Trending

সামুদ্রিক ঘূর্ণিঝড়ের আলামত!

টানা তাপপ্রবাহ বিস্তৃত ৫৩ জেলায় : হিট অ্যালার্ট অব্যাহত : সর্বোচ্চ তাপমাত্রা মোংলায় ৪১ দশমিক ৬ ডিগ্রি : আপাতত নেই বৃষ্টির সুখবর :: প্রচণ্ড গরমের সঙ্গে দুঃসহ যন্ত্রণা লোডশেডিং : হিটশকে ঝলসে যাচ্ছে আম, লিচুসহ ফলমূল আধাপাকা বোরো-ইরি ফসল : হিটস্ট্রোকে আক্রান্ত ও অসুস্থ অনেকেই

গনগনে সূর্যের কড়া রোদের ‘নির্দয়’ উত্তাপে দর দর ঘাম ঝরছে। মানুষ হাঁপাচ্ছে। প্রাণবায়ু ওষ্ঠাগত প্রাণিকুলের। ফল-ফলাদি, ফসলি জমি পুড়ছে খরতাপে। অবিরাম এক মাসের প্রচণ্ড গরম, খরা-অনাবৃষ্টিতে মাঠ-ঘাট-প্রান্তর ফেটে চৌচির। নদ-নদী-খাল, ছরা-ঝরনা শুকিয়ে গেছে। পানির ক্ষীণ প্রবাহ তলানিতে। অনেক জায়গায় নদী-খাল পানিশূন্য। তাপদাহের সঙ্গে সারা দেশে ঘন ঘন লোডশেডিংয়ে গরমের যন্ত্রণাকে আরো দুর্বিষহ করে তুলেছে। এদিকে দেশের স্থলভাগের পাশাপাশি বঙ্গোপসাগরের বুকেও টানা উচ্চ তাপদাহ। এ কারণে যে কোনো সময় সমুদ্র ফুলে-ফুঁসে উঠতে পারে। তাতে নিম্নচাপ এমনকি সামুদ্রিক ঘূর্ণিঝড়ের আশঙ্কা রয়েছে। গতকাল বুধবার তাপমাত্রার পারদ আরো লাফিয়ে বেড়ে গিয়ে দেশের সর্বোচ্চ ছিল বাগেরহাট জেলার মোংলায় ৪১ দশমিক ৬ ডিগ্রি সেলসিয়াস। রাজশাহীতে ৪১.৩ ডিগ্রি, পাবনা, যশোর ও চুয়াডাঙ্গায় ৪১.২ ডিগ্রি সে.। রাজধানী ঢাকায় তাপমাত্রা সর্বোচ্চ ৩৯.২ এবং সর্বনিম্ন ২৮.৬ ডিগ্রি সে.।

অবিরাম উচ্চ তাপপ্রবাহ ছড়িয়ে পড়েছে দেশের অন্তত ৫৩টি জেলায়। আবহাওয়া বিভাগের (বিএমডি) ৪৪টি পর্যবেক্ষণ স্টেশনের মধ্যে ৩৭টিতে তীব্র, মাঝারি ও মৃদু ধরনের তাপপ্রবাহ (৩৬ ডিগ্রি সেলসিয়াসের ঊর্ধ্বে) রেকর্ড করা হয়েছে। মাঝেমধ্যে কোথাও ‘যদি’ বিক্ষিপ্ত-বিচ্ছিন্নভাবে বজ্র-শিলাবৃষ্টি, কালবৈশাখীর সাথে সাময়িক বৃষ্টি হয় তখন সেখানে কিছুটা স্বস্তি আসবে। এছাড়া আপাতত আবহাওয়া বিভাগের কাছে বৃষ্টিপাতের কোনো সুখবর নেই।

দিনভর সূর্য যেন আগুন ঝলসে দিচ্ছে। রাতের ‘সর্বনিম্ন’ তাপমাত্রাও অস্বাভাবিক বেশি। দিনে-রাতে ঘরে-বাইরে কোথাও স্বস্তি নেই। প্রচণ্ড গরমে হিট স্ট্রোকে আক্রান্ত হচ্ছে অনেকেই। তাছাড়া জ¦র-সর্দি-কাশি, ডায়রিয়া, শ^াসকষ্ট, চর্মরোগসহ নানাবিধ রোগব্যাধিতে আক্রান্ত হচ্ছে প্রতিদিনই। হাসপাতাল-ক্লিনিক, ডাক্তারের চেম্বারে বাড়ছে রোগীর ভিড়।

