Science & Tech

বাড়ছে জালিয়াত চক্রের দৌরাত্ম্য

বিএমইটিতে প্রবাসী মন্ত্রণালয়ের নির্দেশনা উপেক্ষিত সিস্টেম হ্যাকের মাধ্যমে মিলছে ছাড়পত্র :: দলীয় ভিসায় একক স্মার্ট কার্ড ইস্যু

বিএমইটিতে জাল-জালিয়াত চক্রের দৌরাত্ম্য বাড়ছে। এতে বিদেশ গমনেচ্ছু কর্মীদের হয়রানি ও ভোগান্তি বাড়ছে। এক শ্রেণির অসাধু কর্মকর্তাদের যোগসাজসে সিস্টেম হ্যাকের মাধ্যমে সউদী গমনেচ্ছু কর্মীদের বর্হিগমন ছাড়পত্র মিলছে দেদারসে। এ সুবাদে অসাধু কর্মকর্তারা মোটা অঙ্কের টাকা হাতিয়ে নিচ্ছে বলে অভিযোগ উঠছে। বিএমইটির সিস্টেম এনালিস্ট আবু রায়হানের কাছে পাসওয়ার্ড থাকার পরেও কিভাবে সিস্টেম হ্যাকের মাধ্যমে বর্হিগমন ছাড়পত্র মিলছে তা’ বোধগম্য নয়। বর্হিগমন ছাড়পত্র ইস্যুতে সাইবার ক্রাইমের সাথে সম্পৃক্ত প্রকৃত অপরাধীদের সনাক্ত করে আইনের আওতায় আনতে বিএমইটিতে তোড়জোড় শুরু হয়েছে। অপর দিকে, প্রবাসী কল্যাণ ও বৈদেশিক কর্মসংস্থান মন্ত্রণালয়ের অনুমোদন না নিয়েই প্রতারক চক্র সউদী গমনেচ্ছু দলীয় (গ্রুপ) ভিসার কর্মীদের একক বর্হিগমন ছাড়পত্র, স্মার্ট কার্ড নিচ্ছে অবাধে। পরিস্থিতি এমন দিকে গড়াচ্ছে যে, বিএমইটির এসব অনিয়ম জালিয়াতির ঘটনা দেখার কেউ নেই।

নাম প্রকাশ না করার শর্তে একটি সূত্র জানায়, নতুন প্রবাসী প্রতিমন্ত্রী কিছু বুঝে উঠার আগেই অসাধু সুবিধাভোগিরা প্রবাসী মন্ত্রণালয়কে বৃদ্ধাঙ্গুলী দেখিয়ে অনুমতি না নিয়েই গ্রুপ ভিসাকে একক ভিসায় বর্হিগমন ছাড়পত্র নিচ্ছে। এ নিয়ে খোঁদ বিএমইটিতে তোলপাড় শুরু হলেও অভিযুক্ত এজেন্সিগুলো ধরাছোয়ার বাইরে থেকে যাচ্ছে। এ ব্যাপারে বিএমইটির অনুবাদ শাখায় যোগাযোগ করা হলে ফসিউল ইনকিলাবকে জানান, সউদী নিয়োগকারী কোম্পানী আল ওয়াতানিয়া পোলট্রির ভিসা ইস্যু নাম্বার ১৩০৩৩২৯৭৮৩ এর ১০০ জনের গ্রুপ ভিসা। এসব দলীয় ভিসার বর্হিগমন ছাড়পত্র নিতে হলে প্রবাসী মন্ত্রণালয়ের অনুমতি নিতে হবে। কিন্ত দলীয় ভিসা কিভাবে একক হিসেবে বর্হিগমন পেয়েছে তা’ কেউ কিছু বলতে পারছে না। এ ব্যাপারে সম্প্রতি ইমিগ্রেশন বিভাগের কর্মকর্তা নাসির উদ্দিনের সাথে সাক্ষাত করতে গেলে তিনি দেখা দেননি। বিএমইটির অফিস সহকারী কাম কম্পিউটার অপারেটর বর্তমানে ইমিগ্রেশন বিল্ডিংএর কেয়ারটেকারের দায়িত্ব পালিনকারী কামরুজ্জামান প্রতিদিন বিভিন্ন রিক্রটিং এজেন্সির প্রতিনিধিদের সাথে কন্ট্রাক্ট করে বর্হিগমন ছাড়পত্র দ্রুত ইস্যু করাতে কর্মকর্তাদের সাথে দফায় দফায় যোগাযোগে ব্যস্ত থাকছে বলে অভিযোগ উঠছে। তার পছন্দের লোকেরা সহজেই ইমিগ্রেশনে যাতায়াতের সুযোগ পাচ্ছে বলেও অভিযোগ রয়েছে। প্রবাসী কল্যাণ মন্ত্রণালয়ের কর্মসংস্থান শাখার সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তা জানান,

