Bangladesh

বাংলাদেশে ভারতবিরোধী মনোভাব কেন বাড়ছে?

গত এক মাস বা তারও বেশি সময় ধরে বাংলাদেশ বিরোধীদের একাধিক বিক্ষোভের সাক্ষী থেকেছে। আসন্ন জাতীয় নির্বাচনকে সামনে রেখে নিরপেক্ষ তত্ত্বাবধায়ক সরকারের দাবি জানিয়েছে বাংলাদেশ জাতীয়তাবাদী দল (বিএনপি)। এর ফলে বিএনপি’র বহু নেতাকর্মীকে পুলিশ গ্রেপ্তার করেছে। এমনকি মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র বারবার দক্ষিণ এশিয়ার দেশটিতে একটি শান্তিপূর্ণ, অবাধ ও সুষ্ঠু নির্বাচন প্রক্রিয়ার প্রয়োজনীয়তার ওপর জোর দিয়েছে, যা শেখ হাসিনা সরকারের ওপর সম্ভাব্য নিষেধাজ্ঞার জল্পনাকে উস্কে দিয়েছে। এই বছরের শুরুর দিকে, মার্কিন স্টেট ডিপার্টমেন্ট বাংলাদেশের গণতান্ত্রিক নির্বাচন প্রক্রিয়াকে ক্ষুণ্ন করার জন্য দায়ী বা জড়িত যে কোনো  বাংলাদেশির  ভিসা রোধ করার কথা ঘোষণা করে। TOI Plus একজন বাংলাদেশি লেখক এবং রাজনৈতিক ইতিহাসবিদ মহিউদ্দিন আহমেদের সঙ্গে কথা বলেছে, যিনি দেশের বর্তমান রাজনৈতিক পরিস্থিতি এবং এর সম্ভাব্য প্রভাব সম্পর্কে তার মতামত শেয়ার করেছেন। সেই সাক্ষাৎকারটি এখানে হুবহু তুলে ধরা হলো-

প্রশ্ন: বাংলাদেশের বর্তমান রাজনৈতিক পরিস্থিতিকে আপনি  কীভাবে দেখেন?
উত্তর: বর্তমান পরিস্থিতি অচলাবস্থার মধ্যে দাঁড়িয়ে। কারণ উভয় পক্ষই তাদের দাবির বিষয়ে অনড়।  নিজেদের অবস্থান থেকে নড়ছে না। উভয় পক্ষই নিজেদের অস্তিত্ব টিকিয়ে রাখতে মরিয়া।

যে দল ক্ষমতায় আছে তারা মনে করে অবাধ নির্বাচন হলে তারা হেরে যাবে। অন্য দল মনে করে, বর্তমান সরকারের অধীনে নির্বাচন হলে তাদের পরাজয় অবধারিত। তাই তারা নিরপেক্ষ সরকারের অধীনে নির্বাচন দাবি করছে। যারাই হার স্বীকার করবে, এটা তাদের জন্য আত্মঘাতী হবে। 

প্রশ্ন: আপনি কি মনে করেন কেউ হার স্বীকার করবে?
উত্তর: এখনো  পর্যন্ত আমি এটি ঘটার  কোনো সম্ভাবনা দেখছি না। তবে, ক্ষমতাসীন দলের একটি সুবিধা রয়েছে, কারণ তারা শক্তিশালী এবং তাদের হাতে রাষ্ট্রযন্ত্র রয়েছে। এটা স্পষ্ট যে রাষ্ট্রযন্ত্র, বিশেষ করে আমলাতন্ত্র, পুলিশ এবং ব্যবসায়ী সম্প্রদায় বর্তমান সরকারকে সমর্থন করে। বিরোধী যেকোনো দলের জন্যই পরিস্থিতি কঠিন, যদি না কোনো গণঅভ্যুত্থান সৃষ্টি হয় যেখানে লাখ লাখ মানুষ বেরিয়ে এসে পুলিশের মোকাবেলা করে। আওয়ামী লীগের প্রধান বিকল্প বিএনপি। কিন্তু  যখন তারা ক্ষমতায় থাকে তখন এমন কাজ করে যা বিরোধী দলে থাকলে সেই কাজেরই তারা সমালোচনা করে।

