থেমে নেই ভোটের সংঘাত ছড়ানো হচ্ছে টাকা
দীর্ঘ ১৮ দিনের আনুষ্ঠানিক প্রচার শেষে এখন সবার চোখ ভোটকেন্দ্রে। এই নির্বাচনের মাধ্যমে নতুন সংসদ গঠন হলেও দুই-তৃতীয়াংশ আসনে ভোটের মাঠের চিত্র একপেশে। সেসব আসনের প্রার্থীর জয়-পরাজয় অনেকটাই নিশ্চিত। বাকি একশর মতো আসনে আওয়ামী লীগেরই স্বতন্ত্র প্রার্থীরা জোরাল প্রতিদ্বন্দ্বিতা গড়ে তোলার আভাস দিচ্ছেন।
এসব আসনে একে অপরের বিরুদ্ধে হুমকি-ধমকি, হামলা-পাল্টা হামলা ও সহিংসতার ঘটনা চলছেই। এরই ধারাবাহিকতায় গতকাল বৃহস্পতিবার পিরোজপুরের মঠবাড়িয়া ও মুন্সীগঞ্জে প্রতিপক্ষের হামলায় নিহত হয়েছেন দু’জন। এসব কারণে কেন্দ্রে সাধারণ ভোটারের উপস্থিতি কমে যেতে পারে বলে ধারণা করা হচ্ছে। শেষ মুহূর্তে অনেক স্থানে টাকা ছড়ানোর অভিযোগও উঠেছে।
সরকারবিরোধী জোটের ভোট বর্জনের মধ্যে এবার কেন্দ্রে ভোটার উপস্থিতিকেই চ্যালেঞ্জ হিসেবে দেখছে সবাই। ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগের তরফ থেকে ভোটার উপস্থিতি বাড়াতে নেওয়া হয়েছে নানা কৌশল। জাতীয় ও আন্তর্জাতিক পর্যায়ে এই নির্বাচনের গ্রহণযোগ্যতা নিশ্চিত করতে ভোটার উপিস্থিতির ওপর জোর দিচ্ছেন নির্বাচন কমিশনের (ইসি) শীর্ষ কর্তারাও।
গতকাল ঢাকায় এক অনুষ্ঠানে বিদেশি কূটনীতিকদের মুখোমুখি হয়ে এই নিয়ে প্রশ্নের মুখে পড়েন প্রধান নির্বাচন কমিশনার (সিইসি) কাজী হাবিবুল আউয়াল। ভোটার উপস্থিতি বাড়াতে ইসি ও প্রশাসনের পক্ষ থেকে চাপ প্রয়োগের অভিযোগ বিষয়ে কূটনীতিকদের প্রশ্নের জবাবে সিইসি বলেন, চাপ নয়; ভোটারদের কেন্দ্রে আসতে বোঝানো হয়েছে।
বিশ্লেষকরা বলছেন, ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগের দুই-তৃতীয়াংশ আসনে জয়ী হওয়ার বিষয়টি এখন শুধুই আনুষ্ঠানিকতা। বাকি যেসব আসনে প্রতিদ্বন্দ্বিতা হচ্ছে, সেখানেও স্বতন্ত্র প্রার্থীরা নানামুখী চাপে রয়েছেন। অনেক স্থানে স্বতন্ত্র প্রার্থীরা বলছেন, আগের দুই সংসদ (২০১৪ ও ২০১৮) নির্বাচনের অভিজ্ঞতায় তারা ভোটকেন্দ্রে এজেন্টদের নিরাপত্তা নিয়ে শঙ্কিত। কারণ আওয়ামী লীগের প্রার্থী ও সমর্থকদের হুমকি-ধমকির কারণে কেউই এজেন্ট হতে রাজি হচ্ছেন না।
মুন্সীগঞ্জে নৌকার সমর্থককে গুলি করে হত্যা
