ছাগলনাইয়ায় ইভটিজিংয়ের প্রতিবাদ করায় ইভটিজারদের ছুরিকাঘাতে ভাই নিহত
ফেনীর ছাগলনাইয়া উপজেলার শুভপুর এলাকায় বোনকে ইভটিজিংয়ের প্রতিবাদ করতে গিয়ে ইভটিজারের ছুরিকাঘাতে রবিউল হক শাহেদ (১৮) নামের এক যুবকের নিহত হয়েছে।
নিহত রবিউল হক শাহেদ শুভপুর ইউনিয়নের জয়পুর গ্রামের মানিক মিয়ার ছেলে।পেশায় সে এস্কেভেটর চালক ছিলেন।এ ঘটনায় এলাকায় উত্তেজনা বিরাজ করছে
পুলিশ, প্রত্যক্ষদর্শী ও নিহতের বোন সাথী আক্তার জানান, ‘রবিউল হক শায়েদ তার ছোট বোনসহ পরিবারের সদস্যদের নিয়ে ঈদ উপলক্ষে শুক্রবার বিকেলে শুভপুর ইউনিয়নের শমসের গাজী দীঘি এলাকায় বেড়াতে যান। সেখানে আগে থেকে অবস্থান করা কয়েকজন বখাটে শাহেদের ছোট বোনকে উত্ত্যক্ত করে। শাহেদ তখন প্রতিবাদ করলে ক্ষিপ্ত হয়ে বখাটেরা এ নিয়ে সেখানে তুমুল তর্কাতর্কি শুরু করে। ঘটনাস্থল থেকে ফিরে শুভপুরের ২নং ওয়ার্ড ইউপি মেম্বার ফজলুর রহমান সজীবের কাছে বিচার দেন শাহেদ। ইউপি মেম্বার উভয় পক্ষকে সন্ধ্যায় তার কার্যালয়ে আসতে বলেন। ডাক পেয়ে আগে আসেন চম্পকনগর গ্রামের ঘটনায় জড়িত অভিযুক্ত যুবকরা। শাহেদ ইউপি মেম্বারের কার্যালয়ে আসা মাত্রই আবার তার সঙ্গে তর্কাতর্কিতে জড়িয়ে যায় বখাটেরা। মুহূর্তেই এক বখাটে শায়েদকে ঝাপটে ধরে বুকে ছুরিকাঘাত করে। এতে রক্তাক্ত হয়ে মাটিতে লুটিয়ে পড়ে সে। স্থানীয় লোকজন তাকে উদ্ধার করে ছাগলনাইয়া উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে নিয়ে গেলে কর্তব্যরত চিকিৎসক তাকে মৃত ঘোষণা করেন। এদিকে হামলার পর স্থানীয় লোকজন ধাওয়া করলে হামলাকারী যুবকসহ ১০ জন শুভপুর ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান আজিজুর রহমান মজনুর শুভপুর রাস্তার মাথার ব্যক্তিগত অফিসে ঢুকে আশ্রয় নিলে ফজলুর রহমান সজিব মেম্বার তাদেরকে উত্তেজিত জনতার হাত থেকে বাঁচাতে বাইর দিয়ে তালা মেরে পুলিশে খবর দেয়।’
এদিকে শাহেদ এর মৃত্যুর খবর ছড়িয়ে পড়লে বিক্ষুব্ধ এলাকাবাসী ঢাকা-চট্রগ্রাম পুরাতন মহসড়কের শুভপুর রাস্তার মোড় এলাকায় সড়কে গাছ ফেলে ব্যারিকেড দিয়ে প্রায় দেড় হাজার বিক্ষুব্ধ জনতা সন্ধ্যা ৬টা-রাত ৯টা পর্যন্ত ৩ঘন্টা বিক্ষোভ প্রদর্শন করে। বিক্ষুব্ধ জনতা ১টি সিএনজি অটোরিক্সা, ১টি মোটরসাইকেল ও স্হানীয় শুভপুর ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান আজিজুর রহমান মজনুর ব্যক্তিগত অফিসের জানালার গ্লাস ভাংচুর করে।এসময় ছাগলনাইয়া থানার ২জন পুলিশ আহত হন। এতে সড়কে যানচলাচল বন্ধ হয়ে যায়।পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনতে পুলিশ ১২ রাউন্ড ফাকা গুলি ছুঁড়ে। থানা পুলিশ, ডিবি পুলিশ ও র্যাব ঘটনাস্থলে গিয়ে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনে।
খবর পেয়ে ফেনীর অতিরিক্ত পুলিশ সুপার শাহাদাত হোসেন ও ওসি সুদ্বীপ রায় পলাশ ঘটনাস্থল পরিদর্শন করেন। ছাগলনাইয়া উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সের কর্তব্যরত চিকিৎসক জানান, নিহত শাহেদকে হাসপাতালে আনার আগেই তার মৃত্য হয়েছে। তার বুকে একাধিক ছুরিকাঘাত করা হয়েছে।
ছাগলনাইয়া থানার ওসি সুদ্বীপ রায় পলাশ জানান,এব্যাপারে থানায় হত্যা মামলা দায়েরের প্রস্তুতি চলছে। তদন্তের স্বার্থে আটকদের নাম পরিচয় আপাতত বলা যাচ্ছে না। লাশ ময়নাতদন্তের জন্য ফেনী হাসপাতাল মর্গে পাঠানো হয়েছে। ফেনীর
অতিরিক্ত পুলিশ সুপার শাহাদাত হোসেন জানান, জিজ্ঞাসাবাদের জন্য পুলিশ ঘটনাস্থল থেকে ১০জনকে পুলিশ হেফাজতে নিয়ে আসা হয়েছে। আমাদের চেষ্টা থাকবে দোষী ব্যক্তিদের সর্ব্বোচ্চ শাস্তি নিশ্চিত করার।