প্রশ্ন: একটি অবাধ ও সুষ্ঠু নির্বাচন পরিচালনার জন্য আন্তর্জাতিক চাপ বাড়তে থাকার পরিস্থিতিতে প্রধানমন্ত্রী কী করতে পারেন?
উত্তর: আন্তর্জাতিক চাপ আসলে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের তরফ থেকে ভিসা নিষেধাজ্ঞার পর অর্থনৈতিক নিষেধাজ্ঞা আসতে পারে। সমস্যা হলো, এটি জনগণের ক্ষতি করবে, শাসনের নয়। পাশাপাশি বিরোধী দলের বর্তমান রাজনৈতিক কর্মসূচিও ক্ষতিগ্রস্ত হবে। ক্ষমতার জন্য শেখ হাসিনা যেকোনো পথ বেছে নিতে পারেন। যদিও আমরা জানি না, যুক্তরাষ্ট্রের সঙ্গে শেষমেশ কোনো বোঝাপড়া হবে কিনা। মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র গণতন্ত্র বা মানবাধিকারের ক্ষেত্রে চ্যাম্পিয়ন নয়, তবে তারা একটি চূড়ান্ত বক্তব্য রাখতে পারে।

প্রশ্ন: যুক্তরাষ্ট্র বাংলাদেশি পোশাকের সবচেয়ে বড় বাজার। তারা নিষেধাজ্ঞা আরোপ করলে ঢাকার জন্য কতোটা কঠিন হবে?
উত্তর: এটি অর্থনীতিতে গুরুতর প্রভাব ফেলবে। কারণ ওয়াশিংটন ডিসি যে পদক্ষেপই গ্রহণ করুক না কেন, কানাডা, অস্ট্রেলিয়া এবং ইউরোপ সেটি  অনুসরণ করবে। যুক্তরাষ্ট্র ও ইউরোপীয় ইউনিয়নের সঙ্গে বাংলাদেশের বাণিজ্যিক সম্পর্ক রয়েছে। নিষেধাজ্ঞা থাকলে অর্থনীতি সত্যিই ক্ষতিগ্রস্ত হবে। যদি ব্যবসায়ী সম্প্রদায় এবং সেনাবাহিনীতে  অস্থিরতা থাকে, যা আমরা ২০০৬-০৭ সালে অনুভব করেছি, তাহলে পরিস্থিতি অন্যদিকে মোড় নিতে পারে।

প্রশ্ন: শেখ হাসিনা সরকারকে কী কী বিষয় প্রভাবিত করছে?
উত্তর: তার মধ্যে (শেখ হাসিনা) দুর্বলতার কোনো লক্ষণ নেই, তিনি বেশ স্বাচ্ছন্দেই রয়েছেন।  তবে জনসমক্ষে তিনি যা বলছেন তা থেকে স্পষ্ট যে তিনি সমস্যায় আছেন। ২০১৪ সালের মতো এবারো তিনি একতরফাভাবে নির্বাচনের তফসিল ঘোষণা করেছেন। সেই সময়ে বিরোধী দল এক বছর ধরে অনেক হরতাল-অবরোধ করে বড় ধরনের প্রচারণা চালালেও হাসিনা সরকার টিকে ছিল  এবং পূর্ণ মেয়াদ সম্পন্ন করে। এখানে  একটা প্রশ্ন আসছে যেটা অনেকেই করছেন: বিএনপি’র কৌশল ২০১৪ সালে সফল হয়নি, এখন সেটা সফল হবে কেন? আন্তর্জাতিক চাপে ক্ষমতার ভারসাম্য প্রভাবিত হতে পারে, তবে কতটা প্রভাবিত হবে সরকারই তা নির্ধারণ করবে। কারণ সরকারের প্রধান বিবেচ্য ক্ষমতা, জনগণের কল্যাণ নয়।