মুন্সীগঞ্জ-৩ আসনে দুর্বৃত্তদের গুলিতে ডালিম সরকার (৩৫) নামে ক্ষমতাসীন দলের এক কর্মী হাসপাতালে মারা গেছেন। বুধবার রাত সাড়ে ১২টার দিকে সদর উপজেলার মোল্লাকান্দি ইউনিয়নের মুন্সীকান্দি গ্রামে এ হামলার ঘটনা ঘটে। প্রথমে তাঁকে মুন্সীগঞ্জ জেনারেল হাসপাতালে প্রাথমিক চিকিৎসা দিয়ে রাতেই আশঙ্কাজনক অবস্থায় ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে পাঠানো হয়। বৃহস্পতিবার সকালে তাঁর মৃত্যু হয়। এ ঘটনায় আহত সোহেল নামে নৌকার আরেক কর্মী হাসপাতালে চিকিৎসাধীন। ডালিম সরকার মুন্সীকান্দি গ্রামের নুর হোসেন সরকারের ছেলে। ঘটনার পরপর এলাকায় অতিরিক্ত পুলিশ মোতায়েন করা হয়েছে।
প্রত্যক্ষদর্শী দাবিদার নৌকার সমর্থক হাসিবুল ইসলাম বলেন, ঘটনার সময় তিনি ডালিমের সঙ্গে ছিলেন। ডালিম, সোহেলসহ তারা ১০-১২ জন মোল্লাবাড়ির পেছনে কাঁচা মাটির রাস্তায় বসে ছিলেন। সে সময় কাঁচি প্রতীকের সমর্থক ইউপি চেয়ারম্যান রিপন হোসেনের ভাই শিপন, সোহাগ, ইকরাম, পলাশ, রতনরা তাদের ওপর হামলা চালায়। ডালিমকে লক্ষ্য করে শটগান দিয়ে গুলি করে।
ডালিমের স্বজনরা বলছেন, মূলত পূর্ববিরোধের জের ধরেই নজরুল, উজির আলীদের নির্দেশে ডালিমকে হত্যা করা হয়েছে।
মোল্লাকান্দি ইউপির সাবেক চেয়ারম্যান মহাসিনা হক বলেন, নির্বাচনে প্রভাব বিস্তার করতে কয়েক দিন ধরে চেয়ারম্যান রিপন হোসেন ও আওয়ামী লীগ নেতা ফরহাদ খান তাদের লোক দিয়ে এলাকায় ঝামেলা তৈরি করছিলেন। বুধবার রাতে রিপনের ভাই শিপনরা একজনকে গুলি করে মেরে ফেলল। আমরা এই ঘটনার বিচার চাই।
এ বিষয়ে ইউপি চেয়ারম্যান রিপন হোসেন বলেন, মুন্সীকান্দি গ্রামের ডালিম সরকারের সঙ্গে আমার গ্রামের মানুষের বিরোধ দীর্ঘ দিনের। সেই বিরোধ নিয়ে প্রতিপক্ষরা এ ঘটনা ঘটিয়েছে। এর সঙ্গে তাঁর ছোট ভাই জড়িত নয়। তিনি বলেন, তারা স্বতন্ত্র প্রার্থীর কাঁচি মার্কার সমর্থক হওয়ায় নির্বাচনকেন্দ্রিক রাজনৈতিক উদ্দেশ্যমূলক তাঁর ছোট ভাইকে এ ঘটনার সঙ্গে জড়িত বলে মিথ্যা অভিযোগ তুলছে নৌকার সমর্থকরা।
মুন্সীগঞ্জের অতিরিক্ত পুলিশ সুপার থান্দার খায়রুল হাসান বলেন, ঘটনার সঙ্গে জড়িত এমন বেশ কয়েকজনের নাম তদন্তে উঠে এসেছে। তাদের গ্রেপ্তারে পুলিশ অভিযান চালাচ্ছে।
এই আসনে নৌকার প্রার্থী মৃণাল কান্তি দাস। প্রতীক বরাদ্দের পর থেকে আসনটিতে এ দুই পক্ষের মধ্যে হামলা, সংঘর্ষ, গুলি, প্রচার ক্যাম্প ভাঙচুরের ১৮টি ঘটনা ঘটেছে। এসব ঘটনায় উভয় পক্ষের বিরুদ্ধে মুন্সীগঞ্জে ৫টি ও গজারিয়ায় ৪টি মামলা হয়েছে।
মঠবাড়িয়ায় স্বতন্ত্র প্রার্থীর সমর্থককে কুপিয়ে হত্যা
