Bangladesh

২৩০ মেগাওয়াট থেকে ২৫ মেগাওয়াট: কাপ্তাই জলবিদ্যুৎ কেন্দ্রের জলবায়ুর ভাগ্যবরণ

তথ্যচিত্র: টিবিএস

বর্ষাকালে জলবিদ্যুৎকেন্দ্রের জলাধার ভরে উঠে এ সময়েই হওয়ার কথা- সর্বোচ্চ উৎপাদন। ফলে  সক্ষমতার সর্বোচ্চ ৯৫ শতাংশ পর্যন্ত কাজে লাগানো সম্ভব হয়। কিন্তু, বাংলাদেশের একমাত্র জলবিদ্যুৎ প্রকল্পের ক্ষেত্রে তা হচ্ছে না।

অন্যান্য জ্বালানি-ভিত্তিক বিদ্যুৎকেন্দ্রের উৎপাদন ব্যাহত হওয়ায় – দেশে যখন প্রতিনিয়ত লোডশেডিং হচ্ছে, তারমধ্যেই বৃষ্টির মওসুম সত্ত্বেও – ২৩০ মেগাওয়াট সক্ষমতার কর্ণফুলী জলবিদ্যুৎকেন্দ্র উৎপাদন বাড়াতে ব্যর্থ হচ্ছে।   

বাংলাদেশ বিদ্যুৎ উন্নয়ন বোর্ডের তথ্যে বিদ্যুৎকেন্দ্রটি ১৩ থেকে ২৬ শতাংশ সক্ষমতায় চলছে বলা হলেও – কেন্দ্রের কর্মকর্তারা বলছেন, অনিয়মিত বৃষ্টিপাত ও মান্ধাতার আমলের যন্ত্রপাতির কারণে এর সক্ষমতা দিন দিন কমে আসছে।

কর্মকর্তারা জানান, চলতি বছরের মার্চ থেকে এপ্রিল (শুস্ক মওসুমে) বিদ্যুৎ উৎপাদন ২৫ মেগাওয়াটে নেমে আসে।  তবে চলতি মাসে ৬০ থেকে ৭০ মেগাওয়াট বিদ্যুৎ উৎপাদন করা যাচ্ছে।

বিদ্যুৎকেন্দ্রের কন্ট্রোল রুমের তথ্যানুসারে, জলাধারে (কাপ্তাই লেকে) পানির উচ্চতা নিম্ন থাকায় মার্চ থেকে মধ্য-জুন পর্যন্ত বিদ্যুৎকেন্দ্রটির মাত্র একটি চালু ছিল। তাও ভাটার সময় বন্ধ রাখতে হয়েছে। তবে পানির প্রবাহ বাড়ায় গত ১৭ জুন থেকে একটি ইউনিট সবসময় সচল রাখতে পারছে কর্তৃপক্ষ। গত ১ জুলাই থেকে আরও দুটি ইউনিট পিক আওয়ারে (সন্ধ্যা ৬টা থেকে রাত ১০টা) চালু রাখা যাচ্ছে।

কর্ণফুলী জলবিদ্যুৎকেন্দ্রের ব্যবস্থাপক প্রকৌশলী এটিএম আবদুজ্জাহের দ্য বিজনেস স্ট্যান্ডার্ডকে বলেন, “গত বছর দেশজুড়ে বিদ্যুৎ সংকটের সময় সরকারি নির্দেশনায় তুলনামূলক ভালো ‍উৎপাদন হয়। এরপর বৃষ্টিপাত অনেকটাই কমেছে। আমাদের সকল ইউনিটই চালুর জন্য প্রস্তুত। কিন্তু, পানির সংকটের কারণে টানা চার মাস ধরে একটির বেশি ইউনিট চালু রাখা সম্ভব হয়নি। মাঝেমধ্যে সেটাও বন্ধ রাখতে হয়েছে … প্রতিবছরই বৃষ্টিপাত কমে আসছে।”