প্রশ্ন: বিএনপি’র অধিকাংশ নেতা কারাগারে আছেন, এমন কোনো  দল আছে যারা আসলে নির্বাচনেপ্রতিদ্বন্দ্বিতা করবে?
উত্তর: অনেক দল প্রতিদ্বন্দ্বিতা করছে। কিন্তু, তারা নির্বাচনে জয়ী হয়ে সরকার গঠনে সক্ষম নয়। তাই তারা আওয়ামী লীগের সঙ্গে আসন ভাগাভাগি করতে যাচ্ছে। এভাবে ক্ষমতাসীন দল কয়েকটি তথাকথিত বিরোধী দলকে সম্পৃক্ত করার চেষ্টা করছে। এটি প্রধান বিরোধী দলকেও বিভক্ত করার চেষ্টা করছে এবং বিরোধী দলের কিছু নেতাকে অন্য নির্বাচনী প্রতীক ব্যবহার করে এমপি হওয়ার জন্য প্রলুব্ধ করছে। 

প্রশ্ন: নির্বাচন পেছানোর সম্ভাবনা আছে কি?
উত্তর: দেখুন, পরিস্থিতি খুবই অনিশ্চিত হওয়ার কারণে যে কোন কিছু ঘটতে পারে। বাংলাদেশের নেতৃবৃন্দ এবং যুক্তরাষ্ট্র, ইউরোপ, ভারত ও চীনের নেতাদের মধ্যে পর্দার আড়ালে কী ঘটছে তা আমরা জানি না। নির্বাচন [আগামী বছরের জানুয়ারিতে হওয়ার কথা] কয়েক সপ্তাহের জন্য স্থগিত করা যেতে পারে, তবে অনির্দিষ্টকালের জন্য নয়, কারণ সেখানে একটি সাংবিধানিক বাধ্যবাধকতা রয়েছে, যদি না জরুরি অবস্থা ঘোষণা করা হয়। বিগত নির্বাচনগুলোতে ভোটার উপস্থিতি ছিল খুবই কম। সাম্প্রতিক উপনির্বাচনে ভোটার উপস্থিতি ছিল ৮%। আমি ধারণা করি এবারও ভোটার কম হবে এবং যদি ভোট সঠিকভাবে গণনা করা হয়, তাহলে তা ১৫-২০% এর বেশি হবে না। বাংলাদেশের মানুষ একটি অবাধ ও সুষ্ঠু নির্বাচন চায় এবং বর্তমান সরকারের প্রতি অনেক  মানুষ বিরক্ত। ১৫ বছর পর তারা শাসন ব্যবস্থার পরিবর্তন চায়। একটি অবাধ ও সুষ্ঠু নির্বাচন হলে সরকার পরিবর্তনের সম্ভাবনা রয়েছে।

প্রশ্ন: শেখ হাসিনার অন্তর্বর্তী সরকার নিয়োগে এত অনীহা কেন?
উত্তর: শেখ হাসিনা জানেন একবার ক্ষমতার বাইরে গেলে তিনি কোথাও থাকবেন না। তিনি  হুমকি অনুভব করেন। নির্বাচনের ক্ষেত্রে ৩ মাসের অন্তর্বর্তী সরকারের একটি সাংবিধানিক বিধান ছিল, যা হাসিনা অপসারণ করেছিলেন। তিনি মনে করেন, নিরপেক্ষ সরকারের অধীনে নির্বাচন হলে তার আবার ক্ষমতায় ফিরে আসার সুযোগ থাকবে না।

প্রশ্ন: আওয়ামী লীগ বিএনপিকে অগণতান্ত্রিক দল হিসেবে অভিযুক্ত করেছে..
উত্তর: বাংলাদেশে যখনই কোনো দল ক্ষমতায় থাকে, তারা স্বৈরাচারী সরকারের মতো আচরণ করে। এই দলগুলো বিরোধী দলে পরিণত হলেই তারা গণতন্ত্রের চ্যাম্পিয়ন হয়ে ওঠে। এটা আওয়ামী লীগ ও বিএনপি উভয়ের জন্যই প্রযোজ্য। এটি শুধুমাত্র একটি কর্তৃত্ববাদী সরকার নয়, এটি এমন এক সরকার  যা একটি পরিবার দ্বারা চালিত হয়।

