Bangladesh

খাদ্যপণ্য কিনতেই মানুষ দিশেহারা

রাজনৈতিক অস্থিরতার প্রভাব জীবন-জীবিকায় শীতের সবজিতে ভরে উঠেছে বাজার। তারপরও রাজধানী ঢাকা ও বন্দরনগরী চট্টগ্রামের বাজারগুলোতে প্রতিটি সবজি ও ভোগ্যপণ্যের দাম বেশি, সংসার চালাতে নিম্নবিত্ত-মধ্যবিত্তের দুর্বিষহ অবস্থা। বাণিজ্য মন্ত্রণালয়ের বাজার নিয়ন্ত্রণের কোনো উদ্যোগই কাজে আসছে না

রাজধানীর যাত্রাবাড়ী পাইকারি বাজারের পাশে কুতুবপুর থেকে কাজলা পর্যন্ত গড়ে উঠেছে ফকিন্নি বাজার। ঢাকা-চট্টগ্রাম মহাসড়ক লাগোয়া আধা কিলোমিটার লম্বা এ বাজার গড়ে উঠেছে মূলত নিম্নবিত্তের জন্য। কাটা আলূ, আধাপচা বেগুনসহ নিম্নমানের সব ধরনের সবজি এ বাজারে বিক্রি হয় কম দামে। টোকাই মহিলারা পাইকারি বাজার থেকে কুড়িয়ে এনে, বা নষ্ট সবজি কম দামে এনে রাস্তার পাশে ও ওভারব্রিজের নিচে পশরা সাজিয়ে বসে এবং পণ্য বিক্রি করে অল্প দামে। আবার ব্যবসায়ীরা তাদের অবিক্রীত পণ্য কম দামে বিক্রি করতে এখানে দেন। সেই ফক্কিনি বাজারে এখন অনেক নিম্নবিত্ত ও মধ্যবিত্ত গেরস্থ ঘরের নারীরা বোরকা পরে এসে পণ্য ক্রয় করছেন। অনেক ভদ্র পরিবার আর্থিক সংকটে পড়ে এ বাজারে এসে পরিচিত কেউ দেখে ফেলে কি না সতর্কতার সঙ্গে সবজি কেনেন। গতকাল শুক্রবার সরেজমিন ঘুরে দেখা গেল, দোকানে দোকানে ঘুরছেন এক মধ্য বয়সী নারী। জিজ্ঞেস করছেন বিভিন্ন সবজির ভাগা ও মাছের দাম। দূরে দাঁড়িয়ে থেকে দেখা গেল ভদ্রমহিলা এদিক- সেদিক তাকাচ্ছেন এবং সতর্কতার সঙ্গে সবজি কিনছেন। বিব্রত হন সে জন্য সেখানে কথা না বলে মহিলা যখন বাড়ির পথ ধরেছেন তখন তার সঙ্গে কথা হয়। পরিচয় জেনে মহিলা হু হু করে কেঁদে দিলেন। বললেন, ‘স্বামী যে বেতন পান তা বাসা ভাড়া দিলে ১০ দিন সংসারের খাওয়া চলে না। সে কারণে লজ্জাশরমের মাথা খেয়ে গোপনে ফক্কিনি বাজারে আধাপচা পণ্য কিনে সংসার চালাচ্ছি। কেউ দেখে ফেললে সমাজে মুখ দেখাতে পারব না’।

