বিশ্বের সবচেয়ে দামি আমের উৎপাদন বাড়ছে বাংলাদেশে
![](https://miprobashi.com/wp-content/uploads/2023/08/prothomalo-bangla_2023-08_95f1b58d-150a-4f0b-92fc-e7577937da76_miyajaki_1.webp)
মিয়াজাকি বা সূর্যডিম আম
আমের নাম সূর্যডিম। আমটির চেহারা দেখলে এ নাম যে অযৌক্তিক, তা বলা যাবে না হয়তো। একবার ভাবুন সকাল কিংবা বিকেলের অস্তমিত সূর্যের লালচে, গনগনে চেহারা। এমন রক্তবর্ণ যদি কোনো আম তার গায়ে ধারণ করে, তবে তাকে ‘সূর্যডিম’ বললে খুব বেশি বলা হয়?
যদি কেউ এই সূর্যডিম একবার দেখেন, তবে বলবেন, নামটি যথার্থ। সূর্যডিম জাপানের আম। জাপানি ভাষায় একে বলে ‘মিয়াজাকি’। বিশ্বের সবচেয়ে দামি আম। এর স্বাদ নেওয়ার সুযোগ খুব কম মানুষের হয়। কারণ, এর উচ্চ মূল্য।
মিয়াজাকি অ্যাগ্রিকালচারাল ইকোনমিক ফেডারেশনের হিসাব অনুযায়ী জাপানের সূর্যডিম বা মিয়াজাকি বিশ্বের সবচেয়ে দামি আম। জাপানে ২০১৯ সালে এক জোড়া মিয়াজাকির দাম উঠেছিল প্রায় পাঁচ হাজার ডলার, অর্থাৎ চার লাখ টাকার বেশি।
![খাগড়াছড়ির মহালছড়ির ধুমনীঘাটে কৃষি উদ্যোক্তা হ্লাশিং মং চৌধুরীর বাগানে মিয়াজাকি](https://images.prothomalo.com/prothomalo-bangla%2F2023-08%2F9838dbf9-48c1-4a1b-8fdb-9b2e8748decb%2Fmiyajaki_2.jpg?auto=format%2Ccompress&fmt=webp&format=webp&w=640&dpr=1.0)
খাগড়াছড়ির মহালছড়ির ধুমনীঘাটে কৃষি উদ্যোক্তা হ্লাশিং মং চৌধুরীর বাগানে মিয়াজাকি
জাপানে গ্রিনহাউস করে বিশেষ ব্যবস্থায় উৎপাদনের জন্যই সূর্যডিমের এত দাম। জাপানের বাজারজাতকারী প্রতিষ্ঠান জেনপপের ওয়েবসাইটে দেওয়া তথ্যানুযায়ী, জাপানের কিউসু দ্বীপে বিশেষ যত্নে তৈরি একটি মিয়াজাকি আমের দাম ৫০ ডলার বা এখন বাংলাদেশি টাকায় ৫ হাজার টাকার বেশি।
বাংলাদেশে মিয়াজাকির উৎপাদনে সেই খরচের বালাই নেই, তাই দামও কম। বাংলাদেশের বাজারে অবশ্য ৫০০ থেকে ৬০০ টাকাতেই মেলে এ আম। তারপরও দেশের অন্য যেকোনো জাতের চেয়ে মিয়াজাকির দাম বেশি।
তাই সৌন্দর্য বা স্বাদ যা–ই হোক না কেন, আমটির উচ্চ মূল্যই এর খ্যাতির বড় কারণ। বাংলাদেশে এখন বাণিজ্যিকভাবেই এর উৎপাদন হচ্ছে। দিন দিন এর উৎপাদনও বাড়ছে। ২০২১-২২ অর্থবছরে ২০ মেট্রিক টন মিয়াজাকি উৎপাদিত হয়েছে বলে জানায় সরকারের কৃষি অধিদপ্তর।
বাংলাদেশে প্রায় দেড় দশক আগেই মিয়াজাকি আসে। জাপানে গিয়ে কেউ কেউ এর চারা নিয়ে এসে দেশের মাটিতে লাগাতেন। ব্যক্তি পর্যায়েই চলত এর উৎপাদন। তবে কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের ‘বছরব্যাপী ফল উৎপাদনের মাধ্যমে পুষ্টি উন্নয়ন’ শীর্ষক প্রকল্পের উদ্যোগে ২০১৭ সাল থেকে মিয়াজাকিকে বাণিজ্যিক চাষাবাদের আওতায় আনার চেষ্টা শুরু হয়। গত বছর দেশে ২০ টন মিয়াজাকি আম উৎপাদিত হয় বলে এ প্রকল্প সূত্রে জানা গেছে। দুই বছর আগে মিয়াজাকি উৎপাদিত হতো ৫ টন।