বাঁধে পানি প্রবাহ বাড়লে, বিদ্যুৎকেন্দ্রটির ২০০ মেগাওয়াট পর্যন্ত বিদ্যুৎ উৎপাদনের রেকর্ড রয়েছে বলে কন্ট্রোল রুমের তথ্যসূত্রে জানা গেছে।

চট্টগ্রাম শহর থেকে ৫০ কিলোমিটার দূরে, রাঙামাটির কাপ্তাই উপজেলায় বাধ নির্মাণের মাধ্যমে কৃত্রিম হ্রদ সৃষ্টি করা হয় ৬০ বছর আগে। কিন্তু, তার ফলে ৬৫৫ বর্গ কিলোমিটার এলাকা প্লাবিত হয়। বাস্তুচ্যুত হয় প্রায় এক লাখ মানুষ।

৪,২৫০ বর্গমাইল আয়তনের ক্যাচমেন্ট এরিয়া নিয়ে গড়ে তোলা এই হ্রদই বিদ্যুৎকেন্দ্রের শক্তি উৎপাদনের জলাধার হিসেবে কাজ করে। বৃষ্টির পাশাপাশি লেকের উপরিভাগে অবস্থিত ভারতের লুসাই পাহাড়ের ঢল ও সেখানে বৃষ্টিপাত হলেও লেকে পানি প্রবাহিত হয়।

জলবায়ু বিশেষজ্ঞ ও বিদ্যুৎকেন্দ্রের কর্মকর্তারা বলছেন, জলবায়ু পরিবর্তনের প্রভাবেই বৃষ্টিপাত কম হচ্ছে। অনিয়মিত বৃষ্টিপাতের কারণে কাপ্তাই লেকে পানির প্রবাহ অনেকটাই হ্রাস পেয়েছে।

বিদ্যুৎকেন্দ্রটির কর্তৃপক্ষ ও আবহাওয়া অধিদপ্তরের তথ্যমতে, ১৯৮৮ সালে বিদ্যুৎকেন্দ্রের এলাকায় বৃষ্টিপাত হয়েছিল ২,৭০৮.২৫ মিলিমিটার। এতে জলাধারে প্রবাহিত হয়েছিল, এক কোটি ৬৬ লাখ একর ফুটের বেশি পানি। ফলে বিদ্যুৎ উৎপাদন হয়েছিল ১০০ কোটি ২০ লাখ ইউনিট।

কিন্তু, ২০২২ সালে বৃষ্টিপাত ২,১২৫ মিলিমিটারের নিচে নেমে আসে। পানি প্রবাহ কমে দাঁড়ায় ৭৫ লাখ ৯৮ হাজার একর ফুটে। এতে বিদ্যুৎ উৎপাদন কমে দাঁড়ায় প্রায় ৭৬ কোটি ৬০ লাখ ইউনিটে।  

পানি সম্পদ ও জলবায়ু পরিবর্তন বিশেষজ্ঞ ড. আইনুন নিশাত টিবিএসকে বলেন, “জলবায়ু পরিবর্তনের কারণে পৃথিবীর কোন কোন অঞ্চলে বৃষ্টিপাত কমছে, কোথাওবা তা বাড়তে দেখা যাচ্ছে।  আমাদের দেশে বৃষ্টিপাতের সময়কালও পরিবর্তন হয়েছে। পলি জমে কাপ্তাই লেকে পানির ধারণ ক্ষমতাও কমেছে। যদিও সেটা নিয়ে কোন স্টাডি নেই। লেকে গভীরতা বাড়ানো যেতে পারে। পুরনো প্রযুক্তি পরিবর্তন করেও বিদ্যুৎকেন্দ্রটির সক্ষমতা কিছুটা বাড়ানো সম্ভব।”

পুরোনো যন্ত্রপাতি

১৯০৬ সালে প্রথম কর্ণফুলী জলবিদ্যুৎকেন্দ্র স্থাপনের পরিকল্পনা করা হয়। ১৯২৩ সালে একটি সমীক্ষা করা হয়। আর ১৯৪৬ সালে বর্তমান বাঁধের ৬৫ কিলোমিটার উজানে বরকল এলাকায় বিদ্যুৎকেন্দ্রটি নির্মাণের প্রস্তাব করা হয়।