প্রশ্ন: শেখ হাসিনা সরকার ভারতের মতো দেশের জন্য কতোটা গুরুত্বপূর্ণ?
উত্তর: ১৯৭১ সাল থেকে বাংলাদেশ ও ভারতের সম্পর্কে অনেক উত্থান-পতন ঘটেছে। বাংলাদেশ শেখেনি কীভাবে ভারতের মতো বড় ও শক্তিশালী প্রতিবেশীর সঙ্গে সহাবস্থান করতে হয়, অন্যদিকে নয়াদিল্লি শেখেনি কীভাবে একটি ছোট ও কম শক্তিশালী প্রতিবেশীর সঙ্গে সম্পর্ক বজায় রাখতে হয়। ভারতের প্রধান উদ্বেগ ছিল উত্তর-পূর্বের নিরাপত্তা এবং সে ভেবেছিল ১৯৭১ সালে বাংলাদেশকে সাহায্য করলে তার নিরাপত্তার উদ্বেগ কেটে যাবে। কিন্তু তা হয়নি। ভারত হাসিনাকে ক্ষমতায় রেখে নিরাপদ বোধ করে। কারণ বিএনপি নেতৃত্বাধীন সরকার ক্ষমতায় থাকাকালীন ভারতকে অনেক বিরক্ত করেছে।

প্রশ্ন: ভারতের সঙ্গে তাদের সরকারের সম্পর্ককে সাধারণ বাংলাদেশিরা কীভাবে দেখেন?
উত্তর: সাম্প্রতিক বছরগুলিতে, ভারত-বিরোধী অনুভূতি খুব শক্তিশালী এবং এর পেছনে যুক্তি হলো যে ভারত একটি অ-জনপ্রিয় সরকারকে সমর্থন করে চলেছে।

প্রশ্ন: বিষয়টি আপনি একটু  ব্যাখ্যা করতে পারেন?
উত্তর: মানুষ ভারতকে হস্তক্ষেপকারী এবং একটি নিপীড়ক সরকারের সমর্থনকারী হিসাবে দেখে। এ ছাড়াও দুই দেশের মধ্যে বহু দ্বিপাক্ষিক সমস্যা রয়েছে যা অমীমাংসিত রয়ে গেছে। পানি বণ্টনের বিষয়টি নিয়ে ভারত বাংলাদেশে তার জনপ্রিয়তা হারিয়েছে ।

প্রশ্ন: সাম্প্রতিক বিক্ষোভ কি হাসিনা সরকারকে চিন্তায় ফেলবে?
উত্তর: যতক্ষণ পর্যন্ত দেশের অন্যান্য স্টেকহোল্ডাররা তার সঙ্গে আছেন ততক্ষণ তিনি হুমকি বোধ করেন না। কিন্তু, যদি এটি বদলে যায় তাহলে  পরিস্থিতি উল্টে যাবে।

প্রশ্ন: জনগণের প্রধান অর্থনৈতিক সমস্যাগুলি কী কী?
উত্তর: প্রধান অর্থনৈতিক সমস্যা হলো বেকারত্ব। প্রবৃদ্ধির হার কমে যাচ্ছে। ৮% থেকে এটি এখন প্রায় ৫%। প্রকৃত কর্মসংস্থান তৈরি হচ্ছে না এবং তরুণরা সত্যিই হতাশ। সম্প্রতি একটি সমীক্ষা হয়েছে, যেখানে ৪২% যুবক বলেছে যে তারা দেশে থাকতে চায় না, কারণ এখানে  তাদের কোনো ভবিষ্যৎ নেই। দেশের তরুণরা কোনো আশার আলো দেখতে পাচ্ছেন না। 

Show More

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Related Articles

Back to top button
bacan4d toto
bacan4d toto
Toto Slot
slot gacor
slot gacor
slot toto
Bacan4d Login
bacan4drtp
situs bacan4d
Bacan4d
slot dana
slot bacan4d
bacan4d togel
bacan4d game
slot gacor
bacan4d login
bacantoto 4d
toto gacor
slot toto
bacan4d
bacansport
bacansport
bacan4d
bacan4d
bacan4d
bacan4d
bacan4d
bacan4d
bacan4d
slot gacor
slot77 gacor
Bacan4d Login
Bacan4d toto
Bacan4d
Bacansports
bacansports
slot toto
Slot Dana
situs toto
bacansports
bacan4d
bacan4d
bacan4d
bacan4d
bacan4d
slot gacor
bacan4d
bacan4d
bacan4d online