কারা হচ্ছে বিরোধী দল
সামনে আসতে পারে নতুন জোট, স্বতন্ত্রদের নিয়ে নানান ভাবনা
ছেড়ে দিয়েছে দ্বাদশ জাতীয় নির্বাচনের ট্রেন। সেই ট্রেনে ওঠেনি জাতীয়তাবাদী দল-বিএনপিসহ ১৫টি নিবন্ধিত রাজনৈতিক দল। অস্বাভাবিক কিছু না ঘটলে আওয়ামী লীগ টানা চতুর্থ বারের মতো সরকার গঠন করতে যাচ্ছে, এটা অনেকটাই নিশ্চিত। তবে প্রধান বিরোধী দলের আসনে কারা বসতে যাচ্ছে এটা নিয়ে তৈরি হয়েছে ধূম্রজাল। বর্তমান সংসদে প্রধান বিরোধী দলের আসনে জাতীয় পার্টি (জাপা) থাকলেও নতুন সংসদে আসতে পারে পরিবর্তন। এক্ষেত্রে নতুন জোট যেমন সামনে আসতে পারে, জোটবদ্ধ হয়ে বড়সড় নাড়া দিতে পারে বিদ্রোহী ও স্বতন্ত্র প্রার্থীরাও।
সংশ্লিষ্টরা বলছেন, সরকার গঠন করতে যে কোনো দল বা জোটের প্রয়োজন ন্যূনতম ১৫১ আসন। দ্বিতীয় সর্বোচ্চ আসন পাওয়া দল বা জোট বসবে প্রধান বিরোধী দলের আসনে। সংরক্ষিত চারটিসহ মোট ২৬টি আসন নিয়ে বর্তমান সংসদে প্রধান বিরোধী দলের আসনে রয়েছে জাপা। একাদশ সংসদ নির্বাচনে আওয়ামী লীগের সঙ্গে আসন-সমঝোতায় ২২টি আসনে ‘লাঙ্গল’ প্রতীকে জয়ী হয়েছিলেন জাপার প্রার্থীরা। তবে এবার জাপার সঙ্গে আওয়ামী লীগ আসন সমঝোতা করবে কিনা তা নিয়ে প্রশ্ন রয়েছে। এ ছাড়া দলটির মধ্যে রয়েছে অভ্যন্তরীণ বিভেদ। পছন্দের আসন না পাওয়ায় বর্তমান সংসদের বিরোধীদলীয় নেতা ও জাতীয় পার্টির প্রধান পৃষ্ঠপোষক রওশন এরশাদ এবং তার ছেলে রংপুর-৩ আসনের সংসদ সদস্য সাদ এরশাদ নির্বাচন থেকে সরে দাঁড়িয়েছেন। ২৮৬টি আসনে নিজেদের প্রার্থী দিয়েছে দলটি। ১৮টি আসনে রয়েছে দলটির দুজন করে প্রার্থী। দলীয় বিভেদ জাতীয় পার্টিকে কিছুটা ব্যাকফুটে নিয়ে যেতে পারে বলে মনে করছেন রাজনৈতিক বিশ্লেষকরা।
এদিকে ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগ ২৯৮ আসনে এককভাবে প্রার্থী ঘোষণা করেছে। পাঁচটি আসনে দুটি করে মনোনয়ন জমা পড়েছে। দলটির সঙ্গে আরও আটটি রাজনৈতিক দল জোটবদ্ধ হয়ে নির্বাচনে যাওয়ার ঘোষণা দিয়েছে। তাই কিছু আসন শরিকদের জন্য ছাড়া হতে পারে। তবে গত ২৮ নভেম্বর আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ও সেতুমন্ত্রী ওবায়দুল কাদের বলেন, ‘৩০০ আসনেই নৌকার প্রার্থী থাকবে। কোথাও প্রয়োজন হলে সেখানে সমন্বয় করে ছাড় দেওয়া হবে। ১৪ দলীয় জোটে কারা কারা নমিনেশন চায়, আমাদের আগে বুঝতে হবে। চৌদ্দ দলের সঙ্গে আমাদের জোট আছে। তাদের প্রার্থীগুলো আগে দেখি। আগামী ১৭ ডিসেম্বর পর্যন্ত আমাদের হাতে সময় আছে।’