আনোয়ারুল ইসলাম নামের একজনকে দেখা গেল পাইকারি বাজারে মাছ কিনছেন। তার সঙ্গে কথা হলে তিনি জানান, পাইকারি বাজারে দাম কিছুটা কম হওয়ায় বাসে এসে প্রতি মাসের প্রথম সপ্তাহে পুরো মাসের জন্য মাছ-গোশত কেনেন। সরকারি চাকরি করেন এবং বেতন পান ৪৫ হাজার টাকা। যার প্রায় অর্ধেক খরচ হয় বাসা ভাড়ায়। ৩ রুমের বাসায় থাকতেন। খরচ বেড়ে যাওয়ায় গত জানুয়ারিতে ২ রুমের বাসা নিয়েছেন। তারপরও সংসার চালানোয় দায় হয়ে গেছে। মো. সেলিমুদ্দিন নামের একজন ক্রেতা ৫ কেজি পাঙ্গাশ ও ৩ কেজি চাষের কৈ মাছ নিলেন। পরিচয় জেনে তিনি বলেন, ‘যতই সমস্যা হোক, ছেলে-মেয়েদের কিছু তো খাওয়াতে হবে। গত বছর যে পরিমাণ মাছ-গোশত কিনতে পারতাম, দামের কারণে এ বছর তা পারি না। ছেলে-মেয়েদের পড়াশোনার খরচ, বাড়ি ভাড়াসহ সংসারের অন্যান্য খরচ মেটাতে নাভিশ্বাস উঠে যাচ্ছে। শীত পড়েছে তারপরও সবজির দাম বেশি। বাজারের এই অবস্থা চলতে থাকলে পরিবারকে গ্রামে পাঠাতে হবে। এই হলো বর্তমান নিম্নবিত্ত ও মধ্যবিত্তের জীবনচিত্র।

যাত্রাবাড়ী পাইকারি বাজার ও শনির আখড়া বাজারে বেশ কয়েকজন ক্রেতা ও বিক্রেতার সঙ্গে কথা বললে তারা জানান, রাজনৈতিক অস্থিরতা, হরতাল-অবরোধ, পথে পথে চাঁদাবাজি এসব কারণে পণ্যের দাম কমছে না। ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগ ও মাঠের বিরোধী দল বিএনপি দু’দলই দাবি করছে জনগণ তাদের পক্ষে রয়েছে। তাহলে নিরপেক্ষ সরকারের অধীনে নির্বাচন দিলেই তো বর্তমানের রাজনৈতিক সংকট হরতাল-অবরোধ থেকে মানুষ মুক্তি পায়।

ণ্যমূল্য লাগামহীন হওয়ায় সারা বছর খাওয়া-খাদ্য সংগ্রহের জন্য মধ্যবিত্ত লাখ লাখ পরিবারের কর্তাব্যক্তিদের লড়াই করতে হয়। মধ্যবিত্তের কপালেও দুশ্চিন্তার ভাঁজ যেন মিশছেই না। চাল, ডাল, তেল, লবণের পাশাপাশি যাতায়াত, পোশাক, খাতা-কলমসহ নানা ধরনের খাদ্যবহির্ভূত পণ্য ও সেবার দাম বাড়ছে হু হু করে। আয় না বাড়লে খাবার-দাবারসহ ভোগ কমিয়ে সংসারের বাজেট মেলাতে হচ্ছে। পণ্যমূল্য লাগামছাড়া ষাঁড়ের মতো। নিয়ন্ত্রণ করার কোনো অবস্থা নেই। স্বাভাবিক নিয়মে বাজার দর নির্ধারণ ও বেচাকেনার পরিস্থিতি দেখার কেউ নেই। কৃষকরা উৎপাদিত সবজি ও ফসলের ন্যায্য দাম না পেলেও রাজধানীতে অস্বাভাবিক বেশি দামে ক্রেতাদের পণ্য ক্রয় করতে হচ্ছে। অগ্রহায়ণ মাসেই শীতের হরেক রকম সবজিতে ভরে উঠেছে রাজধানীর বাজারগুলো। এরপরও কোনোভাবেই নিম্নবিত্ত ও মধ্যবিত্তের নাগালে আসছে না দাম। বিশেষ করে টমেটোর বাজারে আগুন লেগেছে। গতকাল শুক্রবার রাজধানী ঢাকার বিভিন্ন খুচরা বাজারে প্রতি কেজি টমেটো ১৪০ টাকা ক্রয় করতে দেখা গেল। অন্যান্য শাক-সবজিও ৪০ টাকার নিচে পাওয়া যাচ্ছে না। বাণিজ্য মন্ত্রণালয় সিটিবির মাধ্যমে কম দামে কিছু পণ্য বিক্রি করলেও চাল-আটা-চিনি-ডালসহ কয়েকটি নিত্যপণ্য উচ্চমূল্যে বিক্রি হচ্ছে। ডিমের দাম কিছুটা কমলেও কয়েকটি নিত্যপণ্য এখনও উচ্চমূল্যে স্থির হয়ে আছে। নিত্যপণ্যের অস্বাভাবিক এই দামে সীমাহীন কষ্টে স্বল্প আয়ের মানুষ। পরিবারের খাবারের যোগান দিতেই তারা হিমশিম খাচ্ছেন।

