Trending

পর্যটন মহাপরিকল্পনা ঝুলে আছে ৪ বছর

দেশের পর্যটন খাতের পরিকল্পিত বিকাশে মহাপরিকল্পনা প্রণয়নের উদ্যোগ নেওয়া হলেও তা চার বছরেও কার্যকর হয়নি। ৩০ বছর মেয়াদি এই মহাপরিকল্পনা সম্প্রতি চূড়ান্ত হলেও এখনো তা ঝুলে আছে জাতীয় পর্যটন কাউন্সিলের (এনটিসি) অনুমোদনের অপেক্ষায়।

পর্যটন খাত সংশ্লিষ্ট ব্যক্তিরা বলছেন, এই মহাপরিকল্পনা বাস্তবায়নে যত দেরি হবে, পর্যটন খাতে অব্যবস্থাপনা তত বাড়বে। ২০২০ সালের ১ জানুয়ারি ২৮ কোটি ৬৬ লাখ টাকা ব্যয়ে পর্যটন মহাপরিকল্পনার প্রণয়নের আনুষ্ঠানিক কাজ শুরু করে বাংলাদেশ ট্যুরিজম বোর্ড (বিটিবি)।

অবশ্য এর আগে এটি প্রণয়নের কাজ পাওয়া বিদেশি পরামর্শক সংস্থা আইপিই গ্লোবালের সঙ্গে ২০১৯ সালে চুক্তি করে বিটিবি।

চুক্তি অনুযায়ী, ২০২০ সালের ৩০ জুন কাজ শেষ হওয়ার কথা ছিল। কিন্তু করোনার কারণে যথাসময়ে শেষ না হওয়ায় ২০২২ সালের ডিসেম্বর পর্যন্ত সময় বাড়ানো হয়। মহাপরিকল্পনা প্রণয়নের কাজের প্রক্রিয়া নিয়ে অভিযোগ তুলেছিলেন বেসরকারি খাতের উদ্যোক্তারা। অবশেষে বেসরকারি খাতের পর্যালোচনা শেষে সম্প্রতি এই মহাপরিকল্পনার চূড়ান্ত করেছে বিটিবি।

জানতে চাইলে ট্যুর অপারেটরস অ্যাসোসিয়েশন অব বাংলাদেশের (টোয়াব) সভাপতি শিবলুল আজম কোরেশী গতকাল কালের কণ্ঠকে বলেন, ‘আমাদের পর্যটন খাত কিভাবে বিকশিত হবে, তার রোডম্যাপ হলো এই মাস্টারপ্ল্যান। মহাপরিকল্পনার কাজ শেষ করতে দেরির কারণ হিসেবে করোনা মহামারিকে দায়ী করা হচ্ছে। কিন্তু এটা ঠিক যে অনেক দেরি হয়েছে।

যেকোনো পরিকল্পনা প্রণয়নের পর বাস্তবায়নের পর্বই আসল।’

টোয়াব সভাপতি জানান, মহাপরিকল্পনার খসড়া নিয়ে কিছু আপত্তি জানানো হয়েছিল। এর বেশ কিছু সংশোধন করা হয়েছে, তবে সবগুলো হয়নি। জানতে চাইলে বাংলাদেশ ট্যুরিজম বোর্ডের সিইও আবু তাহের মো. জাবের কালের কণ্ঠকে বলেন, ‘করোনা মহামারিসহ নানা কারণে আমাদের কাজ শেষ করতে দেরি হয়েছে। তবে চূড়ান্ত মহাপরিকল্পনা এখন জাতীয় পর্যটন কাউন্সিলে অনুমোদন করাতে হবে।

মহপরিকল্পনা বাস্তবায়নে পাঁচটি প্রকল্প নেওয়া হচ্ছে। মহাপরিকল্পনায় যে এক হাজার ৪৯৮টি পর্যটন সম্পদ চিহ্নিত করা হয়েছে, সেখানে ট্যুরিস্ট এবং বিনিয়োগকারীদের জন্য যেসব সুবিধা দরকার, তা তৈরি করে দেব।’

বিটিবি সূত্র জানায়, মহাপরিকল্পনায় সারা দেশে এক হাজার ৪৯৮টি ট্যুরিজম রিসোর্স বা পর্যটন সম্পদ চিহ্নিত করা হয়েছে। এর ভেতরে প্রতিটি বিভাগভিত্তিক রিজিওনাল প্ল্যানও রয়েছে, যেখানে রয়েছে ৫৩টি ক্লাস্টার। এখানে রয়েছে মার্কেটিং, ইনভেস্টমেন্ট এবং অ্যাকশন প্ল্যান।  এ ছাড়া বাজার সম্ভাবনা, স্বাতন্ত্র্য, সম্পদের প্রাপ্যতা ও স্থায়িত্বের ভিত্তিতে এগুলোকে ১৪টি থিমে মূল্যায়ন করা হয়েছে।

