Hot

ইফতারি পণ্যের দামেও অস্বস্তিতে সাধারণ ক্রেতারা

আজ চাঁদ দেখা গেলে আগামীকাল মঙ্গলবার থেকে শুরু হচ্ছে পবিত্র রমজান মাস। কিন্তু রোজার পণ্যের বাজারে কোনো সুখবর নেই। রোজার প্রায় সব পণ্যই চড়া দামে কিনতে হচ্ছে। এক সপ্তাহের ব্যবধানে রাজধানীর খুচরা বাজারে ইফতারি পণ্য ছোলা, চিনি, খেজুর, বেগুন, শসা ও লেবুর দাম ৫ থেকে ৫০ শতাংশ পর্যন্ত বেড়েছে।

এতে অস্বস্তিতে পড়েছে সাধারণ ক্রেতারা।

বাজারসংশ্লিষ্ট ব্যক্তিরা বলছেন, প্রতিবছরই রমজানকে ঘিরে বাড়তি মুনাফার লোভে অসাধু ব্যবসায়ীরা ইফতারি পণ্যকে টার্গেট করে দাম বাড়িয়ে দেয়। এবারও তাই হচ্ছে। রোজায় ভোক্তাদের স্বস্তি দিতে সরকারকে বাজার তদারকিতে আরো জোরালো পদক্ষেপ নেওয়ার পরামর্শ দিয়েছেন তাঁরা।

রমজানের বাজার নিয়ন্ত্রণে রাখতে সরকার নানা উদ্যোগ নিয়েও লাগাম টেনে ধরে রাখতে পারছে না। এবার রোজাকে ঘিরে আরো দেড়-দুই মাস আগে থেকেই অস্থির হয়ে ওঠে নিত্যপণ্যের বাজার। মাছ, মুরগি ও গরুর মাংসের পাশাপাশি বেড়েছে অনেক নিত্যপণ্যের দাম। দাম স্থিতিশীল রাখতে চাল, চিনি, সয়াবিন তেল ও খেজুর আমদানিতে শুল্ক কমিয়েছে সরকার।

তবে তেল ছাড়া আমদানিতে শুল্ক কমানোর প্রভাব পড়েনি অন্য তিন পণ্যে। এই অবস্থায় ভোক্তার নাভিশ্বাস উঠেছে। 

গতকাল রবিবার রাজধানীর বাড্ডা, মহাখালী, জোয়ারসাহারাসহ বিভিন্ন খুচরা বাজার ঘুরে দেখা গেছে, গত সপ্তাহে ইফতারসামগ্রীর মধ্যে অন্যতম অনুসঙ্গ ছোলা কেজিতে ৫ শতাংশ দাম বেড়ে মানভেদে ১০৫ থেকে ১১৫ টাকায় বিক্রি হচ্ছে। ইফতারের শরবতের অতি গুরুত্বপূর্ণ অনুষঙ্গ লেবুর চাহিদা প্রতিবছরই রোজায় ব্যাপকহারে বেড়ে যায়। গত এক সপ্তাহে মাঝারি সাইজের লেবুর দাম প্রতি হালিতে ২৫ থেকে ৪০ শতাংশ বেড়ে ৫০ থেকে ৭০ টাকায় বিক্রি হচ্ছে।

এখন ৪০ থেকে ৫০ টাকার নিচে লেবুর হালি বিক্রি হচ্ছে না। আগে থেকেই উচ্চ দামে বিক্রি হওয়া চিনি এক সপ্তাহের ব্যবধানে কেজিতে ৩ থেকে ৪ শতাংশ বেড়েছে। এখন প্রতি কেজি খোলা চিনি খুচরায় ১৪৫ থেকে ১৫০ টাকায় বিক্রি হচ্ছে।

শুল্ক কমানোর পরও বাজারে কয়েক দফা বেড়েছে খেজুরের দাম। এক সপ্তাহের ব্যবধানে রাজধানীতে খুচরায় সাধারণ মানের খেজুরের দাম প্রতি কেজিতে ৭ থেকে ১৪ শতাংশ বেড়ে ৪০০ থেকে ৪৫০ টাকায় বিক্রি হচ্ছে। তবে ভালো মানের খেজুর এক হাজার থেকে দুই হাজার ৫০০ টাকা পর্যন্ত বিক্রি হতে দেখা গেছে।

ইফতারির অন্যতম জনপ্রিয় আরেকটি অনুষঙ্গ বেগুনি। বাড়তি চাহিদার কারণে প্রতিবছরই রোজার দু-তিন দিন আগেই বেগুনের দাম বেড়ে যায়। এবার বাজারে বেগুনের সরবরাহের কোনো ঘাটতি না থাকলেও ইফতারি পণ্যের মধ্যে এক সপ্তাহের ব্যবধানে সবচেয়ে বেশি দাম বেড়েছে পণ্যটির। বেগুনের দাম কেজিতে ৩৩ থেকে ৫০ শতাংশ দাম বেড়ে মানভেদে ৮০ থেকে ১২০ টাকা কেজিতে বিক্রি হচ্ছে। এবার শসার দাম এক মাস ধরেই বাড়তি। সপ্তাহের ব্যবধানে কেজিতে দেশি শসা ২৫ থেকে ২৯ শতাংশ বেড়ে ৯০ থেকে ১০০ টাকায় বিক্রি হচ্ছে। আর খিরা কেজিতে ৩৩ থেকে ৪০ শতাংশ বেড়ে ৭০ থেকে ৮০ টাকায় বিক্রি হচ্ছে। স্বাভাবিক সময়ে কখনো ৪০ থেকে ৫০ টাকার বেশি দামে খিরা বিক্রি হয় না বলেও বিক্রেতারা জানান।  

