নির্বাচন সুষ্ঠু না হলে বিশ্ব থেকে বাংলাদেশ বিচ্ছিন্ন হয়ে যেতে পারে : ইসি আনিছুর
গণপরিবহন ও প্রাইভেট চলবে : জননিরাপত্তা সচিব
দ্বাদশ নির্বাচন সুষ্ঠু না হলে আমরা বিশ্ব থেকে বাংলাদেশ বিচ্ছিন্ন হয়ে হতে পারে বলে জানিয়েছেন নির্বাচন কমিশনার (ইসি) আনিছুর রহমান। গতকাল মঙ্গলবার আগারগাঁওয়ের বঙ্গবন্ধু আন্তর্জাতিক সম্মেলন কেন্দ্রে এক্সিকিউটিভ ম্যাজিস্ট্রেটদের প্রশিক্ষণ কর্মসূচিতে তিনি এ কথা বলেন।
নির্বাচন কমিশনার বলেন, উদ্দেশ্য একটাই অবাধ, সুষ্ঠু ও নিরপেক্ষ নির্বাচন আয়োজন করা। আমরা যদি অবাধ, সুষ্ঠু, গ্রহণযোগ্য নির্বাচন না করতে পারি, কোনো কারণে যদি আমরা ব্যর্থ হই, তাহলে আমাদের রাষ্ট্র নিজেই ব্যর্থ রাষ্ট্র হয়ে যাবে। আমরা সেটা চাইব না। কারণ আমরা সমগ্র বিশ্ব থেকে বিচ্ছিন্ন হয়ে যাব। কোনো মতেই এই নির্বাচন প্রশ্নবিদ্ধ হতে দেওয়া যাবে না। যখন যেখানে যেই পদক্ষেপ গ্রহণ করা দরকার, সময়ক্ষেপণ না করে তাৎক্ষণিকভাবে সেখানে পদক্ষেপ নিতে হবে। মাঠে প্রায় ৩ হাজার এক্সিকিউটিভ ও জুডিশিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট কাজ করবেন। আনিছুর রহমান বলেন, আমরা তিনটি শব্দের কথা বলে থাকি এগুলো হলো অবাধ, সুষ্ঠু ও গ্রহণযোগ্য এর কোনো বিকল্প নেই। এই নির্বাচন শুধু আমাদের দৃষ্টিতে ১৮ কোটি মানুষ দেখছে তা নয়, আমাদের দেখছে সমগ্র বিশ্ব। আমরা কীভাবে নির্বাচন করব, কতটুকু গ্রহণযোগ্য হবে, এটা তারা মূল্যায়ন করবে। এবার সর্বোচ্চসংখ্যক বিদেশি পর্যবেক্ষক থাকবেন। তারা কে কোথায় যাবেন, এটা তাদের উইলনেস, আমরা কাউকেই ইম্পোজ করব না যে আপনারা এখানে বা ওখানে যান। তাঁরাই ঠিক করবেন কোথায় যাবেন, আমরা তাঁদের যাতায়াত ও নিরাপত্তার ব্যবস্থা করব।
নির্বাচন কমিশন (ইসি) সচিব মো. জাহাংগীর আলম বলেন, বিদেশিরা প্রথমে অংশগ্রহণমূলক নির্বাচনের কথা বললেও এখন নির্বাচন ফ্রি, ফেয়ার অ্যান্ড পিসফুল (অবাধ, সুষ্ঠু ও শান্তিপূর্ণ) হলেই ক্রেডিবল বা বিশ্বাসযোগ্য বলে স্বীকৃতি দেবে। ইসি সচিব বলেন, প্রত্যেকের প্রতি বার্তা একটাই, সারা বিশ্ব আমাদের এই নির্বাচনের দিকে তাকিয়ে আছে। তারা প্রথমে অংশগ্রহণমূলক বললেও পরবর্তী সময়ে তিনটি শব্দের প্রতি জোর দিচ্ছেন ফ্রি, ফেয়ার অ্যান্ড পিসফুল। যদি আমরা এই নির্বাচনটাকে ফ্রি, ফেয়ার অ্যান্ড পিসফুল করতে পারি। তাহলে তারা ক্রেডিবল বলে স্বীকৃতি দেবে। জাহাংগীর আলম বলেন, দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচন অবাধ, সুষ্ঠু ও শান্তিপূর্ণভাবে আয়োজন করার লক্ষ্যে নির্বাচন কমিশনারেরা জেলা পর্যায়ে গিয়ে প্রত্যেক প্রার্থী বা তাঁর বৈধ প্রতিনিধি, আইনশৃঙ্খলা রক্ষা থেকে শুরু করে নির্বাচনের সঙ্গে যারা সম্পর্কিত—থানার ওসি থেকে শুরু করে সবার সঙ্গে সরাসরি মতবিনিময় করেছেন। পরবর্তী সময়ে বিভাগীয় পর্যায়ে প্রধান নির্বাচন কমিশনারও ওসি ও ইউএনও থেকে শুরু করে সবার সঙ্গে মতবিনিময় করেছেন।
