Hot

‘তলেতলে আপস’ কি আওয়ামী লীগের কৌশলের অংশ

‘পিটার হাসের মুরব্বিদের সঙ্গে আওয়ামী লীগের কথাবার্তা শেষ’ এবং ‘কেউ নিষেধাজ্ঞা দেবে না, তলেতলে আপস হয়ে গেছে’—সাম্প্রতিক সময়ে এসব বক্তব্য দিচ্ছেন আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল কাদের। সাম্প্রতিক তাঁর দেওয়া এ ধরনের বক্তব্য নিজেদের ওপর চাপ সরানোর কৌশল হতে পারে বলে মনে করছেন দলটির নেতাদের কেউ কেউ। তবে অধিকাংশ নেতা, এমনকি মন্ত্রিপরিষদের অধিকাংশ সদস্য তলেতলে সমঝোতা বা কথাবার্তা শেষ হওয়ার তথ্য জানেন না। এর ফলে আগামী জাতীয় সংসদ নির্বাচন নিয়ে দেশে-বিদেশে আসলে কী ঘটছে, তা নিয়ে ধোঁয়াশা রয়েই গেছে।

আওয়ামী লীগের দায়িত্বশীল নেতাদের মত হচ্ছে, দলের সাধারণ সম্পাদকের এমন বক্তব্যের পেছনে দুটি কারণ থাকতে পারে। প্রথমত, দলের নেতা-কর্মী ও সরকারের প্রশাসনকে আশ্বস্ত করা। দ্বিতীয়ত, সরকারের পদত্যাগের দাবিতে বিএনপির চলমান এক দফার আন্দোলনকে বিভ্রান্ত করা। আওয়ামী লীগের নীতিনির্ধারকদের ধারণা, বিএনপি আন্দোলন করে সরকার নামাতে পারবে না। তবে ভোটের আগে একটা ধাক্কা দেওয়ার চেষ্টা করবে। এই চেষ্টা দুর্বল করে দেওয়াই আওয়ামী লীগের লক্ষ্য।

এ বিষয়ে জানতে চাইলে আওয়ামী লীগের সভাপতিমণ্ডলীর সদস্য কাজী জাফর উল্যাহ বলেন, দলের সাধারণ সম্পাদক কোন প্রেক্ষাপটে কী বলেছেন, সেটা নিয়ে তিনি বলতে পারবেন না। তবে তিনি বলেন, বিএনপি যে তত্ত্বাবধায়ক সরকার বা নিরপেক্ষ সরকারের দাবিতে আন্দোলন করছে, এই বিষয়ে বিদেশিদের কোনো চাপ নেই। বিদেশিরা অবাধ ও সুষ্ঠু নির্বাচনের কথা বলছে। আওয়ামী লীগের সভাপতি ও প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা নিশ্চিত করেছেন যে ভোট অবাধ ও সুষ্ঠু হবে। এরপর আর চাপ কিসের?

আওয়ামী লীগ বিরোধী দলের মতো লাগাতার কর্মসূচি নিয়ে রাজপথে থাকার কারণ সম্পর্কে জানতে চাইলে কাজী জাফর উল্যাহ বলেন, সামনে নির্বাচন, প্রতিটি আসনে ১০ জন বা এর বেশি মনোনয়নপ্রত্যাশী। রাজপথে নিজেদের শক্তি দেখাতে চান সবাই। এটা ভোটের প্রস্তুতিও বলা যায়।

আওয়ামী লীগের কেন্দ্রীয় কমিটির পাঁচ দায়িত্বশীল নেতা এবং মন্ত্রিসভার তিন সদস্যের সঙ্গে এই বিষয়ে কথা হয়। তাঁদের মূল বক্তব্য হচ্ছে—দলের সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল কাদের যুক্তরাষ্ট্রসহ পশ্চিমাদের ইঙ্গিত করে যে সমঝোতার কথা বলছেন, এ সম্পর্কে তাঁদের কোনো ধারণা নেই। দল ও সরকারের মধ্যে কারা কারা বিষয়গুলো সম্পর্কে ওয়াকিবহাল, তা–ও পরিষ্কার নয়। এর ফলে এসব বিষয় নিয়ে না ভেবে দৈনন্দিন যেসব নির্দেশনা আসে, সে অনুযায়ী নিজেদেরকে দলীয় কর্মসূচিতে সম্পৃক্ত রাখার চেষ্টা করছেন নেতারা।