১৯৫৭ সালে যুক্তরাষ্ট্রের একটি নির্মাণ কোম্পানি উটাহ ইন্টারন্যাশনাল ইনকর্পোরেশন, ঠিকাদার হিসেবে প্রকল্পটির নির্মাণকাজ শুরু করে। প্রতিষ্ঠার পর থেকে ২০২২ সাল পর্যন্ত ৩৯,৬০৬ মিলিয়ন ইউনিট বিদ্যুৎ উৎপাদন করেছে এই কেন্দ্রটি।

প্রথম দুটি ইউনিট ৪০ মেগাওয়াট সক্ষমতায় স্থাপন করা হলেও, সর্বোচ্চ ৪৬ মেগাওয়াট পর্যন্ত উৎপাদন করা যায়।  পরের তিনটি ইউনিটের প্রতিটি ৫০ মেগাওয়াট সক্ষমতার। কিন্তু, যান্ত্রিক ত্রুটির কারণে সক্ষমতার পুরোপুরি ব্যবহার করা যাচ্ছে না।

এরমধ্যেই তৃতীয় ইউনিটের উৎপাদন ৩৯ মেগাওয়াটে এবং চতুর্থ ও পঞ্চম ইউনিটের উৎপাদন ৩৫ মেগাওয়াটে নেমে এসেছে।

বিদ্যুৎকেন্দ্রটির প্রকৌশলীরা জানান, প্রতিটি টারবাইনের মেয়াদ ১০ বছর থাকে।  এরপর তা পুঙ্খানুপুঙ্খরূপে মেরামত (ওভারহল) করতে হয়। ২০২২ সালের ডিসেম্বরে ১ নম্বর ইউনিট, ২০২১ সালের ডিসেম্বরে ২ নম্বর ইউনিট ওভারহল করা হয়।  কারণে ইউনিট দুটির সক্ষমতা পুরোপুরি কাজে লাগানো যাবে।

এছাড়া, ৩ নম্বর ইউনিট ২০১২ সালের ডিসেম্বরে, ৪ নম্বরটি ২০১০ সানের জুনে এবং ৫ নম্বর ইউনিট ২০১১ সালের এপ্রিলে পুঙ্খানুপুঙ্খরূপে মেরামত করা হয়েছিল। এ তিন ইউনিটের মেয়াদ শেষ হয়েছে। এজন্য সক্ষমতা দিন দিন কমে আসছে।

বিদ্যুৎকেন্দ্রটির যান্ত্রিক শাখার তথ্যমতে, ৩ নম্বর ইউনিটের টারবাইনসহ কেন্দ্রের যন্ত্রপাতি পুরাতন হওয়ার ফলে চালুর সময়ে শক্তি সঞ্চয় করতে বাধাগ্রস্ত হয়। এছাড়া, ৪ ও ৫ নম্বর ইউনিটের জেনারেটর বসানোর স্থানে ফাটল ধরেছে। এজন্য ইউনিট দুটি বাধাহীন চালু রাখা যাচ্ছে না।

কর্মকর্তারা ইঙ্গিত দেন যে, মূলত আমলাতান্ত্রিক জটিলতার কারণেই সময়মতো মেরামত করা সম্ভব হয় না। তবে দরপত্র আহ্বান করেও যোগ্য ঠিকাদার না পেয়ে, অন্তত তিন বার দরপত্র প্রত্যাহার করতে হয়েছে বাংলাদেশ বিদ্যুৎ উন্নয়ন বোর্ড (বিপিডিবি)-কে।

প্রকৌশলী এটিএম আবদুজ্জাহের জানান, বিদ্যুৎকেন্দ্রের ৩ নম্বর ইউনিট সংস্কারের পর এক দশক বছর পার হয়েছে। খুচরা যন্ত্রাংশ দিয়ে এটি আরো দুই বছর চালানো সম্ভব। ৪ ও ৫ নম্বর ইউনিট সংস্কারের জন্য গত চার বছরে তিনবার দরপত্র আহ্বান করেও ঠিকাদার নিয়োগ দেয়া যায়নি।

