International

পুরো দুনিয়াকে কাঁপিয়ে দিতে পারে হাউছিরা!

শুনতে কটু শোনালেও বিদ্যমান সার্বিক পরিস্থিতির আলোকে বলা যায়, গাজার ভয়াবহ যুদ্ধ বিশ্ব শান্তি এবং আন্তর্জাতিক নিরাপত্তার জন্য বড় কোনো হুমকি নয়। গাজার বাইরের লোকজন এই যুদ্ধের কারণে তাদের স্বাভাবিক জীবনে খুব একটা সমস্যায় পড়বে না।

আবার গাজার আশপাশের দেশগুলো যেমন লেবানন, সিরিয়া, জর্ডান ও মিসর ফিলিস্তিনিদের জন্য সহানুভূতি প্রকাশ করলেও এই সঙ্ঘাত থেকে নিজেদের দূরেই রেখেছে। অন্যদিকে লেবাননের হিজবুল্লাহ প্রায়ই ইসরাইলের ওপর হামলা চালাচ্ছে। সিরিয়াও একই কাজ করছে। তবে তা সীমিত পরিসরে। যুদ্ধে বড় ধরনের বিস্তৃতিতে তারা আগ্রহী নয় বলেই মনে হচ্ছে।

কিছুটা দূরে থাকা সৌদি আরব, তুরস্ক, ইরান, যুক্তরাষ্ট্র এবং ইউরোপ এই অঞ্চলের ব্যাপারে আগ্রহী হলেও তারাও সতর্ক অবস্থানে রয়েছে।

অন্য দিকে অর্থনৈতিক পর্যায়ে গাজার যুদ্ধ বিশ্ব অর্থনীতিতে তেমন প্রভাব ফেলবে না। গাজায় নৃশংসা বোমা হামলা, নির্বিচারে বেসামরিক নাগরিকদের হত্যা করা, বেসামরিক কাঠামো ধ্বংস করা, মানুষের অবর্ণনীয় দুর্ভোগ, বাস্তুচ্যুতি, ক্ষুধা, রোগ আন্তর্জাতিকভাবে সাড়া তুললেও এবং তা যদি আরো খারাপ অবস্থার দিকে যায়, তবুও গাজার সমস্যা মূলত সেখানেই সীমিত থাকবে।

কিন্তু ছোট্ট এবং দৃঢ়প্রতিজ্ঞ একটি গ্রুপের কার্যক্রম বড় বিশ্বকে নাড়িয়ে দিতে পারে। তারা হলো ইয়েমেনে হাউছিরা। লোহিত সাগর এবং ভারত মহাসাগরের মধ্যবর্তী বাব আল-মানদেবের ওপর রয়েছে তাদের নিয়ন্ত্রণ। এই সংকীর্ণ পথটি দিয়ে বিশ্বের এক তৃতীয়াংশ তেল পরিবহ করা হয়। দিনে ৬০ লাখ ব্যারেল তেল এখান দিয়ে যায়। বেশির ভাগ তেলের গন্তব্য ইউরোপ।

গড়ে ১৬ নট (৩০ কিলোমিটার/ঘণ্টায়) বেগে চললে বাব আল-মানদেব ও সুয়েজ খাল অতিক্রম করতে লাগে ৯ দিনের কম। অন্য যেকোনো রুটের চেয়ে এই পথ ব্যবহার করা হলে পরিবহন খরচ বাঁচে অন্তত ১৫ ভাগ।

অর্থাৎ এই পথ বন্ধ হয়ে গেলে তেলের দাম এই খাতেই বাড়তে পারে ১৫ ভাগ। এর সাথে আছে হামলার আশঙ্কায় বীমা খরচ বৃদ্ধি, বিপদে থাকা ক্রুদের বেতনভাতা বাড়ানো। এছাড়া আরো অনেক খরচ আছে।

ফলে গাজা যুদ্ধ অন্য দেশের জন্য খরচের কারণ না হলেও লোহিত সাগরে হাউছিদের হামলা বিশ্বজুড়ে তেলের দাম বাড়িয়ে দেবে, আর এর জের ধরে অন্য আরো অনেক কিছুর ব্যয় বেড়ে যাবে।

হাউছিদের হামলা কি বন্ধ করা সম্ভব? সবসময় কূটনৈতিক পন্থাই গ্রহণযোগ্য। কিন্তু হাউছিদের সাথে কোনো দেশেরই সম্পর্ক নেই। একমাত্র ইরানের সাথে তাদের যোগাযোগ রয়েছে। তবে ইরান বলছে, তারা হাউছিদের নিয়ন্ত্রণ করে না।

আবার তাদের ওপর অবরোধ আরোপ করা হলেও কোনো কাজ হবে না। তারা অবরোধের মধ্যেই কয়েক দশক ধরে যুদ্ধ চালিয়ে যাচ্ছে।

ইতোমধ্যেই তারা তাদের শক্তির প্রমাণ দিয়েছে। নভেম্বরে গ্যালাক্সি লিডার নামের একটি জাহাজ তারা আটক করেছ। এছাড়া বেশ কয়েকটি জাহাজে হামলা করেছে।


লোহিত সাগরে তাদের হামলার রেকর্ড নতুন কিছু নয়। সৌদি আরবের নেতৃত্বাধীন জোট বাহিনীর বিরুদ্ধে ২০১৭ সালে তারা আল মদিনা নামের ফ্রিগেটে হামলা চালিয়েছিল। তারা তা করেছিল মনুষ্যবিহীন বিস্ফোরবোঝাই নৌকায় দূর-নিয়ন্ত্রিত বিস্ফোরণ ঘটিয়ে। এর ফলে সৌদি নৌবাহিনী ইয়েমেনের পানি সীমা থেকে সরে গিয়েছিল।

এই সাফল্যে উৎসাহিত হয়ে হাউছিরা ২০১৮ সালের মে ও জুলাই মাসে সৌদি আরবের দুটি বিশাল তেল ট্যাঙ্কারে হামলা চালায় ইরানের তৈরী ক্রুইস মিসাইল দিয়ে।

বাব আল-মানদেব

হাউছিদের সাম্প্রতিক হামলার প্রেক্ষাপটে যুক্তরাষ্ট্র একা তাদের বিরুদ্ধে না নেমে ফ্রান্স, ব্রিটেন ও ইসরাইলি নৌবাহিনীকে নিয়ে জোটবদ্ধভাবে অগ্রসর হতে চাচ্ছে। তারা অবশ্য কিছুটা সফলও হয়েছে প্রাথমিকভাবে।

তবে হাউছিরাও বসে নেই। জোটটি পুরোদমে কাজ শুরুর আগেই তারা সৌদি আরব এবং সংযুক্ত আরব আমিরাতকে হুঁশিয়ারি দিয়ে রেখেছে। হাউছিরা বলেছে, তারা যদি ওই জোটে যোগ দেয়, তবে তাদের তেল কূপ এবং মজুত স্থাপনাগুলো টার্গেট হবে। এই হুমকি বাস্তব। হাউছিদের ক্ষেপণাস্ত্রের পাল্লায় রয়েছে তাদের স্থাপনাগুলো।

আরব উপদ্বীপের তেল স্থাপনাগুলোর ওপর যেকোনো ধরনের হামলা বিশ্বে উত্তাপ ছড়াবে। আর তাতে করে তেলের দাম বেড়ে যাবে।

আর আরে তাপ সারা দুনিয়ায় পড়বে।

Show More

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Related Articles

Back to top button