Bangladesh

পেট্রোবাংলার কাছে এনবিআরের পাওনা ১৩ হাজার কোটি টাকা

  • ১৮৫টি চালানের মাধ্যমে বিপুল পরিমাণ এলএনজি আমদানি করা হয়েছে। তাতে ১৩ হাজার ১৮৯ কোটি টাকার শুল্ক-কর বকেয়া পড়েছে।
  • ২০২১ সালের জুলাই থেকে ২০২৩ সালের ২৪ ডিসেম্বর পর্যন্ত শুল্ক-কর দেয়নি পেট্রোবাংলা।
  • জরুরি ভিত্তিতে বকেয়া পরিশোধে পেট্রোবাংলার চেয়ারম্যানকে গত রোববার চিঠি।

একটি প্রতিষ্ঠানের কাছেই জাতীয় রাজস্ব বোর্ডের (এনবিআর) বকেয়া শুল্ক-কর ১৩ হাজার কোটি টাকার বেশি। তরলীকৃত প্রাকৃতিক গ্যাস (এলএনজি) আমদানি করে বাংলাদেশ অয়েল, গ্যাস অ্যান্ড মিনারেল করপোরেশন বা পেট্রোবাংলা গত আড়াই বছরে এই বিপুল পরিমাণ শুল্ক-কর দেয়নি। এখন এই শুল্ক-কর পরিশোধের জন্য পেট্রোবাংলাকে চিঠি দিয়েছে চট্টগ্রাম কাস্টম হাউস।

এটি কোনো প্রতিষ্ঠানের কাছে সর্ববৃহৎ বকেয়া শুল্ক-কর পাওনার ঘটনা। এনবিআর সূত্রে এ তথ্য পাওয়া গেছে।

কাস্টমস আইন অনুযায়ী, কমিশনার বরাবর বিল অব এন্ট্রি দাখিল করে আমদানি করা পণ্যের শুল্কায়ন সম্পন্ন করতে হয়। আইন অনুযায়ী, পণ্যের ওপর শুল্ক-কর পরিশোধেরও বাধ্যবাধকতা আছে। কিন্তু পেট্রোবাংলা গত আড়াই বছরে এলএনজি আমদানির পর তাৎক্ষণিকভাবে বিল অব এন্ট্রি দাখিল এবং শুল্কায়ন না করেই তা নিয়ে গেছে। কারণ, এই আমদানি করা এলএনজি বিশেষ বৈশিষ্ট্যসম্পন্ন। গ্যাস পরিবহনকারী ফ্লোটিং স্ট্রাকচার রিগ্যাসিফিকেশন ইউনিট (এফএসআরইউ) থেকে সরাসরি পাইপলাইনের মাধ্যমে জাতীয় গ্রিডে যুক্ত হয়।

এলএনজি আমদানি করে জাতীয় গ্রিডে দিলেও শুল্ক-কর পরিশোধ করেনি পেট্রোবাংলা। এটিই যেকোনো প্রতিষ্ঠানের কাছে এনবিআরের সর্বোচ্চ পাওনা।

চট্টগ্রাম কাস্টম হাউস সূত্রে জানা যায়, ১৮৫টি চালানের মাধ্যমে বিপুল পরিমাণ এলএনজি আমদানি করা হয়েছে। তাতে সব মিলিয়ে ১৩ হাজার ১৮৯ কোটি টাকার শুল্ক-কর বকেয়া পড়েছে। বর্তমানে এলএনজি আমদানিতে সব মিলিয়ে শুল্ক-কর ভার ২২ শতাংশ। আমদানিকারককে ভ্যাট, অগ্রিম কর, আগাম ভ্যাট দিতে হয়।

অবিলম্বে ১৩ হাজার ১৮৯ কোটি টাকার বকেয়া শুল্ক-কর পরিশোধের জন্য গত রোববার পেট্রোবাংলা চেয়ারম্যানকে চিঠি দিয়েছে চট্টগ্রাম কাস্টম হাউসের কমিশনার ফাইজুর রহমান।

