Hot

রাজনৈতিক মহলে মিশ্র প্রতিক্রিয়া: মার্কিন ভিসানীতি প্রয়োগে তোলপাড় সর্বত্র

মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র ভিসা নিষেধাজ্ঞা প্রয়োগ শুরু করায় তোলপাড় শুরু হয়েছে সর্বত্র। এ বিষয়ে রাজনৈতিক মহলে মিশ্র প্রতিক্রিয়া লক্ষণীয়। অভিজ্ঞ মহলের পাশাপাশি সাধারণ মানুষের মধ্যেও ভিসানীতির আলোচনা ছিল।

যুক্তরাষ্ট্র যদিও ভিসা নিষেধাজ্ঞা কাদের বিরুদ্ধে জারি করা হয়েছে তার কোনো নাম প্রকাশ করেনি। তবে মানুষের মধ্যে কৌতূহল ছিল, এখন পর্যন্ত কারা এ নিষেধাজ্ঞার মধ্যে পড়েছেন।

আওয়ামী লীগ নেতারা বলছেন, ভিসানীতির ফলে বিএনপি ক্ষতিগ্রস্ত হবে। কারণ, তারা নির্বাচন প্রতিহত করার লক্ষ্যে সহিংসতা চালালে ভিসা নিষেধাজ্ঞায় পড়বেন। অপরদিকে, বিএনপি নেতারা মনে করেন, ভিসানীতির কারণে ক্ষমতাসীনরা চাপে পড়বে।

কেননা আওয়ামী লীগের নেতা, আইনশৃঙ্খলা বাহিনীসহ সরকারের অংশ অনেকেই এই নিষেধাজ্ঞার মধ্যে পড়বেন।

তবে অভিজ্ঞ কূটনীতিকরা বলছেন, আওয়ামী লীগ-বিএনপি নির্বিশেষে বাংলাদেশের জন্য ভিসানীতি কোনো সুখবর নয়। যুক্তরাষ্ট্রের সঙ্গে বাংলাদেশের বিরাট বাণিজ্য সম্পর্ক, বিনিয়োগ এবং রেমিট্যান্স ঘিরে সম্পর্ক রয়েছে। ফলে এই দেশটি থেকে এমন নিষেধাজ্ঞা বাংলাদেশের জন্য সম্মানজনক নয়।

অভ্যন্তরীণ সংলাপের মাধ্যমে নির্বাচন ঘিরে সৃষ্ট সংকট নিরসন করা গেলে এমন নিষেধাজ্ঞা এড়ানো যেত বলে অভিজ্ঞ কূটনীতিকরা মনে করেন।

কূটনৈতিক বিশ্লেষকরা এও মনে করেন যে, বাইডেন প্রশাসনের একটা প্রবণতা হলো, বিশ্বব্যাপী গণতন্ত্র ও মানবাধিকারের প্রতি অধিক জোর দেওয়া। ফলে তারা নির্বাচনি ব্যবস্থাকে গুরুত্ব দিয়ে থাকে। বাংলাদেশে অবাধ, সুষ্ঠু ও শান্তিপূর্ণ নির্বাচন করার বিষয়ে সহায়তা করা তাদের সেই নীতিরই অংশ।

ট্রাম্প প্রশাসনের এমন প্রবণতা লক্ষ্য করা যায়নি। ট্রাম্প প্রশাসনের ঝোঁক ছিল ব্যবসা-বাণিজ্যের প্রতি। ভূ-রাজনৈতিক অর্থাৎ বাংলাদেশে চীনের প্রভাব কমানো এবং কৌশলগত এমনকি অস্ত্র বিক্রির জন্য চাপ সৃষ্টি করতে বাংলাদেশের প্রতি কঠোর নীতি বলেও কেউ কেউ মনে করেন।

তবে বিশ্লেষকরা বলছেন, যুক্তরাষ্ট্র ধারাবাহিকভাবে গণতান্ত্রিক প্রক্রিয়া জোরদার এবং মানবাধিকারের কথা বলে আসছে। ২০১৪ এবং ২০১৮ সালের নির্বাচনের সময়েও অবাধ ও সুষ্ঠু নির্বাচনের জন্য চাপ দিয়েছে। তবে এবারের ভিসানীতি বাইডেন প্রশাসনের মস্তিষ্কপ্রসূত নতুন ধরনের ধারণা। এটার মাধ্যমে তারা অবাধ, সুষ্ঠু ও শান্তিপূর্ণ নির্বাচন অনুষ্ঠানে জোর দিচ্ছে। ফলে অস্ত্র বিক্রির ইস্যুকে এক করে দেখা যায় না। এক্ষেত্রে, বাংলাদেশের করণীয় হলো, সুষ্ঠু নির্বাচনের পথে ইতিবাচক অগ্রসর হওয়া।

