাতে এখন সর্বোচ্চ সুদে আমানত নিচ্ছে ব্যাংকটি। সাড়ে পাঁচ বছরে দ্বিগুণ স্কিমে সুদ দেওয়া হচ্ছে ১৩ দশমিক ৪০ শতাংশ। যদিও এ মাসে একটি ব্যাংক ঋণে সর্বোচ্চ ১০ দশমিক ৯৩ শতাংশ সুদে নিতে পারছে। এসব কারণে গত সেপ্টেম্বর পর্যন্ত ৯ মাসেই সুদ আয়ের চেয়ে ব্যয় বেশি হয়েছে ৯৩১ কোটি টাকা। এ সময় নিট লোকসান দাঁড়িয়েছে ১ হাজার ১৩৫ কোটি টাকা। গত বছরও ব্যাংকটি ঋণাত্মক সুদ আয় ছিল ৯৮৯ কোটি টাকা। আর নিট লোকসান হয় ৩ হাজার ২৬১ কোটি টাকা। বড় লোকসানের কারণে ব্যাংকটির প্রভিশন ও মূলধনেও বড় ঘাটতি দেখা দিয়েছে। গত সেপ্টেম্বর পর্যন্ত এনবিএলের নিরাপত্তা সঞ্চিতি (প্রভিশন) ঘাটতি দাঁড়ায় ১৩ হাজার ৭৮০ কোটি এবং মূলধন ঘাটতি ৩ হাজার ৩০২ কোটি টাকা।

ঋণ অনিয়মে পর্ষদকে দায়ী করে প্রতিবেদন

উচ্চ আদালতের নির্দেশনার আলোকে ইনফ্রাটেকের ঋণ নবায়ন বিষয়ে বিস্তর তদন্ত করেছে বাংলাদেশ ব্যাংক। পরিদর্শন প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, পরিচালনা পর্ষদের বৈঠক হয় বিকেল ৩টা থেকে সাড়ে ৩টা পর্যন্ত। এর আগেই ব্যাংকটির গুলশান শাখায় অবস্থান করছিলেন ইনফ্রাটেকের কর্ণধার আলী হায়দার রতন। ইনফ্রাটেকের ঋণ নবায়ন না করতে ব্যাংকের এমডি ১১টি নেতিবাচক মন্তব্য করেন এবং কেন্দ্রীয় ব্যাংকের সমন্বয়কও চিঠি দেন। তবু তাঁর ঋণ নবায়ন করে পর্ষদ। আশ্চর্যজনকভাবে সব নিয়ম-নীতি উড়িয়ে দিয়ে ওই দিন রাত ৮টা ২৩ মিনিট থেকে ৯টা ৪ মিনিটের মধ্যে টাকা তুলে নেওয়ার সুযোগ দেওয়া হয়। তদন্তে দেখা গেছে, ন্যাশনাল ব্যাংকের গুলশান করপোরেট শাখা একই গ্রাহককে গত ২ ফেব্রুয়ারি রাত ৮টা ১২ মিনিট থেকে ৮টা ২৮ মিনিটের মধ্যে দুই কোটি টাকা নগদে তুলে নেওয়ার সুযোগ দেয়। এ দফায় আমদানি এলসির বিপরীতে রক্ষিত মার্জিনের টাকা তুলে নেওয়ার সুযোগ দেওয়া হয়। ব্যাংকের ওই সময়ের ভারপ্রাপ্ত ব্যবস্থাপনা পরিচালক সৈয়দ রইস উদ্দিন এবং অতিরিক্ত ব্যবস্থাপনা পরিচালক ও প্রধান ঝুঁকি কর্মকর্তা হোসেইন আখতার চৌধুরী এ সুযোগ করে দেন। এ দুইজনসহ গুলশান করপোরেট শাখা, বোর্ড ডিভিশন, সিআরএম বিভাগসহ বিভিন্ন পক্ষের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়ার সুপারিশ করে তদন্ত দল।

