আগুন নেভানোর যন্ত্রের দামে আগুন
![](https://miprobashi.com/wp-content/uploads/2024/03/bfe3b49ed2920b004425abed94ffa9c9-65ee1a9cc269d-780x470.webp)
রাজধানীর বেইলি রোডের অগ্নিকাণ্ডের ঘটনার পর অগ্নিনির্বাপক যন্ত্রপাতির দাম বেড়ে গেছে। অগ্নিকান্ডের ঘটনার পর ব্যাপকহারে চাহিদা বাড়ায় বাজারগুলোতে এসব যন্ত্রপাতির সংকট দেখা দিয়েছে। গতকাল রবিবার অগ্নিনির্বাপক যন্ত্রপাতির বড় বাজার পুরান ঢাকার নবাবপুরে গেলে দেখা যায়, অগ্নিনির্বাপক যন্ত্রপাতির বেশ সংকট রয়েছে। তাই ডাবল দাম দিয়ে কিছু কিছু অগ্নিনির্বাপক যন্ত্রপাতি পাওয়া যাচ্ছে না।
খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, রাজধানীর বাজারগুলোতে বেশিরভাগ অগ্নিনির্বাপক যন্ত্র বিক্রি হচ্ছে চড়া দামে। অগ্নিনির্বাপণে সর্বত্র ব্যবহৃত হয় অগ্নিনির্বাপক যন্ত্র বা ফায়ার এক্সটিংগুইশার, ফায়ার অ্যালার্ম, স্মোক ডিটেক্টর বা হিট ডিটেক্টর। যার বেশিরভাগই আমদানি হয় দেশের বাইরে থেকে। বিশেষ করে বেইলি রোডের ঘটনার আগেও ফায়ার এক্সটিংগুইশারের এত বিক্রি ছিল না। তখন এর দাম ছিল ১ হাজার টাকা। কিন্তু একই জিনিস এখন ১ হাজার ৪০০ টাকা দিয়েও পাওয়া যাচ্ছে না। আগে ফায়ার বলের দাম ছিল ৩০০ টাকা। কিন্তু এখন তা ৮০০ টাকা। এছাড়া অগ্নিনির্বাপক উপকরণ ছাড়াও, ভাল্ব, নজেল, ফায়ার অ্যালার্ম, হিট ডিটেক্টর, বল পয়েন্টসহ প্রায় ৫০ রকমের উপকরণের দাম বাড়তি দেখা যায়। ধানমন্ডি এলাকায় একটি বহুতল ভবনের এক ম্যানেজার মো. মাইনুদ্দীন নবাবপুরে এসেছেন অগ্নিনির্বাপক যন্ত্রপাতি কেনার জন্য। তিনি বলেন, নবাবপুরে বেশ কয়েকটি মার্কেটে ঘুরলাম কিন্তু ফায়ার এক্সটিংগুইশার সহজে পাওয়া যাচ্ছে না। আর পেলে ১ হাজার টাকার জিনিস ১৪০০ থেকে ১৬০০ টাকা দাম চাচ্ছে অনেক দোকানি। এখন নিরাপত্তার জন্য বেশি দামে বাধ্য হয়ে নিতে হচ্ছে।
মো. আরিফ নামের ওয়ারী এলাকার এক ভবন মালিক বলেন, চারদিকে এখন অগ্নিকা-ের ঘটনা ঘটছে। কদিন আগেও আমার পাশের ভবনে আগুন লেগে যায়। যার জন্য আমার নিজের ভবন নিয়েও বেশ আতঙ্কের মধ্যে আছি। তাই এখানে এলাম অগ্নিনির্বাপক যন্ত্রপাতি কিনতে। কিন্তু দুঃখের বিষয়, আগুন লাগা বেড়ে যাওয়ায় এখানে জিনিসপত্রের দাম বেড়ে গেছে। আর আগের থেকে বেশি দাম চাচ্ছে এখানকার বিক্রেতারা। দেশের এ-রকম পরিস্থিতিতে এভাবে দাম বেড়ে যাওয়ার তো কোনো মানে হয় না। সরকারের উচিত বিষয়গুলোর দিকে নজর দেওয়া।
হাইটেক ফায়ার ফাইটিং ইকুইপমেন্ট ফ্যাক্টরির মালিক মিজানুর রহমান বলেন, বেইলি রোডের ঘটনার পর অগ্নিনির্বাপক যন্ত্রপাতির চাহিদা বেড়েছে। এখন এই চাহিদা বাড়ায় বাজারে জিনিসপত্রের দামও বেশ চড়া। নতুন করে দেশের বাইরে থেকে এখনো আমদানি করা যাচ্ছে না। তাছাড়া মানুষ বড় কোনো দুর্ঘটনা না হলে এসব কেনার ক্ষেত্রে খুব একটা আগ্রহ দেখা যায় না। এখন অনেকেই নিরাপত্তার স্বার্থে এই যন্ত্রপাতিগুলো কিনতে আসছে।
এম কে ইঞ্জিনিয়ারিংয়ের ব্যবস্থাপনা পরিচালক মো. মোকাদ্দেস খান বলেন, আমাদের ভবন মালিকদের আরও বেশি সচেতন হওয়া দরকার। কোনো একটি ঘটনা হলে জিনিসপত্র কেনার হিড়িক বেড়ে যায়। কিন্তু তারপর আর তাদের সেভাবে সচেতন হতে দেখা যায় না। ফায়ারের আরও অনেক যন্ত্রপাতি আছে। লোকজন সে সব কিনতে আগ্রহী হয় না। অথচ যদি সচেতনতা বাড়িয়ে ভবনের নিরাপত্তার স্বার্থে সেগুলো তারা ব্যবহার করে তাহলে ভবনগুলোতে আগুন লাগলে খুব দ্রুত সময়ের মধ্যে নিয়ন্ত্রণে আনা সম্ভব।
অগ্নিনির্বাপক উপকরণ বিক্রেতাদের সমিতি ‘ফায়ার ফাইটিং ইকুইপমেন্ট বিজনেস ওনার্স অ্যাসোসিয়েশন অব বাংলাদেশ’র কমিটির পরিচালক মো. আলমগীর হোসেন বলেন, বর্তমান পরিস্থিতির জন্য এখন চাহিদা বেড়ে গেছে। কিন্তু বাজারে কিন্তু আগের মতো সরবরাহ নেই। মালের বেশ ঘাটতি আছে। বাইরে থেকে এখন আমদানি খুব একটা করা যাচ্ছে না। তাই দাম কিছুটা বেড়েছে। তিনি আরও বলেন, বেইলি রোডের ঘটনার পর আমরা সে ভবন পরিদর্শন করেছি। তাই শুধুমাত্র অগ্নিনির্বাপক উপকরণ কিনলে হবে না। মানুষকে আরও বেশি সচেতন হতে হবে। কীভাবে এই যন্ত্রপাতি চালাতে হয় সেগুলোও শিখতে হবে। তাহলে আগুনের মতো ভয়াবহ ঘটনা হলেও সেগুলো নিয়ন্ত্রণে আনা সম্ভব হবে।