বাইডেন প্রশাসনের ভিসানীতির লক্ষ্য হলো, নির্বাচনি প্রক্রিয়াকে বাধাগ্রস্ত করলে তার ওপর ভিসা নিষেধাজ্ঞা আরোপ করা। এক্ষেত্রে, বিএনপিসহ বিরোধী দল যে আন্দোলন করছে সেই আন্দোলনে সফল না হলে ভোট প্রতিহত করতে সহিংসতার আশঙ্কা উড়িয়ে দেওয়া যায় না। এমন পরিস্থিতিতে বিরোধী দলের নেতারাও ভিসা নিষেধাজ্ঞার মধ্যে পড়তে পারেন।

জানতে চাইলে সাবেক রাষ্ট্রদূত মাহফুজুর রহমান শনিবার যুগান্তরকে বলেন, ‘ভিসানীতির প্রয়োগ নতুন কিছু নয়। যুক্তরাষ্ট্র অনেক আগেই বাংলাদেশকে জানিয়েছে যে, তারা ভিসা নিষেধাজ্ঞা দিতে যাচ্ছে। এখন সেটা বাস্তবায়নের ঘোষণা দিয়েছে। বাংলাদেশ যুক্তরাষ্ট্রের এই অ্যাকশনে অবশ্যই অস্বস্তিতে আছে। যদিও বিএনপি কিছুটা উল্লসিত কিন্তু বাস্তবে কারও জন্য উল্লসিত হওয়ার কিছু নেই। বাংলাদেশের জন্য এ ধরনের ভিসানীতি জাতির জন্য দুর্ভাগ্য। এটা আন্তর্জাতিক বলয়ে আমাদের জন্য কোনো সুখবর নয়।’

তিনি আরও বলেন, ‘বর্তমান পরিস্থিতি থেকে উত্তরণের জন্য দুটি পথ আপাতত দেখা যাচ্ছে। প্রথমত, অভ্যন্তরীণভাবে আলাপ-আলোচনা করে নির্বাচনি সংকট নিরসন করা। কিন্তু এমন আচার-আচরণ কোনো রাজনৈতিক দলের মধ্যে দেখা যাচ্ছে না। তাদের কোনো উদ্যোগও নেই। এই সময়ে নির্বাচন ইস্যুতে যাতে দেশ ক্ষতিগ্রস্ত না হয় তার উদ্যোগ কাম্য। এটা না হলে সমস্যার সমাধান পাওয়া দুষ্কর।

দ্বিতীয়ত, কূটনীতির সঙ্গে যুক্তদের সংবেদনশীল আচরণ করা। রাজনীতিবিদরা যে আচরণই করুন না কেন পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়সহ কূটনৈতিক পরিমণ্ডলে যুক্ত সবাইকে যুক্তরাষ্ট্রের সঙ্গে সম্পর্ককে সংবেদনশীলতার সঙ্গে এগিয়ে নিতে হবে। এখানে যে কোনো হঠকারিতা বড় ক্ষতির কারণ হতে পারে।’ 

মাহফুজুর রহমান মনে করেন, বাস্তবতাকে মেনে বিষয়টিকে বিবেচনা করতে হবে। বাংলাদেশ ও যুক্তরাষ্ট্র সমান সক্ষমতার দেশ নয়। ফলে যুক্তরাষ্ট্রের ত্রুটি-বিচ্যুতি ধরে আমাদের কোনো লাভ নেই। বরং আমাদের জোর দেওয়া উচিত, আমরা বিষয়টাকে কীভাবে ম্যানেজ করব তার প্রতি।

সাবেক রাষ্ট্রদূত আশরাফ উদ দৌলা বলেছেন, বাইডেন প্রশাসন গণতন্ত্র সম্মেলনে বাংলাদেশকে আমন্ত্রণ জানায়নি। র‌্যাবের বিরুদ্ধে স্যাংশন দিয়েছে। এখন ভিসা নিষেধাজ্ঞা দিয়েছে। গণতন্ত্র ও মানবাধিকারের জন্য এসব হচ্ছে। এই পরিস্থিতি থেকে উত্তরণের জন্য সরকারের উচিত হবে বিএনপির সঙ্গে আলোচনা করে সুষ্ঠু নির্বাচনের উপায় খুঁজে বের করা। ইচ্ছা থাকলে উপায় হবে। সদিচ্ছা জরুরি।