জানা গেছে, ন্যাশনাল ব্যাংকে ইনফ্রাটেকের মোট ঋণ রয়েছে ২৫০ কোটি টাকা। এ ছাড়া ইউসিবিএল, এসআইবিএল, জনতা ও বেসিকে রয়েছে আরও ৩০৯ কোটি টাকা। সরকারি বিভিন্ন কার্যাদেশের বিপরীতে দেওয়া এসব ঋণের বেশির ভাগই অনাদায়ী। 

Show More

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Related Articles

Back to top button
Situs Toto
toto togel
slot toto
Toto slot gacor
bacan4d
totoslotgacor
bacan4d
bacan4d slot gacor
bacan4d login
Bacan4d
bacan4d
bacan4d bonus
Toto gacor
Toto gacor
slot gacor hari ini
bacan4d toto
bacan4d toto
bacan4d
bacan4d
bacan4d
bacan4d
bacan4d link alternatif
slot gacor bett 200
situs toto
SITUS TOTO
toto 4d
Slot Toto
Slot Toto
Slot Toto
Situs toto
Slot toto
Slot Dana
Slot Dana
Judi Bola
Judi Bola
Slot Gacor
toto slot
bacan4d toto
bacan4d akun demo slot
bacantogel
bacan4d
bacan4d
slot gacor
bacantoto
bacan4d
Bacan4d Login
slot demo
Bacan4d Toto
toto gacor
Slot Gacor
Live Draw
Live Draw Hk
toto slot
Bacan4d slot gacor
toto macau
toto slot
Toto Gacor
slot dana
bacan4d
bacan4d
bacan4d
bacan4d
Slot Dp Pulsa
Bacan4d Login
toto slot
Bacansports/a>
xx1toto
xx1toto
xx1toto
xx1toto
xx1toto
xx1toto
xx1toto
xx1toto
xx1toto
xx1toto
xx1toto
xx1toto
xx1toto
xx1toto
xx1toto
xx1toto
xx1toto
xx1toto
xx1toto
xx1toto
xx1toto
xx1toto
xx1toto
xx1toto
xx1toto
xx1toto
toto slot
bacansport
bacansport
bacansport
bacansport
bacansport
bacansport
xx1toto
xx1toto
xx1toto
xx1toto
slot gacor
xx1toto
xx1toto
xx1toto
xx1toto
xx1toto
xx1toto
xx1toto
xx1toto
xx1toto
xx1toto
xx1toto
xx1toto
xx1toto
xx1toto
xx1toto
xx1toto
xx1toto
toto slot
slot demo
toto slot gacor
bacansports Slot toto toto slot Slot toto Slot dana Slot toto slot maxwin slot maxwin toto slot toto slot slot dana
Toto Bola
xx1toto
xx1toto
xx1toto
xx1toto
xx1toto
xx1toto
xx1toto
xx1toto
xx1toto
xx1toto
xx1toto
xx1toto
xx1toto
xx1toto
xx1toto
xx1toto
xx1toto
xx1toto
xx1toto
xx1toto
xx1toto
xx1toto
xx1toto
xx1toto
xx1toto
xx1toto
bacan4d
ts77casino
situs toto
slot pulsa
bacansports
situs toto
slot toto
situs toto
slot toto
situs toto
toto slot
bacansport
bacansport
bacansports
slot toto
xx1toto
xx1toto
xx1toto
xx1toto
xx1toto
situs toto
situs toto
xx1toto
toto slot
xx1toto
xx1toto
slot qriss
Slot Toto
slot dana
situs toto
slot toto
slot dana
Situs Toto Slot Gacor
xx1toto
xx1toto
bacan4d
xx1toto
xx1toto
toto slot
situs toto slot gacor
toto gacor
toto gacor
toto gacor
toto gacor
bacan4d
bacan4d
bacan4d
bacan4d
bacan4d
situs toto
Slot Toto
Toto Slot
Slot Gacor
Slot Gacor
Slot Gacor
slot toto
Toto Slot
slot gacor
situs togel
Toto Slot
xx1toto
bacansport
bacan4d
toto slot
situs toto