অগ্রাধিকারে রাজপথ নিয়ন্ত্রণে রাখা

আওয়ামী লীগের দায়িত্বশীল নেতারা বলছেন, দলের অধিকাংশ নেতার কাছে এখন পর্যন্ত বার্তা হচ্ছে, আগামী জাতীয় সংসদ নির্বাচন পর্যন্ত রাজপথ দখলে রাখতে হবে। সংসদ সদস্যদেরও সে রকমই বার্তা দেওয়া হয়েছে। ভোটে কারা অংশ নেবে, আন্তর্জাতিক বিশ্বকে কীভাবে সামাল দেওয়া হবে—এটা নিয়ে ভাববে দলের শীর্ষ নেতৃত্ব। এর ফলে রাজপথে শক্তি দেখানোর কাজেই নেতারা অগ্রাধিকার দিচ্ছেন।

আওয়ামী লীগের একজন কেন্দ্রীয় নেতা নাম প্রকাশ না করার শর্তে বলেন, দলের শীর্ষ নেতারা মার্কিন ভিসা নীতি কিংবা নিষেধাজ্ঞাকে পাত্তা না দেওয়ার কথা বলছেন, তাহলে আবার তলেতলে সবকিছু ঠিক করার বিষয়টি এতটা গুরুত্বপূর্ণ কেন হলো?

আরেক কেন্দ্রীয় নেতা মনে করেন, ভিসা নীতিসহ পশ্চিমাদের তৎপরতায় দলের কর্মী, সমর্থক এবং সরকারের প্রশাসনে চাপ তৈরি হয়েছে। এই চাপ সরাতেই ওবায়দুল কাদের তলেতলে সমঝোতার কথা বলছেন। হয়তো কিছু একটা হয়েছে। নতুবা দলের সাধারণ সম্পাদক কেন প্রকাশ্যে এসব কথা বলবেন? তবে কী বিষয়ে, কার সঙ্গে সমঝোতা হয়েছে, এর কিছুই জানেন না বলে জানান ওই নেতা।

আওয়ামী লীগ দলীয় একাধিক সূত্র বলছে, আওয়ামী লীগের ১৫ বছরের শাসনামলে সরকারের অনেক উন্নয়নমূলক কর্মকাণ্ডের বাইরে আরও একটি বড় অর্জন হচ্ছে—সরকারের সবগুলো বিভাগের ওপর পূর্ণ নিয়ন্ত্রণ। দলের ভেতরে নানা দ্বন্দ্ব-কোন্দল থাকলেও দলের সভাপতি ও প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার নেতৃত্বের প্রশ্নে সবার ঐকমত্য রয়েছে। শেখ হাসিনার নেতৃত্বকে সারা বিশ্ব সমীহ করে, এটাও আওয়ামী লীগে প্রতিষ্ঠিত। এর ফল পাওয়া গেছে ২০১৪ ও ২০১৮ সালের নির্বাচনে। কিন্তু এবার মার্কিন ভিসা নীতির প্রয়োগ, র‌্যাবের ওপর নিষেধাজ্ঞা, অবাধ ও সুষ্ঠু নির্বাচন অনুষ্ঠানের ব্যাপারে পশ্চিমা দেশগুলোর জোরালো বক্তব্য—এসব ভিন্ন পরিস্থিতি তৈরি করেছে।

ভিসা নীতির চাপ

আওয়ামী লীগের দলীয় সূত্র বলছে, মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র ও পশ্চিমাদের তৎপরতা অবশ্যই কিছুটা চাপ হয়ে এসেছে আওয়ামী লীগের ওপর। কেননা, যে বিএনপি দীর্ঘদিন রাজপথে নামতে পারেনি, তাদের সভা-সমাবেশের সুযোগ দিতে হচ্ছে। বিএনপিসহ বিরোধীরা বড় বড় জমায়েত করে নিজেদের শক্তি দেখাচ্ছে।

এমনকি সরকার পতনের একদফা দাবি নিয়ে রাজপথ গরম করছে। এগুলো বিদেশি চাপের ফলেই হচ্ছে। এই চাপ সরাতেই দল ও সরকারের নীতিনির্ধারকেরা সবকিছু ঠিক হয়ে যাওয়ার কথা বলছেন।

আওয়ামী লীগের মন্ত্রিসভার একজন সদস্য নাম প্রকাশ না করার শর্তে বলেন, জাতীয় পার্টি, ইসলামী আন্দোলন বাংলাদেশসহ সরকার–ঘেঁষা অনেক দল এবার এখনো নির্বাচনের অংশ নেওয়ার বিষয়ে কোনো পাকা কথা দিচ্ছে না। বিরোধী দল এখনো এক দফার দাবিতে চাপ দিয়ে যাচ্ছে।

যুক্তরাষ্ট্র কখন কোন নিষেধাজ্ঞা বা চাপ দেয়, সেটাও বোঝা যাচ্ছে না। এসব বাস্তবতা স্বভাবতই দল ও সরকারের মধ্যে কিছুটা হলেও অস্বস্তি তৈরি করছে। এই অস্বস্তি দূর করতে আওয়ামী লীগের আত্মবিশ্বাসী মনোভাব প্রকাশ ছাড়া আর কী করার আছে। দলের নীতিনির্ধারকেরা সেটাই করছেন।

