Trending

আমেরিকার চিয়া সিড এখন আবাদ হচ্ছে মাগুরায়, ভাল উৎপাদন হওয়ায় আশা জাগছে কৃষকদের মাঝে

মধ্য আমেরিকার চিয়া সিড এখন মাগুরায় চাষ শুরু হয়েছে। জেলার সদর উপজেলার আঠারোখাদা ইউনিয়নের নালিয়ারডাঙ্গি ও আলীধানী গ্রামে এবছর প্রায় ১০ বিঘা জমিতে ১৬ জন চাষি চিয়া সীড চাষ করে সাফল্য পেয়েছেন। আবহাওয়া উপযোগী হওয়ায় এবং বাজার দর ভালো থাকায় চিয়া সীড চাষে কৃষক লাভবান হবেন বলে আশা কৃষি কর্মকর্তাদের।

বহুগুণসম্পন্ন চিয়া সিড মানবদেহের অনেক উপকার করে বলে জানা গেছে। সকালে ঘুম থেকে ওঠার পর বা রাতে ঘুমাতে যাওয়ার ১ ঘণ্টা আগে বা যারা ব্যায়াম করেন, তারা ব্যায়ামের ১ ঘণ্টা পর চিয়া সিড খেতে পারেন। চিয়া সিডে আছে ওমেগা-৩, যা হৃদরোগের ঝুঁকি ও ক্ষতিকর কোলেস্টেরল কমাতেও সাহায্য করে, এটি শরীরের শক্তি ও কর্মক্ষমতা বাড়ায়। এতে প্রচুর পরিমাণে অ্যান্টি-অক্সিডেন্ট থাকায় চিয়া সিড রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতাকে আরো শক্তিশালী করে মেটাবলিক সিস্টেমকে উন্নত করার মাধ্যমে এটি ওজন কমাতে সহায়তা করে। চিয়া সিড বøাড সুগার স্বাভাবিক রাখে, যা ডায়াবেটিস হওয়ার ঝুঁকি কমায়। এছাড়া চিয়া সিডে আছে প্রচুর পরিমাণ ক্যালসিয়াম, যা হাড়ের স্বাস্থ্য রক্ষায় বিশেষ উপকারী। চিয়া সিড কোলন পরিষ্কার রাখে। ফলে কোলন ক্যানসারের ঝুঁকি কমে। এটি শরীর থেকে টক্সিন (বিষাক্ত পদার্থ) বের করে দিতে সাহায্য করে। চিয়া সিড পেটের প্রদাহজনিত বা গ্যাসের সমস্যা দূর করে। ভালো ঘুম হতেও সাহায্য করে চিয়া সিড। এ বীজ ক্যানসার রোধ করে। চিয়া সিড হজমে সহায়তা করে, হাঁটু ও জয়েন্টের ব্যথা দূর করে, অ্যাটেনশান ডেফিসিট হাইপার-অ্যাক্টিভিটি ডিসঅর্ডার দূর করে, এটি ত্বক, চুল ও নখ সুন্দর রাখে।

পুষ্টিবীদদের মতে, দ্রæত ওজন কমাতে খালি পেটে সকালে ও রাতে ঘুমানোর আগে ১ গøাস পানির মধ্যে ২ চা চামচ চিয়া সিড ও ২ চামচ লেবুর রস মিশিয়ে খেলে ভালো ফলাফল পাওয়া যায়। খাওয়ার ৩০ মিনিট আগে পানিতে সাধারণ তাপমাত্রায় ভিজিয়ে রাখতে হবে। তবে, যেহেতু চিয়া সিডের নিজস্ব কোনো স্বাদ নেই, তাই এটি যে কোনো শরবত বা স্মুদি, কাস্টার্ড, টকদই বা অন্য কোনো খাবারের সঙ্গে মিশিয়েও খাওয়া যায়।
চিয়া ফসলে রোগবালাই, সার ও সেচ খরচ কম কিন্তু দাম বেশি পাওয়ায় চিয়া সীড চাষে কৃষকের আগ্রহ বাড়ছে। বিঘাপ্রতি ৫ থেকে ৬ মণ ফলন, আর কেজিপ্রতি ৪শ’ টাকা দরে কৃষক প্রতিমণ বিক্রি করেন ১৬ হাজার টাকায়। সাধারণত নভেম্বরের শেষার্ধ থেকে ডিসেম্বরের প্রথমার্ধে বীজ বপণ করে ৪ মাসের মধ্যে ফসল তোলা যায়।
প্রতিবন্ধী কৃষক আক্কাসের হাত ধরে গতবছর স্বল্প পরিসরে মাগুরায় প্রথম চিয়া ফসলের চাষ শুরু। তার সাফল্য দেখে এলাকার আরো ১৫ কৃষক চিয়া চাষে আগ্রহী হওয়ায় এ বছর জেলায় প্রায় ১০ বিঘা জমিতে এর চাষ হয়েছে।

দেশে চাহিদা বাড়ায় প্রতিবছর বিপুল পরিমাণে চিয়া সীড আমদানী হচ্ছে। এখন স্থানীয়ভাবে উৎপাদনের ফলে বৈদেশিক মুদ্রার সাশ্রয় ঘটিয়ে কৃষকও লাভবান হবেন বলে আশা কৃষি বিভাগের।
বিদেশী ফসল হিসেবে নতুন চাষ হওয়ায় এবং চমৎকার চিয়া ফুল দেখতে প্রতিদিনই দূর-দূরান্ত থেকে আসছেন অনেকে। ফুড সাপ্লিমেন্ট হিসেবে চিয়া বীজের উপকারিতা সবার মাঝে নতুন সাড়া ফেলায় বাজারে এর চাহিদা দ্রæত বাড়ছে।

মাগুরার জেলা প্রশাসক মোহাম্মদ আবু নাসের বেগ উৎপাদিত চিয়া সিড প্রস্তুতি কাজ পরিদর্শন করেছেন। তিনি চাষিদের চিয়া সিড চাষে এগিয়ে আসার আহবান জানান।

Show More

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Related Articles

Back to top button