নির্বাচন ইস্যুতে ঢাকায় আসছে মার্কিন ও ইউরোপীয় টিম
৯ জুলাই আসবে ইইউর নির্বাচনসংক্রান্ত আগাম অনুসন্ধানী দল *১১ জুলাই আসবে মার্কিন প্রতিনিধিদল *সুষ্ঠু ও অংশগ্রহণমূলক নির্বাচনের জন্য সংলাপের পরামর্শ
দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনকে কেন্দ্র করে বিদেশি বিশেষ করে যুক্তরাষ্ট্র ও ইউরোপীয় ইউনিয়নসহ (ইইউ) পশ্চিমা দেশগুলো সরব হয়ে উঠেছে। তারা চায়, আসন্ন জাতীয় সংসদ নির্বাচন প্রকৃতপক্ষে অবাধ, সুষ্ঠু ও অংশগ্রহণমূলক হোক। এজন্য একের পর এক প্রতিনিধিদল ও মিশন ঢাকা সফরে আসছে। পাশাপাশি ঢাকাস্থ বিদেশি মিশনগুলো তাদের দেশের নীতি-নির্দেশনা মেনে কাজ করছে। পশ্চিমা রাষ্ট্রদূতরা নিজেদের মধ্যে আলোচনায় রাজনৈতিক দলগুলোর মধ্যে নির্বাচন ইস্যুতে সংলাপ ও সমঝোতার ওপর জোর দিচ্ছে
আগামী রবিবার ঢাকায় আসছে ইইউর নির্বাচনি অনুসন্ধান মিশন। গত দুই নির্বাচনে পর্যবেক্ষক পাঠায়নি ইইউ। এবারের নির্বাচনে পর্যবেক্ষক পাঠাবে কি না সে বিষয়ে সিদ্ধান্ত নিতে ইইউ এই অনুসন্ধানী মিশন পাঠাচ্ছে। দুই সপ্তাহের এই সফরে তারা অংশগ্রহণমূলক নির্বাচনের পরিবেশ আছে কি না, তা যাচাই করবে। মিশনের সদস্যরা নির্বাচনসংশ্লিষ্ট ব্যক্তিদের সঙ্গে বৈঠক করবেন। এর মধ্যে রয়েছে : নির্বাচন কমিশন, প্রধান রাজনৈতিক দল, নির্বাচন পর্যবেক্ষক, সুশীল সমাজ ও গণমাধ্যম প্রতিনিধি। তাদের সঙ্গে বৈঠকের পর মিশন ইইউর সদর দপ্তরে প্রতিবেদন ও সুপারিশ জমা দেবে।
জানা যায়, ইইউ নির্বাচন পর্যবেক্ষণের ক্ষেত্রে কিছু নীতিমালা অনুসরণ করে। সাধারণত নির্বাচন অংশগ্রহণমূলক না হলে, নির্বাচনের সুষ্ঠু পরিবেশ না থাকলে তারা নির্বাচন পর্যবেক্ষণে প্রতিনিধিদল পাঠায় না। ইইউ সদর দপ্তর এ বছর নির্বাচন পর্যবেক্ষণের সম্ভাব্য তালিকায় বাংলাদেশকে রেখেছে। রাজনৈতিক দলগুলো ঐকমত্যে পৌঁছতে না পারায় হতাশা প্রকাশ করে ২০১৪ সালের ৫ জানুয়ারির নির্বাচনে পর্যবেক্ষক পাঠায়নি যুক্তরাষ্ট্র ও ইইউ। ২০১৮ সালের ৩০ ডিসেম্বরের নির্বাচনেও ইইউ ও ইউরোপীয় পার্লামেন্ট পর্যবেক্ষক পাঠায়নি। যদিও তখন বাজেট স্বল্পতার কথা বলা হয়েছিল।
মার্কিন প্রতিনিধিদল আসছে মঙ্গলবার
যুক্তরাষ্ট্রের পররাষ্ট্র দপ্তরের বেসামরিক জনগণের নিরাপত্তা, গণতন্ত্র ও মানবাধিকার বিষয়ক আন্ডার সেক্রেটারি উজরা জেয়ার নেতৃত্বে একটি প্রতিনিধিদল আগামী মঙ্গলবার ঢাকায় আসছে। প্রতিনিধিদলে মার্কিন পররাষ্ট্র দপ্তরের দক্ষিণ ও মধ্য এশিয়াবিষয়ক সহকারী মন্ত্রী ডোনাল্ড লু-ও থাকবেন। চার দিনের সফরে এই প্রতিনিধিদল আসন্ন সংসদ নির্বাচন, মানবাধিকার, রোহিঙ্গা, শ্রম অধিকার, বাণিজ্য বিষয়ে সরকারের সঙ্গে আলোচনা করবে।
