Trending

কবে গ্রাহক টাকা ফেরত পাবে, কেউ জানে না

ই-কমার্সের নামে গ্রাহকের কোটি কোটি টাকা আত্মসাৎ করায় কাঠগড়ায় আলেশা মার্ট। প্রতিষ্ঠানটির চেয়ারম্যান মঞ্জুর আলম শিকদার, তাঁর স্ত্রী ও কোম্পানির ব্যবস্থাপনা পরিচালক সাদিয়া চৌধুরী ৪২১ কোটি টাকা অন্যত্র সরিয়েছেন। পুলিশের অপরাধ তদন্ত বিভাগ সিআইডি এ দম্পতিসহ চারজনের বিরুদ্ধে মানি লন্ডারিং মামলার তদন্তকাজ অনেক দূর এগিয়ে নিয়েছে। সম্প্রতি গ্রেপ্তার হয়েছেন মঞ্জুর আলম। এখন খোঁজা হচ্ছে তাঁর স্ত্রীকে। তবে গ্রাহক কবে অর্থ ফেরত পাবেন, তা এখনও স্পষ্ট নয়। এখন পর্যন্ত ২ হাজার ১২২ গ্রাহক টাকা পেতে জাতীয় ভোক্তা অধিদপ্তর ও সিআইডির কাছে আবেদন করেছেন।

গতকাল রোববার পুলিশের এক কর্মকর্তা জানিয়েছেন, গ্রাহকের অর্থ সরাসরি ফেরতের এখতিয়ার সিআইডি কিংবা ভোক্তা অধিদপ্তরের নেই। তবে পুলিশ এরই মধ্যে মঞ্জুর আলমের বেশ কিছু সম্পদ জব্দ করেছে। আদালত তা ক্রোক করেছেন। এখন কীভাবে গ্রাহকরা অর্থ ফেরত পেতে পারেন, এ সিদ্ধান্ত আদালত দিতে পারবেন। আদালত কোনো সিদ্ধান্ত দিলে, সেভাবে তদন্ত-সংশ্লিষ্টরা ব্যবস্থা নেবেন। তবে পেমেন্ট গেটওয়েতে আলেশা মার্টের কোনো অর্থ নেই।

বনানী থানার উপপরিদর্শক নূর উদ্দিন জানান, বনানী থানার সব মামলায় জামিন পেয়েছেন মঞ্জুর আলম। তবে অন্যান্য থানায় তাঁর বিরুদ্ধে শতাধিক মামলা রয়েছে। সেসব মামলায় শ্যোন অ্যারেস্ট দেখানোর আবেদন করায় আপাতত মঞ্জুরকে কারাগারে থাকতে হচ্ছে। কেরানীগঞ্জের কেন্দ্রীয় কার্যালয় থেকে তাঁকে চট্টগ্রামে স্থানান্তর করা হয়েছে।

১৪ জানুয়ারি রাজধানীর বনানী থেকে মঞ্জুর আলমকে গ্রেপ্তার করা হয়। এরপর ৯টি মামলায় গ্রেপ্তারি পরোয়ানামূলে আদালতে হাজির করা হলে ঢাকার মেট্রোপলিটন ম্যাজিস্ট্রেট ফারজানা শাকিলা সুমু চৌধুরী তাঁকে কারাগারে পাঠানোর আদেশ দেন। এরপর ১৬ জানুয়ারি আলেশা মার্টের চেয়ারম্যানের পক্ষে জামিন আবেদন করা হয়। ঢাকার অতিরিক্ত মেট্রোপলিটন ম্যাজিস্ট্রেট তোফাজ্জল  হোসেন সাত এবং মেট্রোপলিটন ম্যাজিস্ট্রেট আরফাতুল রাকিব দুটি মামলায় জামিন মঞ্জুর করেন। আসামিপক্ষে আইনজীবী ছিলেন ব্যারিস্টার সায়েদুল হক সুমন।

সংশ্লিষ্ট একাধিক সূত্র জানায়, আলেশা মার্টের বিরুদ্ধে দায়ের মানি লন্ডারিং মামলার তদন্তে অনেক তথ্য সামনে আসছে। রকেট গতিতে কোটি কোটি টাকার মালিক হয়েছেন মঞ্জুর আলম। তাঁর ২০২০-২১ সালের আয়কর নথি পর্যালোচনা করে দেখা গেছে, ওই সময় আয় ছিল ১৩ লাখ ৯০ হাজার টাকা। কিন্তু মাত্র সাত মাসের ব্যবধানে তিনি ৩১ কোটি ৮০ লাখ ৫৮ হাজার টাকার স্থাবর সম্পত্তি গড়েছেন। হাজার হাজার গ্রাহকের কাছ থেকে নেওয়া অর্থে গাজীপুর এলাকায় ওই সম্পত্তি কেনা হয়।

