বাসযোগ্যতা হারাচ্ছে বিশ্ব: বিজ্ঞানীদের হুঁশিয়ারি
- মানব ক্রিয়াকলাপে নষ্ট হচ্ছে স্থিতিশীলতা
- বিশ্বব্যবস্থার ৯টির মধ্যে ৬ সূচকই নিরাপদ মাত্রা ছাড়িয়েছে
বন উজাড়ের মতো কার্যক্রমে বাড়ছে উষ্ণায়ন, নষ্ট হচ্ছে পৃথিবীর স্থিতিশীলতা। উত্তর ব্রাজিলের অ্যামাজন থেকে তোলা
পৃথিবীর পুরো ব্যবস্থা চরমভাবে ক্ষতিগ্রস্ত। ক্ষতির মাত্রা এতটাই ব্যাপক যে, এই গ্রহ বাসযোগ্য ও নিরাপদ স্থানের বাইরে চলে যাচ্ছে। আর এ জন্য দায়ী মানব ক্রিয়াকলাপ। জীবাশ্ম জ্বালানির ব্যবহার, পরিবেশ দূষণ, বন উজাড় ও কৃষিকাজে মাত্রাতিরিক্ত রাসায়নিক ব্যবহারে নষ্ট হচ্ছে বিশ্বের স্থিতিশীলতা।
বিজ্ঞানীরা দেখেছেন, পৃথিবীর স্বাস্থ্য হিসেবে বিবেচিত ৯টির মধ্যে ছয়টি সূচকই নিরাপদ মাত্রা ছাড়িয়েছে। পাশাপাশি আরও দুটি নিরাপদ সীমা ভাঙার কাছাকাছি এবং একটি সূচকে ইতিবাচক অগ্রগতি হয়েছে। বুধবার সায়েন্স অ্যাডভান্সেস জার্নালে প্রকাশিত একটি গবেষণায় উদ্বেগজনক এসব তথ্য উঠে এসেছে।
গবেষণায় যুক্ত ছিলেন আট দেশের ২৯ জন বিজ্ঞানী। তারা বিশ্বব্যবস্থায় আন্তঃসংযুক্ত ৯টি সূচকের নিরাপদ মাত্রা বিশ্লেষণ করেছেন। এর মধ্যে রয়েছে জলবায়ু পরিবর্তন, জীববৈচিত্র্য, মিঠা পানি ও ভূমি ব্যবহার এবং কৃত্রিম রাসায়নিক ও অ্যারোসলের প্রভাব। মানবসৃষ্ট দূষণ ও প্রকৃতি ধ্বংসের কারণে এ ছয়টি সূচক নিরাপদ মাত্রা ছাড়িয়ে গেছে। এর অর্থ, ব্যবস্থাগুলো নিরাপদ ও স্থিতিশীল অবস্থা থেকে দূরে চলে গেছে। পাশাপাশি বায়ুদূষণ ও সমুদ্রের অম্লকরণ সূচক দুটি নিরাপদ মাত্রা ভাঙার কাছাকাছি রয়েছে। শুধু একটি সূচকের ইতিবাচক অগ্রগতি হয়েছে। গত কয়েক দশকের ধ্বংসাত্মক রাসায়নিকের ব্যবহার পর্যায়ক্রমে কমিয়ে আনায় বায়ুমণ্ডলীয় ওজোন স্তরের ক্ষয় বা গর্ত পূরণ হচ্ছে। বিজ্ঞানীরা বলছেন, খুব উচ্চ ঝুঁকিপূর্ণ অবস্থায় পৌঁছানোর আগে সতর্ক করতেই এই মাত্রাগুলো নির্ধারণ করা হয়েছে। এভাবে চলতে থাকলে আমাদের ধ্বংসাত্মক প্রভাব দেখতে হবে। তবে গ্রহের নিরাপদ এ মাত্রা অতিক্রম করার অর্থ এই নয় যে, পৃথিবী একটি বিপর্যয়কর অবস্থানে পৌঁছেছে। বরং এটি একটি স্পষ্ট সতর্ক সংকেত। ২০০৯ সালের একটি গবেষণাপত্রে প্রথমবারের মতো পৃথিবীর এই নিরাপদ মাত্রা নির্ধারণ করা হয়। এর লক্ষ্য হলো মানুষ গ্রহে যে পরিবর্তনগুলো করছে, তার ওপর একটি সীমা বেঁধে দেওয়া।
জার্মানির পটসডাম ইনস্টিটিউট ফর ক্লাইমেট ইমপ্যাক্ট রিসার্চের যুগ্ম পরিচালক রকস্ট্রোম বলেন, পৃথিবীর স্থিতিশীলতা নষ্ট হলে উষ্ণায়ন ১ দশমিক ৫ ডিগ্রি সেলসিয়াসে সীমাবদ্ধ করা অসম্ভব হয়ে উঠতে পারে। এতে বিশ্বব্যবস্থা বিপর্যয়ের কাছাকাছি পৌঁছে যাবে। এ অবস্থায় পৃথিবীকে মানুষের জন্য নিরাপদ ও সমৃদ্ধ করতে চাইলে আপনাকে নিরাপদ স্থানে ফিরে আসতে হবে। তবে বর্তমানে আমরা সেই অগ্রগতি দেখতে পাচ্ছি না।
ইউনিভার্সিটি কলেজ লন্ডনের বৈশ্বিক পরিবর্তন বিজ্ঞানের অধ্যাপক সাইমন লুইস বলেন, জীববৈচিত্র্য ধ্বংস ও জলবায়ু পরিবর্তন পৃথিবীকে এমনভাবে দূষিত করছে যে, আমরা আমাদের গ্রহটিকে স্থিতিশীল অবস্থার বাইরে ঠেলে দিয়েছি। এটাই সর্বশেষ এবং এর চেয়ে বড় সতর্কতা হতে পারে না।
গবেষণায় নেতৃত্ব দেওয়া কোপেনহেগেন বিশ্ববিদ্যালয়ের অধ্যাপক ক্যাথরিন রিচার্ডসন বলেছেন, পৃথিবীকে খুব উচ্চ রক্তচাপের রোগী ভাবা যেতে পারে। নির্দিষ্ট হার্ট অ্যাটাকের ইঙ্গিত দেওয়া না গেলেও নিশ্চিতভাবেই বলা যায় যে, ঝুঁকি বাড়ছে।