রমজানে বাড়তি চাহিদাযুক্ত পণ্যগুলোর মজুদে কোনো ঘাটতি না থাকলেও বাড়তি দামে বিক্রি হচ্ছে। স্থানীয় উৎপাদন, আমদানি ও মজুদ পরিস্থিতি বিশ্লেষণ করে সরকারের তরফ থেকে জানানো হয়েছে, রমজানে যেসব পণ্যের বাড়তি চাহিদা তৈরি হয়, সেগুলোর মজুদ পরিস্থিতিতে কোনো সংকট নেই। সাপ্লাই চেইনও স্বাভাবিক রয়েছে। এই পরিস্থিতিতে দাম বৃদ্ধির কোনো কারণ নেই। তার পরও রোজাকে ঘিরে অস্থির হয়ে উঠেছে নিত্যপণ্যের বাজার।

গতকাল দুপুরে বাড্ডার কাঁচাবাজারে রমজানের প্রয়োজনীয় পণ্য কেনার জন্য প্রস্তুতি নিয়ে বাজারে এসেছিলেন বেসরকারি এক প্রতিষ্ঠানে কর্মরত মো. রিফাত তালুকদার। তিনি কালের কণ্ঠকে বলেন, ‘বাজারে এসে দেখি বিক্রেতারা দাম বাড়ানোর প্রতিযোগিতায় নেমেছে। একেকজন একেক রকমভাবে পণ্যের দাম চাচ্ছে। পণ্যের বাড়তি দামের কারণে বাজারের তালিকা অনুযায়ী পণ্য কিনতে পারছি না। হিসাব করে টাকা নিয়ে এসেও চার ভাগের তিন ভাগ পণ্য কিনতেই টাকা শেষ। সব কিছু উচ্চমূল্যে বিক্রির কারণে এবার রোজায় ইফতারি ও সাহরিতে মানুষ ভালোমন্দ খেতেও পারবে না।’

রিফাত তালুকদার আরো বলেন, ‘এক সপ্তাহ আগে ৭০ টাকায় বেগুন কিনেছি। সেই বেগুন আমার কাছে দাম চাচ্ছে ১১০ টাকা। এটা কিভাবে সম্ভব? দাম বাড়ারও তো একটা লিমিট আছে, তাই বলে এক সপ্তাহেই দ্বিগুণ দাম বেড়ে যাবে। আমার মনে হচ্ছে ব্যবসায়ীরা সিন্ডিকেট করে পণ্যের দাম বাড়িয়ে বিক্রি করছে। রোজায় মানুষকে কিছুটা স্বস্তি দিতে হলে সরকারকে বাজার তদারকিতে আরো জোরালো ভূমিকা নিতে হবে। সিন্ডিকেট এবং অতিরিক্ত মুনাফালোভীদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নিতে হবে। তাহলে পণ্যের দাম কিছুটা কমতে পারে।’   

বাড্ডা কাঁচাবাজারের সবজি বিক্রেতা মো. মেহেদী হাসান বলেন, ‘আজ (গতকাল) পাইকারিতে কারওয়ান বাজারে দুই দফায় সবজির দাম বেড়েছে। বাড়তি দামে কেনার কারণে ভালোমানের লম্বা বেগুন কেজি ৮০ থেকে ১০০ টাকায় এবং গোল বেগুন ১০০ থেকে ১২০ টাকায় বিক্রি করা হচ্ছে। বাজারে শসার সরবরাহ কম থাকায় দাম বাড়তি। দেশি শসা ৯০ থেকে ১০০ টাকা এবং খিরা কেজি ৭০ থেকে ৮০ টাকায় বিক্রি করছি। মাঝারি ও বড় সাইজের লেবুর হালি ৫০ থেকে ৭০ টাকায় বিক্রি করা হচ্ছে।’  

মহাখালী কাঁচাবাজারের মোদি দোকানের বিক্রয়কর্মী মো. আরিফ বলেন, ‘পাইকারিতে গত এক সপ্তাহের ব্যবধানে চিনি ও ছোলার দাম বস্তাপ্রতি ১০০ টাকার মতো বেড়েছে। যার কারণে আমরা কেজিতে চার থেকে পাঁচ টাকা বাড়িয়ে বিক্রি করছি। রমজানে আর দাম বাড়ার কোনো সম্ভাবনা নেই। কারণ এবার বাজারে পর্যাপ্ত সরবরাহ রয়েছে, কোনো ঘাটতি নেই।’  

এই অবস্থায় করণীয় কী, জানতে চাইলে কনজিউমার অ্যাসোসিয়েশন অব বাংলাদেশের (ক্যাব) সভাপতি গোলাম রহমান বলেন, ‘অতিরিক্ত চাহিদার সুযোগে প্রতিবছরই রোজার দু-এক দিন আগে মুনাফালোভীরা রোজায় প্রয়োজন এমন পণ্যের দাম বাড়িয়ে দেয়। এটা নতুন না, প্রতিবছরই এমনটা হয়ে থাকে। ক্রেতারা যদি কিছুটা সংযমী হয়ে একসঙ্গে এক মাসের পণ্য না কিনে ধাপে ধাপে পণ্য ক্রয় করে তাহলে বাজারের চাহিদা বৃদ্ধি পাবে না। মুনাফালোভীরা বাজারে সরবরাহের ঘাটতি দেখিয়ে পণ্যের দাম বেশি রাখারও সুযোগ পাবে না। রোজা ঘিরে সরকার যেসব উদ্যোগ নিয়েছে, আমরা আশা করছি তার সুফল শিগগিরই ভোক্তারা পাবে।’

Show More

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Related Articles

Back to top button