পিরোজপুরের মঠবাড়িয়ায় জাহাঙ্গীর হোসেন পঞ্চায়েত (৫৫) নামে এক ব্যক্তির মৃত্যু ঘিরে পরস্পরবিরোধী বক্তব্য পাওয়া গেছে। গুরুতর জখম অবস্থায় গতকাল ভোরে ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে নেওয়ার পথে ওই ব্যক্তির মৃত্যু হয়।
পিরোজপুর-৩ (মঠবাড়িয়া) আসনের স্বতন্ত্র প্রার্থী শামীম শাহনেওয়াজ (কলার ছড়ি) দাবি করেছেন, জাহাঙ্গীর তাঁর সক্রিয় সমর্থক। নির্বাচনী প্রচারে যাওয়ার সময় তাকে পরিকল্পিতভাবে কুপিয়ে ও পিটিয়ে হত্যা করেছে স্বতন্ত্র প্রার্থী ডা. রুস্তম আলী ফরাজীর সমর্থকরা।
স্থানীয়রা জানান, ঘটনার দিন বিকেলে জাহাঙ্গীর স্থানীয় বাদুরা বাজারে কলার ছড়ি প্রতীকের নির্বাচনী কার্যালয়ে যাওয়ার পথে স্বতন্ত্র প্রার্থী ডা. রুস্তম ফরাজীর (ঈগল) সমর্থক একই গ্রামের সেরাজুল ফরাজী পূর্ববিরোধ ও নির্বাচনী প্রচারণার জের ধরে নিজ বাড়ির কাছে জাহাঙ্গীরকে কুপিয়ে গুরুতর জখম করে। জাহাঙ্গীর উপজেলার মিরুখালী ইউনিয়নের বাদুরা গ্রামের তোতাম্বর পঞ্চায়েতের ছেলে। তিনি স্থানীয় মিরুখালী বাদুরা ওয়ার্ড স্বেচ্ছাসেবক লীগ নেতা। হত্যাকাণ্ডে অভিযুক্ত বাদুরা গ্রামের বশীর ফরাজীর ছেলে সেরাজুল ফরাজী ডা. রুস্তম ফরাজীর সমর্থক।
জাহাঙ্গীরের স্ত্রী ভুলু বেগম অভিযোগ করেন, অজ্ঞান অবস্থায় দরখাস্তে সই নিছে পুলিশ। কাকে আসামি করা হয়েছে, তা তিনি জানেন না।
এদিকে জাহাঙ্গীরের মৃত্যুর খবর ছড়িয়ে পড়লে বিক্ষুব্ধ এলাকাবাসী অভিযুক্ত সেরাজুলের বাবা বশির ফরাজীর বাড়িতে ইটপাটকেল নিক্ষেপ ও ভাঙচুর চালায়। অভিযুক্ত সেরাজুলের বাড়ির সদস্যরা বাড়ি ছেড়ে পালিয়েছে। সহিংসতা এড়াতে ঘটনাস্থলে বিপুল সংখ্যক র্যাব, বিজিবি ও পুলিশ সদস্য অবস্থান করছে। পিরোজপুরের জেলা প্রশাসক মোহাম্মদ জাহেদুর রহমান ও পুলিশ সুপার মুহাম্মদ শরীফুল ইসলাম বৃহস্পতিবার দুপুরে ঘটনাস্থল পরিদর্শন করেছেন।
স্বতন্ত্র প্রার্থী ডা. রুস্তম আলী ফরাজীর নির্বাচন সমন্বয়কারী মিরুখালী ইউপি চেয়ারম্যান মো. আবু হানিফের মোবাইল ফোনে কয়েক দফা কল দিলেও বক্তব্য পাওয়া যায়নি। ‘নির্বাচনী কাজে ব্যস্ত; পরে কথা বলবেন’– এই বলে তিনি লাইন কেটে দেন।
এ ব্যাপারে ঈগল প্রতীকের নির্বাচনী কমিটির সদস্য সচিব উপজেলা আওয়ামী লীগ সভাপতি আজিজুল হক সেলিম মাতুব্বর বলেন, বিষয়টি জমি নিয়ে বিরোধ। নির্বাচনের সঙ্গে এ ঘটনার সম্পর্ক নেই।
পিরোজপুর জেলা পুলিশ সুপার মুহাম্মদ শরীফুল ইসলাম বলেন, হামলার ঘটনার পর আহত জাহাঙ্গীরের স্ত্রী ভুলু বেগম জমি নিয়ে বিরোধে প্রতিপক্ষের ৭ জনের বিরুদ্ধে একটি মামলা করেছেন।