![নওগাঁর সাপাহারের কৃষি উদ্যোক্তা সোহেল রানার বাগানের মিয়াজাকি আম](https://images.prothomalo.com/prothomalo-bangla%2F2023-08%2Fb6111f79-371f-4cf6-bc05-5e1cb66cb5ba%2Fmiyajaki_3.jpg?auto=format%2Ccompress&fmt=webp&format=webp&w=640&dpr=1.0)
নওগাঁর সাপাহারের কৃষি উদ্যোক্তা সোহেল রানার বাগানের মিয়াজাকি আম
খাগড়াছড়ির মহালছড়ির ধুমনীঘাটের হ্লাশিং মং চৌধুরী কৃষি উদ্যোক্তা। চার বছর ধরে তিনি মিয়াজাকি আম উৎপাদন করছেন। এ বছর মোট ১ হাজার ২০০ কেজি মিয়াজাকি উৎপাদিত হয়েছে তাঁর বাগানে, জানান হ্লাশিং মং। তিনি প্রথম আলোকে বলেন, ‘আমার বাগানে মিয়াজাকির উৎপাদন বেড়েছে। আমটির জনপ্রিয়তাও বাড়ছে দিন দিন।’
এ বছর প্রতি কেজি মিয়াজাকি ৬০০ টাকায় বিক্রি করেছেন বলে জানান হ্লাশি মং।
দেশের পার্বত্য এলাকায় মিয়াজাকির চাষ বেশি হচ্ছে। একেকটি আমের ওজন ৩০০ থেকে ৪৫০ গ্রাম পর্যন্ত হতে পারে।
পাহাড়ি এলাকার পাশাপাশি দেশের সমতলেও মিয়াজাকির উৎপাদন হচ্ছে। নওগাঁর সাপাহারের কৃষি উদ্যোক্তা সোহেল রানা বললেন, এবার বেশি গরমের কারণে মিয়াজাকি খুব ভালো হয়নি। এবার বাজারে এ ফল তুলতে পারিনি। যত আম হয়েছে, তা উপহার হিসেবে দিতেই চলে গেছে।
মিয়াজাকির বাণিজ্যিক উৎপাদনের ক্ষেত্রে নানা ধরনের চ্যালেঞ্জ আছে বলে জানান নাটোরের বাগাতি পাড়ার কৃষি উদ্যোক্তা মো. গোলাম মাওলা। তিনি বলছিলেন, ‘সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ দিক হলো সূর্যের আলো। প্রতিটি আমের ওপর যেন সূর্যের আলো সঠিকভাবে পড়ে, তার জন্য ব্যবস্থা নিতে হয়। একটি আমের সঙ্গে প্রয়োজনে একটি করে খুঁটি দিতে হয়। এরপর আছে ফ্রুট ব্যাগে সেগুলোকে ভালো করে আবৃত করা। তাহলেই মিয়াজাকির আসল রং আসবে। আসলে এ আমে উচ্চ মানের ব্যবস্থাপনা দরকার।
![সাপাহারের সোহেল রানার বাগানে মিয়াজাকি আম](https://images.prothomalo.com/prothomalo-bangla%2F2023-08%2Fe57d111d-2785-46b4-ac63-8c095c346cbc%2Fmiyajaki_4.jpg?auto=format%2Ccompress&fmt=webp&format=webp&w=640&dpr=1.0)
সাপাহারের সোহেল রানার বাগানে মিয়াজাকি আম
মিয়াজাকির ক্ষেত্রে উচ্চ মানের ব্যবস্থাপনার প্রয়োজন। কারণ, এ আম রোগ ও জীবাণুপ্রবণ, এমন মন্তব্য করেন ‘বছরব্যাপী ফল উৎপাদনের মাধ্যমে পুষ্টি উন্নয়ন’ শীর্ষক প্রকল্পের পরিচালক মো. মেহেদী মাসুদ। তিনি বলেন, ‘আমাদের দেশে আমের বড় শত্রু মাছি পোকা। এটি মিয়াজাকিতে ধরে অপেক্ষাকৃত বেশি।’
দেশে নতুন নতুন বিদেশি জাতের আমের উৎপাদন শুরু হয়েছে। মিয়াজাকি এর একটি। বাণিজ্যিকভাবেই এর উৎপাদনকে উৎসাহিত করতে ‘বছরব্যাপী ফল উৎপাদনের মাধ্যমে পুষ্টি উন্নয়ন’ প্রকল্প কাজ করছে বলে জানান মেহেদি মাসুদ।