তদন্ত-সংশ্লিষ্টরা বলছেন, দলিলমূলে প্রায় ৩২ কোটি টাকার সম্পদ কেনার তথ্য পাওয়া গেলেও প্রকৃত অর্থে ওই সম্পদের বাজারমূল্য আরও বেশি। সেখানে তাঁর প্রায় ১৫০ কোটি টাকার জমি রয়েছে।

স্থাবর সম্পত্তির নথি বিশ্লেষণ করে দেখা যায়, গাজীপুরের কালিয়াকৈরের ঠাকুরপাড়ায় আলেশা হোল্ডিং লিমিটেডের পক্ষে মঞ্জুর আলম ২০২১ সালের ৩১ জানুয়ারি ৫৫ দশমিক ৭৫ শতাংশ  (দলিল নম্বর-১২৩৫) জমি কিনেছেন। একই বছরের ২৪ মে কালিয়াকৈরে তাঁর প্রতিষ্ঠানের নামে পৃথকভাবে আটটি দলিল হয়েছে। এর মধ্যে ৩ হাজার ৮১৭ নম্বর দলিলে ৩৬ দশমিক ৭৫ শতাংশ জমি কিনেছেন ৭০ লাখ টাকায়। কালিয়াকৈরে ২ হাজার ২০ দশমিক ০৯ শতাংশ জমি কিনেছেন মঞ্জুর, যার সর্বশেষ দলিল হয় ২০২১ সালের ২৫ আগস্ট।

তদন্ত-সংশ্লিষ্ট সূত্র জানায়, ২০২০ সালের ২৬ জুলাই আলেশা মার্ট যৌথ মূলধন কোম্পানি ও ফার্মগুলোর পরিদপ্তর থেকে নিবন্ধন পায়। প্রতিষ্ঠানটি ২০২০ সালের ১০ নভেম্বর ঢাকার উত্তর সিটি করপোরেশন থেকে ট্রেড লাইসেন্স নেয়। আনুষ্ঠানিকভাবে আলেশা মার্টের যাত্রা শুরু ২০২১ সালের ৭ জানুয়ারি। যাত্রা শুরুর পর কম মূল্যে মোটরসাইকেল ও বিভিন্ন ইলেকট্রনিক পণ্য সরবরাহের জন্য গ্রাহকদের কাছ থেকে অগ্রিম টাকা নেয় প্রতিষ্ঠানটি। তবে বহু গ্রাহককে পণ্য না দিয়ে কিংবা টাকা ফেরত না দিয়ে প্রতারণার মাধ্যমে পাচার (মানি লন্ডারিং) করে বলে সিআইডির দাবি।

গ্রাহকদের কাছ থেকে নেওয়া বিপুল পরিমাণ অর্থ আলেশা মার্টের সহযোগী প্রতিষ্ঠান আলেশা হোল্ডিংস লিমিটেড, আলেশা টেক লিমিটেড, আলেশা এক্সপোর্ট-ইমপোর্ট লিমিটেড, আলেশা কার্ড লিমিটেড, আলেশা রাইড লিমিটেড, আলেশা ফার্মেসি লিমিটেড, আলেশা ইঞ্জিনিয়ারিং অ্যান্ড সার্ভিস লিমিটেড, আলেশা ফুড অ্যান্ড বেভারেজ লিমিটেড ও আলেশা এগ্রো লিমিটেডের ব্যাংক হিসাবে সরিয়ে নেওয়া হয়েছে।

মামলার তদন্তের সঙ্গে যুক্ত এক কর্মকর্তা নাম প্রকাশ না করার শর্তে জানান, মানি লন্ডারিং মামলায় আলেশা মার্টের চেয়ারম্যান ৬ সপ্তাহের অন্তর্বর্তীকালীন জামিনে আছেন। মানি লন্ডারিং মামলার জামিন শুনানি ১১ ফেব্রুয়ারি হওয়ার কথা রয়েছে।

আলেশা মার্টের চেয়ারম্যান মঞ্জুর আলম ছাড়াও তাঁর স্ত্রী সাদিয়া চৌধুরী, প্রস্তাবিত পিপলস ব্যাংকের চেয়ারম্যান আবুল কাশেম, এসকে ট্রেডার্সের মালিক আল মামুন এবং অজ্ঞাতপরিচয়ের ১৫-২০ জন ও মঞ্জুর আলমের বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানকে মামলায় অভিযুক্ত করা হয়েছে। মঞ্জুরের পক্ষে গ্রাহকদের সামনে নানা প্রলোভনের ফাঁদ পেতেছিলেন আল মামুন।

Show More

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Related Articles

Back to top button