সক্ষমতা বৃদ্ধিও অনিশ্চিত

বাংলাদেশ বিদ্যুৎ উন্নয়ন বোর্ডের (বিপিডিবি) তথ্যমতে, দেশের ডিজেল-চালিত কেন্দ্রগুলোয় প্রতি ইউনিট বিদ্যুতের উৎপাদন ব্যয় ২২ টাকা। এলএনজি গ্যাসে ১০ টাকা, বড়পুকুরিয়ার কয়লা বিদ্যুতে ৪ টাকা, আমদানিতে ৬ টাকা, সৌরবিদ্যুতে ১২ টাকা এবং ফার্নেস অয়েলে ১২ টাকা ব্যয় হয়– প্রতি ইউনিট উৎপাদনে। অথচ কাপ্তাই জলবিদ্যুৎকেন্দ্রের সবকটি ইউনিট চললে, প্রতি ইউনিট বিদ্যুৎ উৎপাদনে খরচ কমে হয় ৩০-৪০ পয়সা। শুধু একটি বা দুটি টারবাইন চললেও মাত্র ১ টাকারও কম ব্যয় হয়।

ব্যয় সাশ্রয়ীভাবে বিদ্যুৎ উৎপাদনের পরও জলবিদ্যুৎকেন্দ্রটির সক্ষমতা বৃদ্ধির ভবিষ্যৎ অনিশ্চিত।

২০০০ সালে, ৫০ মেগাওয়াটের আরো দুটি ইউনিট চালুর লক্ষ্যে সমীক্ষা করেছিল জাপান এক্সটার্নাল ট্রেড অরগানাইজেশন। কিন্তু, পাহাড়ের স্থানীয় সম্প্রদায়ের আপত্তির মুখে প্রকল্পটির বাস্তবায়ন বাতিল করা হয়।

আনুষ্ঠানিক নথিপত্রের তথ্যমতে, কাপ্তাই বাধ সৃষ্টির ফলে পাহাড়ের ২২ হাজার হেক্টর আবাদি জমি ও ১৮ হাজার বসতবাড়ি প্লাবিত হয়। এতে প্রায় ১ লাখ মানুষ বাস্তচ্যুত হয়েছিলেন, যাদের ৭০ ভাগ ছিলেন চাকমা সম্প্রদায়ের।

বাঁধটি নির্মাণের সময় বলা হয়েছিল, জলাধার পরিচালন কমিটি (আরওসি) কমিটির মাধ্যমে জলাধারের ব্যবস্থাপনা করা হবে। কমিটিতে স্থানীয় অধিবাসীদের প্রতিনিধিত্ব থাকার কথা ছিল। কিন্তু, এই কমিটি কখনোই কার্যকর করা হয়নি।

আগের বাস্তুচ্যুত হওয়ার ঘটনা এবং পাহাড়ের নতুন এলাকা প্লাবিত হওয়ার আশঙ্কা জানিয়ে বিদ্যুৎকেন্দ্রের বর্ধিতকরণের বিরুদ্ধে অবস্থান নিয়েছিলেন স্থানীয়রা। ফলে ৬ ও ৭ নম্বর ইউনিট আর নির্মিত হয়নি।

বিদ্যুৎকেন্দ্রের কর্মকর্তাদের মতে, আরো দুটি ইউনিট থাকলে, মাত্র তিন মাস সেগুলো চালু রাখা যেত। এরপর পানি সংকটে বছরের অধিকাংশ সময় সেগুলো বন্ধ রাখতে হতো।

এটিএম আবদুজ্জাহের বলেন, “পানি সংকট প্রকট। এ অবস্থায় আরো দুটি ইউনিট থাকলেও পানির সংকটে বন্ধ রাখতে হতো।”

