পণ্যের বিশাল মজুত খাতুনগঞ্জে
দাম বাড়ানো নিয়ে প্রশ্ন
চাক্তাই-খাতুনগঞ্জে রমজানের অতিপ্রয়োজনীয় ভোগ্যপণ্যের পর্যাপ্ত মজুত রয়েছে। ঠিক রয়েছে সরবরাহ চেইনও। তার পরও এসব পণ্যের দাম বাড়তির দিকেই রয়েছে। এ নিয়ে প্রশ্ন উঠেছে ভোক্তামহলে।
নির্ভরযোগ্য সূত্র জানাচ্ছেন, ব্যবসায়ীরা রমজান সামনে রেখে পিঁয়াজ, ছোলা, রসুন, মটর, ভোজ্য তেলসহ অন্যান্য প্রয়োজনীয় পণ্য আমদানি করেছেন পর্যাপ্ত পরিমাণে। অথচ এক বছরের ব্যবধানে এসব পণ্যের দাম বেড়েছে দুই থেকে তিন গুণ। ব্যবসায়ীরা অবশ্য দাবি করছেন, ডলার সংকট, লোহিত সাগরের দ্বন্দ্ব ও পরিবহন খরচ বেড়ে যাওয়ায় গত বছরের চেয়ে ভোগ্যপণ্যের দাম বেড়েছে। চাক্তাই-খাতুনগঞ্জ আড়তদার সাধারণ ব্যবসায়ী কল্যাণ সমিতির সাধারণ সম্পাদক মোহাম্মদ মহিউদ্দিন বলেন, ‘বাজারে রমজানের অতিপ্রয়োজনীয় ভোগ্যপণ্যের মজুদ পর্যাপ্ত রয়েছে। কিন্তু আমদানি খরচ বেড়ে যাওয়ায় প্রতিটি পণ্যের দাম বেড়েছে। যদিও সরকার রমজান ঘিরে কয়েকটি পণ্যের শুল্ক কমিয়েছে। কিন্তু এ সিদ্ধান্ত দু-এক মাস আগে করলে জনগণ উপকৃত হতো। কারণ এরই মধ্যে আমদানিকারকরা প্রয়োজনীয় প্রায় সব পণ্য আমদানির কাজ শেষ করেছেন।’ কাস্টমসের এক কর্মকর্তা বলেন, ‘রমজানে যেসব পণ্যের চাহিদা রয়েছে সেগুলো এরই মধ্যে আমদানি করেছেন ব্যবসায়ীরা। গত বছরের চেয়ে এবার আমদানি অনেকাংশ বেড়েছে। এরই মধ্যে কিছু পণ্য খালাস হয়েছে। বাকিগুলো খালাসের অপেক্ষায় রয়েছে।’
দেশের অন্যতম পাইকারি বাজার খাতুনগঞ্জের ব্যবসায়ীরা জানান, রমজান শুরু হওয়ার তিন থেকে চার মাস আগেই অতিপ্রয়োজনীয় পণ্যের আমদানি শুরু হয়। রমজানের অতিপ্রয়োজনীয় পণ্যের মধ্যে রয়েছে পিঁয়াজ, ছোলা, মটর, ভোজ্য তেল, ডাল ও খেজুর। রমজান শুরু হওয়ার এক মাসে আগেই আমদানি করা সিংহভাগ পণ্য গুদামজাত হয়েছে। ভোক্তারা জানান, সরবরাহ ও মজুদ পর্যাপ্ত থাকলেও রমজানে অতিপ্রয়োজনীয় পণ্যের দাম বেড়েছে দুই থেকে তিন গুণ। গত বছর রমজানে খাতুনগঞ্জে পিঁয়াজ ৩০ টাকা কেজি বিক্রি হলেও এবার ৯০ টাকা। ১১০ টাকার রসুন ২৪০ টাকা। সাধারণ মানের ৭০-৮০ টাকার খেজুর ১৯০ থেকে ২৫০ টাকা। ৫৭ টাকার মটর ৬৩ টাকা। ৮৭ টাকার মসুর ডাল ১০১ টাকা। ১ হাজার ৩৯০ টাকার এলাচ ২ হাজার ২০০ টাকা। ৩৮০ টাকার কিশমিশ ৪১৫ টাকা। ২ হাজার ৭০০ টাকার অস্ট্রেলিয়ান ছোলা ৩ হাজার ৪০০ টাকা মণ। ৩ হাজার টাকার ভারতীয় ছোলা ৩ হাজার ৫০০ টাকা। ৩ হাজার ৯৮০ টাকার চিনি ৪ হাজার ৯৫০ টাকা মণ। অথচ ঘটনা উল্টো হওয়ার কথা। সব ঠিক থাকতেও কেন দাম বাড়ছে, এর জবাব মিলছে না। চট্টগ্রাম কাস্টমসসূত্রে জানা গেছে, গত ১ অক্টোবর থেকে চলতি বছরের ২০ জানুয়ারি পর্যন্ত চট্টগ্রাম বন্দর দিয়ে আমদানি হয়েছে ১ লাখ ১৯ হাজার মেট্রিক টন চিনি। আগের বছরের একই সময়ে যা ছিল ৮০ হাজার মেট্রিক টন। গত তিন মাসে অপরিশোধিত ভোজ্য তেল আমদানি হয়েছে ৭ লাখ ৪৭ হাজার মেট্রিক টন। আগের বছর যা ছিল ৬ লাখ ৫৯ মেট্রিক টন। ছোলা আমদানি হয়েছে ৪৯ হাজার মেট্রিক টন। গত মৌসুমে যা ছিল ২৪ হাজার ৪৮৬ মেট্রিক টন। পিঁয়াজ আমদানি হয়েছে ১ লাখ ৯৬ হাজার মেট্রিক টন। গত বছর একই সময়ে যা ছিল ১ লাখ ৫৪ হাজার মেট্রিক টন। একই সময়ের মধ্যে ডাল আমদানি করা হয়েছে ১ লাখ ৭৩ হাজার মেট্রিক টন; যা গত বছর ছিল ১ লাখ ৯০ হাজার মেট্রিক টন।