এ বিষয়ে ফাইজুর রহমান বলেন, ‘আমরা বকেয়া পরিশোধের জন্য তাদের চিঠি দিয়েছি। জাতীয় স্বার্থে অনেক সময় শুল্ক-কর বকেয়া রেখেই বিভিন্ন সময় চালান ছেড়ে দিতে হয়। পরে শুল্ক-করের যথাযথ আইনি প্রক্রিয়া মেনে দাবি করা হয়। এভাবে প্রতিষ্ঠানটির কাছে বিপুল পরিমাণ অর্থ বকেয়া পড়েছে।’ তিনি আরও বলেন, প্রধানমন্ত্রীর একটি অনুশাসন আছে, সরকারি যেকোনো কেনাকাটা ও প্রকল্পে শুল্ক-করের বরাদ্দ রেখেই পরিকল্পনা করা। এই অনুশাসন না মানা দুঃখজনক। বকেয়া এই শুল্ক-কর পেলে চট্টগ্রাম কাস্টমস হাউসের শুল্ক-কর আদায়ে ৩০ শতাংশের বেশি প্রবৃদ্ধি হবে।

চট্টগ্রাম কাস্টমস হাউস সূত্রে জানা গেছে, পাওনার দিক থেকে পেট্রোবাংলার কাছে সবচেয়ে বেশি কর বকেয়া রয়েছে। এর পরের স্থানে আছে বাংলাদেশ পেট্রোলিয়াম করপোরেশন (বিপিসি)। এই প্রতিষ্ঠানের কাছে চার হাজার কোটি টাকার বেশি বকেয়া আছে। এ ছাড়া অন্যান্য সরকারি-বেসরকারি প্রতিষ্ঠানের কাছে আরও কয়েক হাজার কোটি টাকা পাওনা আছে।

বকেয়া কর আদায়ে চট্টগ্রাম কাস্টম হাউস একাধিকবার পেট্রোবাংলা, বিপিসিসহ বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানকে চিঠি দিয়েছে। কিন্তু কাঙ্ক্ষিত হারে বকেয়া আদায় হচ্ছে না।

এ বিষয়ে পেট্রোবাংলার নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক এক কর্মকর্তা জানান, অর্থ মন্ত্রণালয়ের কাছ থেকে বরাদ্দ না পেলে এই বকেয়া পরিশোধ করা কঠিন। এত বিপুল পরিমাণ অর্থ নিজস্ব তহবিল থেকে দেওয়া এ মুহূর্তে সম্ভব নয়। আলোচনার মাধ্যমে পুরো বিষয় সমাধানের পথ খোঁজা উচিত। তিনি জানান, পেট্রোবাংলাও বেশ কয়েকটি প্রতিষ্ঠানের কাছ থেকে টাকা পায়।

কোন মাসে কত বকেয়া

২০২১ সালের জুলাই মাস থেকে ২৪ ডিসেম্বর পর্যন্ত পেট্রোবাংলার কাছে বকেয়া পাওনার হিসাব দিয়েছে চট্টগ্রাম কাস্টম হাউস। বিল অব এন্ট্রি এবং আমদানিকারকের স্থানীয় প্রতিনিধির সঙ্গে আলোচনা করে বকেয়া পাওনার হিসাব করা হয়েছে।

চট্টগ্রাম কাস্টম হাউসের মাসওয়ারি হিসাব থেকে দেখা যায়, ২০২২ সালের ডিসেম্বরে সর্বোচ্চ ১ হাজার ৮৫৫ কোটি টাকার শুল্ক-কর বকেয়া পড়েছে পেট্রোবাংলার কাছে। এ ছাড়া দ্বিতীয় সর্বোচ্চ বকেয়ার পরিমাণ ছিল গত জানুয়ারি মাসে। ওই মাসে ১ হাজার ২৪৫ কোটি টাকা বকেয়া ছিল। ২০২২ সালের জুন মাসে বকেয়ার পরিমাণ ছিল ১ হাজার ৩৮৩ কোটি টাকা। এভাবে প্রতি মাসেই বকেয়ার পরিমাণ শুধু বেড়েছে। শুল্ক-কর পরিশোধ না করেই জাহাজ থেকে সরাসরি পাইপের মাধ্যমে জাতীয় গ্রিডে এলএনজি সরবরাহ করেছে সরকারি সংস্থাটি।

এ দিকে গতকাল মঙ্গলবার রাজস্ব আদায় নিয়ে সব কমিশনারের সঙ্গে বৈঠক করেছেন এনবিআর চেয়ারম্যান আবু হেনা মো. রহমাতুল মুনিম। সেখানে শুল্ক-কর আদায়ের লক্ষ্য অর্জনে বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানের কাছে পাওনা বকেয়া কর আদায়ের নির্দেশনা দেওয়া হয়।

Show More

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Related Articles

Back to top button