ভিসানীতির ‘বার্তা’ গ্রহণ করতে হবে: বদিউল আলম মজুমদার
সুশাসনের জন্য নাগরিকের (সুজন) সম্পাদক ড. বদিউল আলম মজুমদার যুক্তরাষ্ট্রের ভিসানীতি প্রয়োগের বিষয়ে বলেন, বিদেশিরা আমাদের নির্বাচন সুষ্ঠু করার জন্য তাদের গরজ দেখাচ্ছে। তারা উদ্যোগী ভূমিকা নিচ্ছে। কিন্তু আমরা কি উদ্যোগ নিচ্ছি? আমাদের কি বোধদয় হয়েছে বা হচ্ছে।

আমি ‘অ্যামবারেসড’ যে আমরা আমাদের সমস্যার সমাধান না করায় অন্যেরা আমাদের সমস্যা সমাধানে চাপ সৃষ্টি করছে। এই ভিসানীতি থেকে আমাদেরকে কি বার্তা দেওয়া হচ্ছে সেটি গ্রহণ করতে হবে। 
তারা কেন এটা করেছে? সমস্যা সমাধানের জন্য সুষ্ঠু পথ রুদ্ধ হয়েছে। যেটি ইইউ’র সিদ্ধান্তর মাধ্যমেও প্রতিভাত হচ্ছে। সমস্যাগুলো এখন চিহ্নিত করে আমাদেরকে আলোচনার টেবিলে বসে সমাধান করতে হবে। তা না হলে জাতি হিসাবে আমরা একটি ভয়ানক পরিস্থিতির দিকে ধাবিত হবো বলে আমার আশঙ্কা। বস্তুত আমি দেখি তারা আমাদেরকে একটি বার্তা দিচ্ছে আর ‘বল’ আমাদের কোর্টে দেওয়া হচ্ছে। এখন আমাদেরকে ঠিক করতে হবে আমরা কি করব।

যারা শঙ্কিত তারা সতর্ক হওয়ার চেষ্টা করবে: মুন্সি ফয়েজ আহমেদ
সাবেক রাষ্ট্রদূত মুন্সি ফয়েজ আহমেদ বলেন, যুক্তরাষ্ট্র প্রথমে তাদের ভিসানীতি ঘোষণা করেছে। এখন তারা সেটির প্রয়োগ শুরু করল। কাদের ওপর প্রয়োগ করা হয়েছে, সেটি তারা বলেনি। কিন্তু বোঝা যায় তারা কিছু নাম নির্বাচন করেছে। নামগুলো আমরা জানি না। এতে বর্তমান পরিস্থিতে খুব পার্থক্য হচ্ছে না। যারা চিন্তিত, তাদের চিন্তা কিছুটা বেড়েছে। কিছু কিছু মানুষ যারা নিজেদের এক্ষেত্রে শঙ্কিত মনে করেন, তারা সতর্ক হওয়ার চেষ্টা করবে। 

তিনি আরও বলেন, এটি ইতিবাচক হতে পারে। নির্বাচনের ক্ষেত্রে সবাই আরও সতর্ক হবে যেন নির্বাচন আইনগতভাবে ও বিধিবিধানগতভাবে সঠিক হয় এবং প্রশ্নবিদ্ধ না হয়। কিন্তু যুক্তরাষ্ট্র এভাবে একটি ভিসানীতি ঘোষণা করে অ্যাকশন নিচ্ছে। তারা বলছে বাংলাদেশ সরকার প্রতিশ্রুতি দিয়েছে অহিংস নির্বাচন হবে এবং এর জন্য বাংলাদেশ সরকার প্রতিশ্রুতিবদ্ধ, অঙ্গীকারবদ্ধ।