আওয়ামী লীগ নেতাদের মনোভাব ও সরকারের ভেতরের আলোচনা থেকে বোঝা যাচ্ছে, আওয়ামী লীগের মূল লক্ষ্য যথাসময়ে নির্বাচন সম্পন্ন করা। ভোটের আগে যুক্তরাষ্ট্রসহ পশ্চিমারা আর কোনো নতুন চাপ তৈরি না করলে ভোট হয়ে যাবে। বিএনপির ভোট ঠেকানোর ক্ষমতা নেই। আর সরকার গঠন হয়ে গেলে আন্তর্জাতিক বিশ্বও হয়তো কিছুটা নরম হবে। তখন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা অর্থনৈতিক সংকট নিরসনে তৎপর হবেন। এখন পর্যন্ত আওয়ামী লীগের কৌশল, ভরসা এবং তৎপরতা সেভাবেই এগোচ্ছে।

Show More

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Related Articles

Back to top button
Situs Toto
bacan4d
bacansport login
toto togel
slot toto
Toto slot gacor
bacan4d
slotgacor
bacan4d rtp
bacan4d
bacan4d
bacan4d login
totoslotgacor
slot gacor
TOTO GACOR
bacan4d
bacan4d slot gacor
bacan4d login
Bacan4d
bacan4d
bacan4d bonus
Toto gacor
Toto gacor
slot gacor hari ini
bacan4d toto
bacan4d toto
bacan4d
bacan4d
bacan4d
bacan4d
bacan4d link alternatif
slot gacor bett 200
situs toto
SITUS TOTO
toto 4d
Slot Toto
Slot Toto
Slot Toto
Situs toto
Slot toto
Slot Dana
Slot Dana
Judi Bola
Judi Bola
Slot Gacor
toto slot
bacan4d toto
bacan4d akun demo slot
bacantogel
bacan4d
bacan4d
slot gacor
bacantoto
bacan4d
Bacan4d Login
slot demo
Bacan4d Toto
toto gacor
Slot Gacor
Live Draw
Live Draw Hk
toto slot
Bacan4d slot gacor
toto macau
toto slot
Toto Gacor
slot dana
bacan4d
bacan4d
bacan4d
bacan4d
Slot Dp Pulsa
Bacan4d Login
toto slot
Bacansports/a>
xx1toto
xx1toto
xx1toto
xx1toto
xx1toto
xx1toto
xx1toto
xx1toto
xx1toto
xx1toto
xx1toto
xx1toto
xx1toto
xx1toto
xx1toto
xx1toto
xx1toto
xx1toto
xx1toto
xx1toto
xx1toto
xx1toto
xx1toto
xx1toto
xx1toto
xx1toto
toto slot
bacansport
bacansport
bacansport
bacansport
bacansport
bacansport
xx1toto
xx1toto
xx1toto
xx1toto
slot gacor
xx1toto
xx1toto
xx1toto
xx1toto
xx1toto
xx1toto
xx1toto
xx1toto
xx1toto
xx1toto
xx1toto
xx1toto
xx1toto
xx1toto
xx1toto
xx1toto
xx1toto
toto slot
slot demo
toto slot gacor
bacansports Slot toto toto slot Slot toto Slot dana Slot toto slot maxwin slot maxwin toto slot toto slot slot dana
Toto Bola
xx1toto
xx1toto
xx1toto
xx1toto
xx1toto
xx1toto
xx1toto
xx1toto
xx1toto
xx1toto
xx1toto
xx1toto
xx1toto
xx1toto
xx1toto
xx1toto
xx1toto
xx1toto
xx1toto
xx1toto
xx1toto
xx1toto
xx1toto
xx1toto
xx1toto
xx1toto
bacan4d
ts77casino
situs toto
slot pulsa
bacansports
situs toto
slot toto
situs toto
slot toto
situs toto
toto slot
bacansport
bacansport
bacansports
slot toto
xx1toto
xx1toto
xx1toto
xx1toto
xx1toto
situs toto
situs toto
xx1toto
toto slot
xx1toto
xx1toto
slot qriss
Slot Toto
slot dana
situs toto
slot toto
slot dana
Situs Toto Slot Gacor
xx1toto
xx1toto
bacan4d
xx1toto
xx1toto
toto slot
situs toto slot gacor
toto gacor
toto gacor
toto gacor
toto gacor
bacan4d
bacan4d
bacan4d
bacan4d
bacan4d
situs toto
Slot Toto
Toto Slot
Slot Gacor
Slot Gacor
Slot Gacor
slot toto
Toto Slot
slot gacor
situs togel
Toto Slot
xx1toto
bacansport
bacan4d
toto slot
situs toto
slot gacor
Toto Slot
slot maxwin
slot demo