অক্টোবর মাসেও বেশির ভাগ সবজির দর ছিল ৭০ থেকে ১০০ টাকার মধ্যে। কোনোটির দাম দেড়শ’ টাকাও ছুঁয়েছিল। শুক্রবার বিভিন্ন বাজার ঘুরে দেখা গেছে, ৪০ থেকে ৮০ টাকার মধ্যে মিলছে অধিকাংশ সবজি। যদিও গত বছর শীতকালে সবজির দাম আরো কম ছিল।

রাজধানীর শনির আখড়া, যাত্রাবাড়ী, গোবিন্দগঞ্জ, আরামবাগ বাজার ঘুরে দেখা গেছে, প্রতি কেজি টমেটো বিক্রি হচ্ছে ১৪০ টাকা, বেগুন ৫০ থেকে ৮০ টাকা, করলা ৬০ টাকা, ঢেঁড়স ৬০ টাকা, পোটল ৬০ টাকা, বরবটি ৮০ টাকা, ধুন্দল ৪০ টাকা, চিচিঙ্গা ৫০ টাকা, শসা ৫০ থেকে ৬০ টাকা, লাউ প্রতিটি ৪০ থেকে ৫০ টাকা, পেঁপে প্রতি কেজি ৩০ টাকা, লেবুর হালি ২০ থেকে ৪০ টাকা, ধনে পাতার কেজি ২০০ টাকা, কলার হালি ২০ টাকা, জালি কুমড়া ৪০ টাকা, মিষ্টি কুমড়ার কেজি ৪০ থেকে ৫০ টাকায় বিক্রি হচ্ছে।

এছাড়া প্রতি কেজি কাঁচামরিচ ১০০ থেকে ১২০ টাকা, মুলা ৩০ টাকা, শিম ৪০ থেকে ৫০ টাকা, কচুরমুখী ৭০ টাকা ও গাজর ১০০ টাকা কেজি দরে বিক্রি হচ্ছে। লালশাক ১০ টাকা আঁটি, লাউশাক ৩০ টাকা, মুলাশাক ১০ টাকা, পালংশাক ১৫ টাকা, কলমিশাক ৮ টাকা আঁটি দরে বিক্রি করতে দেখা গেছে।

যাত্রাবাড়ীর পাইকারি আড়তের ব্যবসায়ীরা জানান, সবজির কেজিতে পাইকারি দরের চেয়ে ১৫ থেকে ২০ টাকার ব্যবধান থাকছে খুচরা বাজারে। খুচরা ব্যবসায়ীরা বলেন, সবজি পচনশীল পণ্য। পরিবহন ও অন্যান্য খরচের সঙ্গে মুনাফা হিসাব করলে ১০ থেকে ১৫ টাকা ব্যবধান থাকবেই। ফকিরাপুল কাঁচাবাজারের এক সবজি ব্যবসায়ী বলেন, পাইকারি বাজার থেকে কেনার পর কিছু সবজি পচে যায়। ভ্যান ভাড়াসহ অন্যান্য খরচ হিসাব করে খুচরা ব্যবসায়ীদের বিক্রি করতে হয়।

