Trending

বৃহত্তম অর্থনীতি : কেন আরো পতন হলো জাপানের

বিশ্বের বৃহত্তম অর্থনীতি আমেরিকা। দ্বিতীয় স্থানে রয়েছে চীন। বিশ্ব অর্থনীতির এই দুই বৃহৎ শক্তির কথা সকলেরই জানা। তারাই বিশ্ব অর্থনীতির চালিকাশক্তি।

অর্থনৈতিক বৃদ্ধির তালিকায় ভারতের স্থান আপাতত পঞ্চম। তার আগে আছে আমেরিকা, চীন, জার্মানি এবং জাপান।

জাপান একসময় বিশ্বের দ্বিতীয় বৃহত্তম অর্থনীতি ছিল। অর্থনীতিতে আমেরিকার পরেই ছিল তার স্থান। শীর্ষের কাছাকাছি পৌঁছে গিয়েও কিন্তু জাপান এগোতে পারেনি।

বরং তার পর থেকে ধীরে ধীরে জাপানের অর্থনীতির অবনতি হয়েছে। ক্রমশ পিছিয়েছে অর্থনীতি। প্রথমে জাপানকে টপকে বিশ্ব অর্থনীতির দ্বিতীয় স্থান দখল করে চীন।

তার পর থেকে জাপান ছিল বিশ্বের তৃতীয় বৃহত্তম অর্থনীতি। সম্প্রতি সেখানেও তার পদস্খলন হয়েছে। জাপান হারিয়েছে তৃতীয় স্থানটিও।

জাপানকে টপকে সম্প্রতি বিশ্ব অর্থনীতির তিন নম্বর স্থান দখল করেছে জার্মানি। গত অক্টোবরেই যার পূর্বাভাস দিয়েছিল আন্তর্জাতিক অর্থভান্ডার (আইএমএফ)।

যদিও এখনও বিশ্ব অর্থনীতির র‌্যাঙ্কিং আনুষ্ঠানিক ভাবে প্রকাশ করা হয়নি। সব দেশ তাদের অর্থনৈতিক বৃদ্ধির পরিসংখ্যান প্রকাশ করলে আনুষ্ঠানিকভাবে তালিকা প্রকাশ করবে আইএমএফ।

বিবিসির প্রতিবেদন অনুযায়ী, ২০২৩ সালে জাপানের অর্থনীতির মূল্য ৪ লাখ ২০ হাজার কোটি ডলার। আর জার্মানির অর্থনীতির মূল্য ৪ লাখ ৪০ হাজার কোটি ডলার।

ক্রমশ পিছিয়ে পড়া ‘উদীয়মান সূর্যের দেশ’-এর অর্থনীতি মন্দার মুখোমুখি হয়েছে বলে মনে করা হচ্ছে। বিশ্ব অর্থনীতির তালিকায় ক্রমশ নিচের দিকে নেমে চলেছে দেশটি।

কোভিডের পর থেকে বিভিন্ন দেশের অর্থনীতির হাল আগের চেয়ে খারাপ হয়েছে। তবে জাপানের অর্থনীতির ক্রমঅবক্ষয় বিশেষজ্ঞদের চিন্তার কারণ হয়ে দাঁড়িয়েছে।

কোনো দেশের অর্থনীতির মান যখন পড়ে যেতে শুরু করে, সেই অবস্থাকে বলা হয় অর্থনৈতিক মন্দা। যখন কোনো দেশ আগের চেয়ে কম অর্থ উপার্জন করে, আগের চেয়ে উৎপাদন যখন কমে যায়, তখন মন্দা আসে।

দেশে উৎপন্ন পণ্য এবং উৎপাদনের মোট মূল্য নিয়ে জিডিপি তৈরি হয়। কোনো দেশের জিডিপি পর পর দু’টি ত্রৈমাসিকে আগের চেয়ে কমলে দেশটি মন্দার দিকে এগিয়ে যাচ্ছে বলে ধরে নেয়া হয়।