বিভিন্ন স্থানে সহিংসতা চলছেই
নাটোরের সিংড়ায় গতকাল ঈগল প্রতীকের স্বতন্ত্র প্রার্থী শফিকুল ইসলামের এজেন্ট মহিদুল ইসলামকে হাতুড়ি দিয়ে পিটিয়ে আহত করার অভিযোগ উঠছে নৌকা মার্কার সমর্থকদের বিরুদ্ধে। শফিকুলের অভিযোগ, উপজেলার বলিয়াবাড়ি-চানপুর এলাকায় নৌকার প্রার্থী তথ্য ও যোগাযোগপ্রযুক্তি প্রতিমন্ত্রী জুনাইদ আহমেদ পলকের কর্মী গোলাম রাব্বানীর নেতৃত্বে সন্ত্রাসীরা তাঁকে পিটিয়ে আহত করে। তবে এ অভিযোগ অস্বীকার করেছেন নৌকার প্রার্থীর কর্মী অভিযুক্ত গোলাম রাব্বানী।
চট্টগ্রাম-১২ আসনে ঈগল প্রতীকের স্বতন্ত্র প্রার্থী ও হুইপ সামশুল হক চৌধুরীর পক্ষে প্রচার চালানোর সময় তাঁর দুই কর্মীকে ছুরিকাঘাত করা হয়েছে। গতকাল বিকেলে পটিয়ার হাবিলাসদ্বীপ ইউনিয়নের ৫ নম্বর ওয়ার্ডের গৌরগোবিন্দ আশ্রম এলাকায় এ ঘটনা ঘটে। বিক্রমজিৎ মিত্র ও রনি মিত্র নামে ওই দুই কর্মী বর্তমানে চট্টগ্রাম মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে চিকিৎসাধীন।
হাবিলাসদ্বীপ ইউনিয়ন আওয়ামী লীগ সভাপতি মৃদুল কান্তির দাবি, বিএনপির সন্ত্রাসী আরিফ ও সাইফুলের নেতৃত্বে ২০-৩০ জন বিক্রমজিৎ ও রনির ওপর হামলা চালায়।
চট্টগ্রাম-১ আসনে ঈগল মার্কার স্বতন্ত্র প্রার্থী মোহাম্মদ গিয়াস উদ্দিনের চার কর্মীকে পিটিয়ে মারাত্মক আহত করার অভিযোগ উঠেছে নৌকার প্রার্থী মাহবুব উর রহমানের সমর্থকের বিরুদ্ধে। গতকাল সকালে সাহেরখালী ইউনিয়নের ডোমখালী গ্রামে ঈগল প্রতীকের প্রচারপত্র বিলির সময় তাদের মারধর করা হয় বলে অভিযোগ করেন স্বতন্ত্র প্রার্থীর প্রধান নির্বাচন সমন্বয়কারী নিয়াজ মোর্শেদ এলিট।
কুমিল্লার চান্দিনায় প্রচারকালে নৌকার সমর্থকদের হামলায় ঈগল প্রতীকের স্বতন্ত্র প্রার্থীর অন্তত ১২ কর্মী আহত হয়েছেন। এ সময় তিন সাংবাদিকও আহত হন। হামলার সময় এক সাংবাদিকের মোবাইল ফোন ও আইডি কার্ড নৌকার সমর্থকরা ছিনিয়ে নেন বলে অভিযোগ পাওয়া গেছে। গতকাল দুপুরে চান্দিনার গল্লাই ইউনিয়নের হোসেনপুর ও কালিয়াচর এলাকায় এসব ঘটনা ঘটে। এ ব্যাপারে নৌকার প্রার্থী ডা. প্রাণ গোপাল দত্তের নির্বাচনী কার্যক্রমের প্রধান সম্বয়কারী মোসলেহ উদ্দিন জানান, নৌকা ও ঈগল প্রার্থীর সমর্থকরা মুখোমুখি হওয়াতে উত্তেজনার সৃষ্টি হয়।
সাংবাদিকদের সঙ্গে একটা ভুল বোঝাবুঝি হয়েছে। তাদের ফোন ও আইডি কার্ড ফেরত দেওয়া হবে। থানার ওসি সনজুর মোর্শেদ বলেন, প্রচারণাকালে দুই প্রার্থীর সমর্থকরা মুখোমুখি হয়ে পড়েছিল। বড় ধরনের কিছু ঘটেনি।