তবে বিকল্প প্রার্থী (ডামি) রাখার দলীয় পরামর্শের পর স্বতন্ত্র প্রার্থীর আড়ালে আওয়ামী লীগের বিদ্রোহী প্রার্থী হওয়ার হিড়িক পড়েছে। প্রায় প্রতিটি আসনেই একাধিক প্রার্থী হচ্ছেন দলের মনোনয়নবঞ্চিতরা। সেই তালিকায় আছেন বর্তমানে সংসদের এমপি, প্রতিমন্ত্রী, সাবেক সিটি মেয়র, সাবেক এমপি, উপজেলা চেয়ারম্যানসহ বিভিন্ন পর্যায়ের জনপ্রতিনিধি ও আওয়ামী লীগ নেতারা। এই স্বতন্ত্ররাই নৌকার প্রার্থীর জন্য বিষফোড়া হয়ে দাঁড়াতে পারে বলেও আশঙ্কা করা হচ্ছে।
এ ছাড়া দলগতভাবে বিএনপি নির্বাচনে না গেলেও দলটির নেতা-কর্মীদের বড় একটি অংশ স্বতন্ত্র ও বিভিন্ন জোটের ব্যানারে এবারের নির্বাচনে অংশ নিচ্ছে। নিবন্ধন বাতিল হওয়া জামায়াতে ইসলামীর প্রার্থীরাও আছেন স্বতন্ত্র প্রার্থীর দৌড়ে। এবার ৩০০ আসনের বিপরীতে ২৯টি রাজনৈতিক দল থেকে মনোনয়নপত্র জমা দিয়েছেন ১৯৬৪ জন। স্বতন্ত্র প্রার্থী হিসেবে ভোটযুদ্ধে আছেন ৭৪৭ জন। আর বড় সংখ্যক স্বতন্ত্র প্রার্থী জয়ী হয়ে ফিরলে পাল্টে যেতে পারে হিসাব-নিকাশ।
সাবেক আইনমন্ত্রী ব্যারিস্টার শফিক আহমেদ বলেন, বিজয়ী স্বতন্ত্র প্রার্থীর সংখ্যা যদি ১৫১ জনের বেশি হয়ে যায়, তবে তারা জোট করে সরকারও গঠন করতে পারবেন। একইভাবে বিরোধী দলের আসনেও বসতে পারবেন। অন্যদিকে আওয়ামী লীগের শরিক জাতীয় সমাজতান্ত্রিক দল- জাসদ ৯১ আসনে প্রার্থী দিয়েছে। ইসলামিক জোটের প্রধান দল বাংলাদেশ সুপ্রিম পার্টি-বিএসপি ৮২ জন প্রার্থী দিয়েছে। সর্বাধিক আলোচনায় থাকা তৃণমূল বিএনপি ৩০০ আসনে প্রার্থী দেওয়ার ঘোষণা দিলেও শেষ পর্যন্ত দলটির হয়ে ভোটযুদ্ধে লড়ছেন ১৫১ জন। সোনালী আঁশ মার্কা নিয়ে নির্বাচন করবে বিএনপির প্রয়াত নেতা ব্যারিস্টার নাজমুল হুদার প্রতিষ্ঠিত দলটি। তবে আরও কিছু দল তৃণমূল বিএনপির নেতৃত্বে জোটে যুক্ত হতে পারে বলে আভাস পাওয়া গেছে। ইসিতে নতুন নিবন্ধন পেয়ে আলোচনায় আসা বাংলাদেশ জাতীয়তাবাদী আন্দোলন-বিএনএম সব আসনে প্রার্থী দেওয়ার ঘোষণা দিলেও শেষ পর্যন্ত ৪৯ জন লড়ছেন দলটির হয়ে। তবে তৃতীয় সর্বোচ্চ ২১৮ আসনে প্রার্থী দিয়েছে জাকের পার্টি।
সংশ্লিষ্টরা বলছেন, নির্বাচনের আগমুহূর্তে ছোট ছোট দল মিলে একাধিক জোট হতে পারে। হতে পারে স্বতন্ত্র প্রার্থীদের জোটও। আর প্রার্থিতা প্রত্যাহার না হলে বিরোধী দলের আসনে স্বতন্ত্র প্রার্থীরাও জায়গা করে নিতে পারে। সংবিধান বিশেষজ্ঞরা বলছেন, সংবিধান অনুযায়ী সরকার গঠন করতে হলে সংখ্যাগরিষ্ঠতা থাকতে হবে। যে দল রাষ্ট্রপতির কাছে সংখ্যাগরিষ্ঠ বলে প্রতীয়মান হবে, সেই দলের নেতাকে উনি প্রধানমন্ত্রী হিসেবে নিয়োগ দেবেন। আর প্রথা বা রেওয়াজ অনুযায়ী দ্বিতীয় সংখ্যাগরিষ্ঠ দল হয় বিরোধী দল। এ জন্য তাদের কতটি আসন থাকতে হবে, এমন কোনো বিধান নেই। যে কোনো দল বা জোট দ্বিতীয় সংখ্যাগরিষ্ঠ হলে তারা এই সুযোগটি পাবে। জোটটি নির্বাচনের পরও হতে পারে।