এদিকে চলতি বছর বেশ আলোচনার জন্ম দিয়েছে আলু। দুই মাস আগে সরকার খুচরা পর্যায়ে আলুর কেজি ৩৫ থেকে ৩৬ টাকা বেঁধে দিলেও তা কার্যকর হয়নি। আলুর কেজি ৬৫ টাকা উঠেছিল। অস্বাভাবিক দর বাড়ার কারণে সরকার বাজার তদারকি ও আমদানির উদ্যোগ নেয়। ভারত থেকে আলু আমদানির পরও নিয়ন্ত্রণে আসেনি বাজার। খুচরা পর্যায়ে এখনও ৫০ টাকার আশপাশে বিক্রি হচ্ছে সবজি জাতীয় এ খাদ্যপণ্যটি। যেখানে এক বছর আগে আলুর কেজি ছিল ২২ থেকে ২৫ টাকা। পুরনো আলুর পাশাপাশি নতুন আলু দেখা গেছে বাজারে। তবে দাম আকাশচুম্বী। প্রতি কেজি নতুন আলু বিক্রি হচ্ছে ১২০ থেকে ১৩০ টাকা দরে।

গ্রাম-গঞ্জে চলতি বছরের আমন ধান কাটা শুরু হয়ে গেছে। কিন্তু চালের বাজারে সেই প্রভাব দেখা যায়নি। মাসখানেক আগে সব ধরনের চালের দর বেড়েছিল। এখনও সেই দরেই বিক্রি হচ্ছে। মান ও বাজারভেদে মোটা চালের কেজি ৫০ থেকে ৫৪, মাঝারি চাল ৫৫ থেকে ৬০ এবং সরু চালের কেজি ৬৫ থেকে ৭৫ টাকা দরে বিক্রি হচ্ছে। একই চিত্র রয়েছে আটার বাজারে। দুই-তিন সপ্তাহ ধরে আটা ও ময়দার দাম বাড়তি। এ সময় খোলা আটা কেজিতে ৫ থেকে ৬ এবং প্যাকেট আটা কেজিতে ৫ থেকে ১০ টাকা বেড়েছে বলে জানিয়েছেন খুচরা বিক্রেতারা। বর্তমানে খোলা আটা কিনতে ক্রেতাকে গুনতে হচ্ছে কেজিতে ৫০ টাকা। আর প্যাকেট আটার কেজি কিনতে খরচ হচ্ছে কমবেশি ৫৫ টাকা। একইভাবে খোলা ময়দা ৬০ থেকে ৬৫ এবং প্যাকেট আটা ৬৫ থেকে ৭০ টাকা বিক্রি হচ্ছে।

দুই সপ্তাহ ধরে আবারও অস্থির চিনির বাজার। খুচরা দর ১৩০ টাকা নির্ধারণ করা হলেও খোলা চিনির কেজি বিক্রি হচ্ছে ১৪৫ থেকে ১৫০ টাকায়। তবে প্যাকেট চিনি কোথাও বিক্রি হতে দেখা যায়নি। ভারত রফতানি মূল্য বেঁধে দেয়ার পর দেশের বাজারে আমদানি করা পেঁয়াজের দাম হু হু করে বেড়ে ১১০ থেকে ১২০ টাকা উঠেছিল। তবে ২০ টাকার মতো দাম কমে এখন ৯০ থেকে ১০০ টাকায় বিক্রি হচ্ছে। একই সঙ্গে ১৪০ টাকায় বিক্রি হওয়া দেশি পেঁয়াজের দাম কমে বিক্রি হচ্ছে ১২০ টাকার আশপাশে।

এদিকে মাছের দামও নাগালের বাইরে রয়েছে। বাজারে ৪০০ গ্রাম ওজনের ইলিশ মাছের কেজি ৯০০ টাকা, শিং মাছ (আকারভেদে) ৩০০ থেকে ৬০০ টাকা, রুইয়ের দাম বেড়ে (আকারভেদে) ৪০০ থেকে ৬০০ টাকা, মাগুর ৮০০ থেকে এক হাজার টাকা, মৃগেল ৩০০ থেকে ৫০০ টাকা, পাঙ্গাশ ২০০ থেকে ২৫০ টাকা, চিংড়ি ৮০০ থেকে এক হাজার টাকা, বোয়াল ৬০০ থেকে এক হাজার ২০০ টাকা, কাতল ৪০০ থেকে ৮০০ টাকা, পোয়া মাছ ৪০০ থেকে ৪৫০ টাকা, পাবদা ৪০০ থেকে ৪৫০ টাকা, তেলাপিয়া ২২০ টাকা, কই ২৪০ থেকে ২৫০ টাকা, মলা ৬০০ টাকা, বাতাসি টেংরা এক হাজার ২০০ টাকা, টেংরা ৭০০ থেকে ৮০০ টাকা, কাচকি ৬০০ টাকা, পাঁচমিশালি ২২০ টাকা, রূপচাঁদা এক হাজার ২০০ টাকা, বাইম এক হাজার থেকে এক হাজার ২০০ টাকা, দেশি কই এক হাজার টাকা, মেনি মাছ ৭০০ টাকা, শোল মাছ ৬০০ থেকে এক হাজার টাকা এবং আইড় মাছ ৮০০ থেকে এক হাজার টাকায় বিক্রি হচ্ছে।