প্রবাসী কল্যাণ ও বৈদেশিক কর্মসংস্থান মন্ত্রণালয়ের নির্দেশনা অনুযায়ী একক ও দলীয় ভিসায় সউদী আরবে কর্মী প্রেরণের ক্ষেত্রে কিছু বাধ্যবাধকতা রয়েছে। বাংলাদেশস্থ সউদী দূতাবাসের অনুমোদিত রিক্রুটিং এজেন্সির অনুকূলে সউদী আরবস্থ নিয়োগকারী কোম্পানী একটি ভিসা নম্বরের ২৪টি ভিসা করলে তাকে একক ভিসা বলে। এই ২৪টি ভিসায় বহির্গমন ছাড়পত্রের ক্ষেত্রে মন্ত্রণালয়ের অনুমোদিত প্রয়োজন নেই। ২৪টি ভিসার অধিক হলে তাকে দলীয় ভিসা বলে এবং বহির্গমন ছাড়পত্র গ্রহণের ক্ষেত্রে মন্ত্রণালয় হতে নিয়োগানুমতি গ্রহণ করতে হয়।

সম্প্রতি মন্ত্রণালয়ের নির্দেশনা অমান্য করে জনশক্তি কর্মসংস্থান ও প্রশিক্ষণ ব্যুরো’র নথি উপস্থাপনকারী, সহকারী পরিচালক, উপ-পরিচালক এবং পরিচালককে ম্যানেজ করে অনলাইনে দলীয় ভিসাধারী কর্মীদের মন্ত্রণালয় হতে নিয়োগানুমতি গ্রহণ না করে একক ভিসায় বহির্গমন ছাড়পত্র গ্রহণ করা হয়েছে।

গত ৭ ফেব্রুয়ারি রিক্রুটিং এজেন্সি এ্যাজমাক্স (লাইসেন্স নং. ১০৫৯) সউদী আরবস্থ নিয়োগকারী কোম্পানী অষ-ডধঃধহরধ চড়ঁষঃৎু এর ভিসা ও আইডি নম্বর: ১৩০৩৩২৯৭৮৩, ৭০০১৭৮৫৪৪৮ দলীয় ভিসাধারী কর্মীদের একক ভিসায় বহির্গমন ছাড়পত্র গ্রহণ করা হয়েছে। যেসব কর্মীর ছাড়পত্র নেয়া হয়েছে তারা হচ্ছে, কান্নান মিয়া (অ১১৭০৯০৯৯), মো. আহম্মদ আলী ( অ০৪৪৮০৮০৭), ওবায়দুল আকন্দ, (অ০৫৬৮২৬১০), সুজন মিয়া (অ১১৭৮৫৮৮২), রতন মিয়া (ঊঋ০২১১৯০৯), সেলিম আলী (অ০১৬৬৩৬৭২), জাকির হোসেন (অ০০৭৯৩০৫৫), ওমর ফারুক (অ০৫০১৪৬০৯)। এছাড়া রিক্রুটিং এজেন্সি মেসার্স এবিএস ইন্টারন্যাশনাল (লাইসেন্স নং. ১৭৭১) এর অনুকূলে গত ১৮ জানুয়ারি ৫ জন কর্মীর বহির্গমন ছাড়পত্র ইস্যু করা হয়েছে। তাদের মধ্যে ৩ জন একক ভিসার কর্মী একক ভিসায় ছাড়পত্র ইস্যু হয়েছে এবং বাকি ২জন কর্মীর দলীয় ভিসার কর্মী একক ভিসায় ছাড়পত্র ইস্যু করা হয়েছে বলে জানা গেছে।

প্রবাসী মন্ত্রণালয়ের মাধ্যমে যাচাই করা হলে দলীয় ভিসাধারী কর্মীর মন্ত্রণালয়ের নিয়োগানুমতি গ্রহণ না করে একক ভিসায় ইস্যু করার তথ্য পাওয়া যাবে। গত ৫ ফেব্রুয়ারি বিএমইটির মহাপরিচালক সালেহ আহমদ মোজাফফর ডিএমপি’র সিটি –সাইবার ক্রাইম ইনভেষ্টিগেশনের উপ-পুলিশ কমিশনারের কাছে এক চিঠিতে বলেন, বিএমইটির বহির্গমন শাখা থেকে গত ৩১ ডিসেম্বর মেসার্স আলিফ ওভারসীজ (আরএল-৮৪৭) সিস্টেম হ্যাকের মাধ্যমে সউদীগামী ২৪ জন কর্মীর ছাড়পত্র নিয়েছে। চিঠিতে সিস্টেম হ্যাকের মাধ্যমে ২৪ জনের বহির্গমন ছাত্রপত্র নেয়া সাইবার আক্রমনের ঘটনায় সম্পৃক্ত অপরাধীদের সনাক্ত করে পরবর্তী প্রয়োজনীল ব্যবস্তা গ্রহণের জন্য অনুরোধ করা হয়েছে। এ ধরণের ঘটনায় বিএমইটির জন্য অনাকিিঙ্খত এবং ব্রিতকর বলেও উল্লেখ করা হয়। সম্প্রতি বিএমইটির সিস্টেম এনালিস্ট আবু রায়হান এক প্রশ্নে জবাবে ইনকিলাবকে বলেন, আলিফ ওভারসীজের মাধ্যমে সিস্টেম হ্যাকের মাধ্যমে ২৪টি ভিসার বর্হিগমন ছাড়পত্র ইস্যুর সময়ে আমি একটি নিয়োগ পরীক্ষায় ব্যস্ত ছিলাম।

Show More

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Related Articles

Back to top button