ঘূণিঝড় ড্যানিয়েলের প্রভাবে সৃষ্ট বৃষ্টি ও বন্যায় লিবিয়ায় মৃতের সংখ্যা ১১ হাজার ছাড়াল, পঁচা-গলিত মরদেহ থেকে রোগ ছড়ানোর আশঙ্কা
উত্তর আফ্রিকার দেশ লিবিয়ার পূর্বাঞ্চলে ঘূণিঝড় ড্যানিয়েলের প্রভাবে সৃষ্ট বৃষ্টি ও বন্যায় বেড়েই চলেছে মৃতের সংখ্যা। এরই মধ্যে মৃতের সংখ্যা ১১ হাজার ৩০০ জনে পৌঁছেছে।
বিভিন্ন গণমাধ্যমের প্রতিবেদন থেকে এ তথ্য জানা গেছে। ঝড়ের পর প্রবল ওই বৃষ্টিতে বাঁধ ভেঙে প্রায় নিশ্চিহ্ন হয়ে গেছে দেশটির পূর্বাঞ্চলীয় দারনা শহর।
কোনো কিছু বুঝে উঠার আগেই বাঁধ ভেঙে শহরে ঢুকে পড়া পানিতে ভেসে যান অনেকে। এখন সেসব মানুষের আত্মীয়-স্বজনরা তাদের লাশ খুঁজে বেড়াচ্ছেন।
এ ঘটনায় মৃতের সংখ্যা ২০ হাজার ছাড়িয়ে যেতে পারে বলে আশঙ্কা করা হচ্ছে।
বিবিসির প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, শুধুমাত্র দারনাতেই ১১ হাজার মারা গেছে। এর বাইরে শহরটিতে এখনও ২০ হাজার মানুষ নিখোঁজ রয়েছে। সাগরে এখনও প্রায় দুই হাজারের বেশি মৃতদেহ ভাসছে বলে খবর পাওয়া গেছে। ত্রাণ ও উদ্ধারকর্মীরা বন্যার পানি সরে যাওয়ার পর কাদামাটি ও ধ্বংসস্তূপ থেকে লাশ টেনে বের করছে।
এদিকে, দারনার মেয়র দ্রুত মৃতদেহ উদ্ধারে বিশেষজ্ঞ দলগুলোর কাছ থেকে জরুরি সহায়তার আহ্বান জানিয়েছেন।
বেশ কয়েকটি দেশের উদ্ধারকারীরা বন্দর নগরীর কাদা এবং ধ্বংসাবশেষের মধ্যে সম্ভাব্য বেঁচে থাকা ব্যক্তিদের সন্ধান করছে। একটি সাহায্যকারী দল শহরটিকে যুদ্ধক্ষেত্রের সাথে তুলনা করেছে।
কোনো কিছু বুঝে উঠার আগেই বাঁধ ভেঙে শহরে ঢুকে পড়া পানিতে ভেসে যান অনেকে। এখন সেসব মানুষের আত্মীয়-স্বজনরা তাদের লাশ খুঁজে বেড়াচ্ছেন। এ ঘটনায় শুধু দারনা শহরেই মৃতের সংখ্যা ২০ হাজার ছাড়িয়ে যেতে পারে বলে আশঙ্কা করা হচ্ছে।
দারনার হাজার হাজার মানুষ এখনো নিখোঁজ। অনেকের মরদেহ এখনো উদ্ধার করা সম্ভব হয়নি। ফলে উদ্ধার না হওয়া পঁচা-গলিত মৃতদেহগুলো থেকে রোগ ছড়ানোর আশঙ্কা করা হচ্ছে। পরিস্থিতি সামাল দিতে মরদেহ উদ্ধারের পর গণকবর দেওয়া হচ্ছে।
সুনামি সদৃশ্য ভয়াবহ এই ভয়াবহ এই বন্যায় বহু পরিবার নিশ্চিহ্ন হয়ে গেছে। নিখোঁজদের হন্যে হয়ে খুঁজছেন তাদের জীবিত স্বজনরা। তাদেরই একজন ৫২ বছর বয়সী উসামা আল হুসাদি। তিনি পেশায় গাড়িচালক।
তিনি ঝড়ের পর থেকেই স্ত্রী ও পাঁচ সন্তানকে খুঁজছেন।
উসামা বললেন, “আমি হেঁটে হেঁটে সন্তানদের খুঁজছি। আমি সব হাসপাতাল ও স্কুলে গিয়েছি। কিন্তু কোথাও তাদের পাইনি।”
ভয়াবহ ওই ঝড়ের সময় বাসার বাইরে কাজে ব্যস্ত ছিলেন উসামা। ঝড় শুরু হলে তিনি স্ত্রীর মোবাইলে কল করেছিলেন। কিন্তু তা বন্ধ ছিল।
তিনি বলেন, “আমার বাবার পরিবারের মোট ৫০ জন হারিয়েছে। তাদে মধ্যে কেউ কেউ মারা গেছেন। কেউ কেউ নিখোঁজ রয়েছেন।”
লিবিয়ার আরেক নাগরিক ওয়ালি এদিন মোহাম্মেদ আদম। তিনি ইটভাটায় কাজ করেন। ২৪ বছর বয়সী এই তরুণ দারনার শহরতলিতেই থাকেন। বন্যার পানির তোড়ে সেই রাতে তার ঘুম ভেঙে যায়। এরপর শহরে যান তিনি। সেখানে গিয়ে দেখেন সব ধসে গেছে। পরিবারের ১৫ সদস্য ও ৯ বন্ধুকে হারিয়েছেন আদম। তিনি বলেন, এই উপত্যকার সবকিছু ভেসে সাগরে পড়েছে।