যুক্তরাষ্ট্র, তার সরকার বিশেষ করে এ বিষয়ে সহযোগিতা করছে। কিন্তু সঙ্গে সঙ্গে তারা কারা ভিসানীতিতে সংযুক্ত হতে পারে, সরকার ও সরকারের বাইরে তাদের কথা বলছেন। যারা বলছে নির্বাচন করতে দেব না, নির্বাচন প্রতিহত করবে, সরকারের পতন ঘটাতে হবে, তাদেরও সতর্ক হওয়ার প্রয়োজন আছে বলেছে। তিনি বলেন, যুক্তরাষ্ট্র চাইলে যে কাউকে যে কোনো সময় ভিসা না দিতে পারত। কিন্তু এখন যা হয়েছে, সেটি বাংলাদেশের জন্য অসম্মানজনক। এটা নিয়ে খুব বেশি খুশি বা মাথাব্যথা কোনোটারই কারণ নেই। আমরা আমাদের মতো নিজেদের প্রয়োজনেই সুষ্ঠু, অবাধ ও অহিংস নির্বাচনের জন্য যা যা করা দরকার, সেটি করতে থাকব। নির্বাচন কমিশন, সংববিধান আছে, আইন আছে, বিভিন্ন প্রতিষ্ঠান ও জনগণ আছে। আইনকানুনগুলো সঠিকভাবে পালন করলে এবং যাদের যে ক্ষমতা দেওয়া আছে, তা প্রয়োগ করতে দেওয়া হলে একটি ভালো নির্বাচন না হওয়ার কোনো কারণ নেই।

গণতন্ত্রের ঘাটতি পূরণের ধারণা ভুল: ইমতিয়াজ আহমেদ
আন্তর্জাতিক সম্পর্ক বিশ্লেষক প্রফেসর ইমতিয়াজ আহমেদ বলেন, মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র তাদের ভিসানীতি প্রয়োগের বিষয়ে আগেই বলেছিল। তবে এই ভিসানীতি দেওয়ার কারণে, বাংলাদেশের গণতন্ত্র ঠিক হবে এই চিন্তা করাটাই ভুল। বাংলাদেশের গণতন্ত্রের যে ঘাটতি আছে সেটি দেশের জনগণকেই ঠিক করতে হবে। বাইরের কোনো রাষ্ট্রের ভিসানীতি দিয়ে এটি ঠিক হবে এই ভাবনাটা সঠিক নয়। কারণ, পশ্চিমা দেশের গণতন্ত্রের কাঠামোতে যে গণতন্ত্রের চিন্তা বাংলাদেশেও এসেছে বা যে গণতন্ত্র চাওয়া হচ্ছে, সেটা করতে কিছু নিয়ামক গরুত্বপূর্ণ। তার মধ্যে অন্যতম, বড় রাজনৈতিক দলগুলোর মধ্যে যেন আস্থা থাকে। প্রশ্ন আসে এই ভিসানীতি প্রয়োগে সে আস্থা বাড়ছে না কমছে? আস্থা বাড়ছে না বিভাজন বাড়ছে? সহজ উত্তরে বলতে চাই এতে বিভাজন আরও বাড়ে। আস্থা আরও কমে।

তিনি বলেন, একাডেমিক দৃষ্টিকোণ থেকে আমি মনে করি না ভিসানীতি প্রয়োগ দিয়ে বাংলাদেশের গণতন্ত্র ঠিক হবে। একটা প্রতীকী গুরুত্ব থাকতে পারে এই ভিসানীতির। এতে সরকারি দলের মানুষরা হয়তো একটি সুষ্ঠু নির্বাচনের জন্য সচেতন হবেন, বিরোধীদলের অনেকেও হয়তো সচেতন হবেন। কিন্তু গণতন্ত্রের ঘাটতি দূর হতে হবে জনগণের মাধ্যমেই।
 

Show More

7 Comments

  1. Howdy! I know this is kind of off-topic however I needed to ask.
    Does operating a well-established blog like yours take a large amount of work?

    I am completely new to blogging but I do write in my journal on a
    daily basis. I’d like to start a blog so I can easily share my personal experience
    and views online. Please let me know if you have any kind
    of suggestions or tips for brand new aspiring bloggers.
    Thankyou!

    Feel free to surf to my blog … vpn special code

  2. My programmer is trying to persuade me to move to .net from PHP.
    I have always disliked the idea because of the costs.
    But he’s tryiong none the less. I’ve been using WordPress on a variety of websites for about a
    year and am anxious about switching to another platform.
    I have heard great things about blogengine.net.
    Is there a way I can import all my wordpress content into
    it? Any kind of help would be greatly appreciated!

    Here is my blog post vpn explained

  3. Today, I went to the beach front with my
    children. I found a sea shell and gave it to my 4 year old daughter and said “You can hear the ocean if you put this to your ear.” She put the shell to her ear and screamed.
    There was a hermit crab inside and it pinched her ear.
    She never wants to go back! LoL I know this is totally off topic
    but I had to tell someone!

    Also visit my web blog vpn coupon ucecf

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Related Articles

Back to top button