আগের দিন রাতে চট্টগ্রাম-১৫ আসনে ঈগল প্রতীকের স্বতন্ত্র প্রার্থী এমএ মোতালেবের নির্বাচনী ক্যাম্পে আগুন দেওয়ার ঘটনা ঘটে। ঈগল প্রতীকের আমিরাবাদ ইউনিয়নের নির্বাচন পরিচালনা কমিটির সমন্বয়ক ও চট্টগ্রাম দক্ষিণ জেলা আওয়ামী লীগের সদস্য সেলিম উদ্দিন জানান, অগ্নিসংযোগের ঘটনায় থানায় তারা জিডি করেছেন।
চট্টগ্রাম-৪ আসনের স্বতন্ত্র প্রার্থী মো. ইমরানের ঈগল প্রতীকের পোলিং এজেন্টদের হুমকি ও ভয়ভীতি দেখানোর অভিযোগ উঠেছে। এ ব্যাপারে গত বুধবার রাতে সহকারী রিটার্নিং কর্মকর্তা ও ইউএনও রফিকুল ইসলাম বরাবর অভিযোগ জমা দেন স্বতন্ত্র প্রার্থীর প্রধান এজেন্ট নিশাত ইমরান। তবে অভিযুক্তদের দাবি, স্বতন্ত্র প্রার্থীর করা অভিযোগ সম্পূর্ণ মিথ্যা।
গোপালগঞ্জ-১ আসনে জনসভা ঘিরে গতকাল আওয়ামী লীগ ও স্বতন্ত্র প্রার্থীর সমর্থকদের মধ্যে ধাওয়া-পাল্টা ধাওয়া ও ইটপাটকেল নিক্ষেপের ঘটনা ঘটেছে। এতে মুকসুদপুর উপজেলা আওয়ামী লীগ সভাপতি রবিউল আলম শিকদার আহত হন। পুলিশ ঘটনাস্থল থেকে নৌকা মার্কার সমর্থক ছাত্রলীগের সাবেক নেতা আজিজুর রহমান উজ্জ্বলকে আটক করে।
একই রাতে ফরিদপুর-৪ আসনে সদরপুর উপজেলায় নৌকার প্রার্থী কাজী জাফরউল্লাহ ও ঈগল প্রতীকের প্রার্থী মজিবুর রহমান চৌধুরীর দুটি নির্বাচনী ক্যাম্পে আগুন দেওয়া হয়। উপজেলার কৃষ্ণপুর ইউনিয়নে নিজগ্রাম এলাকার রাজার মোড় ও শৌলডুবী গ্রামের মল্লিকবাড়ি এলাকায় এ ঘটনা ঘটে।
এদিকে আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল কাদেরের ছোট ভাই দলের কোম্পানীগঞ্জ উপজেলা সভাপতি ও বসুরহাট পৌরসভার মেয়র আবদুল কাদের মির্জা বলেছেন, ৭ জানুয়ারি যারা বিশৃঙ্খলা করবে, তারা যেই হোক তাদের বাড়িঘরে আগুন লাগিয়ে দেওয়া হবে। গতকাল বিকেলে কোম্পানীগঞ্জ উপজেলা আওয়ামী লীগ কার্যালয়ে আয়োজিত ছাত্রলীগের ৭৬তম প্রতিষ্ঠাবার্ষিকীর আলোচনা সভায় তিনি এ কথা বলেন। তাঁর এ বক্তব্যের ভিডিও সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম ও কাদের মির্জার ভেরিফায়েড ফেসবুকের টাইমলাইনেও ঘুরছে।