বিবিসির প্রতিবেদন অনুযায়ী, জাপানের ক্ষেত্রে গত ত্রৈমাসিকে তাদের অর্থনীতি ০.৪ শতাংশ কমেছিল। তার আগের ত্রৈমাসিকে জাপানের অর্থনৈতিক হ্রাসের হার ছিল ৩.৩ শতাংশ।

কোনো দেশের জিডিপি কেন হঠাৎ পড়তে শুরু করে? কেন মন্দা হয়? বিশেষজ্ঞদের মতে, দেশের মানুষ যখন কম টাকা খরচ করতে শুরু করেন, তখনই দেশটির অর্থনীতি নড়বড়ে হয়ে পড়ে।

গ্রাহকদের খরচ কমিয়ে ফেলা মানেই বাজারে পণ্যের চাহিদা কমে যাওয়া। আর চাহিদা কমলে উৎপাদনও কমে যেতে বাধ্য। যার উপর দেশের জিডিপি নির্ভর করে।

চাহিদা কমলে দেশের বিভিন্ন সংস্থায় উৎপাদনের পরিমাণ কমে। কর্মীছাঁটাই করে দেওয়া হয়। যার ফলে দেশে বেকারত্ব বৃদ্ধি পায়। সার্বিকভাবে দেশটি মন্দার দিকে এগিয়ে যায়।

জাপানের ক্ষেত্রে কী হয়েছে? বিশেষজ্ঞেরা জানাচ্ছেন, জাপানের অর্থনীতি গত কয়েক দশকে তার প্রতিযোগী মনোভাব হারিয়ে ফেলেছে। সেখানে কমে গিয়েছে পণ্য উৎপাদন ক্ষমতাও।

ডলারের সাপেক্ষে জাপানি মুদ্রা ইয়েনের মূল্য কমে যাওয়াও সেখানে অর্থনৈতিক মন্দার অন্যতম কারণ। বিশ্ব অর্থনীতিতে জিডিপি ডলারেই গোনা হয়ে থাকে।

জাপানের জনসংখ্যায় সম্প্রতি আরো বড় একটি সমস্যা দেখা দিয়েছে। জনসংখ্যার গড় বয়স বেড়ে গিয়েছে। যা দেশের অর্থনীতির পক্ষে ভালো খবর নয়।

জনসংখ্যার গড় বয়স বেড়ে যাওয়ার অর্থ দেশে তরুণ নাগরিকের সংখ্যা কমে যাওয়া। তুলনায় বৃদ্ধি পেয়েছে বৃদ্ধ, মধ্যবয়স্কদের সংখ্যা। মৃত্যুহার কমে গিয়ে জন্মহার যদি না বাড়ে, এই সমস্যা দেখা দেয়।

সম্প্রতি গড় বয়স বেড়ে যাওয়ার সমস্যা দেখা গিয়েছে চিনেও। সেখানে সাধারণ মানুষ সরকারের উপর ভরসা হারিয়েছে বলে দাবি বিশেষজ্ঞদের একাংশের। তাই তারা হয়ে উঠেছে অধিক সঞ্চয়ী।

চীনের সঞ্চয়ী জনগণ খরচ করতে ভয় পাচ্ছে। তাই সেখানে কেনাবেচার হার কমেছে। যা সার্বিকভাবে দেশের জিডিপি তথা অর্থনীতিকে ক্ষতিগ্রস্ত করছে।

অর্থনীতির র‌্যাঙ্কিংয়ে এখন ভারতের ঠিক ওপরেই রয়েছে জাপান। ভারতের অর্থনীতির মোট মূল্য ৪ লাখ ১১ কোটি ডলার। জাপানের সাথে ফারাক খুব বেশি নয়।

অর্থনীতির বৃদ্ধির পরিসংখ্যানে জাপান যে হারে নামছে, তাতে তাকে পেরিয়ে অচিরে ভারত আরো এক ধাপ উপরে উঠতে পারে বলে মনে করছেন বিশেষজ্ঞদের একাংশ।

Show More

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Related Articles

Back to top button