তবে বাজারে গরুর গোশতের দাম কমেছে। মাত্র ৫৯৫ টাকা কেজি দরে বিক্রি হচ্ছে গরুর গোশত। আর তা কিনতে সকাল থেকে বাজারের ব্যাগ হাতে মানুষের দীর্ঘ লাইন। কেউ ১ কেজি, কেউ ১০ কেজি, কেউ আবার এরও বেশি পরিমাণ গরুর গোশত কিনছেন। ভেজাল বা আগের জমানো গোশত মেশানোর সুযোগ নেই। কারণ দোকানের সামনেই জবাই হচ্ছে গরু। সেখানেই যাবতীয় প্রক্রিয়া সম্পন্ন করে দোকানে তোলা হচ্ছে। আর মুহূর্তের মধ্যেই আস্ত গরুর গোশত শেষ হয়ে যাচ্ছে।

কয়েকটি বাজার ঘুরে দেখা গেছে মাইকিং করে গরুর গোশত বিক্রি হচ্ছে। কোনো বাজারে ৬২০ টাকা, কোনো বাজারে ৬শ’ টাকা এবং কোনো বাজারে ৫৯৫ টাকা কেজি দরে গরুর গোশত বিক্রি হচ্ছে। খাসি ও বকরি ছাগলের গোশতের দাম আগের মতোই রয়েছে।

এদিকে চট্টগ্রাম থেকে রফিকুল ইসলাম সেলিম জানান, চট্টগ্রাম অঞ্চলে দ্রব্যমূল্যের সীমাহীন ঊর্ধ্বগতিতে দিশেহারা স্বল্প ও সীমিত আয়ের মানুষ। টানা হরতাল-অবরোধে চাল, ডালসহ ভোগ্যপণ্যের দাম আরো এক দফা বেড়েছে। তাতে চরম বিপাকে সাধারণ মানুষ। বিশেষ করে খেটে খাওয়া মানুষের জীবন ধারণই কঠিন হয়ে পড়েছে। দফায় দফায় বেড়েছে জ্বালানি তেল, বিদ্যুৎ, পানি ও গ্যাসের দাম। জ্বালানি তেলের মূল্যবৃদ্ধির পর বেড়ে যায় পরিবহণ ও বাসা ভাড়া। তার সাথে পাল্লা দিয়ে বেড়েই চলেছে নিত্যপণ্যের দাম। লাগামহীন মূল্যস্ফীতিতে বেড়ে গেছে জীবনযাত্রার ব্যয়। খাদ্যে মূল্যস্ফীতি অতীতের সব রেকর্ড ছাড়িয়ে গেছে।

এতে স্বল্প ও সীমিত আয়ের মানুষের পাশাপাশি মধ্যবিত্তরাও সঙ্কটে পড়ে গেছেন। ভোক্তাদের অভিযোগ সিন্ডিকেটের কারণে বাজার নিয়ন্ত্রণ করা যাচ্ছে না। সরকারও এই মূল্য সিন্ডিকেটের বিরুদ্ধে কঠোর ব্যবস্থা নিতে ব্যর্থ হয়েছে। আর তার খেসারত দিতে হচ্ছে সাধারণ মানুষকে। বাজার নিয়ন্ত্রণে সরকারের এই ব্যর্থতায় যুগপৎ ক্ষুব্ধ এবং হতাশ ক্রেতারা।