ভিডিওতে দেখা যায়, কাদের মির্জা বলছেন, ‘জামায়াত-বিএনপি কোনো অবস্থাতেই কেন্দ্রের আশপাশে আসতে পারবে না। ছাত্রলীগের প্রথম এবং প্রধান দায়িত্ব– বিএনপি-জামায়াতের কোনো লোক যাতে কেন্দ্রের আশপাশে না আসতে পারে, সেদিকে খেয়াল রাখা এবং কেন্দ্র রক্ষা করা। প্রতিপক্ষের প্রার্থীদের ব্যাপারে আমাদের কোনো কথা নেই। তবে এটা খেয়াল রাখতে হবে– অন্য প্রার্থীর কাঁধে ভর করে জামায়াত-বিএনপি যেন কেন্দ্রে ঢুকতে না পারে। আর একটা কথা স্পষ্ট জানিয়ে দিলাম– ৭ তারিখ যদি কোনো ধরনের বিশৃঙ্খলা সৃষ্টির চেষ্টা হয়; যারা করবে, তারা যেই হোক তাদের বাড়িঘরে আগুন লাগিয়ে দেওয়া হবে। কোম্পানীগঞ্জের মাটি তাদের জন্য হারাম হয়ে যাবে।’
নির্বাচনের দিন নৌকা মার্কায় ভোট না দিলে কেন্দ্রে না যেতে ভোটারদের হুমকি দিয়েছেন সাতক্ষীরার শ্যামনগর আওয়ামী লীগের কোষাধ্যক্ষ আব্দুস সবুর মোল্যা। গত সোমবার কাশিমাড়ী ইউনিয়নের ৮ নম্বর ওয়ার্ডের কারিগরপাড়ায় সাতক্ষীরা-৪ আসনে নৌকার প্রার্থী আতাউল হক দোলনের পক্ষে এক উঠান বৈঠকে তিনি ওই বক্তব্য দেন। এরই মধ্যে সবুর মোল্যার বক্তব্যের ভিডিও সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে ছড়িয়ে পড়েছে। এ বিষয়ে ইউএনও এবং সহকারী রিটার্নিং কর্মকর্তা জাবিনুল ইসলাম জানান, অভিযোগ পেয়ে সবুর মোল্যাকে জরিমানা করা হয়েছে। এমন কাজ আর করবেন না– মর্মে মুচলেকা দিয়ে তিনি ছাড়া পেয়েছেন।
জয়পুরহাট-২ আসনে কাঁচি প্রতীকের স্বতন্ত্র প্রার্থী গোলাম মাহফুজ চৌধুরীর কর্মীদের ওপর গতকাল দুপুরে নৌকার সমর্থকরা হামলা করেছে বলে অভিযোগ পাওয়া গেছে। এর প্রতিবাদে আক্কেলপুর-জয়পুরহাট আঞ্চলিক সড়কের মাতাপুর এলাকায় প্রায় আধা ঘণ্টা রাস্তা অবরোধ করে রাখে স্বতস্ত্র প্রার্থীর কর্মীরা।
এদিকে কিশোরগঞ্জ-২ আসনে নৌকার প্রার্থী সাবেক অতিরিক্ত ডিআইজি আব্দুল কাহার আকন্দ গত মঙ্গলবার পাকুন্দিয়ায় এক সমাবেশে বর্তমান এমপি সাবেক আইজিপি নূর মোহাম্মদকে হুমকি দিয়েছিলেন। আব্দুল কাহার আকন্দ বলেছিলেন, স্বতন্ত্র প্রার্থী আখতারুজ্জামানের ট্রাক প্রতীকের পক্ষে কথা বললে এমপি নূর মোহাম্মদের বাড়ি ঘেরাও করা হবে। তাঁকে ঢাকায় চলে যাওয়ার জন্যও বলেছিলেন তিনি।
গতকাল এর জবাব দিয়েছেন স্বতন্ত্র প্রার্থী বিএনপির বহিষ্কৃত নেতা আখতারুজ্জামান। কটিয়াদী উপজেলার আচমিতা হাইস্কুল মাঠে এক সমাবেশে তিনি পাল্টা হুমকি দিয়ে বলেন, ‘আপনি (আব্দুল কাহার) নূর মোহাম্মদ সাহেবের একটা চুলও ছিঁড়তে পারবেন না। নূর মোহাম্মদ সাহেবের পাশে আমি ও আমার কর্মীরা আছে। আমি এই আসনে যুগ্ম এমপি হবো। বর্তমান এমপি নূর মোহাম্মদ সাহেবের সঙ্গে পরামর্শ করে, তাঁকে ও তাঁর কর্মীদের নিয়ে এলাকার উন্নয়ন করব।’