কৃষক-কৃষিশ্রমিক, দিনে এনে দিন খাওয়া নিম্নআয়ের মানুষের কাজকর্ম জুটছে কম। কমে গেছে আয়-রোজগার। উচ্চ খরতাপে ঝলসে যাচ্ছে ফল-ফলাদির বাগান, অনেক জেলা-উপজেলায় আধাপাকা ইরি-বোরো ফসল, সবজি ক্ষেত-খামার। কেননা টানা বেশ কিছুদিন ৩৫ ডিগ্রি সেলসিয়াসের অধিক তাপমাত্রায় ফল-ফসলে হিটশকের ঝুঁকি থাকে। হিটশকে আধাপাকা ধান চিটায় নষ্ট হয়। ফলের গুটি শুকিয়ে ঝরে যায়। এ সময়ে ফসলি জমিতে সেচ দিয়ে দুয়েক ইঞ্চি পানি রাখা এবং আম, লিচুসহ ফল বাগানে মাঝেমধ্যে পানি ছিটানোর পরামর্শ দিয়েছেন কৃষিবিদরা। কিন্তু গনগনে রোদে পানির উৎসগুলো শুকিয়ে গেছে। মিলছে না পানি অধিকাংশ জায়গায়।

গতকাল দেশের আরো দেশের উল্লেখযোগ্য উচ্চ তাপমাত্রা ছিলÑ কুষ্টিয়া ৪০.৮, দিনাজপুরে ৪০.৫, ফরিদপুরে ৪০.৪, খুলনা ৪০.২, গোপালগঞ্জ ও সৈয়দপুরে ৪০, টাঙ্গাইল ও সাতক্ষীরা ৩৯.৮, পটুয়াখালী ৩৯.৫ ডিগ্রি সে.।
আজ বৃহস্পতিবার সন্ধ্যা পর্যন্ত ২৪ ঘণ্টার পূর্বাভাসে আবহাওয়াবিদ মো. হাফিজুর রহমান জানান, খুলনা বিভাগসহ দিনাজপুর, নীলফামারী, রাজশাহী, পাবনা, ফরিদপুর ও গোপালগঞ্জ জেলাসমূহের ওপর দিয়ে তীব্র তাপপ্রবাহ বয়ে যাচ্ছে। ময়মনসিংহ, মৌলভীবাজার, রাঙ্গামাটি, চাঁদপুর, নোয়াখালী, ফেনী ও বান্দরবান জেলাসহ বরিশাল বিভাগ এবং রংপুর, রাজশাহী ও ঢাকা বিভাগের অবশিষ্টাংশের ওপর দিয়ে মৃদু থেকে মাঝারী ধরনের তাপপ্রবাহ বয়ে যাচ্ছে। চলমান থাকতে পারে এই তাপপ্রবাহ।

সিলেট বিভাগের দু’এক জায়গায় অস্থায়ী দমকা, ঝড়ো হাওয়াসহ বৃষ্টি, বজ্রসহ বৃষ্টি হতে পারে। কোথাও কোথাও বিক্ষিপ্ত শিলাবৃষ্টি হতে পারে। এছাড়া দেশের অন্যত্র অস্থায়ীভাবে আংশিক মেঘলা আকাশসহ আবহাওয়া প্রধানত শুষ্ক থাকতে পারে।

সারাদেশে দিন ও রাতের তাপমাত্রা প্রায় অপরিবর্তিত থাকতে পারে। বর্তমানে দেশের সবক’টি বিভাগের অন্তত ৫৩টি জেলার উপর দিয়ে তীব্র, মাঝারি ও মৃদু ধরনের তাপপ্রবাহ বয়ে যাচ্ছে। সোমবার জারিকৃত তিন দিনের হিট অ্যালার্ট অব্যাহত রয়েছে। তুলনামূলকভাবে চট্টগ্রাম ও সিলেট বিভাগের একাংশে তাপমাত্রা কিছুটা সহনীয় পর্যায়ে রয়েছে। গতকালও সন্ধ্যা পর্যন্ত ২৪ ঘণ্টায় দেশের কোথাও ছিঁটেফোঁটা বৃষ্টিপাত হয়নি।

ঘূর্ণিঝড়ের আলামতÑ
বাংলাদেশ ও আশপাশ অঞ্চলে উচ্চ তাপদাহ। টানা প্রায় এক মাস যাবৎ চলছে তাপপ্রবাহ। ইতোমধ্যে দেশে উচ্চ তাপমাত্রা ৪৩ ডিগ্রির কাছাকাছি উঠে গেছে। তাপপ্রবাহ সারা দেশে বিস্তৃত হয়েছে। ভূ-পৃষ্ঠ বা স্থলভাগের পাশাপাশি অবিরাম সূর্যের কড়া রোদের তেজে উত্তপ্ত হয়ে উঠছে বঙ্গোপসাগর। আবহাওয়া বিশেষজ্ঞরা জানান, সমুদ্রপৃষ্ঠের তাপমাত্রা অবিরাম ২৮ ডিগ্রি সেলসিয়াস কিংবা এর ঊর্ধ্বে থাকলে সাগরে ঘূর্ণিঝড় সৃষ্টির আশঙ্কা থাকে। বেশ কিছুদিন ধরে বঙ্গোপসাগরে ২৮ ডিগ্রি সে. বা তদূর্ধ্বে তাপমাত্রা বিরাজ করছে।