সংশ্লিষ্টদের আশঙ্কা, চলমান রাজনৈতিক অস্থিরতায় বাজার পরিস্থিতি আরো বেশি নিয়ন্ত্রণহীন হয়ে পড়বে। আর তার নেতিবাচক প্রভাব পড়বে সাধারণ মানুষের ওপর। চট্টগ্রামের কয়েকটি বাজার ঘুরে ব্যবসায়ী ও ক্রেতাদের সাথে কথা বলে জানা যায়, টানা হরতাল-অবরোধের কারণে পরিবহণ ভাড়া বেড়ে যাওয়ায় চাল, ডাল, আটা, ময়দাসহ ভোগ্যপণ্যের দাম আরো এক দফা বেড়েছে। সব ধরনের চালের দাম বস্তাপ্রতি দেড়শ’ থেকে দুইশ’ টাকা বেড়েছে। আর কেজিতে বেড়েছে এক থেকে দুই টাকা। আটা, ময়দা এবং সব ধরনের ডালের দামও বেড়েছে পরিবহণ ভাড়া বৃদ্ধির অজুহাতে। বাজারে এখন মোটা চালের দাম ৫৮ থেকে ৬০ টাকা।

খাওয়ার অযোগ্য মোটা চালও বিক্রি হচ্ছে ৫৫ থেকে ৫৬ টাকায়। মাঝারি মানের নাজির শাইল, জিরা শাইল ও মিনিকেট চালের দাম প্রতি কেজি ৭৫ থেকে ৮০ টাকা। আটা, ময়দার দাম চলতি সপ্তাহে কেজিপ্রতি পাঁচ থেকে ১০ টাকা বেড়েছে। প্রতি প্যাকেট আটা ৬০-৬৫ এবং ময়দা ৬৫-৭০ টাকায় বিক্রি হচ্ছে। সব ধরনের ডালের দাম বেড়েছে কেজিতে ১০-১৫ টাকা। মোটা দানার মসুর ডাল ১১০-১১৫ টাকা আর চিকন দানা মসুরের ডাল ১৩০-১৪০ টাকায় বিক্রি হচ্ছে। ছোলার ডাল প্রতি কেজি ৯৫ টাকা।

রেয়াজুদ্দিন বাজারের মুদি দোকানি ইকবাল স্টোরের মালিক মো. লোকমান হোসেন বলেন, অবরোধ-হরতালে পরিবহণ ভাড়া বেড়ে যাওয়ায় বস্তাপ্রতি চালের দাম দেড়শ’ থেকে দুইশ’ টাকা বেড়েছে। বেড়েছে আটা-ময়দার দামও। রাজনৈতিক অস্থিরতা বজায় থাকলে সামনে দাম আরো বাড়তে পারে।

বাজারে পেঁয়াজ, রসুন, আদার দাম বেড়েছে আরো এক দফা। প্রতি কেজি পেঁয়াজ ১১০-১২০ টাকায় বিক্রি হচ্ছে। রসুন ১৬০-১৮০ টাকা, আদা ২২০-২৩০ টাকা। হলুদ, মরিচ, জিরাসহ সব ধরনের মশলার দাম আরো এক দফা বেড়েছে। বেড়েছে চিনির দামও। প্রতি কেজি চিনি ১৩৮-১৪০ টাকায় বিক্রি হচ্ছে। ভোজ্যতেল প্রতি লিটার ১৬০-১৬৫ টাকায় বিক্রি হচ্ছে। ডিমের দাম কিছুটা কমে ডজন ১২০-১২৫ টাকায় বিক্রি হচ্ছে। গুঁড়ো দুধের দাম স্থিতিশীল রয়েছে।