সূত্র জানায়, এই সফরে বাংলাদেশে অবাধ ও সুষ্ঠু নির্বাচনের ব্যাপারে বাইডেন প্রশাসনের প্রত্যাশা পুনর্ব্যক্ত করা হবে। এ ছাড়া যুক্তরাষ্ট্রের নতুন ভিসানীতি ঘোষণার পর দেশের রাজনৈতিক পরিবেশের অগ্রগতি এবং আগামী নির্বাচন সামনে রেখে রাজনৈতিক দল ও কর্তৃপক্ষের মনোভাব জানার চেষ্টা করবে তারা। এদিকে চলতি মাসের শেষে মার্কিন পররাষ্ট্র দপ্তরের অর্থনৈতিক পরিবেশ, জ্বালানি বিষয়ক আন্ডার সেক্রেটারি হোসে ফার্নান্দেজের নেতৃত্বে একটি প্রতিনিধিদল বাংলাদেশ সফরে আসবে।
মার্কিন প্রতিনিধিদলের সঙ্গে নির্বাচন নিয়ে আলোচনা হতে পারে: পররাষ্ট্র সচিব
মার্কিন আন্ডার সেক্রেটারি উজরা জেয়ার নেতৃত্বাধীন প্রতিনিধিদলের ঢাকা সফরে নির্বাচন নিয়ে আলোচনা হতে পারে বলে জানিয়েছেন পররাষ্ট্র সচিব মাসুদ বিন মোমেন। গতকাল বৃহস্পতিবার এক সংবাদ সম্মেলনে তিনি বলেন, নির্বাচন নিয়ে আলোচনা হতে পারে এবং আমি এটি বাদ দিচ্ছি না। কিন্তু এটিকে নির্বাচনকেন্দ্রিক সফর ভাবাও ঠিক হবে না। তিনি বলেন, মার্কিন প্রতিনিধিদল শুধু নির্বাচন নিয়েই কথা বলতে আসছে—এ ধরনের তথ্য আমার কাছে নেই। এটি আমাদের মধ্যে যে মেকানিজমগুলো আছে সেটির একটি ধারাবাহিকতা। অনেক ইস্যু নিয়ে আলোচনা হবে এবং তার মধ্যে নির্বাচন আসতে পারে।
পশ্চিমা রাষ্ট্রদূতদের তৎপরতা
ইইউ, যুক্তরাষ্ট্রসহ পশ্চিমা রাষ্ট্রদূতরা ঢাকায় নির্বাচন ইস্যুতে বেশ তত্পর। বুধবার মার্কিন রাষ্ট্রদূত পিটার হাস প্রধানমন্ত্রীর অর্থনৈতিক বিষয়ক উপদেষ্টা ড. মসিউর রহমানের সঙ্গে বেশ কিছুক্ষণ বৈঠক করেন। এতে নির্বাচন ও সমসাময়িক বিভিন্ন ইস্যুতে আলোচনা হয় বলে জানা যায়। পিটার হাস প্রধানমন্ত্রীর মুখ্যসচিবের সঙ্গে সাক্ষাত করেন। অন্যদিকে ইইউর রাষ্ট্রদূত চার্লস হোয়াইটলি একই দিনে ১০-১২ জন পশ্চিমা রাষ্ট্রদূতকে নিয়ে নিজ বাসায় আলোচনা করেন। এতে প্রকৃত অর্থে অবাধ, সুষ্ঠু নির্বাচন, মানবাধিকার ইস্যু, রাজনৈতিক দলগুলোর মধ্যে সংলাপ ও সমঝোতা নিয়ে তাদের অভিন্ন নীতি ও অবস্থান তুলে ধরা হয়। আসন্ন নির্বাচন ইস্যুতে প্রধান দলগুলোর মধ্যে সমঝোতার ওপর গুরুত্বারোপ করা হয়। সেজন্য বিবদমান পক্ষগুলোর মধ্যে একটি কার্যকর সংলাপ সম্ভব কি না, তা খতিয়ে দেখতে বলা হয়। কূটনীতিকরা বিভিন্ন দলের নেতাদের সঙ্গে দফায় দফায় বৈঠক করছেন। এসব বৈঠক নিয়ে সেখানে আলোচনা হয় বলে সূত্র জানায়।