জননিরাপত্তা বিভাগের সিনিয়র সচিব মোস্তাফিজুর রহমান বলেছেন, ভোটের দিন নানাধরনের গুজবের বিষয়ে সতর্ক থাকতে নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেটদের নির্দেশ দেওয়া হয়েছে। সচিব বলেন, কিছু গুজব আসবে। গুজব আসবে আমরা অনুমান করতে পারছি, আমাদের কাছে সেরকম তথ্যও আছে। এই গুজবগুলো দুই ধরনের আসবে। একটা হচ্ছে ইন্সট্যান্ট ফোন আসবে আপনার কাছে। ওই এলাকায় মার্ডার হয়েছে, পাঁচ জন আটকে রাখছে- এদিকে মুভ করেন। জেলা প্রশাসনকে বার্তা দেওয়া হবে যেন সিঙ্গেল চ্যানেলে নির্বাহী হাকিমদের সঙ্গে যোগ হবে। বাইরের গুজবের খবর এলে আপনি ক্রস চেক না করে কোনও সিদ্ধান্ত নেবেন না। প্রতিটি জেলায়, উপজেলায় কোর কমিটি রয়েছে। বাহিনী প্রধানদের নিয়ে কেন্দ্রীয় ও জেলা পর্যায়ে সমন্বয় সেল থাকবে। যাই ঘটুক, তাদের কাছে তথ্য থাকবে। ক্রস চেক করে অ্যাকশনে যাবেন।
তিনি বলেন, আরেকটা গুজব হচ্ছে সাইবারভিত্তিক গুজব আসবে। এসব গুজব এলে জেলা প্রশাসক জানেন, কোথায় জানাতে হবে, লিংকটা কার কাছে পাঠাতে হবে। এটা তাদের ওয়েল সার্কুলেট করেছি, আবারও করবো। কন্ট্রোল রুম বা আইন শৃঙ্খলা সমন্বয় সেলে জানাবেন। এবিষয়ে তথ্য অধিদফতর (পিআইডি) ও ন্যাশনাল টেলিকমিউনিকেশন মনিটরিং সেন্টারের (এনটিএমসি) সেল রয়েছে। সার্বক্ষণিক ২৪/৭ টিমগুলো এখন থেকে ১০ জানুয়ারি পর্যন্ত কাজ করবে। জেলা প্রশান সেল বা আমাদের কাছে পাঠিয়ে দিলে সেগুলোর বিষয়ে ব্যবস্থা নিতে পারবো। সোশ্যাল মিডিয়ার গুজবগুলো অনেক সময় ভয়ঙ্কর আকার ধারণ করে। যদি আমরা অঙ্কুরেই নষ্ট করতে না পারি। কিছু অপরিচিত ফোন এসে আপনাদের বিভ্রান্ত করবে এবং এমনভাবে বলবে তার কেনো ইনটেনশন আছে। সিনিয়র সচিব বলেন, তবে পূর্বের ন্যায় এবার মোটরসাইকেল ও দূরপাল্লার বাস চলাচল বন্ধ থাকবে। শিগগিরই এই বিষয়ে নির্দেশনা জারি করবে সংশ্লিষ্ট মন্ত্রণালয়। আগামী ৭ জানুয়ারির নির্বাচনকে সামনে রেখে ২৯ ডিসেম্বর থেকে আইন শৃঙ্খলাবাহিনী মাঠে নেমেছে। ৩ জানুয়ারি থেকে নামছে সশস্ত্রবাহিনী। মোবাইল ও স্ট্রাইকিং ফোর্সের সঙ্গে নির্বাহী হাকিম নিয়োজিত থকবে।
ইসি সচিব মো. জাহাংগীর আলমের সভাপতিত্বে অনুষ্ঠানে জননিরাপত্তা বিভাগের সিনিয়র সচিব মো. মোস্তাফিজুর রহমান, অর্থ বিভাগের সচিব ড. মো. খায়েরুজ্জামান মজুমদার, মন্ত্রিপরিষদের সমন্বয় ও সংস্কার সচিব মো. মাহমুদুল হোসাইন খান ও ইসির ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তারা উপস্থিত ছিলেন।