লেকে পানি কমায় রাঙামাটির ছয়টি উপজেলার নৌ-যোগাযোগে ব্যাপক প্রভাব পড়ে। এরমধ্যে জুরাছড়ি, বিলাইছড়ি ও বরকল ‍উপজেলায় যোগাযোগের একমাত্র মাধ্যম নৌপথ। লেকের পানির স্তর কমলে, লঞ্চ যাতায়াত বন্ধ থাকে। চলতে হয় ডিঙি নৌকায়। ফলে এ তিন উপজেলার ব্যবসা-বাণিজ্যের পণ্য পরিবহন ও যাতায়াত ব্যয় বেড়ে যায়। যার সার্বিক প্রভাব পড়ে জনজীবনে।

Show More

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Related Articles

Back to top button
Situs Toto
toto togel
slot toto
Toto slot gacor
bacan4d
totoslotgacor
bacan4d
bacan4d slot gacor
bacan4d login
Bacan4d
bacan4d
bacan4d bonus
Toto gacor
Toto gacor
slot gacor hari ini
bacan4d toto
bacan4d toto
bacan4d
bacan4d
bacan4d
bacan4d
bacan4d link alternatif
slot gacor bett 200
situs toto
SITUS TOTO
toto 4d
toto gacor
Slot Toto
Slot Toto
Slot Toto
Situs toto
Slot toto
Slot Dana
Slot Dana
Judi Bola
Judi Bola
Slot Gacor
toto slot
bacan4d toto
bacan4d akun demo slot
bacantogel
bacan4d
bacan4d
slot gacor
bacantoto
bacan4d
Bacan4d Login
slot demo
Bacan4d Toto
toto gacor
Slot Gacor
Live Draw
Live Draw Hk
toto slot
Bacan4d slot gacor
toto macau
toto slot
Toto Gacor
slot dana
bacan4d
bacan4d
bacan4d
bacan4d
Slot Dp Pulsa
Bacan4d Login
toto slot
Bacansports/a>
xx1toto
xx1toto
xx1toto
xx1toto
xx1toto
xx1toto
xx1toto
xx1toto
xx1toto
xx1toto
xx1toto
xx1toto
xx1toto
xx1toto
xx1toto
xx1toto
xx1toto
xx1toto
xx1toto
xx1toto
xx1toto
xx1toto
xx1toto
xx1toto
xx1toto
xx1toto
toto slot
bacansport
bacansport
bacansport
bacansport
bacansport
bacansport
xx1toto
xx1toto
xx1toto
xx1toto
slot gacor
xx1toto
xx1toto
xx1toto
xx1toto
xx1toto
xx1toto
xx1toto
xx1toto
xx1toto
xx1toto
xx1toto
xx1toto
xx1toto
xx1toto
xx1toto
xx1toto
xx1toto
toto slot
slot demo
toto slot gacor
bacansports Slot toto toto slot Slot toto Slot dana Slot toto slot maxwin slot maxwin toto slot toto slot slot dana
Toto Bola
xx1toto
xx1toto
xx1toto
xx1toto
xx1toto
xx1toto
xx1toto
xx1toto
xx1toto
xx1toto
xx1toto
xx1toto
xx1toto
xx1toto
xx1toto
xx1toto
xx1toto
xx1toto
xx1toto
xx1toto
xx1toto
xx1toto
xx1toto
xx1toto
xx1toto
xx1toto
bacan4d
ts77casino
situs toto
slot pulsa
bacansports
situs toto
slot toto
situs toto
slot toto
situs toto
toto slot
bacansport
bacansport
bacansports
slot toto
xx1toto
xx1toto
xx1toto
xx1toto
xx1toto
situs toto
situs toto
xx1toto
toto slot
xx1toto
xx1toto
slot qriss
Slot Toto
slot dana
situs toto
slot toto
slot dana
Situs Toto Slot Gacor
xx1toto
xx1toto
bacan4d
xx1toto
xx1toto
toto slot
situs toto slot gacor
toto gacor
toto gacor
toto gacor
toto gacor
bacan4d
bacan4d
bacan4d
bacan4d
bacan4d
situs toto
Slot Toto
Toto Slot
Slot Gacor
Slot Gacor
Slot Gacor
slot toto
Toto Slot
slot gacor
situs togel
Toto Slot
bacan4d
bacan4d