পুরান ঢাকায় ১৭ কোটি টাকা খরচার সুফল কী?
একটু বৃষ্টিতেই রাজধানীর পুরান ঢাকার আবুল হাসনাত রোডে সৃষ্টি হয় জলাবদ্ধতা। গতকাল বিকেল সোয়া পাঁচটায় তোলা
যে পথ হয়ে পানি নামবে, সেই পথ (নালা) তৈরির কাজ না করেই বিভিন্ন এলাকার নর্দমার উন্নয়নকাজ করা হয়েছে।
বছরের পর বছর জলাবদ্ধতার দুর্বিষহ ভোগান্তিতে বাসিন্দারা। সেই দুর্ভোগ থেকে স্বস্তি দিতে ১৭ কোটি টাকা ব্যয়ে দুই বছরের বেশি সময় আগে থেকে নালা সংস্কারের কাজ করে আসছে ঢাকা দক্ষিণ সিটি করপোরেশন (ডিএসসিসি)। কিন্তু ফল প্রায় শূন্য। সামান্য বৃষ্টিতেই পানিতে ডুবে যাচ্ছে সড়ক। দুই দিন ধরে পুরান ঢাকার কাজী আলাউদ্দিন রোড ও এর আশপাশের এলাকায় এমন চিত্র দেখা গেছে।
দক্ষিণ সিটির সংশ্লিষ্ট প্রকৌশলীরা বলছেন, কাজী আলাউদ্দিন রোড, আগা সাদেক রোডসহ আশপাশের সড়কের পানি সরাতে তাঁরা নতুন করে আরেকটি সংযোগ লাইন করার পরিকল্পনা করেছেন। ওই সংযোগ লাইনের কাজ শেষ হলে এসব এলাকার পানি বুড়িগঙ্গা নদীতে গিয়ে পড়বে। এতে ব্যয় হবে আরও ১৭ কোটি টাকা। কাজটি শেষ হলে পুরান ঢাকার বাসিন্দাদের জলাবদ্ধতার ভোগান্তি স্থায়ীভাবে ঘুচবে।
তবে নাম প্রকাশ না করার শর্তে দক্ষিণ সিটিরই একাধিক প্রকৌশলী বলছেন, আগে আউটলেটের (যে পথ দিয়ে পানি নদীতে গিয়ে পড়বে) কাজ করা উচিত ছিল। তা না করে বিভিন্ন এলাকার পানির সংযোগ লাইনের কাজ করে কোটি কোটি টাকা খরচ করা হয়েছে। এ কারণে ফল মিলছে না। এ জন্য পরিকল্পনার ঘাটতিকেই দায়ী করছেন তাঁরা।
প্রত্যক্ষদর্শীরা জানান, গত শুক্রবার দুপুরের বৃষ্টির পানি গতকাল শনিবারও আগা সাদেক রোডসহ আশপাশের এলাকায় জমে ছিল। এর মধ্যে গতকাল আবার মুষলধারে বৃষ্টি হওয়ার কারণে সড়কে পানি আরও বেড়েছে। ঘণ্টার পর ঘণ্টা এসব এলাকার বাসিন্দারা কার্যত ঘরবন্দী ছিলেন।
আগা সাদেক এলাকায় বসবাস করেন ঢাকা দক্ষিণ সিটির ৩৩ নম্বর ওয়ার্ডের কাউন্সিলর মো. আউয়াল হোসেন। গতকাল সন্ধ্যা সাড়ে সাতটার দিকে মুঠোফোনে তিনি প্রথম আলোকে বলেন, তাঁর বাসার সামনের সড়কে পানি জমে আছে। এলাকার মানুষজন পানি নিয়ে অনেক কষ্টে আছেন।
পুরান ঢাকার বাংলাদেশ মাঠের পাশে গতকাল বিকেল চারটার দিকে কথা হয় রিকশাচালক জসিম উদ্দিনের সঙ্গে। তিনি বলেন, ‘সামান্য বৃষ্টি হলেই সড়কে পানি জমে যাচ্ছে। যেদিকে রিকশার চাকা ঘুরাচ্ছি, সেদিকেই পানি। কিছু কিছু এলাকায় কোমর পর্যন্ত পানি থাকায় শরীর ভিজে গেছে।’
ঢাকা দক্ষিণ সিটির প্রকৌশল বিভাগ সূত্র বলছে, পুরান ঢাকার কাজী আলাউদ্দিন রোড, আগা সাদেক রোড, আবুল হাসনাত রোড, সিদ্দিকবাজার, শরৎচন্দ্র চক্রবর্তী রোড ও কে পি ঘোষ স্ট্রিট এলাকার সড়ক ও নালা সংস্কারকাজে প্রায় ১৭ কোটি টাকা ব্যয় হচ্ছে। তবে এসব এলাকার পানি সরাতে মূল যে সংযোগ লাইন তৈরি করার কথা ছিল, সেই কাজ এখনো শুরুই হয়নি। কেবল গত মাসে কার্যাদেশ দেওয়া হয়েছে।
কোটি কোটি টাকা খরচের পরও সড়ক থেকে কেন পানি সরছে না—জানতে চাইলে ঢাকা দক্ষিণ সিটির পরিবেশ সার্কেলের তত্ত্বাবধায়ক প্রকৌশলী খায়রুল বাকের প্রথম আলোকে বলেন, আশপাশের সব এলাকার পানির সংযোগ এসে পড়েছে পুরান ঢাকার কাজী আলাউদ্দিন রোডে। এই রোডের নালা নির্মাণের কাজ এখনো শেষ হয়নি। তাই পানি নামছে না।
দক্ষিণ সিটির প্রকৌশল বিভাগের নথি বলছে, কাজী আলাউদ্দিন রোডের নালা সংস্কারের কাজ ২০২১ সালের ডিসেম্বর মাসেই শেষ হওয়ার কথা ছিল। কিন্তু ২০২৩ সালের জুন মাসে এসেও ওই কাজ আর শেষ হয়নি।
প্রকল্প বাস্তবায়নে কেন এত বিলম্ব, জানতে চাইলে খায়রুল বাকের বলেন, নানা কারণে কাজে ধীরগতি ছিল। এখন পর্যন্ত তিন ভাগের দুই ভাগ কাজ শেষ হয়েছে। আগামী মাসের মধ্যে এই কাজ শেষ করতে ঠিকাদারকে নির্দেশনা দেওয়া হয়েছে।
তবে জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের নগর ও অঞ্চল পরিকল্পনা বিভাগের অধ্যাপক ও ইনস্টিটিউট অব প্ল্যানিং অ্যান্ড ডেভেলপমেন্টের (আইপিডি) নির্বাহী পরিচালক আদিল মুহাম্মদ খান বলেন, পানি কোন পথ দিয়ে নামবে, সেই কাজ আগে করা উচিত ছিল।
আদিল মুহাম্মদ খান বলেন, নালা সংযোগব্যবস্থার মহাপরিকল্পনা তৈরি না করে বিচ্ছিন্নভাবে কাজ করা হলে তা হবে শুধুই টাকার অপচয়। পুরান ঢাকার ক্ষেত্রেও তা–ই হয়েছে। এই অপচয় বন্ধে দ্রুত মহাপরিকল্পনা প্রণয়ন শেষ করে সে অনুযায়ী কাজ করা উচিত।