বেড়েছে সব ধরনের সাবান ও ওয়াশিং পাউডারের দাম। বাজারে মাছ, গোশতের দামে আগুন। সাধারণ মানুষ এখন গোশত খাওয়াকে বিলাসিতা মনে করছে। ক্রেতারা বলছেন, চাল, ডাল আর সবজি কিনতেই পকেট খালি হয়ে যাচ্ছে। মাছ, গোশত সাধারণ মানুষের নাগালের বাইরে চলে গেছে। হাড়ছাড়া প্রতি কেজি গরুর গোশত ৯০০ টাকা, হাড়সহ ৭৫০-৮০০ টাকায় বিক্রি হচ্ছে। খাসি প্রতি কেজি ১০৮০-১১০০ টাকা। দেশি মুরগি ৫০০-৫৫০ টাকা, ব্রয়লার ১৬০-১৭০ টাকা, সোনালিকা (লাল) ৩০০-৩১০ টাকা, আর সোনালিকা ২৬০-২৭০ টাকায় পাওয়া যাচ্ছে। বাজারে সামুদ্রিক ও চাষের মাছের সরবরাহ পর্যাপ্ত। তবে দাম সাধারণের নাগালের বাইরে। প্রতি কেজি তেলাপিয়া ২০০-২২০ টাকা, রুই ২৭০-৩৫০ টাকা, কোরাল ৬০০-৬৫০ টাকা, পাবদা ৪০০-৪৫০ টাকা, লইট্ট্যা ১৬০-২০০ টাকা, কাতল ২৫০-৩০০ টাকা, ছোট চিংড়ি প্রতি কেজি ৫০০-৬০০ টাকা, বাগদা ৬০০-৭০০ টাকায় বিক্রি হচ্ছে।

বাজারে শীতের আগাম শাকসবজির সরবরাহ বেড়েছে। এরপরও ৪০ টাকার নিচে কোনো সবজি মিলছে না। প্রতি কেজি আলু ৪৫-৫০ টাকায় বিক্রি হচ্ছে। আমদানির পর আলুর দাম কেজিতে পাঁচ টাকা করে কমেছে। নতুন আলু প্রতি কেজি ৭৫-১২০ টাকায় বিক্রি হচ্ছে। বেগুন ৭০ টাকা, শিম ৭৫-৮০ টাকা, বাঁধাকপি ৪০-৪৫ টাকা, লাউ ৪৫-৫০ টাকা, তিতা করলা ৬০-৭০ টাকা, মিষ্টি কুমড়া ৪০-৫০ টাকা, ঝিঙে ৭০ টাকা, চিচিঙ্গা ৭০-৮০ টাকা, ঢেঁড়স ৭০-৭৫ টাকা, কাঁচা পেঁপে ৪০ টাকা, গাজর ১০০-১২০ টাকা, টমেটো ১০০-১২০ টাকা, শসা ৫০-৫৫ টাকায় বিক্রি হচ্ছে। প্রতি কেজি কাঁচামরিচ ১০০-১২০ টাকা, শাকের আঁটি প্রকারভেদে ৩০-৪০ টাকায় বিক্রি হচ্ছে। বাজারভেদে শাকসবজির দামের তারতম্যও রয়েছে। আবার একই বাজারে একেক দোকানে একেক রকম দাম হাঁকা হচ্ছে। ভোক্তারা বলছেন, কোনো কারণ ছাড়াই কিছু কিছু পণ্যের দাম বেড়েই চলেছে।

