মন্দায় পড়তে যাচ্ছে জার্মানি, ভুগবে ইউরোপও
যুক্তরাষ্ট্রের মতো ইউরোপও মন্দা এড়াতে সক্ষম হয়েছে। তবে এ অঞ্চলের সবচেয়ে বড় অর্থনৈতিক দেশ জার্মানি মন্দায় পড়তে যাচ্ছে, আর সে কারণে ভুগবে ইউরোপও। এমনই মূল্যায়ন উঠে এসেছে ইউরোপীয় ইউনিয়নের (ইইউ) কার্যনির্বাহী সংস্থা ইউরোপীয় কমিশনের এক প্রতিবেদনে।
সম্প্রতি এক পূর্বাভাসে ইউরোপীয় কমিশন জানায়, ২০২৩ ও ২০২৪ সালে অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধি কমবে ইইউয়ের।
এর মধ্যে ২০২৩ সালে মন্দায় পড়বে জার্মানি। দেশটির অর্থনীতি সংকুচিত হবে ০.৪ শতাংশ। জার্মানির বিশাল শিল্প খাত মন্দার মুখে, রপ্তানি পারফরম্যান্সও ভালো নয়। পুরো অর্থনীতিতেই এর উল্লেখযোগ্য প্রভাব পড়েছে।
এ ছাড়া এ অঞ্চলের সবচেয়ে বড় অর্থনৈতিক দেশ জার্মানির দুর্বল পারফরম্যান্সের প্রভাব পড়ছে পুরো অঞ্চলে।
প্রতিবেদনে বলা হয়, ইউক্রেন যুদ্ধের কারণে জ্বালানির দাম বেড়েছে এবং জ্বালানির ঘাটতিতেও পড়েছে জার্মানি। এর প্রভাব পড়েছে দেশটির শিল্প উৎপাদনে। আন্তর্জাতিক মুদ্রা তহবিল (আইএমএফ) এর আগে পূর্বাভাস দিয়েছিল, বিশ্বের বড় অর্থনৈতিক দেশগুলোর মধ্যে জার্মানিই ২০২৩ সালে মন্দায় পড়বে।
ইউক্রেন যুদ্ধের কারণে অর্থনৈতিক বিপত্তি ঘটেছে জানিয়ে ইইউয়ের অর্থনীতিবিষয়ক কমিশনার পাওলো জেনটিলনি বলেন, ‘এ বছর আমাদের অর্থনীতি বহুমাত্রিক বিপত্তির মধ্যে পড়েছে, এতে অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধি দুর্বল হয়ে পড়েছে, যা আমাদের পূর্বাভাসে উঠে এসেছে।’ ইইউ জানায়, ইইউয়ের ২৭ দেশের এ বছর প্রবৃদ্ধি হবে ০.৮ শতাংশ, যেখানে আগের পূর্বাভাসে বলা হয়েছে—প্রবৃদ্ধি হবে প্রায় ১ শতাংশ। ২০ দেশের ইউরোজোন অঞ্চলে ২০২৪ সালে প্রবৃদ্ধি হবে ১.৩ শতাংশ; কমিশন জানায়, যা আগের পূর্বাভাস ১.৬ শতাংশের চেয়ে কম। তবে আগামী বছর ইইউয়ের প্রবৃদ্ধি হবে ১.৪ শতাংশ।
ইউরোজোনের শিল্প কর্মকাণ্ড ধারণার চেয়েও দ্রুত কমেছে গত আগস্ট মাসে। বিশেষ করে শক্তিশালী সেবা খাতে প্রবৃদ্ধি না হয়ে সংকুচিত হয়েছে। ফলে সর্বশেষ শিল্প জরিপে ধারণা করা হচ্ছে, ইউরো অঞ্চল মন্দায় পড়তে যাচ্ছে।
এসঅ্যান্ডপি গ্লোবাল পরিচালিত এইচসিওবির চূড়ান্ত কম্পোজিট পারচেজিং ম্যানেজারস সূচক (পিএমআই) আগস্টে কমে হয়েছে ৪৬.৭ পয়েন্ট, জুলাই মাসে যেখানে ছিল ৪৮.৬ পয়েন্ট। দেখা যাচ্ছে টানা তিন মাসই পিএমআই ৫০ মার্কের নিচে, বাণিজ্যিক পরিভাষায় যেটিকে সংকোচন ধরা হয়। অর্থাৎ শিল্প কর্মকাণ্ডে টানা তিন মাসই প্রবৃদ্ধি না হয়ে সংকুচিত হয়েছে। সর্বশেষ আগস্ট মাসে এই সংকোচন আগের চেয়ে অনেক বেশি বেড়েছে।
হামবুর্গ কমার্শিয়াল ব্যাংকের প্রধান অর্থনীতিবিদ সাইরাস দ্য লা রুবিয়া বলেন, ইউরোজোন বছরের প্রথম ভাগে মন্দায় পড়েনি। তবে বছরের দ্বিতীয় ভাগে অনেক বড় চ্যালেঞ্জের মুখোমুখি হবে। তিনি বলেন, ‘এই নিম্নমুখী প্রবণতা দেখা যাচ্ছে জিডিপিতে। তৃতীয় প্রান্তিকে এসে জিডিপি -০.১ শতাংশ সংকোচনে দাঁড়াল।
বিশ্লেষকরা বলছেন, যুক্তরাষ্ট্রের মতো ইউরোপ মন্দা এড়াতে পারলেও ইউরোপজুড়েই এখন ছড়িয়ে পড়ছে মেঘ। গ্রীষ্মে একসঙ্গে দুটি বৈরী আবহাওয়ার মুখোমুখি হয়েছে ইউরোপ। এ সময় যেমন ছিল ভারি বৃষ্টি, তেমনি ছিল ভয়াবহ দাবানল। সব মিলিয়ে ভালো যায়নি মহাদেশটির অর্থনীতি। অঞ্চলটির মূল্যস্ফীতি এখনো আলোচনার কেন্দ্রে। এক বছর আগের তুলনায় আগস্টে মূল্যস্ফীতি বেড়েছে ৫.৩ শতাংশ। ফলে প্রবৃদ্ধি নিয়েও বাড়ছে হতাশা।