বিশ্বের ব্যাংকিং খাতেও চীনের প্রাধান্য
চীনের এই আইসিবিসি এ বছর নিয়ে টানা ১১ বছর বিশ্বের বৃহত্তম ঋণদাতা ব্যাংকের স্বীকৃতি অর্জন করেছে। ২০২২ সালে তারা ঋণ দিয়েছে মোট ৩ লাখ ৪০ হাজার কোটি ডলার।
বিশ্বের উৎপাদন খাতের মতো ব্যাংকিং খাতেও এখন চীনের প্রাধান্য। দ্য ব্যাংকারের তথ্যানুসারে, বিশ্বের শীর্ষ ১০টি ব্যাংকের মধ্যে ৪টি এখন চীনের। বিশ্বের শীর্ষ এক হাজার ব্যাংকের যে তালিকা তারা প্রকাশ করেছে, সেখানে এই তথ্য উঠে এসেছে।
ইন্ডাস্ট্রিয়াল অ্যান্ড কমার্শিয়াল ব্যাংক অব চায়না (আইসিবিসি) বিশ্বের শীর্ষ ব্যাংক।
তাদের মোট সম্পদ ৪ লাখ ৩০ হাজার কোটি ডলার। দ্বিতীয় স্থানে আছে যুক্তরাষ্ট্রের জে পি মর্গ্যান অ্যান্ড চেজ, তাদের সম্পদ ৩ লাখ ৯০ হাজার কোটি ডলার। ৩ লাখ ৮০ হাজার কোটি ডলারের সম্পদ নিয়ে তৃতীয় স্থানে আছে চায়না কনস্ট্রাকশন ব্যাংক।
চীনের এই আইসিবিসি এ বছর নিয়ে টানা ১১ বছর বিশ্বের বৃহত্তম ঋণদাতা ব্যাংকের স্বীকৃতি অর্জন করেছে। ২০২২ সালে তারা ঋণ দিয়েছে মোট ৩ লাখ ৪০ হাজার কোটি ডলার, যা ডয়েচে ব্যাংক, ইউনি ক্রেডিট, ব্রাংকো স্যানটানডার ও এইচএসবিসির সম্মিলিত ঋণের চেয়েও বেশি।
চীনের ব্যাংকিং খাতের এই বিকাশ গত এক দশকের ঘটনা, নতুন কিছু নয়। তবে দেশটির ব্যাংকিং খাতের এই বিকাশ এখন ভিন্ন মোড় নিয়েছে। এখন দেশটির ব্যাংকিং খাতের নেতৃত্ব দিচ্ছে মধ্যম সারির ব্যাংকগুলো। সেই সঙ্গে চীনের ব্যাংকগুলোর মুনাফার হারও কমছে।
এদিকে চীন ছাড়াও এশিয়া-প্রশান্ত মহাসাগরীয় অঞ্চলের ব্যাংকগুলোও ভালো করছে। র্যাঙ্কিংয়ে এই অঞ্চলের ব্যাংকগুলো এগিয়ে আসছে। এমনকি বৈশ্বিক মোট মুনাফার দিক থেকেও এই অঞ্চলের ব্যাংকগুলো ভালো করছে। বৈশ্বিক ব্যাংক খাতের মোট মুনাফার ৪০ শতাংশের বেশি করছে এই অঞ্চলের ব্যাংকগুলো।
অন্যদিকে পশ্চিম ইউরোপ ও উত্তর আমেরিকার ব্যাংকগুলোর মুনাফাও বেড়েছে।
দ্য ব্যাংকার বলছে, ২০২২ সালে নানা ধরনের প্রতিকূলতা সত্ত্বেও বিশ্বের ব্যাংকগুলোর মুনাফা বেড়েছে। এসব ব্যাংকের রিটার্ন অন অ্যাসেট বা নিট আয়কে মোট মুনাফা দিয়ে ভাগ করলে যে ফল পাওয়া যায়, তা অনেকটাই বেড়েছে। ২০২১ সালে যা ছিল শূন্য দশমিক ৪৪ শতাংশ, ২০২২ সালে তা শূন্য দশমিক ৭৫ শতাংশে উন্নীত হয়েছে।
গত বছর বিশ্বের ব্যাংকগুলো মুনাফা বৃদ্ধিতে যে বিষয়গুলো নিয়ে কাজ করেছে,
সেগুলো হলো:
নীতি সুদহার বৃদ্ধি: নীতি সুদহার বৃদ্ধির কারণে ব্যাংকের বাণিজ্যিক ঋণের সুদহারও বেড়েছে। ফলে গ্রাহকদের এখন বেশি সুদে ঋণ নিতে হচ্ছে। স্বাভাবিকভাবে এতে ব্যাংকের সুদ আয় বেড়েছে।
অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধি: রাশিয়া-ইউক্রেন যুদ্ধের কারণে ২০২২ সালের প্রথম প্রান্তিকে বিশ্বের অধিকাংশ গবেষণা সংস্থাই বলেছিল, সে বছর আবারও মন্দার কবলে পড়বে বিশ্ব অর্থনীতি। কিন্তু সেই পূর্বাভাস মিথ্যা প্রতিপন্ন করে বিশ্ব অর্থনীতি গত বছর মন্দ করেনি। প্রবৃদ্ধির ধারাবাহিকতা থাকায় ঋণের প্রবাহও থামেনি। সেই সঙ্গে সুদহারও ছিল বাড়তি, ফলে সব মিলিয়ে ব্যাংকের মুনাফা হয়েছে ভালোই।
এবার দেখে নেওয়া যাক, কোন অঞ্চলের ব্যাংকগুলো কত মুনাফা করেছে। চীনের ব্যাংকগুলো ২০২২ সালে কর-পূর্ব মুনাফা করেছে সবচেয়ে বেশি—৩৮২ বিলিয়ন বা ৩৮ হাজার ২০০ কোটি ডলার। যুক্তরাষ্ট্রের ব্যাংকগুলো করেছে ২৬৫ বা ২৬ হাজার ৫০০ কোটি ডলার; ইউরোজোনের ব্যাংকগুলো করেছে ১৭২ বিলিয়ন বা ১৭ হাজার ২০০ কোটি ডলার; জাপানের ব্যাংকগুলো করেছে ৪২ বিলিয়ন বা ৪ হাজার ২০০ কোটি ডলার; যুক্তরাজ্যের ব্যাংকগুলো করেছে ৫ হাজার ৩০০ কোটি ডলার।
তালিকায় চীনের ব্যাংক আছে ১৪০টি ও যুক্তরাষ্ট্রের ১৯৬টি। পার্শ্ববর্তী দেশ ভারতের ব্যাংক আছে ২৭টি।