খাতসংশ্লিষ্ট ব্যক্তিরা বলছেন, বিপুল সম্ভাবনা সত্ত্বেও বিশ্বে পর্যটনশিল্পে বাংলাদেশের অবস্থান তলানিতে। মুন্ডি ইনডেক্সের তথ্য অনুযায়ী, পর্যটনশিল্পে বিশ্বের ১৮৮টি দেশের মধ্যে বাংলাদেশের অবস্থান ১৪১তম, আর এশিয়ার ৪৬টি দেশের মধ্যে ৪২তম।

পরিসংখ্যান ব্যুরোর (বিবিএস) গত বছরের এক জরিপের তথ্য অনুযায়ী, দেশের জিডিপিতে পর্যটন খাতের অবদান ৩.০২ শতাংশ, টাকার অঙ্কে যা ৮০ হাজার থেকে ৯০ হাজার কোটি টাকা।

পাটা বাংলাদেশ চ্যাপ্টারের সাধারণ সম্পাদক তৌফিক রহমান কালের কণ্ঠকে বলেন, ‘একটা পূর্ণাঙ্গ মহাপরিকল্পনা ছাড়া পৃথিবীর কোনো দেশই পর্যটন খাতে পরিকল্পিত উন্নয়ন করতে পারেনি। মাস্টারপ্ল্যান আরো ২০ বছর আগে হওয়া উচিত ছিল। মাস্টারপ্ল্যান না থাকার কারণে আমরা পিছিয়ে পড়েছি।’

বেসামরিক বিমান পরিবহন ও পর্যটন মন্ত্রণালয়ের সচিব মো. মোকাম্মেল হোসেন বলেন, ‘মহাপরিকল্পনার কাজ হয়েছে, এখন এটা বাস্তবায়ন করতে হবে। আমরা পাঁচটি প্রকল্প চূড়ান্ত করেছি, যেটি পরিকল্পনা মন্ত্রণালয়ের বিবেচনাধীন রয়েছে। আশা করছি, ২০২৪ সাল থেকেই মাস্টারপ্ল্যানের বাস্তবায়ন শুরু হয়ে যাবে।’

পর্যটনের উন্নয়নে ১৯টি মন্ত্রণালয়ের প্রত্যক্ষ ও পরোক্ষ সম্পৃক্ততা আছে। কিন্তু এসব সংস্থার মধ্যে সমন্বয়হীনতার অভিযোগ খাতসংশ্লিষ্ট ব্যক্তিদের দীর্ঘদিনের।

বেসামরিক বিমান পরিবহনের পর্যটন মন্ত্রণালয়ের সচিব মো. মোকাম্মেল হোসেন বলেন, ‘ট্যুরিজমের ম্যান্ডেট রয়েছে আমাদের, কিন্তু পর্যটনের অনেক কিছু নির্ভর করছে অন্য মন্ত্রণালয়ের ওপর। ভিসা সহজীকরণের বিষয় আমাদের হাতে নেই, সেটা সুরক্ষা সেবা বিভাগ করবে। পর্যটনের উন্নয়নে সব মন্ত্রণালয়ের সমন্বিত উদ্যোগ প্রয়োজন।’

ব্যবসায়ীদের শীর্ষ সংগঠন এফবিসিসিআইয়ের সাবেক সভাপতি মো. জসিম উদ্দিন বলেন, ‘দেশের অর্থনীতির জন্য পর্যটন একটি সম্ভাবনাময় খাত। তবে এই শিল্পের বিকাশ ও মানোন্নয়নে সরকারি-বেসরকারি প্রতিষ্ঠানগুলোর সমন্বিত অংশগ্রহণের বিকল্প নেই।’

বেসামরিক বিমান পরিবহন ও পর্যটন মন্ত্রী মুহাম্মদ ফারুক খান বলেন, ‘সরকারের বিভিন্ন কার্যক্রম ও বেসরকারি উদ্যোক্তাদের কাজের ফলে এর মধ্যে দেশীয় পর্যটকের সংখ্যা অনেক বেড়েছে। এখন আমরা বিদেশি পর্যটক বাড়ানোর জন্য কাজ করছি। দেশের পর্যটনের পরিকল্পিত উন্নয়নের জন্য এরই মধ্যে পর্যটন মহাপরিকল্পনা প্রণয়ন করা হয়েছে।’

Show More

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Related Articles

Back to top button