পঞ্চগড়-১ আসনে গতকাল আওয়ামী লীগ প্রার্থী নাঈমুজ্জামান ভূঁইয়া ও স্বতন্ত্র প্রার্থী আনোয়ার সাদাতের সমর্থকদের মধ্যে ধাওয়া-পাল্টা ধাওয়া হয়েছে। এক পর্যায়ে বিকেলে স্বতন্ত্র প্রার্থীর সমর্থকরা পঞ্চগড়-তেঁতুলিয়া মহাসড়ক অবরোধ করেন। সন্ধ্যায় তেঁতুলিয়া ইউএনও ফজলে রাব্বীসহ পুলিশ ঘটনাস্থলে গিয়ে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনে।
চট্টগ্রামের চার আসনে টাকা ছড়ানোর অভিযোগ
চট্টগ্রামের ১৬ সংসদীয় আসনের মধ্যে চারটিতে টাকা ছড়ানোর শঙ্কা প্রকাশ করছেন প্রার্থীরা। এসব আসনের মধ্যে রয়েছে– চট্টগ্রাম-১৫, চট্টগ্রাম-১২, চট্টগ্রাম-১ ও চট্টগ্রাম-১০। এর মধ্যে পাল্টাপাল্টি অভিযোগ উঠেছে তিনটি আসনে।
২৮ ডিসেম্বর চট্টগ্রাম-১৫ সাতকানিয়া আসনে নৌকার প্রার্থীর পক্ষে প্রচারণার সময় নৌকার পক্ষের এক নেতাকে এক হাজার টাকা বিলির ছবি ফেসবুকে ছড়িয়ে পড়ে। ২৭ ডিসেম্বর বিকেল সাড়ে ৩টার দিকে চট্টগ্রাম-১২ পটিয়া সংসদীয় আসনে নৌকার প্রার্থী মোতাহেরুল ইসলাম ৫০০ টাকার নোট এক ভোটারের হাতে গুঁজে দেওয়ার ছবি ভাইরাল হয়। এর আগে ১৯ ও ২০ ডিসেম্বর চট্টগ্রাম-১ মিরসরাই আসনে ভোটারদের মাঝে স্বতন্ত্র প্রার্থী গিয়াস উদ্দিনের প্রধান নির্বাচনী এজেন্ট নিয়াজ মোর্শেদ এলিটের টাকা বিলির ছবি ফেসবুকে ছড়িয়ে পড়ে।
চট্টগ্রাম-১০ (ডবলমুরিং) আসনের স্বতন্ত্র প্রার্থী মনজুর আলমের বিরুদ্ধে টাকা বিলির অভিযোগ তোলেন নৌকার প্রার্থী মহিউদ্দিন বাচ্চু। আবার বাচ্চুর বিরুদ্ধে টাকা ছড়ানোর অভিযোগ দিয়েছেন স্বতন্ত্র প্রার্থী মনজুর আলম।
পটুয়াখালীর দুমকীতে লাঙ্গল ও ডাব প্রতীকের সমর্থকদের সংঘর্ষে আটজন আহত হয়েছেন। আহত সাতজনকে উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্স এবং গুরুতর আহত রিপন হালদার নামে একজনকে বরিশাল শেরেবাংলা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে পাঠানো হয়েছে। জানা যায়, গতকাল বিকেলে জাতীয় পার্টির কেন্দ্রীয় কো-চেয়ারম্যান এ বি এম রুহুল আমিন হাওলাদারের লাঙ্গল প্রতীকের মিছিল ও বালুর মাঠে সভা শেষে উপজেলা জাতীয় পার্টির সভাপতি মাসুদ আল মামুনের নেতৃত্বে দুমকী পীরতলা বাজারে লিফলেট বিতরণ করা হয়। একই সময় পটুয়াখালী জেলা আওয়ামী লীগের সহসভাপতি আবুল কালাম মৃধা ও যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক বাবু শৈলেন চন্দ্রের নেতৃত্বে ডাব প্রতীকের সমর্থনে গণসংযোগ করার সময় উভয় পক্ষের মধ্যে সংঘর্ষ বাধে।