Show More

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Related Articles

Back to top button
Situs Toto
Toto Gacor
bacan4d
bacansport login
slot gacor
pasaran togel resmi
bacan4d
toto togel
slot toto
Toto slot gacor
bacan4d
slotgacor
bacan4d rtp
bacan4d
bacan4d toto
Slot Casino
bacan4d toto
slot gacor
bacan4d
bacan4d
Slot Toto
bacan4d
bacan4d login
totoslotgacor
slot gacor
TOTO GACOR
bacan4d
bacan4d slot gacor
bacan4d login
Bacan4d
bacan4d
bacan4d bonus
Toto gacor
Toto gacor
slot gacor hari ini
bacan4d toto
bacan4d toto
bacan4d
bacan4d
bacan4d
toto slot
bacan4d
bacan4d link alternatif
slot gacor bett 200
situs toto
SITUS TOTO
toto 4d
Slot Toto
Slot Toto
Slot Toto
Situs toto
Slot toto
Slot Dana
Slot Dana
Judi Bola
Judi Bola
Slot Gacor
toto slot
bacan4d toto
bacan4d akun demo slot
bacantogel
bacan4d
bacan4d
slot gacor
bacantoto
bacan4d
Bacan4d Login
slot demo
Bacan4d Toto
toto gacor
Slot Gacor
Live Draw
Live Draw Hk
Slot Gacor
toto slot
Bacan4d slot gacor
toto macau
toto slot
Toto Gacor
slot dana
bacan4d
bacan4d
bacan4d
bacan4d
Slot Dp Pulsa
Bacan4d Login
toto slot
Bacansports/a>
xx1toto
xx1toto
xx1toto
xx1toto
xx1toto
xx1toto
xx1toto
xx1toto
xx1toto
xx1toto
xx1toto
xx1toto
xx1toto
xx1toto
xx1toto
xx1toto
xx1toto
xx1toto
xx1toto
xx1toto
xx1toto
xx1toto
xx1toto
xx1toto
xx1toto
xx1toto
toto slot
bacansport
bacansport
bacansport
bacansport
bacansport
bacansport
xx1toto
xx1toto
xx1toto
xx1toto
slot gacor
xx1toto
xx1toto
xx1toto
xx1toto
xx1toto
xx1toto
xx1toto
xx1toto
xx1toto
xx1toto
xx1toto
xx1toto
xx1toto
xx1toto
xx1toto
xx1toto
xx1toto
toto slot
slot demo
toto slot gacor
bacansports Slot toto toto slot Slot toto Slot dana Slot toto slot maxwin slot maxwin toto slot toto slot slot dana
Toto Bola
xx1toto
xx1toto
xx1toto
xx1toto
xx1toto
xx1toto
xx1toto
xx1toto
xx1toto
xx1toto
xx1toto
xx1toto
xx1toto
xx1toto
xx1toto
xx1toto
xx1toto
xx1toto
xx1toto
xx1toto
xx1toto
xx1toto
xx1toto
xx1toto
xx1toto
xx1toto
bacan4d
ts77casino
situs toto
slot pulsa
bacansports
situs toto
slot toto
situs toto
slot toto
situs toto
toto slot
bacansport
bacansport
bacansports
slot toto
xx1toto
xx1toto
xx1toto
xx1toto
xx1toto
situs toto
situs toto
xx1toto
toto slot
xx1toto
xx1toto
slot qriss
Slot Toto
slot dana
situs toto
slot toto
slot dana
Situs Toto Slot Gacor
xx1toto
xx1toto
bacan4d
xx1toto
xx1toto
toto slot
situs toto slot gacor
toto gacor
toto gacor
toto gacor
toto gacor
bacan4d
bacan4d
bacan4d
bacan4d
bacan4d
situs toto
Slot Toto
Toto Slot
Slot Gacor
Slot Gacor
Slot Gacor
slot toto
Toto Slot
slot gacor
situs togel
Toto Slot
xx1toto
bacansport
bacan4d
toto slot
situs toto
slot gacor
Toto Slot
slot maxwin
slot demo
bacan4d toto slot
bacan4d toto slot
bacan4d slot
bacan4d slot
bacan4d slot
bacansports
bacansports
bacansports
bacan4d slot
bacan4d slot
bacan4d
slot gacor
pasaran togel resmi
situs toto
bacan4d login
pasaran togel
pasaran togel
situs toto
bacan4d
bacan4d gacor
bacan4d slot
bacan4d rtp
bacan4d rtp
bacan4d slot gacor
toto slot
situs toto
bacan4d
bacan4d
bacansport
bacansport
bacan4d
bacan4d
bacan4d
bacan4d
bacan4d
toto gacor Toto Gacor bacan4d slot toto casino slot slot gacor bacantoto totogacorslot Toto gacor bacan4d login slotgacor bacan4d bacan4d toto Slot Gacor toto 4d bacan4d toto slot bacan4d slot gacor