এর পাশাপাশি কক্সবাজার, চট্টগ্রাম উপকূলভাগ, নোয়াখালী, পটুয়াখালী, বরিশাল, বাগেরহাট, খুলনাসহ দক্ষিণ-পশ্চিম উপকূলীয় অঞ্চলে টানা ৩৬ থেকে ৪২ ডিগ্রি সে. পর্যন্ত তাপমাত্রা রেকর্ড করা হয়েছে দফায় দফায়। বঙ্গোপসাগর এবং এর কাছাকাছি সমুদ্র উপকূলীয় এলাকার চর, দ্বীপাঞ্চলে বেশ কয়েক সপ্তাহ যাবত উচ্চ তাপমাত্রা ঘূর্ণিঝড়ের আলামত হিসেবে দেখছেন আবহাওয়াবিদগণ। চলতি এপ্রিল মাসের শেষে অথবা মে মাসের শুরুর দিকে বঙ্গোপসাগরে নিম্নচাপ-ঘূর্ণিঝড় সৃষ্টি হওয়ার আশঙ্কা তৈরি হয়েছে।

কেননা টানা উচ্চ তাপপ্রবাহ ও খরতপ্ত আবহাওয়ায় অতীত অভিজ্ঞতার প্রেক্ষাপটে একে সামুদ্রিক ঘূর্ণিঝড়ের পূর্ব-লক্ষণ হিসেবে দেখছেন বিশেষজ্ঞরা। উপকূলবাসী দুর্যোগের শঙ্কায় আছেন। আবহাওয়া বিভাগের দীর্ঘমেয়াদী পূর্বাভাসে চলতি এপ্রিল ও সামনে মে মাসে বঙ্গোপসাগরে একধিক নিম্নচাপ থেকে অন্তত একটি ঘূর্ণিঝড় সৃষ্টি হতে পারে মর্মে আশঙ্কার কথা বলা হয়েছে। অতীতে দুর্যোগের পর্যায়ক্রম অনুসারে সাধারণত এদেশে এপ্রিল-মে এবং অক্টোবর-নভেম্বর মাসে ঘূর্ণিঝড় ও জলোচ্ছ্বাস বিভিন্ন সময়ে আঘাত হানে। এই সময়কে সাইক্লোন-জলোচ্ছ্বাসের মৌসুম হিসেবে ধরা হয়। তবে আপাতত গতকাল পর্যন্ত বঙ্গোপসাগরে কোন লঘুচাপ-নিম্নচাপ সৃষ্টি হয়নি এবং কোনো সতর্ক সঙ্কেতও দেখানো হচ্ছে না।

আগামীকাল শুক্রবার সন্ধ্যা পর্যন্ত ও শনিবারসহ পরবর্তী ৪৮ ঘণ্টার (দুই দিন) আবহাওয়ার পূর্বাভাসে আবহাওয়াবিদ মো. হাফিজুর রহমান জানান, শুক্রবার অস্থায়ীভাবে আংশিক মেঘলা আকাশসহ সারাদেশের আবহাওয়া প্রধানত শুষ্ক থাকতে পারে। চলমান তাপপ্রবাহ অব্যাহত থাকতে পারে। সারাদেশে দিন ও রাতের তাপমাত্রা প্রায় অপরিবর্তিত থাকতে পারে। জলীয়বাষ্পের আধিক্যের কারণে অস্বস্তি বিরাজ করছে।

শনিবার সন্ধ্যা পর্যন্ত ২৪ ঘণ্টায় চট্টগ্রাম ও সিলেট বিভাগের দু’এক জায়গায় অস্থায়ী দমকা বা ঝড়ো হাওয়াসহ বৃষ্টি কিংবা বজ্রসহ বৃষ্টি হতে পারে। কোথাও কোথাও বিক্ষিপ্ত শিলাবৃষ্টি হতে পারে। এছাড়া দেশের অন্যত্র অস্থায়ীভাবে আংশিক মেঘলা আকাশসহ আবহাওয়া প্রধানত শুষ্ক থাকতে পারে। চলমান তাপপ্রবাহ অব্যাহত থাকতে পারে। সারা দেশে দিনের তাপমাত্রা সামান্য হ্রাস এবং রাতের তাপমাত্রা প্রায় অপরিবর্তিত থাকতে পারে। জলীয়বাষ্পের আধিক্যের কারণে গরমে-ঘামে অস্বস্তি বিরাজ করছে। এর পরের ৫ দিনে আবহাওয়ার সামান্য পরিবর্তন হতে পারে।
আবহাওয়া বিভাগ জানায়, পশ্চিমা লঘুচাপের একটি বর্ধিতাংশ পশ্চিমবঙ্গ ও এর সংলগ্ন এলাকায় অবস্থান করছে।

Show More

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Related Articles

Back to top button